কুসুমডিহাতে ঢোকার জায়গাগুলো নিজে দেখে এসেছে। কিন্তু রাস্তা পাহারা দেওয়া যায়, অত বড় জঙ্গল পাশে থাকলে নজর রাখা কঠিন। রাহুলের অংক বলছে, হামলার খবর যখন জানাজানি হয়েছে, মাওবাদীদের কানেও নিশ্চয়ই গিয়েছে। তাহলে ব্রহ্মা, সুনেত্রা, বিষ্ণুরা গোপনীয়তা ছেড়ে অ্যাকশনে বেরোতে পারে। ধরতে হবে তাদেরও।
২১.
অঙ্ক কষছে রাহুল।
ঠেকাতে হবে বিদ্যুতের পাঠানো খুনিদের। যদি আগাম খবর থাকার পরেও মাধাই বা কারও কিছু হয়, লজ্জায় মুখ দেখানো যাবে না। হামলা হতে পারে, এটা কানাঘুষোয় ছড়িয়ে পড়েছে। থমথমে ভাবটা ফিরে আসছে। রাহুল মাধাইকে বলেছে আপাতত সাবধানে থাকতে। দরকার মনে করলে রাতটা থানায় কাটিয়ে যেতে। মাধাইয়ের বাড়ির কাছে দু’জন কনস্টেবল পোস্টিংও করে দিয়েছে সে। টহল বাড়িয়েছে। টিম-মিটিং করেছে। কুসুমডিহাতে ঢোকার জায়গাগুলো নিজে দেখে এসেছে। কিন্তু রাস্তা পাহারা দেওয়া যায়, অত বড় জঙ্গল পাশে থাকলে নজর রাখা কঠিন।
রাহুলের অঙ্ক বলছে, হামলার খবর যখন জানাজানি হয়েছে, মাওবাদীদের কানেও নিশ্চয়ই গিয়েছে। তাহলে ব্রহ্মা, সুনেত্রা, বিষ্ণুরা গোপনীয়তা ছেড়ে অ্যাকশনে বেরোতে পারে। ধরতে হবে তাদেরও।
বাড়তি কিছু ফোর্স এসেছে। তাদের গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেওয়াটাও একটা বড় কাজ। না হলে তারা তো কিছুই বুঝবে না। তবে এসবে গোপনীয়তার বারোটা বাজছে। বিদ্যুতের বাহিনী কিংবা মাওবাদী, সকলেই তো সতর্ক হয়ে যাচ্ছে।
বোধহয় সেই কারণেই, দু’-চারদিন কিছু হলই না। রানিগঞ্জের টিমটাও নিখোঁজ। মাধাই রাতটা এসে থানায় ঘুমিয়ে যায়। কুসুমডিহা এক বুক আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটায়। বিকেল গড়ালেই সব যেন ফাঁকা ফাঁকা। পুলিশের টহল, চেকিং। দিনের বেলাতেও ভয়ের আবহ।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
রাহুল এবং সঙ্গে রঞ্জন, লিপিকাও ভাবতে শুরু করল, তাদের আর কতদিন এখানে থাকতে হবে? রাহুলের আফশোস, তাহলে কি অপেক্ষাটা চলতেই থাকবে, সুনেত্রা ধরা পড়বে না? নাকি বিদ্যুৎকে গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে টোপ হিসেবে ব্যবহার করবে? কিন্তু এটা বড় খেলা। উপরমহল অনুমতি দেবে না।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
মাধাই একটু চাপ খেলেও দমার ছেলে নয়। রাতে থানায় থাকলেও দিনে ঘোরাঘুরি যথেষ্ট। এমনকী, তার দলবল আর রেশমির বাহিনীকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। বেলার দিকে, বাজারে একটা পথসভাও হল। অন্য দলগুলো ক্রিয়াকলাপ বন্ধ রেখেছে। শাসকদল পুলিশের উপর চাপ বাড়াচ্ছে, এলাকা ঠিক রাখতে।
দিনকয়েকের মধ্যে হামলাটা হল না। কারণ, পুলিশি তৎপরতার খবর পেয়ে ছক বদলাল বিদ্যুৎ। কিন্তু তার মেজাজ চড়ল আরও। কী করে জানাজানি হল ছকটা? কী করে রানিগঞ্জ পৌঁছল পুলিশ? লিক হল কোথা দিয়ে?
