
গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন স্টেডিয়ামে থিকথিক করা ১,৩৫,০০০ চোখের ভেতর রিয়ালের উল্টোদিকে নেমেছিল এইন্ট্যাক্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট। ফলাফল রিয়ালের হয়ে ৭-৩। পুসকাস করলেন ৪টি, বাকি তিনটি ডি’স্টেফানোর। যেন নিজেদের ভেতর স্রেফ একটা চুক্তি, আমরা দু’জন মিলেই সামলে নেব একটা ফাইনাল, বাকি দেড় লক্ষ ভিড় আমাদের দেখুক, জাস্ট দেখুক। এবং এই সময়েই ’৬০-’৬১ মরশুমের টুইস্ট। কোচ হয়ে এলেন মিগুয়েল মুনোজ। এল লিগ। তিনকাঠিতে ফুঁসছেন দু’জন। এলসে ম্যাচ। ’৬০-’৬১-তে পুসকাস ওই ম্যাচে একাই করলেন চার গোল, ’৬১-’৬২-তে আবার সেই এলসে ম্যাচেই নিজের রেকর্ড ছাপিয়ে পাঁচ গোল। ’৬০-’৬১-র লিগের খাতায় ২৮ এবং ২১ গোলে প্রথম দুটো নাম যথাক্রমে পুসকাস এবং ডি’স্টেফানো।
২০০৬-এর ১৭ নভেম্বর। শুক্রবার। স্যর আলফ্রেডো ডি’স্টেফানো সকালে একটা ফোন পেলেন। পরে সংবাদমাধ্যমে বললেন, ‘They called me at 7 this morning to tell the sad news…’ একটু থামলেন। তারপর বললেন, ‘Life, my friend, comes to end when you least expect it…’

সেই বন্ধু, অর্থাৎ, পুসকাস, ফেরেঙ্ক পুসকাস চলে গিয়েছিলেন বছর ৭৯-এ। তার বছর ছয়েক আগেই পরপর আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস এবং অ্যালঝেইমারের মারণ আক্রমণ। সাতের ঘরের ন্যুব্জ বৃদ্ধ আর কি মনে করতে পারতেন সোনালি রিয়াল, ’৫৮ থেকে ’৬৪-র রিয়াল মাদ্রিদকে? সেই সব ফাইনাল? আলফ্রেডের সঙ্গে জুটি, ডুয়ো, কোচ মিগুয়েল মুনোজের টিমের ভয়ংকর সাদা জার্সি, গোল, দর্শক, চিৎকার– চলে যায়, একসময় সব চলে যায়। শুধু একটা ফোন-কল পড়ে থাকে। ওরা জীবিত সতীর্থকে জানিয়ে দেয়, আপনার বন্ধু আর নেই। সেই বন্ধু, নিজের দেশে ‘লিটল ব্রাদার’, ব্রিটেনে ‘গ্যালপিং মেজর’, রিয়ালে ‘বুমিং ক্যানন’ কিংবা ডি’স্টেফানোদের আদরের ‘প্যাঞ্চো’– আর নেই!

কিছুই নেই, আর তাই, ফ্ল্যাশব্যাক জরুরি। কারণ, কোনও এক সমান্তরাল বিশ্বে খেলাটা এখনও হচ্ছে। ফেরেঙ্ক পুসকাস। ফুটবলের তথাকথিত ফিট শরীরের বাইরে একটু পৃথুল পুসকাস। হাঙ্গেরির ’৫৪-র অবিশ্বাস্য স্বপ্নভঙ্গ, সঙ্গে হিদেকুটি, ককসিসদের নিয়ে মুখ নিচু করে গ্যালারিতে ফেরা ফেরেঙ্ক। তবু, একটা ম্যাচই সবকিছু? বুদাপেস্ট হোনভেডের হয়ে ’৫৬-র ইউরোপিয়ান কাপের ফার্স্ট লেগে অ্যাথলেটিকো বিলবাও ম্যাচ। স্পেনের মাটিতে প্রথম দফায় ২-৩-এ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় অকস্মাৎ হাঙ্গেরিয়ান রেভেলিউশন। পুসকাসরা দেশে না-ফিরে দ্বিতীয় লেগ ব্রাসেলসে খেললেন, ৩-৩ ড্র, অ্যাগ্রিগেটে ৬-৫-এ বিলবাও জিতলেও পুসকাস জ্বলতে শুরু করেছেন। ব্রাজিল, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি হয়ে ফান্ডরেইজিং খেলার শেষে আর দেশে ফিরলেন না পুসকাস, ককসিস, জিবোর-রা। ফিফার কড়া নজর এবং ব্যান সত্ত্বেও, জেদ ধরে রাখলেন। এস্প্যানিওলের হয়ে কয়েকটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ, এসি মিলান-জুভেন্তাসের কড়া নজর। এর মাঝেই ’৫৮-র বুসবি বেবসের বিমান-বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটাতে চেষ্টা করা ম্যাঞ্চেস্টারের নজর থাকলেও ইংরেজি না জানার সমস্যায় চূড়ান্ত সই হল না। ততদিনে উয়েফার ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছে। মধ্যস্থতা করেছেন স্বয়ং সান্টিয়াগো বার্নাবিউ। অর্থাৎ, চোখের সামনে সেই প্রেসিডেন্ট বার্নাবিউয়ের রিয়াল। কোচ লুইস কারনিজিয়ার রিয়াল। সাদা স্রোত। অবশ্য মানুষটা তখন তথাকথিত বয়সজনিত প্রাইমে নেই। ৩১ পেরচ্ছেন। পেটে চর্বি। ১৮ কিলোগ্রাম ওজন বেড়েছে। অন্তত, বাইরেটা দেখে ফেরেঙ্ক পুসকাসের আর কিছু দেওয়ার আছে বলে মনে করাই যাচ্ছে না। পুসকাস নিজেই বলছেন, ‘আই কান্ট প্লে, আই অ্যাম ফ্যাট’।

তবু, থেকে গেলেন। ১৯৫৮-’৫৯ মরশুমে সই। প্রথমবারের লা লিগায় চারটে হ্যাটট্রিক। ১০ গজ দূরে থাকা ১০টি গোলপোস্ট পরপর বানিয়ে বাঁ-পায়ে একটার পর একটা নিখুঁত গোল করে প্র্যাকটিস সারছেন পুসকাস। ক্লাবের প্রাক্তন অধিকর্তা অ্যান্টোনিও ক্যাল্ডেরন ডি’স্টেফানোকে বলছেন, ‘আলফ্রেডো, এই নতুন ছেলেটিকে কীভাবে দেখছ?’ প্রত্যুত্তরে ডি’স্টেফানো বলছেন, ‘আমি হাতে নিয়ে বল যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, ও বাঁ-পায়ে বলকে সেভাবে খেলাচ্ছে’। মনে পড়ছে, অনেকটা পরে ’৯৭-এ সতীর্থের ৭০ বছরের জন্মদিনে সতীর্থ সম্পর্কে ৫৪’-র হাঙ্গেরির ‘ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্স’-এর হিদেকুটির সেই কথাগুলো–
‘He had a seventh sense for soccer. If there were 1,000 solutions, he would pick the 1,001st…’

বাকিটা পরে। এবার শুরুর সেই জীবিত বন্ধুর কথা।
স্যর আলফ্রেডো ডি’স্টেফানো, আর্জেন্টিনার গলির রাস্তায় দৌড়ে দৌড়ে অলৌকিক ওই স্ট্যামিনা তৈরি করেছিলেন। চারের দশকের ‘লা ম্যাকিনা’ কিংবদন্তি রিভার প্লেট, ’৪৬-এ লোনে চলে যাওয়া অ্যাথলেটিকো হুরাক্যান ঘুরে পরের বছরই রিভারে ফেরা। পাঁচের দশকের শুরু। এমন এক সময়, যখন একের পর এক ফুটবলারের বিদ্রোহ, ধর্মঘটে ভুগছে আর্জেন্টাইন ফুটবল। দেশ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন হতাশ ডি’স্টেফানোরা। অভিশপ্ত সুপারগা বিমান দুর্ঘটনার স্মৃতি ভুলতে ‘ব্লন্ড অ্যারো’ ডি’স্টেফানো-র দিকে পাখির চোখ করছে ইতালিয়ান ক্লাব তোরিনো। তবু, ঠিক এই সময় কলম্বিয়ার ফিফা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে লোভনীয় টোপ ফেলেছিল সে-দেশের মিলোনারিওস অফ বোগোটা, স্টোক সিটির নিল ফ্রাঙ্কলিন এবং খোদ ডি’স্টেফানো সেই টোপেই পা রাখলেন কলম্বিয়ায়।

’৫২-য় টুইস্ট। এই মিলোনারিওস রিয়ালের মাঠে প্রীতি ম্যাচ খেলতে গেল। নিজের মাঠে ২-৪ গোলে হারা রিয়েল দাঁড়াতে পারল না কলম্বিয়ান ক্লাব-ঝড়ের কাছে। এবং তখনই ডি’স্টেফানোর ওপর নজর রিয়াল প্রেসিডেন্ট বার্নাবিউ-র, সঙ্গে পাখির চোখ করছে কাতালানরাও। এই দ্বিমুখী নজর, স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের আশ্চর্য মজাদার নির্দেশে ডি’স্টেফানোকে এক মরশুমে রিয়াল, অন্য মরশুমে বার্সেলোনার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত। ডি’স্টেফানো তখন ২৭ পেরচ্ছেন।
রিয়ালে তাঁর পৌঁছনোর দিন ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৩। প্রথম গোল পাঁচদিন পর ৪-২ ব্যবধানে জেতা রেসিং সান্তান্দার ম্যাচে। তবু, মোটের ওপর প্রথম ছ’টা ম্যাচে নির্বিষ, সাদামাটা ডি’স্টেফানো। বার্সা আগ্রহ হারাল। এবং এখানেই ক্যাটালান-ব্লান্ডার! কারণ, শুরুর দিকের সেই বুঝে নেওয়া দিনগুলোর পরেই ঝকঝকে ইম্প্রেসিভ ‘ব্লন্ড অ্যারো’-র প্রকৃত আত্মপ্রকাশ।

বড়দিনে স্প্যানিশ ডার্বি। রিয়ালের পক্ষে ৫-০। নেতৃত্বে ডি’স্টেফানো। ’৫৬-র স্প্যানিশ নাগরিকত্ব। তবু। কিছু যেন হচ্ছিল না, কিছু একটা। ’৫৮-র ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে অ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ের কাছে ০-২। ঠিক তখনই দলে এলেন বন্ধু। আমৃত্যু পাশে থেকে যাওয়া ‘লিথাল ডুয়ো’– ফেরেঙ্ক পুসকাস এবং আলফ্রেডো ডি’স্টেফানো।

এক এক করে সেইসব দিনের কথা। সময়রেখা। ’৫৮-’৫৯ মরশুমের লিগ এল না। এগিয়ে কাতালানরা, যদিও ২৩টি গোল করে টানা চারবার এবং সেই শেষবার লিগে টপস্কোরার ডি’স্টেফানো। কারণ, ততদিনে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন তিনকাঠির সামনে আরও ভয়ংকর পুসকাসকে। ফরাসি জায়ান্ট রিয়েলমস ম্যাচ ২-০-য় জেতা ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে ডি’স্টেফানোর দু’টি গোলের বিপরীতে তুলনায় নির্বিষ পুসকাসের পরিবর্তে নামা এনরিকে ম্যাটকোস পেনাল্টি মিস করলেন, হয়তো ‘লিথাল ডুয়ো’র পাকাপাকি একসঙ্গে খেলার শুরুর সেইদিন, সেখানেই।
পরের মরশুমে ব্যালন ডি’অর ডি’স্টেফানোর। লা লিগা তখনও হচ্ছে না। কাতালানদের সঙ্গে একই পয়েন্টে থাকলেও গোলের গড়ে সেই দু’নম্বরেই থেকে গেল রিয়াল, পাশাপাশি ১৯৬০-এর কোপা জেনারেলিজমো ফাইনালে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের কাছে ১-৩ গোলে হার। তবু, এর মাঝেই ’৫৯-’৬০ মরশুমের সেই অবিশ্বাস্য ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনাল। গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন স্টেডিয়ামে থিকথিক করা ১,৩৫,০০০ চোখের ভেতর রিয়ালের উল্টোদিকে নেমেছিল এইন্ট্যাক্ট ফ্রাঙ্কফুর্ট। ফলাফল রিয়ালের হয়ে ৭-৩। পুসকাস করলেন ৪টি, বাকি তিনটি ডি’স্টেফানোর। যেন নিজেদের ভিতর স্রেফ একটা চুক্তি, আমরা দু’জন মিলেই সামলে নেব একটা ফাইনাল, বাকি দেড় লক্ষ ভিড় আমাদের দেখুক, জাস্ট দেখুক। এবং এই সময়েই ’৬০-’৬১ মরশুমের টুইস্ট। কোচ হয়ে এলেন মিগুয়েল মুনোজ। এল লিগ। তিনকাঠিতে ফুঁসছেন দু’জন। এলসে ম্যাচ। ’৬০-’৬১-তে পুসকাস ওই ম্যাচে একাই করলেন চার গোল, ’৬১-’৬২-তে আবার সেই এলসে ম্যাচেই নিজের রেকর্ড ছাপিয়ে পাঁচ গোল। ’৬০-’৬১-র লিগের খাতায় ২৮ এবং ২১ গোলে প্রথম দুটো নাম যথাক্রমে পুসকাস এবং ডি’স্টেফানো। তারপরেও এল না ইউরোপিয়ান কাপ এবং কোপা ডেল রে। যথাক্রমে বার্সেলোনা এবং রোজিব্ল্যাঙ্কোসের কাছে হার।

চাকা আরেকটু ঘুরল পরের বছর। সেই প্রথম ঘরোয়া ডাবল। সেভিয়াকে ২-১-এ হারিয়ে ১৫ বছর পর কোপা জেনারেলিজমো রিয়ালের, জোড়া গোলের দু’টিই ডি’স্টেফানোর। অবশ্য ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে ইউসেবিও ঝড়। হ্যাটট্রিকেও জেতাতে পারলেন না ‘গ্যালপিং মেজর’। দু’বার এগিয়ে গিয়েও ৩-৫-এ হেরে ট্রফি চলে গেল ভয়ংকর ইউসেবিও-র বেনফিকায়। ’৬২-’৬৩-তে লা লিগা ধরে রাখা গেল, এল না ইউরোপিয়ান কাপ, আকস্মিক ‘আর্লি একজিট’। এবং শেষমেশ ’৬৩-’৬৪। ঘটনাবহুল শেষ বছর। শেষ বছর কেন? কারণ, জুটি ভাঙছে। শেষের সে-দিন কাছেই। ‘স্মল ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ’ খেলতে ভেনেজুয়েলা গেল মিগুয়েল মুনোজের টিম। অবশ্য ততদিনে মুনোজ-ডি’স্টেফানো সম্পর্কের ক্রম-অবনতি স্পষ্ট।
ভেনেজুয়েলায় সাও পাওলো ম্যাচের আগে কারাকাসের পোটোম্যাক হোটেল থেকে দেশের ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মড ফোর্সেস তুলে নিয়ে গেল ডি’স্টেফানোকে, যদিও ফিরলেন তিনদিন পরে, অক্ষত শরীরেই। তা বলে টাটকা ক্ষত কী করে ঢাকবে? ‘স্মল ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ’ এল না। যদিও প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে এল লিগ, টানা চারবার। আশ্চর্যজনক ভাবে এল না ইউরোপিয়ান কাপ, ফাইনালে ইন্টার মিলানের কাছে অবিশ্বাস্য ১-৩ ব্যবধানে হার। এবং এই সময়েই মুনোজ-ডি’স্টেফানো কলহ চরমে পৌঁছল।
ইন্টারের ডিফেন্ডার ফ্যাচেত্তির কাছে নাজেহাল হয়ে খোলাখুলি মুনোজের স্ট্র্যাটেজির সমালোচনা করলেন ডি’স্টেফানো। প্রেসিডেন্ট বার্নাবিউ প্রথম থেকে ডি’স্টেফানোকে সুনজরে দেখলেও একটা সময় পর মুনোজের স্ট্র্যাটেজিকে সরাসরি সমর্থন করতে শুরু করেন। পরিণতি খুব অনুমেয়। পরের বছর চুক্তি নবীকরণ না করিয়ে ডি’স্টেফানোকে কোচিং স্টাফে আসার অসম্মানজনক প্রস্তাব দিলেন মুনোজ। খুব স্বাভাবিক, মানতে পারলেন না চিরকাল আত্মসম্মান নিয়ে চলা মাথা উঁচু করে হাঁটা ডি’স্টেফানো। ফলত ইন্টারের বিরুদ্ধে নামা ওই ফাইনাল, ভিয়েনার প্র্যাটার স্টেডিয়ামের ওই ২৭ মে, ১৯৬৪-র ফাইনাল রিয়ালের হয়ে শেষ ম্যাচ হয়ে থাকল ডি’স্টেফানোর।

পরের বছর চলে গেলেন এস্প্যানিওলে। থেকে গেলেন পুসকাস। বন্ধুবিহীন, একা, আরও দু’বছর। ’৬৬-র ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে তুললেন রিয়ালকে। খেললেন না ফাইনাল। দল জিতল। সেই বছরই রিয়াল ছাড়লেন, খেলা ছাড়লেন ফেরেঙ্ক।

শেষটা কিছুটা মধুর। ১৯৬৬-তে অবসরের পরের বছর ’৬৭-র মাদ্রিদে ফিরলেন ডি’স্টেফানো, তবে ফেয়ারওয়েল ম্যাচ খেলতে। সৌজন্যের শেষ হাত সেই বার্নাবিউ-র। ৭ জুন সেল্টিকের কাছে এক গোলে হারলেও ১৩ মিনিটে ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড পরালেন নিজের ৯ নম্বর জার্সির উত্তরসূরি রেমন্ড গ্রসোকে, স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিল রিয়াল গ্যালারি। পেলেন স্পেনের সর্বোচ্চ গোল্ড মেডেল ‘অফ দ্য রয়্যাল অর্ডার অফ দ্য স্পোর্টস মেরিট’।
দু’জনের সামগ্রিক ঝড়ের ডেটাবেস কেমন?
পুসকাস রিয়ালের হয়ে লা লিগায় ১৮০টি ম্যাচে করেছেন ১৫৬টি গোল, সমস্ত টুর্নামেন্ট ধরলে ২৬২ ম্যাচে গোল ২৪২। ইউরোপিয়ান কাপে ৩৯ ম্যাচে গোল ৩৫। ’৬০, ’৬১, ’৬৩ ও ’৬৪-তে লিগের সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের পিচিচি ট্রফি পেয়েছেন। অন্যদিকে ডি’স্টেফানো রিয়ালের হয়ে সবক’টি টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৩৯৬ ম্যাচে গোল ৩০৮, লিগে ২৮২ ম্যাচে গোল ২১৬, ইউরোপিয়ান কাপে ৫৪টি গোল এসেছে ৬২ ম্যাচে। ’৫৬ থেকে ’৬০– দলগত ফলাফল যা-ই হোক, টানা পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে গোল– ছয়টি দশক গেল, এখনও অবধি এই পরিসংখ্যান ছুঁতে পারলেন না কেউ। এবং এই পরিসংখ্যানের অধিকাংশই ওভারল্যাপ করছে দু’জনের একসঙ্গে স্ট্রাইকিং জোন সামলানো ১৯৫৮-’৫৯ থেকে ১৯৬৩-’৬৪ মরশুমের টাইম স্কেল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সময়েই বিভিন্ন ছোট, মাঝারি সময়রেখায় রিয়ালে ছিলেন ফরাসি কিংবদন্তি রেমন্ড কোপা, যিনি ’৫৬-য় স্ট্যাডে রিয়েলমস থেকে এসে শেষ মরশুমে নিজের প্রিয় ১০ নম্বর জার্সি ছেড়ে দিয়েছিলেন পুসকাসকে, পরেছিলেন পরবর্তীকালীন এক মাইলফলক হয়ে থাকা ৭ নম্বর শার্ট। ‘মার্কা’ পত্রিকার দেওয়া নিকনেম ‘লিটল নেপোলিয়ন’ খ্যাত রেমন্ড কোপা ’৫৬-’৫৭, ’৫৭-’৫৮ ও ’৫৮-’৫৯ মরশুমে করলেন যথাক্রমে ২২, ২৭ ও ৩০টি লিগ-গোল। এবং এর পাশাপাশি এসে যান ব্রাজিলিয়ান লেজেন্ড ডিডি।

দেশের বোতাফোগো থেকে রিয়েলে আসা ডিডি খেললেন মাত্র এক মরশুম– ’৫৯-’৬০। সরাসরি বিরোধ বাঁধল ডি’স্টেফানোর সঙ্গে। এবং প্রাইম পুসকাস-ডি’স্টেফানোর ওপর কথা বলা মানুষ– সেই মুহূর্তে রিয়েলে কোথায়! ১৯টি ম্যাচে ৬ গোল করে ডিডি পরের বছরই চলে গেলেন পুরনো ক্লাবে।

প্রিয়বন্ধুবিহীন ডি’স্টেফানো এ গ্রহে থেকে গিয়েছিলেন আরও আট বছর। ২০০৬-এর ১৭ নভেম্বর সেই অভিশপ্ত ফোন ধরার স্মৃতিতে বলেছিলেন, ‘I have lost a friend and a quality player’।
জীবন, ফুটবল বয়স হলেও থেমে যাবে এমন এক সময়, যখন তার থামার কথা ভাববে না কেউ। ‘বাট দ্য লেগ্যাসি উইল স্টিল রান…’।
… পড়ুন জুটি-র অন্যান্য লেখা …
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved