
ফুটবলের ইতিহাস, এমনকী জুটির ইতিহাস শুধুমাত্র ফুটবলের হয় না। কারণ রাজনীতি শব্দটি ক্রীড়া-ইতিহাসের শরীরে জড়িয়ে থাকে ভীষণভাবেই। আর্জেন্টিনার প্রশাসনিক নেতৃত্বে তখন আর ইসাবেল পেরন নেই। ’৭৬-এর সামরিক অভ্যুত্থানে এসে গেছে রক্ত, হিংস্রতা এবং জুন্টা সরকারের একের পর এক কুখ্যাত মুখচোখ। জুন্টা প্রেসিডেন্ট উগ্র দক্ষিণপন্থী জর্গে রাফায়েল ভিদেলা-র নেতৃত্বে দেশ যা পাচ্ছে তাকেই আঁকড়ে ধরে দেখাতে চাইছে স্বেচ্ছাচার ও মেকি উন্নয়ন। ঠিক এইসময় ’৭৮-এর বিশ্বকাপ।
৪.
রিভার প্লেটের হোম-গ্রাউন্ড বুয়েনস আয়ার্সের এস্তাদিও মনুমেন্টালে তখন খেলা প্রায় ডিসিসিভ। কাঠকয়লা নিভে গেলেও যেমন সামান্য আগুন লেগে শেষ সময়ে প্রবল জ্বলে, যাকে ইংরিজিতে বলে এম্বার, তেমনই এক এম্বার মুহূর্তে, ১১১ মিনিটে বল পেয়েছিলেন লিওপোল্ডো লুকে। ৯ নম্বর জার্সি। ডানদিক থেকে জোরালো শট পাখির মতো আটকালেন ডাচ গোলরক্ষক ইয়ান ইয়ংব্লুট। জুটির শেষ সাক্ষর হতে হতেও হল না। সাড়া মাঠ জুড়ে ছড়ানো ’৭৮-এর সিগনেচার কালার পেপারের ক্যানভাসে লিওপোল্ডো লুকের ওই শেষ গোলটা যদি হত…!

’৭৮-এর আর্জেন্টাইন বিশ্বকাপের সেই ৯-১০। লিওপোল্ডো লুকের ৯ নম্বরের পাশে মারিও কেম্পেসের ১০। বিতর্কিত, বর্ণময় ’৭৮-এর আর্জেন্টিনায় ড্যানিয়েল বার্তোনি, পাসারেল্লা, অস্কার আরদিল্লেসের পাশাপাশি লেথাল ডুও লুকে-কেম্পেস। এই ’৭৮-এর গল্পে আসার আগে একটু অন্য কথা। শুরুটা। ১৯৪৯-এর ৩ মে থেকে ১৯৫৪-এর ১৫ জুলাই। যথাক্রমে লিওপোল্ডো লুকে থেকে মারিও কেম্পেসের বয়সের ভেতর পাঁচ বছরের তফাত। লুকের সান্তা ফে থেকে ৪-৫ ঘণ্টা দূরত্বে কেম্পেসের বেল ভিল্লে। কর্ডোবা-রোজারিওর ভেতর মধ্যবর্তী ছোট্ট টাউন বেল ভিল্লেতে গেলে চোখে পড়বে ইতিউতি ফুটবল তৈরির কারখানা। আক্ষরিক ফুটবল তৈরির শহরতলি তৈরি করেছিল কেম্পেসকেও। সেই কেম্পেস, যিনি সেমিনাল বই ‘সকার ইন সান অ্যান্ড স্যাডো’-র পাতায় এডোয়ার্দো গ্যালিয়ানোর ভাষায়– ‘An unbreakable bronco who liked to gallop over the grass-carpeted in a snowfall of confetti, his shaggy mane flying in the wind.’ লুকে-কেম্পেসের দেখা, বোঝাপড়া, একসঙ্গে খেলার গল্প অনেকটা পরে। প্রথম একসঙ্গে খেলা ১৯৭৫-এর ৩ আগস্ট, কোপা আমেরিকায় ৫-১ গোলে জেতা ভেনেজুয়েলা ম্যাচে। লুকের আদ্যন্ত দেশীয় মাটির বিপরীতে কেম্পেসের মিশ্রিত রক্ত। ’৭৮-এর বিশ্বকাপের সময় লিওপোল্ডো লুকে দেশের এক নম্বর ক্লাবে, মাতাচ্ছেন রিভারপ্লেট। পাশাপাশি কেম্পেসের শুরুর দিকে আর্জেন্টাইন ক্লাব ইন্সটিটিউটো ক্লাবের রক্ত, যেখানে ছিলেন ’৭৮-এর আরেক সতীর্থ অস্কার আরদিল্লেসও, অথবা আজকের পাওলো দিবালার মতো ঝকঝকে তরুণ। ইন্সটিটিউটো থেকে রোজারিও সেন্ট্রালে তিনটে মরসুমে ৮৫ গোল করে গেলেন স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায়। গোল, গোল, গোল। ’৭৪-এর ভরাডুবি এবং সাফল্যবিহীন আর্জেন্টাইন ফুটবল-ইতিহাসকে পালটে দিতে এসে গেছেন টিংটিঙে রোগা ‘এল ফ্ল্যাকো’ সিজার লুই মেনোত্তি। সিগারেটের পর সিগারেট খাচ্ছেন। দীর্ঘ দেহে, উচ্চতা থেকে বুঝে নিচ্ছেন দলকে। এই মেনোত্তি কেম্পেসের জন্যেই একসময় জেদ থেকে বেরোলেন। শুধুমাত্র দেশীয় ফুটবলারদের নিয়ে দল তৈরির প্রতিজ্ঞা ভেঙে গেল পরপর দু’বার স্প্যানিশ পিচিচি ট্রফি জেতা মারিও অ্যালবার্তো কেম্পেস চায়োডির জন্য। ’৭৮-এর দলে এলেন নম্বর টেন। আছেন লুকে। আছেন বার্তোনি, আরদিল্লেস এবং গোলে দুর্ভেদ্য ‘এল প্যাটো’ ইউবাল্ডো ফিল্লোল। ’৭৮-এর বিউগল, শুনতে পেলো টিম মেনোত্তি।

ফুটবলের ইতিহাস, এমনকী জুটির ইতিহাস শুধুমাত্র ফুটবলের হয় না। কারণ রাজনীতি শব্দটি ক্রীড়া-ইতিহাসের শরীরে জড়িয়ে থাকে ভীষণভাবেই। আর্জেন্টিনার প্রশাসনিক নেতৃত্বে তখন আর ইসাবেল পেরন নেই। ’৭৬-এর সামরিক অভ্যুত্থানে এসে গেছে রক্ত, হিংস্রতা এবং জুন্টা সরকারের একের পর এক কুখ্যাত মুখচোখ। জুন্টা প্রেসিডেন্ট উগ্র দক্ষিণপন্থী জর্গে রাফায়েল ভিদেলা-র নেতৃত্বে দেশ যা পাচ্ছে তাকেই আঁকড়ে ধরে দেখাতে চাইছে স্বেচ্ছাচার ও মেকি উন্নয়ন। ঠিক এইসময় ’৭৮-এর বিশ্বকাপ। দেশের রাজনীতিতে এর চেয়ে ভালো সুযোগ কোথায়! অবশ্য এই যোগসূত্রে আসার আগে চলে আসুক ’৭৮-এর ডিটেলিং, প্লট টুইস্ট, এবং লুকে-কেম্পেস জুটির ম্যাজিক-টাচ।

২ জুন। হাঙ্গেরি ম্যাচ। যে কোনও বিশ্বকাপ শুরুর মুহূর্তেই আর্জেন্টিনার সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে লেগে থাকে অঘটন বা প্রায়-বিপর্যয় থেকে বেঁচে ফিরে আসা। ১০ মিনিটে হাঙ্গেরির পক্ষে ১-০। রাজনীতি, দর্শক, নীল-সাদা পতাকা স্তব্ধ। এবং এখানেই, ১৪ মিনিটে ৯ নম্বর জার্সির দীর্ঘ চুল-রাজকীয় গোঁফের লিওপোল্ডো লুকের ডান পায়ের শটে ১-১। পরে ড্যানিয়েল বার্তোনির পায়ে ২-১ করে স্বস্তি। কেম্পেস তখন আরেকটু পেছনে– আক্রমণ ভাগের অন্যতম, যদিও স্কোরশিটে আসেননি। অবশ্য সেই ১৪ মিনিটেই আশ্চর্য সমাপতনে তাঁরই ফ্রিকিক হাঙ্গেরির গোলরক্ষকের হাত থেকে বেরিয়ে গেলে, ফিনিশিং করেছিলেন লুকে। ক্রমশ লুকে-কেম্পেস জুটি তৈরি হচ্ছে, খাতা না খুললেও দীর্ঘ চুলের কেম্পেস মাঠ মাতাচ্ছেন। লুকের মতো রাজকীয় গোঁফ নেই। যদিও দু’জনকে পাশাপাশি রাখলে যে কোনও সত্তর-আশির রকব্যান্ডের সদস্য বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে ফ্রান্স। ফলাফল দেশের পক্ষে ২-১। অবশ্য ততটা সহজ হয়নি, যতটা স্কোর বলছে। কারণ ৭৩ মিনিটে আরদিল্লেসের পাস থেকে লুকের রং-রেঞ্জার শট ও গোলের পরে হয়ে গেছে ব্যক্তিগত দু’-দু’টি বিপর্যয়। অস্কার লুকে ভাই লিওপোল্ডোর খেলা দেখতে আসছিলেন। রাস্তায় ভয়ংকর গাড়ি দুর্ঘটনা। ভাইকে সমাহিত করে দলে ফিরলেন এমনিতেই স্বভাবশান্ত, আরও মুখচোরা হয়ে যাওয়া লিওপোল্ডো। অবশ্য সেই ফ্রান্স ম্যাচেই নিজের দ্বিতীয় বিপর্যয়। বাঁ কনুইতে চোট পেয়ে পরপর দু’টি ম্যাচ লিডিং গোলস্কোরার ‘দ্য পাল্পো’ বা ‘অক্টোপাস’ ছাড়া খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। পারবে তো টিম মেনোত্তি? কারণ পরের ইতালি ম্যাচেই হয়ে গেছে শোচনীয় ০-১। দ্বিতীয় পর্বে অন্য গেম-প্ল্যান। বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে খাতা না খোলা, দেশের হয়ে এর আগে টানা ১১টি ম্যাচে গোল না পাওয়া মারিও কেম্পেসের ঝড় দেখল নীল পৃথিবী। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই পোল্যান্ড ম্যাচ। লুকে না থাকায় টিমের ১০ নম্বরকে আরেকটু সামনে খেলালেন কোচ। ১৬ মিনিটে কেম্পেসের দুর্ধর্ষ হেডার দিয়ে স্কোর শুরু। ৭১ মিনিটে বাঁ পায়ের ম্যাজিকে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল। ঠিক পরের ম্যাচে ফিরলেন লুকে। একসঙ্গে আবার লুকে-কেম্পেস। ‘দ্য পাল্পো’ বা ‘অক্টোপাস’ লুকের পাশে ‘এল মাতাদোর’ কেম্পেস। অবশ্য ফেরার শুরুটা ভালো হল না। চূড়ান্ত এক ফিজিকাল গেম– ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার নিজস্ব ফুটবল-সৌন্দর্য উধাও হয়ে নিজেদের মধ্যে পা চালাচালিতে নির্বিষ গোলশূন্য ড্র লাতিন আমেরিকান ডার্বি। পরের ম্যাচে পোল্যান্ডকে ৩-১-এ উড়িয়ে দেওয়া ব্রাজিল তখন গোল-পার্থক্যে ৫, আর্জেন্টিনা ২। অর্থাৎ নক আউটে যেতে গেলে অন্তত ৪-০-র ব্যবধান প্রয়োজন কেম্পেসদের।

এবং এখানেই ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয়, অথবা কুখ্যাতির সেই এপিসোড। পেরু ম্যাচ। রোজারিও সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামের বিতর্কিত ২১ জুন। পেরুর দু’-দু’টি শট পোস্টে লাগল। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার পক্ষে ২-০ তখনও ততটা সন্দেহজনক হয়নি, যে দু’টির মধ্যে একটি ২১ মিনিটে কেম্পেসের গোল, ওয়ান-টু খেলে ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ১৫ গজ দূর থেকে দৃষ্টিনন্দন শট। ৪৫ মিনিট পরবর্তী সময়ে আশ্চর্য গা-ছাড়া পেরু। ৪৯, ৫০ মিনিটে পরপর জালে ঢোকালেন সেই জুটি, কেম্পেস-লুকে। ৪৯-এ কেম্পেসের ক্লোজ-রেঞ্জার, পরের মিনিটেই লুকের সিগনেচার হেডার, ৭২ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের ৫ নম্বর গোল। জুটি হিসেবে পারফেক্ট ফিনিশিং, যদিও সামগ্রিক ফুটবল-আবহে প্রশ্নচিহ্নের পর প্রশ্নচিহ্ন। পোল্যান্ড ম্যাচে গ্রেগর ল্যাটোর নিশ্চিত গোলমুখী হেডার আটকাতে কেম্পেসের গোললাইন হ্যান্ডবল, ফ্রান্স ম্যাচে একাধিক পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ফ্রান্সের বিপক্ষে যাওয়া, নক-আউটের আগে পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সবক’টি ম্যাচ এমন সময়ে কিক-অফ, যখন বাকি ম্যাচগুলির ফলাফল বুঝে নিয়ে খেলার সুবিধে পাওয়া যায়, এবং আগের পাঁচ ম্যাচে মাত্র ছ’ গোল খাওয়া পেরুর হঠাৎ আজেন্টিনা ম্যাচে ভেঙে পড়া রক্ষণ– এই সমস্তই তৈরি করেছিল ভিদেলার পরোক্ষ নজরদারির সম্ভাবনা এবং পেরু ম্যাচে স্পষ্ট ম্যাচ-ফিক্সিং তত্ত্ব। লুকে নিজেই বলছেন– “I can’t say I’m not proud of my victory. I didn’t realize. Rest of us didn’t it. We just played football.”

এতসব বিতর্কের পরেও কেন লুকে-কেম্পেস এবং টিম মেনোত্তির ফুটবল সম্মানের দাবি রাখে আর পেছনে লুকের এই ‘উই জাস্ট প্লেইড ফুটবল’ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সমস্ত বিতর্কের মাঝে নিজেদের সিগনেচার প্যাটার্ন উইভিং, ছোট ছোট পাস শুরু করে দিয়েছিল টিম মেনোত্তি। রঙিন কাগজের সিগনেচার ফাইনালে জ্বলেছিলেন নয়-দশ জুটি। গড়াপেটাতত্ত্ব বাদ দিয়েও কেম্পেসদের ছাড়া ’৭৮-এর ফাইনাল আর কাউকে ভাবা যায়নি। ঐতিহাসিক ২৫ জুন এস্তাদিও মনুমেন্টালে ৩৮ মিনিটে ১-০ সেই কেম্পেসের পায়েই। ৮২ মিনিটে ডিক নানিঙ্গার হেডে মাঠে হঠাৎ ডাচ প্রত্যাঘাত, স্তব্ধতা। ৯০ মিনিটে ৭১,০০০-এর ভিড়কে শকথেরাপির মতো দেওয়া রেনসেনব্রিঙ্কের আলতো শট গোলপোস্টে। সাইডলাইনে মেনোত্তি একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছেন। সমস্ত বড় জয়ের পেছনে একটা ছোট্ট ডেস্টিনি, চান্স ফ্যাক্টর থাকে। রেনসেনব্রিঙ্কের সেই গোলটা জালে ঢুকলে কী হত! উত্তর নেই। অবশ্য পোস্ট সবকিছু আটকে সুযোগ দিয়েছিল শেষবার। বলের হঠাৎ বাউন্সকে কাজে লাগিয়ে ডান পা কথা বলেছিল কেম্পেসের। বীভৎস গতি, উপস্থিত বুদ্ধি– পরিণতিতে ১০৫ মিনিটে সেই ২-১। এবং তার ঠিক দশ মিনিট পর ড্যানিয়েল বার্তোনির ৩-১। রঙিন কাগজ, টয়লেট পেপার ভরা রাজধানীর মাঠে তখন কেম্পেসদের দেখা যাচ্ছিল না। জুন্টা যা চেয়েছিল, হল। গোটা দেশ যা চেয়েছিল, হল। মেনোত্তি যা চেয়েছিলেন, হল। যার সিংহভাগ কৃতিত্ব লুকে-কেম্পেস জুটির। দেশের হয়ে কেম্পেসের ৪৩ ম্যাচে ২০টি গোলের খুব কাছাকাছি লুকের ৪৫ ম্যাচে ২২টি গোলের পরিসংখ্যান। কেম্পেসের বাঁ পায়ের ম্যাজিকের পাশে কথা বলা ডান পায়ের লুকে, এইটুকু বাদে খেলার ধরনে, পোজিশনিংয়ে, ক্ষিপ্রতায় অনেকটা মিল, ব্যক্তিগত যোগসূত্র, একে অপরকে নখের আয়নার মতো চেনা। একসঙ্গে খেলেছিলেন ১৭টি ম্যাচ, শেষ খেলা ’৮১-র ১ জানুয়ারি মন্টেভিডিওয় ব্রাজিল ম্যাচে। সমাপতন, ’৭৮-এ এরকম এক ব্রাজিল ম্যাচেই লুকে ফিরে এসেছিলেন চোট সারিয়ে। বিশ্বকাপে এর আগে দু’জনে একসঙ্গে একটি ম্যাচও খেলেননি, অথচ দারুণ শুরু করেও দ্বিতীয় ম্যাচেই লুকের চোট, দু’ ম্যাচ পরে ফিরে এসে সবকিছু ভুলে জুটির জাদু। কীভাবে পারলেন? প্রতিক্রিয়ায় কেম্পেস বলেছিলেন– ‘আই কান্ট এক্সপ্লেইন ইট। সামহাউ উই ক্লিকড ইমিডিয়েটলি।’ লুকের অবসর ’৮১-র ওই ব্রাজিল ম্যাচেই, কেম্পেস যদিও ’৮২-র বিশ্বকাপে খেলেছিলেন, প্রিয় নম্বর টেন তরুণ দিয়েগোকে দিয়ে নিজে পরেছিলেন এগারো নম্বর জার্সি, শেষ ম্যাচ বার্সিলোনায় অভিশপ্ত আরেকটি ব্রাজিল ম্যাচ। কেম্পেসের ব্যক্তিগত খাতায় গোলশূন্য ’৮২। স্মৃতিতে ’৭৮ এক ও অবিনশ্বর হয়ে থেকে গেল।

২০২১-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি। অতিমারির শিকার এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। চলে যাওয়ার আগে একমাথা চুল লুকের মুখে, শরীরের বয়সের অকাল ভার স্পষ্ট। তবে ৭১-এর লুকের পাশে ৬৬-র কেম্পেস তখনও ঝকঝকে, স্মার্ট। সতীর্থের খবরে শান্ত প্রতিক্রিয়া– ‘একজন আদ্যন্ত ভালো মানুষ এবং বন্ধুকে হারালাম।’ তখন তো হারানোর এবং পাওয়ার সন্ধিক্ষণে এক আশ্চর্য সময় ‘সান অফ মে’-র দেশে। তিন মাস আগেই চলে গেছেন দিয়েগো। আশ্চর্য বৈপরীত্যে আর কয়েকমাস পরে লিও মেসির নেতৃত্বে আসছে দু’-দুটো কোপা এবং ’৮৬-র ৩৬ বছর পর একটা দেশের সারারাত ট্যাঙ্গো নাচার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২।

যদিও লিও-ডি মারিয়াদের অনেক, অনেকটা আগে রিভারপ্লেট-রোজারিওয় যা খুশি করা শুরু করেছিলেন লুকে-কেম্পেস। সত্যি, ভীষণ সত্যি ‘গেম অফ দ্য পিপল’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সেই লেখার অংশটা– ‘Forty years ago, they could have walked on the waters of the River Plate.’
………….. পড়ুন জুটি কলামের অন্যান্য পর্ব ……………
পর্ব ৩ : পায়ে লেখা যৌথ-কবিতা
পর্ব ২ : অমরত্বের জাল কাঁপানো এক চিরকালের বন্ধুত্ব
পর্ব ১ : পাশে থাকা, পাসে থাকা
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved