
হাসির প্রাগ্-ইতিহাস থেকে এ-কাল অবধি টানলে দেখা যাবে এদেশে হাসিও নানান সামাজিক স্তরে ইউরোপের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে, আর আমাদের নিজেদের শর্তে বেঁচে থেকে এখন একটা জটিল জাল রচনা করেছে। ভোজপুরি বিয়ের গান, কিংবা আমাদের পুরুলিয়ার যৌন সংগীত যাঁরা শুনেছেন তাঁরা জানেন, সেখানে ‘রতি’ থেকে ‘হাস’ কত সহজে চলাফেরা করে। এর থেকে বোঝা যায় ভারতে আধুনিকতা আর মধ্যযুগ দিব্যি একইসঙ্গে গলাগলি চলে। সমাজটার নানা মানুষ নানা যুগ বয়ে নিয়ে চলেছেন। এটাই তার শক্তির জায়গা। ঘৃণার গোমড়ামুখো মিছিলে হাসির কার্নিভাল যদি গোঁত্তা মারতে পারে, বাঁচার আশা আছে।
ঘোড়া দেখলেই সবার পায়ে বেমালুম বাত। কোনও কিছু লিখতে গেলে এই তেজি প্রাণীর চলাফেরা মনে আসে। সোজা গট গট করে কিছু যে বলে যাব, এমন কনফিডেন্স কস্মিনকালেও ছিল না। আড়ে আড়ে কোনাকুনি চলতে গিয়েও লজ্জায় মাথা কাটা যায়। তাই আড়াই চালে ভাবি। বাধা টপকে আদার ব্যাপারীও মোক্ষম ঘরটিতে গিয়ে বসতে পারে চোখের পলকে। কাটাকুটি– সে পরের কথা। তবে নিওলিথ স্তব্ধতায় না হোক মহীনের পোষা জীবটির আপন মনে ঘাস খাওয়ার দৃশ্য নিউটাউনেও দেখা যায়, সূর্যাস্তে, সন্ধ্যায়। স্যুররিয়াল। বিষাদ মন্থর। দিনশেষের লালচে আলোয় পিঠের ভাবনা-ক্ষতগুলো চিক চিক করে। কারও হাসি পায়, কারও চোখে জল আসে।
…………………………………………..
১২.
বীভৎস মজা

যেখানে দিনটা কেটে যায়, নানারকম শব্দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুনি মেয়েদের হাসাহাসি, আর হুল্লোড়। আর দিনের শেষে, গাছ-ভরা পাখিদের কলরব। পাখিদের নিয়ে তেমন সমস্যা নেই, ব্যাপারটা প্রাকৃতিক। কিন্তু মেয়েদের হাসি? আমাদের দেশে মেয়েরা যে এখনও হাসে, এবং সুযোগ পেলেই হাসে– সেই সত্যিটা অবাক করে দেয়। সোনালি বিবি নামক মেয়েটির কথা মনে আসে, এই এতদিনে বাংলাদেশের জেল থেকে বেরিয়ে, তার নিজের ঘরে ফিরে সে কি হাসবে না কাঁদবে? ওদিকে আমাদের পাড়ায় রাত্তির প্রায় ন’টার সময়, ইলেকশন কমিশনের নির্বাচিত বিএলও দিদিমণি, মাটিতে কাগজ পেতে বসে ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিলেন। ভদ্রমহিলা স্কুলশিক্ষক, অথচ মানুষ হিসেবে সারাদিনে ন্যূনতম প্রাপ্য সম্মানটুকুও জোটেনি। বাড়ি থেকে বাচ্চা ফোন করছে। সামনে ছড়ানো কাগজ। সকালে ভোটারের বাড়ির কুকুর তাড়া করেছিল। পায়ের নখ উলটে গিয়েছে। হেসে জিগ্যেস করলেন, ‘ভিডিও তুলছেন না তো।’ একটা বিকট রাক্ষুসে হাসি সারাক্ষণই টের পাই। হাড় হিম হয়ে যায়। দুনিয়ার সব মধুর অকারণ হাসি ঢাকা পড়ে যায় তখন। লোকে বলে, গম্ভীর মানুষ। একলা ঘরের কোণে থাকে…
হাসি নিয়ে কতদিন ধরে কতরকমের কাণ্ড যে দেখলাম। রাস্তা দিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে যাওয়া আধপাগলা মানুষটার দিকে রকে এসে বসে থাকা সন্ধেবেলার বাবু থেকে রাতের বেলার যুবক, ছুঁড়ে দিচ্ছে একটা-দুটো বাছাই করা শব্দ, আর তারপর তুবড়ির মতো খিস্তির বন্যায় হাসিতে গড়িয়ে পড়া নিত্যপুজো চলছে তো চলছেই। বরানগর অঞ্চলে, কবি ভাস্কর চক্রবর্তী লক্ষ করেছিলেন, কীভাবে আধপাগলাদের দায়িত্ব নিয়ে পুরো-পাগলে পালটে দিচ্ছে আমাদের নীতিবাগীশ পাড়ার লোকেরা। এখনও কুকুরের ল্যাজে কালীপটকা বেঁধে হাসি আর হুল্লোড়ের আড়ালে পাড়াগুলো ওইসব রাবণের চিরকেলে চিতা বরাবর জ্বেলে রেখেছে। নিষ্ঠুরতার সঙ্গে হাসির সম্পর্ক এক্কেবারে গোড়া ঘেঁষে। যত কড়া পাকের নিষ্ঠুরতা তত ভুবন-কাঁপানো হাসি। ক্লাস সেভেনে সেবার স্কুলের একচেটিয়া ভীম বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল। খুব মোটাসোটা ছিলাম না, কিন্তু হাতের কাছে আমাকে পেয়ে নাটকের দায়িত্বে থাকা মাস্টারমশাই আমাকেই ভীম সাজালেন। একটা গদা পেলাম। একটু ডায়ালগ। সঙ্গে ভোজপুরি গালপাট্টা। মনটা ভারি খুশি হয়ে গেল। দুঃশাসনকে পেড়ে ফেলে তার বুকের ওপর উঠে রক্ত খাওয়ার দৃশ্য ক্লাইম্যাক্স। খানিকটা আলতা, তুলোয় ভিজিয়ে মুখে-চোখে মেখে সব ঠিকই ছিল। কিন্তু রক্তখেকো ‘ভীমের অট্টহাস্য’ কিছুতেই ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। কী করা যায়? কিছু না পেরে, লাল ফুটলাইট আর মাঠ-ভর্তি দর্শকের সামনে প্রাণঘাতী এক চিৎকার করে বসলাম। তাতে দুঃশাসনের মটকা ভেঙে কানে তালা লাগার জোগাড়। আলো নিভিয়ে ড্রপ ফেলে দৃশ্য শেষ হল। ওই জুগুপ্সার সঙ্গে মানে গা-ঘিনঘিনে ব্যাপারে খামোকা নাট্যকার অট্টহাস্য লাগিয়েছিলেন কেন? তার মানে এ-হাসির কাজ ঠিক হাসি নয়, বিটকেল ভাব আরও চাগিয়ে দেওয়া। ক্লাস সেভেনে সেসব ভারতীয় রীতিনীতি বুঝতে পারিনি, তাই অভিনয়েও খামতি রয়ে গেল। তারপর থেকে অট্টহাস্য প্র্যাকটিস করে করে যে কোনও স্থানে-অস্থানে তা করে দেখাতে পারি। রোজকার বীভৎস কারবারের পর বাড়ি ফিরে সেই অপারগ অট্টহাসি হেসে নিতে হয়। নইলে বাঁচা শক্ত।

হাসি নানা রকমের– এ আমাদের সবার জানা। এই বছর ১০-১২ আগে ‘পাহাড় হাসছে’, ‘জঙ্গল হাসছে’ এই ধরনের সরকারি বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে সেকালের বিরোধী নেতা তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, হাসছে তো ঠিকই কিন্তু ক্যামন করে হাসছে? খ্যাক খ্যাক করে হাসছে? না কি ফিক ফিক করে হাসছে? ক্যামন করে হাসছে? এই