কলকাতার সাংস্কৃতিক জগতে গত কয়েক দশকে শঙ্খদার (শঙ্খ ঘোষ) বাড়িতে রোববারের আড্ডার কথা সবাই শুনেছেন। সেখানে আমি খুব বেশি যেতে পারিনি, অপু ছিল ঈশ্বরচন্দ্র নিবাসে শঙ্খদার রোববারের আড্ডার প্রায় নিয়মিত আড্ডাধারী। আর আমাদের কম বয়সে রোববারের বিখ্যাত আড্ডা ছিল ২৮ নম্বর প্রতাপাদিত্য রোডে আশুদার বাড়িতে। সেখানে নিয়মিত আসতেন প্রফুল্লদা, কল্হন (গোবিন্দ চট্টোপাধ্যায়), দ্বারেশচন্দ্র শর্মাচার্য, সংকর্ষণ রায়, অজিতকৃষ্ণ বসু (অ.কৃ.ব), দেবল দেববর্মা, তাছাড়া নামী-দামি প্রকাশক ও সিনেমা জগতের অনেক মানুষ।
২০.
আমাদের বিয়ের দিনে প্রকাশিত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বই ‘দুটি প্রতীক্ষার কারণে’ কিন্তু দে’জ পাবলিশিং থেকে বেরুনো আশুদার প্রথম বই নয়। আমাদের প্রকাশনা থেকে তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই– ‘অপরিচিতের মুখ’। অপর্ণা, বরেন আর সমীরণের গল্প– যেখানে উপন্যাসের একেবারে শেষে এসে, ২২ বছর ধরে মনের কোণে আত্মধ্বংসী শূন্যতায় ভরাট হয়ে থাকা অপর্ণা বরেনের মধ্যে আবিষ্কার করে ‘সুড়ঙ্গ-তলে ধুলো মাটি মাখা এক নতুন মণি উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে।… চেনা মানুষের এক অপরিচিত মুখ’। রবীন দত্তের আঁকা মলাটে উপন্যাসটি আমি প্রকাশ করি বাংলা নববর্ষে, ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল। বইটা ছেপেছিলাম সাহিত্য পরিষদ স্ট্রিটে সন্ধ্যারানী পানের আদ্যাশক্তি এন্টারপ্রাইজ থেকে।
আশুদা ততদিনে খুবই জনপ্রিয় লেখক। তাঁর অনেক গল্প-উপন্যাস থেকে বাণিজ্যসফল সিনেমাও তৈরি হয়ে গেছে– সেই ১৯৫৬ সালে অসিত সেনের পরিচালনায় অরুন্ধতী দেবী অভিনীত ‘চলাচল’ দিয়ে বোধ হয় শুরু, পরের বছর অসিত সেন ফের অরুন্ধতী দেবীকে নিয়ে বানালেন ‘পঞ্চতপা’। সে-বছরই মুক্তি পেল উত্তম-সুচিত্রা জুটির ‘জীবনতৃষ্ণা’, পরিচালক অসিত সেনই। আবার ১৯৫৯ সালে অসিত সেনের বানানো ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবির জন্য সুচিত্রা সেন মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। ১৯৬৩-তে অজয় কর বানান সৌমিত্র-সুচিত্রা জুটির ‘সাত পাকে বাঁধা’, ১৯৬৬-তে শচীন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় মুক্তি পায় উত্তম-সুপ্রিয়া-সাবিত্রী অভিনীত ‘কাল তুমি আলেয়া’। এই ছবিতে আবার উত্তমকুমার নিজেই সংগীত পরিচালক ছিলেন। এইসব ছবির মধ্যে কোনও-কোনওটির সংলাপও আশুদারই লেখা। হিন্দিতেও ‘সফর’, ‘খামোশি’ ইত্যাদি ছবি হয়েছে তাঁর লেখা নিয়ে। তাই ১৯৭১-এ আমি যখন তাঁর বই প্রকাশের অনুমতি পেলাম সেটা আমাদের প্রকাশনায় একটা বড় ব্যাপার ছিল।
কিছুদিন আগে পুরনো ফাইলে ‘অপরিচিতের মুখ’ বইটির চুক্তিপত্র খুঁজে পেয়ে দেখলাম সেই চুক্তি আশুদার সঙ্গে হয়নি। চুক্তি হয়েছে বউদি মমতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ১৯.৯.৭০ তারিখে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের বয়ান অনুযায়ী আমাদের ১১০০ করে দু’টি সংস্করণে ২২০০ বই ছাপার অনুমতি দেওয়া হয় অগ্রিম ১০০০ টাকার বিনিময়ে। শর্ত ছিল ২০% রয়্যালটি ১৯৭১-এর এপ্রিল এবং অগাস্টে দু’-কিস্তিতে দিতে হবে। কথাগুলো বললাম এটা বোঝাতে যে, আশুদার বই সেসময় এমন জনপ্রিয় ছিল যে আমার মতো নতুন প্রকাশকও চার মাসে ২২০০ বই বিক্রি করে রয়্যালটি দেওয়ার কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়েনি।
আশুদা কাজ করতেন ‘যুগান্তর’ পত্রিকায়। তিনি দীর্ঘদিন ওই কাগজের রবিবাসরীয় পাতার সম্পাদক ছিলেন। ‘যুগান্তর’-এর পুজো সংখ্যাও তিনি করতেন। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র মতোই ‘যুগান্তর’ পত্রিকার দপ্তরেও আমার একসময় নিয়মিত যাতায়াত ছিল। বিভিন্ন সময়ে ওখানেই প্রফুল্লদা (প্রফুল্ল রায়), আশুদা, পরেরদিকে শ্যামলদা-র (শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়) টানে গিয়েছি। এক সময় প্রতি সপ্তাহে একাধিকবার ‘যুগান্তর’ পত্রিকার বাগবাজারের দপ্তরে আমি যেতাম। ও-পাড়ায় যাওয়ার বাড়তি আকর্ষণ ছিল ফেরার সময় মাসে অন্তত একদিন গোলবাড়ির কষা মাংস আর পরোটা খাওয়া।
আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম বইটির পর আমি পাই কিশোর গল্পের একটি আশ্চর্য সংকলন, ‘সিকেপিকেটিকে’। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত এই বইটির মলাট ও অলঙ্করণ করেন পূর্ণেন্দু পত্রী। বইটা ছেপেছিলাম গুরুপ্রসাদ চৌধুরী লেনে শক্তি রায়ের কালিমাতা প্রিন্টিং থেকে। দশটি মজাদার কিশোর গল্পের এই সংকলনের নাম, গল্পটির এমন অদ্ভুত নামকরণকে ভেঙে বুঝে নিলে কিন্তু ততটা আশ্চর্য লাগবে না। সিকে হল চন্দ্র কুণ্ডু, পিকে পূর্ণ কোনার, আর টিকে তপন কর। তিন দুর্দান্ত বন্ধু, পাড়ায় ‘শত্রুপক্ষের তারা ত্রাস, মিত্রজনের পরম ভরসা’। সেখান থেকে গল্পটা কিন্তু কোনও ধংসাত্মক পরিণতির দিকে না গিয়ে বরং একটা আত্মোপলব্ধির দিকে এগিয়ে যায়।
‘সিকেপিকেটিকে’র পর ১৯৭২-এ প্রকাশিত হয় ‘খনির নতুন মণি’ উপন্যাস। সব্যসাচী গুপ্ত এই বইয়ের প্রচ্ছদ করেছিলেন, ছেপেছিলাম মানিকতলা স্ট্রিটে প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানসী প্রেসে। তারপরেই ‘দুটি প্রতীক্ষার কারণে’– এই বইটির মলাট করেছিলেন গৌতম রায়। বইটি ছেপেছিলাম পটুয়াটোলা লেনে দিলীপকুমার চৌধুরীর সরস্বতী প্রেস থেকে। এরপর ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত হয় ‘আনন্দরূপ’ উপন্যাসটি। গৌতম রায়ের করা প্রচ্ছদ-সহ বইটি ছাপা হয়েছিল ঈশ্বর মিল লেনে সুকুমার সামন্তর বাণীশ্রী প্রেসে। এই লেখাটিতে আশুদার ছেলে জয়ের জীবনের ছায়া আছে। উৎসর্গের পাতায় লেখা ছিল– ‘বাবিনকে যারা ভালবাসে’।
আশুদার দুই সন্তান– মেয়ে সর্বাণী আর ছেলে জয়। জয় খুব অল্প বয়স থেকে মাসকিউলার ডিসট্রফি রোগে আক্রান্ত ছিল। একটু-একটু করে তার সমস্ত শরীর পঙ্গু হয়ে যায়। নিতান্তই অল্প বয়সে জয়ের মৃত্যু হয়। শুনেছি আশুদার অত্যন্ত নিকটজন উত্তমকুমার ‘আনন্দরূপ’ চলচ্চিত্রায়িত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গল্পের শেষটা তিনি বদলাতে চেয়েছিলেন, আশুদা আপত্তি করে বলেছিলেন যা সত্যি তাকে বদলে দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না। জয়ের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আশুদার আরেক প্রিয় বন্ধু। হেমন্তবাবু বাড়ি এসে জয়কে গান শুনিয়ে যেতেন। হেমন্তবাবুর মতো নির্মলা মিশ্র, বনশ্রী সেনগুপ্ত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, এমনকী, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, মান্না দে-ও এসেছেন তাঁদের বাড়িতে– অসুস্থ জয়কে গান শোনাতে।
কলকাতার সাংস্কৃতিক জগতে গত কয়েক দশকে শঙ্খদার (শঙ্খ ঘোষ) বাড়িতে রোববারের আড্ডার কথা সবাই শুনেছেন। সেখানে আমি খুব বেশি যেতে পারিনি, অপু ছিল ঈশ্বরচন্দ্র নিবাসে শঙ্খদার রোববারের আড্ডার প্রায় নিয়মিত আড্ডাধারী। আর আমাদের কম বয়সে রোববারের বিখ্যাত আড্ডা ছিল ২৮ নম্বর প্রতাপাদিত্য রোডে আশুদার বাড়িতে। সেখানে নিয়মিত আসতেন প্রফুল্লদা, কলহন (গোবিন্দ চট্টোপাধ্যায়), দ্বারেশচন্দ্র শর্মাচার্য, সংকর্ষণ রায়, অজিতকৃষ্ণ বসু (অ.কৃ.ব), দেবল দেববর্মা, তাছাড়া নামী-দামি প্রকাশক ও সিনেমা জগতের অনেক মানুষ। কাছেই ১৫ বি ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মাতৃকাশ্রম থেকে আসতেন তারাপ্রণব ব্রহ্মচারীজি। সেসময় রোববারগুলোয় সকালে ট্রাম বা বাসে করে রাসবিহারীর মোড়ে নেমে আমি পৌঁছে যেতাম আশুদার বাড়ির আড্ডায়। এই আড্ডায় আমার বন্ধু, লেখক কিন্নর রায়ও আসতেন।
ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে আমার এমন সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় যে আমি একের পর এক বই পেতে থাকি। দে’জ পাবলিশিং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬-এর মধ্যে পর পর প্রকাশিত হয় ‘রূপের হাটের বিকিকিনি’, ‘মেঘের মিনার’, ‘পুরুষোত্তম’ এবং ‘ফয়সলা’। ‘রূপের হাটের বিকিকিনি’ ছাপা হয় ঈশ্বর মিল লেনের বাণীশ্রী প্রেসে, মলাট গৌতম রায়ের। এই বইয়ের শুরুতেই লেখক সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় জানান, ‘উপন্যাসে এ-যাবত কোনও ভূমিকা লেখার প্রয়োজন হয়নি। এ-ও ভূমিকা না বলে কৈফিয়তই বলা যেতে পারে। আমার ‘অগ্নিমিতা’ উপন্যাসখানি পাঠকের মনে আছে কি না, জানি না। উপন্যাসখানি আমার প্রিয় গ্রন্থের একটি নানা কারণে দীর্ঘদিন এটি অপ্রকাশিত অবস্থায় পড়ে ছিল। প্রকাশক শ্রীমান সুধাংশুর আগ্রহে ওই উপন্যাসটিই নতুন নামে এবং নতুন কলেবরে উপস্থিত। ‘অগ্নিমিতা’র ওপর দিয়ে অনেক দিনের অনেক অহেতুক দুর্যোগ অপগত। সেই কারণে এই নাম পরিবর্তনের দুর্বলতা’। বইটি পরিমল গোস্বামীকে উৎসর্গ করা। ‘মেঘের মিনার’ বইটির মলাটও গৌতম রায়ের, ছেপেছিলাম বিধান সরণিতে নিশিকান্ত হাটই-এর তুষার প্রিন্টিং ওয়ার্কস্ থেকে। ‘পুরুষোত্তম’ও গৌতম রায়ের মলাট, ছাপা হয়েছিল মনমোহন বসু স্ট্রিটে সতীশচন্দ্র সিকদারের বন্দনা ইম্প্রেশন প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। এই বইটি আশুদা উৎসর্গ করেছিলেন– ‘জাদুকণ্ঠ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রিয়বরেষু’ লিখে। ‘ফয়সালা’র প্রচ্ছদশিল্পী ছিলেন ইন্দ্র মুখোপাধ্যায়, বইটি ছাপা হয় বাণীশ্রী প্রেসে। বইটির প্রথম সংস্করণ হাতে নিয়ে দেখছি বইয়ের শুরুতে আমি লিখেছিলাম, ‘বাংলা সাহিত্যে রঙ্গ মামার আবির্ভাব হল। গভীর সমুদ্রের তলায় ডুবে যাওয়া জাহাজের ভেতরকার সোনাদানা উদ্ধারের এবং সেই সঙ্গে এক চরমতম ফয়সলার এমন গায়ে কাঁটা দেয়া, বুক ঢিপ ঢিপ করা কাহিনী বাংলা সাহিত্যে আর কেউ লেখেননি।’
আশুদার সঙ্গে এমন নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠায় আমি ১৯৭৮ সালের অগাস্ট মাসের ৩ তারিখ তাঁকে একটা দীর্ঘ চিঠি লিখি,
শ্রদ্ধেয় আশুদা,
আপনার ভবিষ্যতের লেখা কিছু মাঝারি আকারের উপন্যাস প্রকাশ করার ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা এবং আবেদন শুনে আপনি আমাকে লিখিতভাবে জানাতে বলেছিলেন– সেই অনুযায়ী লিখছি:
বই ছাপার খরচ ক্রমশ এমন হারে বাড়ছে, যার দরুন অনেক মোটামুটি চালু বইয়েরও দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ ইত্যাদি মুদ্রণ খুব সহজ হচ্ছে না। এই পরবর্তী মুদ্রণগুলির বিক্রি স্বাভাবিকভাবেই কম। এবং অগ্নিমূল্যের বিজ্ঞাপন-ভার বহন করাও দুঃসাধ্য হয়ে হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় আপনি যদি বছরে একটি দুটি করে মোট সাত-আটখানা মাঝারি আকারের নতুন বই দশ পারসেন্ট (১০%) রয়েলটি হারে আমাদের দেন, তাহলে আমরা নিম্নলিখিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হতে পারি।
১) কোন সময় ওই বইগুলির পুনর্মুদ্রণে বিলম্ব হবে না, বা কোন বই বাজারে অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকবে না।
২) আমরা ঐ বইগুলোর বিশেষ বিজ্ঞাপন করব– এর ফলে বিক্রির হার
এবং মুদ্রণ সংখ্যা বাড়লে উভয় পক্ষেরই লাভ।
৩) আপনার ঐ বইগুলোর জন্য আমরা বিশেষ করে মফঃস্বলের নানা জায়গায় সেল্স্ রিপ্রেজেনটেটিভ পাঠাব।
৪) সবচেয়ে বড় সার্থকতা হবে এই যে, বিচ্ছিন্নভাবে বইগুলোর বিক্রির মিয়াদ একেবারে কমে গেলে সুলভ মূল্যে ঐ বইগুলো নিয়ে দুটি বা তিনটি উপন্যাস-সংকলন করার (গ্রন্থাবলী নয়) পরিকল্পনা নিয়েছি (যেমন শংকরের অনেক পুরনো বই নিয়ে আমরা সুলভ সংকলন-সংস্করণ করছি)। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখছি, অন্য পাবলিশারের প্রকাশিত অনেক বিক্রি করা পুরনো বই নিয়ে পরে সংকলন-সংস্করণ চালানো প্রায় দুঃসাধ্য। নতুন বইয়ের প্রাথমিক বিক্রির নানাবিধ সুবিধের ভিত্তিতেই একই প্রকাশকের পরবর্তী সংকলন পরিকল্পনায় পৌঁছনো সম্ভব।
আমরা আপনার দীর্ঘকালের স্নেহভাজন। আশাকরি (১০%) দশ পারসেন্ট রয়েলটি হারে বছরে দু একটি করে সাত-আটখানা মাঝারি সাইজের নতুন উপন্যাস আমাদের দেবেন– এবং আপনার সাহিত্য সৃষ্টি বাঙালী পাঠকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার সুযোগ আমরা পাব।
আমার প্রণাম নেবেন
ইতি
সুধাংশুশেখর দে’
আজকে ফাইল খুলে চিঠিটা পড়তে গিয়ে দেখি তার প্রথম পাতায় আশুদা ইংরেজিতে লিখেছেন ‘Received and Agreed. Separate letter of consent to follow’ নিচে সই করে তারিখ দিয়েছেন 4.8.78, অর্থাৎ পত্রবাহকের হাতেই প্রাথমিক সম্মতি জানিয়ে আমাকে চিঠিটা ফেরত পাঠিয়েছিলেন। আর তাঁর আনুষ্ঠানিক উত্তর লিখলেন এর আটদিন পরে, ১২ অগাস্ট। সেই চিঠিতে আশুদা লেখেন,
প্রীতিভাজনেষু,
তোমার ৩.৮.৭৮ এর লম্বা চিঠিখানা পত্রবাহক মারফৎ আমার হাতে পৌঁছেছে তোমার প্রস্তাব আমি লিখিতভাবে চাইলেও অত বিশদ করে লেখার দরকার ছিল না। ইদানীংকালের বইয়ের বাজারের সমস্যা আমার জানা আছে, সেই হিসেবে তোমাদের পরিকল্পনা মন্দ নয়। যাই হোক, তোমার প্রস্তাব মতো ট্রায়েল হিসেবে কয়েকখানা মাঝারি সাইজের উপন্যাস দশ পারসেন্ট (১০%) রয়েলটিতে আমি দিতে রাজি আছি। এবারের যুগান্তর পূজা সংখ্যায় ‘বাসকশয়ন’ নামে আমার যে উপন্যাসটি ছাপা হচ্ছে, সেটি উপরোক্ত রয়েলটি হারে তোমাদের গ্রন্থাকারে ছাপার অনুমতি দিলাম। তোমরা প্রচুর বিজ্ঞাপন করবে এবং দ্রুত ‘এডিশন’ করবে এটাই আমার প্রধান শর্ত জেনো। পরের উপন্যাস-সংকলন প্রসঙ্গও আমার মাথায় থাকল।
প্রীতি নিও’
আজ মনে হচ্ছে, আশুদা ‘এবারের যুগান্তর পূজা সংখ্যায়’ বলতে তার আগেরবারের পুজো সংখ্যার কথা বলতে চেয়েছেন। কেননা ‘বাসকশয়ন’ আমার চিঠি লেখার আগেই দে’জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে জানুয়ারি ১৯৭৮ সালে এমনকী, এপ্রিল মাসে তার দ্বিতীয় সংস্করণও হয়ে গিয়েছিল। হয়তো উনি বোঝাতে চেয়েছিলেন ওই বইটির পরবর্তী মুদ্রণের রয়্যালটির কথা। প্রথম সংস্করণ ‘বাসকশয়ন’ হাতে নিয়ে দেখছি সে-বইয়েরও প্রচ্ছদ গৌতম রায়ের করা এবং ছাপা তুষার প্রিন্টিং ওয়ার্কস্ থেকে।
তবে পরের বছর উনি আমাদের শর্তে নতুন বই দিয়েছিলেন। ১৯৭৯-র ৩ জানুয়ারি একটি চিঠিতে তিনি লিখছেন,
“… তোমার ৩.৮.৭৮ এর প্রস্তাব এবং আমার ১২.৮.৭৮ এর অনুমোদন পত্র অনুযায়ী এবারের যুগান্তর পূজা সংখ্যায় প্রকাশিত আমার ‘আরো একজন’ উপন্যাসখানি তোমাদের গ্রন্থাকারে প্রকাশের অনুমতি দিলাম। বিজ্ঞাপন ও প্রচারের ব্যবস্থা জোরদার করো।…”
‘আরো একজন’ ১৯৭৯-এর এপ্রিলে প্রকাশিত হয়। এখন নতুন বই খুলে দেখছি ২০১৮ পর্যন্ত বইটির আটটি সংস্করণ হয়েছে। প্রথমবার বইটি ছেপেছিলাম বাণীশ্রী প্রেসে। এই বইটির সাফল্যে ৮.১.৮০ একটি চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘… ‘আরো একজন’ বিক্রির খবর শুনে খুশি হলাম। অধিক প্রচার এবং বিজ্ঞাপনের সুফল আছেই।’ এই চিঠিতে তিনি ১৯৭৯-র শারদীয় ‘অমৃত’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দিনকাল’ উপন্যাসটি প্রকাশের অনুমতি দেন। ১৯৮০-র এপ্রিলে ‘দিনকাল’ প্রকাশিত হয়। গৌতম রায়ের মলাটে বইটা ছেপেছিলাম বলাই সিংহ লেনে বীণাপাণি মিশ্রর বীণাপাণি প্রেস থেকে।
১৯৭৮-এর এপ্রিলে প্রকাশিত হয় ‘পিন্ডিদার গপ্পো’। সুবোধ দাশগুপ্তের প্রচ্ছদ অলংকরণ সহ বইটি ছাপা হয়েছিল সাহিত্য পরিষদ স্ট্রিটে অশোককুমার চৌধুরীর চৌধুরী প্রিন্টিং ওয়ার্কস্ থেকে। বাংলা কিশোর সাহিত্যে দাদা সিরিজ চিরকালই খুব জনপ্রিয়– ফেলুদা, টেনিদা, ঘনাদার মতোই আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পিন্ডিদা। এই সিরিজে ১৯৮২-তে প্রকাশিত হয় ‘লিডার বটে পিন্ডিদা’, ১৯৮৬-তে পিন্ডিদার পঞ্চবাণ আর আশুদার প্রয়াণের পর ১৯৯১-তে ‘পিন্ডিদার রিটায়ারমেন্ট’। পিন্ডিদার নামের পিছনেও ‘সিকেপিকেটিকে’র মতো মজা আছে। ‘লিডার বটে পিন্ডিদা’ উপন্যাসে পিন্ডিদার চমৎকার পরিচয় আছে– ‘পিন্ডিদা রত্নটি কে বুঝতেই পারছ। হ্যাঁ, সেই প্রদীপনারায়ণ দত্ত, ব্রেজিলের বাছাই এগারো জনের ফুটবল চূড়ামণি পি.এন. ডি. যার পায়ে বল পড়লেই অনুরাগীদের আকাশ-ফাটানো চিৎকারে আর উল্লাসে যে পি.এন. ডি. থেকে পিন্ডি হয়ে বসেছিল– আর অসময়ে হাঁটুর মালাইচাকি সরে যাওয়ায় যে সেখানকার লক্ষ লক্ষ ফ্যানদের চোখের জলে ভাসিয়ে আর তাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে এসে এই বর্ধমান বাবুগঞ্জের মাঠের আড্ডায় আমাদের লিডার হয়ে বসেছে– সেই পিন্ডি মানে পিন্ডিদা। সবজান্তা, সর্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ আমাদের দলের মুকুটমণি পিন্ডিদা’। ২০০৫-এর বইমেলায় আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ‘পিন্ডিদা সমগ্র’ আর ‘কিশোর অমনিবাস’ এক মলাটে নিয়ে আসা হয়। অপু তখন নতুন প্রকাশনায় এসেছে। তার ইচ্ছেতেই এই সংকলনে একদিকে আছে ‘পিন্ডিদা সমগ্র’ অন্যদিকে ‘কিশোর অমনিবাস’। মানে একটাই বই দু’-দিক থেকে পড়ার মতো করে বানানো।
এরপর আশুদা পনেরো পারসেন্ট রয়্যালটি চেয়ে আমাকে চিঠি লিখে দু’টি বই দেন, ‘সবুজ তোরণ ছাড়িয়ে’ আর ‘সজনীর রাত পোহাল’– দু’-ক্ষেত্রেই শর্ত দিয়েছিলেন পাঁচ হাজারের সংস্করণ ছাপতে পারব। ‘সবুজ তোরণ ছাড়িয়ে’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৪-র জানুয়ারিতে। বইটি ছেপেছিলাম রমাপ্রসাদ রায় লেনে অন্নপূর্ণা পালের শ্রীদুর্গা প্রিণ্টিং ওয়ার্কস থেকে, প্রচ্ছদ বিজন ভট্টাচার্যের। ‘সজনীর রাত পোহাল’ প্রকাশিত ১৯৮৬-এর এপ্রিলে। এই বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন সুধীর মৈত্র।
১৯৮৭-’৮৮ সালে আশুদা আমাদের নিজেদের ‘কলেজ স্ট্রীট’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেন ‘পরকপালে রাজারানী’। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি আর এপ্রিলে দু’টি খণ্ডে উপন্যাসটি দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির অসামান্য প্রচ্ছদ করেছিলেন সুব্রত চৌধুরী। প্রথম খণ্ডটি ছেপেছিলাম ভোলানাথ পাল লেনে নেপাল চন্দ্র পানের সোনালি প্রেসে এটুকু মনে আছে। জীবনের প্রায় শেষবেলায় পৌঁছে গিয়ে বিপুল পরিশ্রমে তিনি ‘পরকপালে রাজারানী’ ধারাবাহিকভাবে লেখেন। আয়তন ও চিন্তায় এটিই তাঁর শেষ বড়ো মাপের উপন্যাস। উপন্যাসের পটভূমি উনিশ শতকের কলকাতা যখন বাবু-বিবি-বাইজি বিলাস, বেড়ালের বিয়ে, ঘুড়ি ওড়ানো, পায়রা ওড়ানো নিয়ে একশ্রেণির বাঙালি উচ্চবিত্ত যথেষ্ট পরিমাণে মেতে থাকলেও ইংরেজদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উপস্বত্বভোগী নব্যজমিদারদের মধ্যে থেকেই জন্ম নিয়েছিল আর এক ধরনের শিক্ষাপ্রিয়, শিক্ষাবিস্তারী জমিদারকুল। এই উপন্যাসের ঘোষচৌধুরী বংশ হয়তো-বা তেমনিই কোনও ধারা বহনকারী শাসক স্রোতের অংশ। শুধুমাত্র লাঠি, সড়কি, তলোয়ার, বন্দুকে ভর না করে; লাঠিয়াল, বরকন্দাজ পাঠিয়ে তারা জমি ও নারী দখলে মেতে থাকেনি জীবনভর। সেই জমিদার পরিবার ও তার অজস্র শাখা-প্রশাখা নিয়ে এই আখ্যান। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, বালানন্দ ব্রহ্মচারী– প্রত্যেকেই এই আখ্যানের আলো হয়ে থেকেছেন তাঁদের নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।
বালানন্দ ব্রহ্মচারীজির কথায় তেজি আর জেদি মেয়ে রানী কীভাবে সমস্ত জাগতিক বাধা-বিপত্তি তুচ্ছ করে– প্রবল জেদ, উপস্থিত বুদ্ধি, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে বিজয়িনী হল আর সেই সঙ্গে হয়ে উঠল সত্যিকারের ‘রানী’, তারই বিবরণ এই উপন্যাসটি।
আশুদার শেষ যে-উপন্যাসটি আমরা প্রকাশ করি সেটি ‘আশ্রয়’। এই উপন্যাসটি ১৩৯০-এর শারদীয় ‘প্রসাদ’ পত্রিকায় বেরিয়েছিল। কিন্তু তখন তিনি শারীরিকভাবে লেখার মতো অবস্থায় ছিলেন না। মুখে মুখে বলে যেতেন আর লিখে নিতেন তাঁর কন্যা সর্বাণী। পত্রিকায় ছাপার পরে আশুদা এই লেখাটিকে বই করতে চাননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে-লেখা নিজের হাতে লেখননি, তা বই করা উচিত নয়। কিন্তু ১৯৮৯-এর ৪ মে তাঁর প্রয়াণের প্রায় দু’-বছর পর ১৯৯১ সালের এপ্রিলে সর্বাণী বইটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। সর্বাণীর বিশ্বাস ছিল, ‘আশ্রয়’-এর একমাত্র আশ্রয় পাঠক-মন।’
এসবের অনেক আগে ১৯৭৯-র ২৭ ডিসেম্বর আমি আশুদাকে একটি চিঠিতে লিখেছিলাম,
‘আপনার ‘নিষিদ্ধ বই’ নামের প্রবন্ধ গ্রন্থটি দীর্ঘকাল অপ্রকাশিত অবস্থায় পড়ে আছে। আপনার প্রাক্তন প্রকাশক মিত্রালয় ওই বইটি আর ছাপবেন বলে মনে হয় না। আমরা…
উক্ত প্রবন্ধ গ্রন্থটি পুনর্মুদ্রণ করতে আগ্রহী। আপনি অনুমতি দিলে খুশি হব।…’
ইতিবাচক উত্তর-সহ আশুদার চিঠি পেলাম এক সপ্তাহের মধ্যেই। তবে বইটি প্রথম প্রকাশ করতে কিছু সময় লেগে যায়। ১৯৮১-র অগাস্টে আমি বইটি প্রকাশ করলাম। তখনকার নতুন রেওয়াজ অনুযায়ী, বইয়ের গায়ে একটি ট্রান্সপারেন্ট প্লাস্টিক জ্যাকেট জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আশুদার মতো সফল গল্প-উপন্যাস লেখকরা খুব বেশি প্রবন্ধ লিখতেন না। লেখক-প্রকাশক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যের প্রকাশনা মিত্রালয় একসময়ের খুবই নামী প্রকাশনা ছিল। গৌরীশঙ্কর নিজে সুলেখক তো ছিলেনই, প্রকাশনাতেও সুরুচির ছাপ রেখেছিলেন। তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত নিকটজন ছিলেন। বিভূতিভূষণের একাধিক বইয়ের প্রকাশক ছিলেন তিনি। কিন্তু আমি যে সময়ের কথা বলছি ততদিনে ‘নিষিদ্ধ বই’-এর মতো মিত্রালয়ের অনেক বই-ই আউট অফ প্রিন্ট ছিল। যাই হোক, প্রমথনাথ বিশীকে উৎসর্গ করা ‘নিষিদ্ধ বই’ একজন আদ্যন্ত আধুনিক মনের শিল্পীর পক্ষেই লেখা সম্ভব বলে আমার মনে হয়। এ-বই সর্বতোভাবে সেনসরশিপের বিরুদ্ধে– তা সে যে কারণেই হোক না কেন। ‘নিষিদ্ধ বই’ আসলে ৯টি প্রবন্ধের সংকলন– ‘সূর্য ঘোরে না পৃথিবী ঘোরে’, ‘তরুণ ভের্টরের শোক’, ‘ফাউস্ট’, ‘রুসোর জবানবন্দী’ ১ এবং ২, ‘কাঁদিদ’, ‘দি ক্রয়ৎসার সোনাটা’, ‘ইউলিসিস’, ‘লেডি চ্যাটারলিজ লাভার’। বইটির শুরুতে লেখক উনিশ পাতা জুড়ে ‘গোড়ার কথা’ নামে একটি দীর্ঘ ভূমিকা লিখেছেন নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে। আশুদা ছিলেন লেখকের নির্বাসন, কারাদণ্ড, প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে। আজ যখন সলমন রুশদির ওপর হামলার কথা খবরের কাগজে পড়ি, তখন আমার আশুদার ভূমিকার শেষ কয়েকটা অনুচ্ছেদের কথা মনে পড়ে যায়,
‘…অবাধ মুক্তি চাই সত্যান্বেষী সাহিত্যসেবীর। সেই অন্বেষণে মতভেদ থাকতে পারে, ভুল হতে পারে। ভুল হলে তার মাশুল তো এমনিতেই পূরণ হচ্ছে পাঠকের অনাদরে। এর ওপর আবার তার স্বাধীনতার গণ্ডি টেনে দেওয়া কেন ? নিষেধের ভ্রুকুটিতে আগেই তাকে বিভ্রান্ত করা কেন? …
… স্বাধীনতা এবং মুক্তি ছাড়া যেমন কোনো বড় সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয়, তেমনি লেখকের দিক থেকেও তার রচনার মধ্যে সূক্ষ্ম এবং সৃজনধর্মী দায়িত্ববোধ না থাকলে সে-সাহিত্য বা সে-রচনা কোনদিন বড়ও হয় না, টেকেও না। সাহিত্যগুণহীন নিছক যৌনচর্চা অশ্লীলও বটে এবং সর্বতোভাবে বর্জনীয়ও বটে। কিন্তু এই গ্রহণ বা বর্জনের মানদণ্ড থাক সচেতন সমাজের হাতে আর পাঠকের হাতে। তাদের বিচার যে ভ্রান্ত নয়, যুগ যুগ করে সেটা প্রমান হয়েছে। একটা লঘুস্তরের গ্রন্থও আজ পর্যন্ত কালজয়ী হয়নি। আবার তাদের বিচারে গৃহীত আর সেন্সরের বিচারে নিগৃহীত বহু রচনা অমরতার পরমায়ু লাভ করেছে।’
এই লেখার শেষে তিনি জন মিলটনের একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন যেটি বই সম্পর্কে প্রকৃত ভাবুকের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেই আমার মনে হয়, “He who kills a man kills a reasonable creature, God’s image; but he who destroys a good book kills reason itself, kills the image of God, as it were, in the eye. Many a man lives a burden to the earth, but a good book is the precious life-blood of a master-spirit, embalmed and treasured on purpose to a life beyond life.”
লিখন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
……………………ইতি কলেজ স্ট্রিট-এর অন্যান্য পর্ব……………………
পর্ব ১৯: ‘লেখা বড় হচ্ছে’ অভিযোগ আসায় খুদে হাতের লেখায় পাণ্ডুলিপি দিতেন প্রবোধবন্ধু অধিকারী
পর্ব ১৮: দু’বছরের মধ্যে সংস্করণ না ফুরলে অন্য জায়গায় বই ছাপার চুক্তি ছিল শরদিন্দুর চিঠিতে
পর্ব ১৭: পূর্ণেন্দু পত্রীর বাদ পড়া প্রচ্ছদ ও দিনেশ দাসের কবিতার শ্রেষ্ঠ দিনগুলি
পর্ব ১৬: সব প্রকাশনার যাবতীয় বইয়ের হদিশ পাওয়া যেত ‘সম্মিলিত গ্রন্থপঞ্জী’তে
পর্ব ১৫: নিছকই একটা পত্রিকা নয়, ‘কলেজ স্ট্রীট’ আমাদের আবেগ
পর্ব ১৪: খুদে পাঠকদের জন্য মিনিবই তৈরির কথা প্রথম ভেবেছিলেন অভয়দা
পর্ব ১৩: কয়েকটি প্রেসের গল্প
পর্ব ১২: দীর্ঘায়ু বই ও আইয়ুব পরিবার
পর্ব ১১: প্রেমের নয়, অপ্রেমের গল্প সংকলনের সম্পাদনা করেছিলেন সুনীল জানা
পর্ব ১০: ছোট্ট অপুকে দেখেই রঙিন ছবিতে ভরা টানটান গল্পের বই করার ইচ্ছে জেগেছিল
পর্ব ৯: চানঘরে গান-এ সত্যজিৎ রায়ের চিঠি থাকায় ব্যাপারটা গড়িয়েছিল কোর্ট কেস পর্যন্ত
পর্ব ৮: প্রকাশক-লেখকের কেজো সম্পর্কে বুদ্ধদেব গুহর বিশ্বাস ছিল না
পর্ব ৭: পুজো সংখ্যায় না-বেরনো উপন্যাস বই আকারে সুপারহিট
পর্ব ৬: মানবদার বিপুল অনুবাদের কাজ দেখেই শিশির দাশ তাঁর নাম দিয়েছিলেন– ‘অনুবাদেন্দ্র’
পর্ব ৫: সাতবার প্রুফ দেখার পর বুদ্ধদেব বসু রাজি হয়েছিলেন বই ছাপানোয়!
পর্ব ৪: লেখকদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই লিখতে হয়, প্রফুল্ল রায়কে বলেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র
পর্ব ৩: পয়লা বৈশাখের খাতায় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মজাচ্ছলে লিখেছিলেন, ‘সুধাংশুরা রাজা হোক’
পর্ব ২: বাংলা মাসের সাত তারিখকে বলা হত ‘গ্রন্থতিথি’, বিজ্ঞাপনেও বিখ্যাত ছিল ‘৭-ই’
পর্ব ১: সত্তরের উথাল-পাথাল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আমি প্রকাশনার স্বপ্ন দেখছিলাম