আপাতত প্ল্যান স্থগিত। রানিগঞ্জের টিমটা ফিরে যাক। কাজের খোঁজে এরা মাঝেমধ্যে বেরোয়। ঘটনাই যদি কিছু না ঘটে, পুলিশকে ম্যানেজ করা যাবে। বিদ্যুৎ জহরকে বলল, ‘রানিগঞ্জ টিম পুরো বাদ। এখন কিছু হলে সন্দেহ হবে, ওরা ধরা পড়ে যাবে। বসিরহাটের দেবুকে খবর দে। ওপার বাংলা থেকে আসা দুটো ছেলেকে দিয়ে কাজ সারিয়ে, আবার ফেরত পাঠিয়ে দিক। অনেক সেফ।’
জহর বলল, ‘আর কটা দিন পরে হলে ভালো হত। জল একটু থিতিয়ে যাক।’
বিদ্যুৎ কথাটা শুনল, মানল।
ফলত কুসুমডিহাতে তখনই কোনও হামলা হল না। পুলিশি টহল কমল। বাড়তি ফোর্স ফিরে গেল। সন্ধের পর বাজার-হাট খোলা থাকতে শুরু করল।
রাহুল এবং সঙ্গে রঞ্জন, লিপিকাও ভাবতে শুরু করল, তাদের আর কতদিন এখানে থাকতে হবে? রাহুলের আফসোস, তাহলে কি অপেক্ষাটা চলতেই থাকবে, সুনেত্রা ধরা পড়বে না? নাকি বিদ্যুৎকে গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে টোপ হিসেবে ব্যবহার করবে? কিন্তু এটা বড় খেলা। উপরমহল অনুমতি দেবে না।
রাহুল এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, সাগরটিলার উপরেই ছদ্মপরিচয়ে ছিল সুনেত্রা আর বিষ্ণু। তার বিশ্বাস, এরা এখনও চারপাশে কোথাও আছে, কমরেড ব্রহ্মার ছত্রছায়ায়।
মাধাইরা তাদের সংগঠনের কাজও দিব্যি করে যাচ্ছে। রেশমিরাও তাতে যোগ দেয়। অন্যান্য দলের সঙ্গে এখন পাল্লা দিয়ে মিটিং মিছিল করছে মাধাই।
এর মধ্যে পোস্টমাস্টার তার ‘আই ক্যাম্প’ করে নিল। পরিচিত ডাক্তার আর সংগঠন এসে সাহায্য করল। বেশ ভিড়। অনেকের উপকার হল। সুমিতের আমন্ত্রণে এলাকার বহু মানুষ এসেছিলেন। মাধাই সদলে ছিল। চারপাশের গ্রাম থেকে চোখ দেখাতে অনেককে আসার ব্যবস্থা করেছিল তারা। রেশমি এসেছিল। খোঁচা দিয়ে গিয়েছে সুমিতকে।
সুমিত বলেছিল, ‘কেমন লাগছে ক্যাম্পটা?’ তিন সখীর মধ্যে দাঁড়িয়ে রেশমির জবাব, ‘আপনার তো আই ক্যাম্প অবধিই দৌড়। এখনই কোনও হামলা হলে তো সব বন্ধ করে সাগরটিলায় গিয়ে খাটিয়া পেতে ঘুমোবেন।’ গায়ে না মেখে সুমিত বলল, ‘কী করি বলুন। গোলমাল আমি ভয় পাই। তার চেয়ে এ-ই ভালো, নানাভাবে মানুষের উপকার করা।’
রেশমির জবাব, ‘এটাকে আমি খারাপ বলছি না। কিন্তু বৃহত্তর বিপদের সময় মানুষের পাশে না থেকে পালিয়ে যাওয়াটা স্বার্থপরতা, কাপুরুষত্ব।’
সুমিত বলেছে, ‘আরে, আপনি আমার সঙ্গে কি শুধু ঝগড়াই করে যাবেন?’
( চলবে)
…পড়ুন কুসুমডিহার কাব্য-এর অন্যান্য পর্ব…
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ২০: মানুষকে একজোট করতে চায় রেশমি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৯: দূত এবং দূতের দূত মারফত খবর গিয়েছে কুসুমডিহায়
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৮: টিলার ওপরের মহিলাদের নিয়ে পুলিশের কৌতূহল প্রবল
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৭: পল্টু জবার পিছনে খরচ বাড়িয়ে ইদানীং এদিক-ওদিক হাত পেতে ফেলছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৬: কমরেড ব্রহ্মা কতদিন পালিয়ে বেড়াবে?
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৫: প্রতিমাকে পাওয়া গেল কুসুমডিহায়, মিথ্যে ধর্ষণের মামলায় ফাঁসি হয়েছে তাঁর বরের
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৪: এখন খবরের শীর্ষে কুসুমডিহায় মাওবাদী হামলা আর কমরেড ব্রহ্মা
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১৩: কমরেড ব্রহ্মা তাহলে যেখানেই থাকুন, কুসুমডিহার ওপর নজর রেখেছেন
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১২: থমথমে কুসুমডিহাতে টহল দিচ্ছে পুলিশ
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১১: ছদ্মপরিচয়ে কুসুমডিহাতে প্রবেশ পুলিশ ফোর্সের
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১০: শান্ত কুসুমডিহা এখন হিংস্র হয়ে ফুঁসছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৯: কুসুমডিহাতে পুলিশ, নেতা, বুদ্ধিজীবী, মহিলা কমিশন, মিডিয়ার ভিড়
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৮: জঙ্গলমহলের তল্লাট থেকে উত্তাপ ছড়াল কলকাতার মিডিয়াগুলির স্টুডিওতেও
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৭: কুসুমডিহাতেই দেখিয়ে দেব আমরা মরে যাইনি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৬: পরিচয় যত বাড়ছে, সুমিত অনুভব করছে এলাকা গরম হচ্ছে
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৫: পশ্চিমগড়ের মৃতদেহর খবর এখনও কলকাতা সংস্করণে জায়গা পায়নি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৪: সভা আর প্রচার মানেই বন্দুক ধরা নয়
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ৩: ‘বন্দুক হাতে নেওয়া প্রত্যেকটা মেয়েকে সমর্থন করি’
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ২: সিস্টেমের দোষেই কুসমডিহাতে ফের অমঙ্গলের পদধ্বনি, সুমিতকে বোঝাল রেশমি
কুসুমডিহার কাব্য পর্ব ১: জঙ্গলমহলের কুসুমডিহার নতুন পোস্টমাস্টার সুমিত, জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে পারবে!