জিজ্ঞাসার কোনও সদুত্তর না-পেয়ে তিনি দলবল নিয়ে সবসুদ্ধ বিদায় নিলেন। এই ভেরিয়েশনটা হাসির প্রকাশের যতখানি, ততটা ভেতরকার ব্যাপার নয়। কিশোরকুমার এ-নিয়ে গান গেয়েছেন, ‘এমনও হাসি আছে বেদনা মনে হয়/ জলে ভরে দু-নয়ন, সুখেও কেঁদে ওঠে মন’। ‘জোকার’ সিনেমায় জোকারের হাসি সারাক্ষণই কান্না। আমাদের দেখা সার্কাসগুলোতেও যে সব নির্যাতন আর শারীরিক অত্যাচার অতি ঢ্যাঙা কিংবা খর্বকায় মানুষগুলো করে দেখাতেন, সেখানে চোখের জল হাসির চেয়ে বেশি। এর থেকে বোঝা যায়, মানুষের নিষ্ঠুরতার বহর কালেদিনে হাসির মাথায় পা দিয়ে বেড়েছে। যাঁরা রিল দেখেন, দেখবেন কুকুরদের ভয় দেখিয়ে অথবা প্র্যাঙ্ক দেখে কীরকম খ্যা খ্যা করে আমরা হাসছি! এই প্র্যাঙ্ক নিয়ে ২০১৯ সালে ‘আদাই’ (কাপড়) নামে একটা চমৎকার তামিল থ্রিলার বানিয়েছিলেন রথনা কুমার। যেখানে লোকের পিছনে লাগতে গিয়ে একটা বিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটায় নায়িকা অমলা পল। আর তারপর সেই হাসির ভয়ংকর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে হাসিটাকে ফাঁসির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়। হাসতে হাসতে প্রায় খুন হয়ে যাওয়া আর কী! তবে হাসির সঙ্গে যন্ত্রণার কাছাকাছি সম্পর্ক আছে, এটা কোনও নতুন কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ ওঁর ‘পঞ্চভূত’-এ দুটো লেখায় এ নিয়ে লিখেছেন। ‘কৌতুকহাস্য’ আর ‘কৌতুকহাস্যের মাত্রা’। দু’ নম্বর লেখাটায় হাসি যে কষ্টের সঙ্গে প্রায় একই পর্যায়ে পরে, মাত্রা বদলে গেলেই সর্বনাশ– সে কথাটা খোলসা করে বলা আছে। আমাদের চ্যাপলিন কিংবা বাস্টার কিটন এই অত্যাচারের কাছে আমাদের নিয়ে যেতে পারেন। সেই কথায় পরে আসছি।

এই প্রায় কান্নার কাছাকাছি হাসিটা কি ভারতবর্ষে চিরকালের জিনিস? হাসির ইতিহাস আর তার সাংস্কৃতিক জটিলতার দিকটা যুগে যুগে একইরকম থেকে গিয়েছে মনে হয় না। নানা জায়গায় নানারকম বদল ঘটেছে, লিঙ্গভেদে শ্রেণিভেদে সামাজিক উঁচুনিচুর বদলে হাসির ধারণা কি আর বদলায়নি? শিম্পাঞ্জিকে ম্যাজিক দেখানোর পরে হাসতে এবং ভয় পেতে দেখা যায়। অর্থাৎ, বিস্ময়ের সঙ্গে হাসির আদি যোগাযোগ রয়েছে। হাসির যে সব তত্ত্ব নানা জায়গায় গড়ে উঠেছে, সেগুলোর আলাদা আলাদা চেহারা। ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রে যে আটটি মানসিক স্থায়ীভাবের কথা ভরত মুনি বলেছেন সেগুলো যথাক্রমে– রতি, হাস, শোক, ক্রোধ, ভয়, উৎসাহ, জুগুপ্সা ও বিস্ময়। এখানে দেখার বিষয় হল, নাট্যশাস্ত্রে ভরত মুনি ‘হাস’ নামক স্থায়ী ভাবটিকে রাখছেন প্রথম এবং প্রধান ভাব রতি-র পরেই! এবং এখানে বোঝা যায়, সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রে বা নাট্যে হাসির গুরুত্ব অপরিসীম। হাসের পরে আসে শোক। তারও পরে ক্রোধ। শুধু তাই নয় হাসির একেবারে অন্যরকম সাংস্কৃতিক যোগাযোগ নাট্যশাস্ত্রে পাচ্ছি। নাট্যশালায় কারা আসে? ভরত বলছেন শ্রমক্লান্ত, শোকক্লান্ত, বুভুক্ষু মানুষের আশ্রয় নাট্যশালা। সেখানে হাসির বড় প্রয়োজন। কিন্তু এই হাস্যরস আসে কোথা থেকে? ‘শৃঙ্গারাদ্ধি ভবেদ্ধাস্যো’– বড় করে বললে বাসনা বল, কামনা বল, শৃঙ্গার বল– সেখান থেকেই হাস্যের জন্ম হয়। শৃঙ্গারের যে অনুকরণ তাকেই ‘হাস্য’ বলে। এর দেবতা প্রমথ! রং সাদা। আবার খানিক পরেই বলছেন, উল্টো রকম আচার, কথা, বেশভুষা, বিকৃত অঙ্গভঙ্গি– এসব দেখে হাসির উৎসার ঘটে। আর মেয়েদের মধ্যে এবং একটু খাটো মাপের লোকের ভেতর এই ‘হাস’ বেশি করে দেখা যায়। বড় মানুষে স্মিত হাসে। আর, এক্কেবারে অধম অতিরিক্ত হাসে।
অনেক সময় হাসি থামতে চায় না, বড়রা তখন আমাদের অধম ভেবে বেজায় চটে যান। রামঠ্যাঙানি খেতে খেতেও কারণহীন হেসে চলেছি এই দৃশ্য প্রসঙ্গত মনে পড়ে গেল।

গ্রিক নাটকের পাড়ায় কিন্তু হাসির কদর ‘করুণ’-এর পরে। ট্রাজেডির সঙ্গে উচ্চতায় খাটো হাসির উদ্যাপন ঘটে থাকে। মধ্যযুগের ইউরোপে এই হাসির প্রকোপ খনিক বদলে যায়। হাসির ইতিহাসটা ইউরোপে অন্য খাতে তৈরি হয়। সামাজিকভাবে এক ধরনের হাসির খবর আমাদের দিয়েছিলেন মিখাইল বাখতিন, তাঁর রাবলে-কে নিয়ে লেখা গ্রন্থে। মধ্যকালের ইউরোপে বাখতিন লক্ষ করেছেন, কার্নিভাল বা লৌকিক ফুর্তির উৎসবে হাসিটা একরকম সামাজিক বিদ্রোহের জায়গা তৈরি করত। এ হাসি একার হাসি নয়, কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে জনগণের হাসি। কার্নিভালে রাজা-কে ভিখিরি সাজানো হয়, পুরুতের মাথায় শয়তানের শিং লাগানো যায়, ভিখিরি রাজা সাজে, আরও নানা জগঝম্পে পুরনো জগতটা নতুন করে ধরা পড়ে। পেচ্ছাপ, পায়খানা, গর্ভ, যৌনতা, লিঙ্গ– এসবই হয়ে আসে হাসির বিষয়। একে বাখতিন বলবেন নিম্নাঙ্গের হাসি। আধ্যাত্মিক বা উঁচু উঁচু বড় বড় ব্যাপারস্যাপার এখানে উড়ে যায়। ভার কিছু কমে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ কিছু জমে। নতুন একটা সমাজের সম্ভাবনা দেখা দেয়। রেনেসাঁস উত্তর ইউরোপে বুর্জোয়া সমাজ যত পোক্ত হতে থাকে, এই প্রাণ-খোলা আশরীর হাসি সমাজ থেকে মিলিয়ে যায়। চেপে বসে বাঁকা কথা, ব্যঙ্গ আর খোঁচা-মারা তির্যক কথাবার্তা। মানে দাঁড়াল– ক্ষমতা নির্বোধের চাহিদা। আধুনিক দুনিয়াদারিতে ট্রাম্প কিংবা একইরকম নির্বোধদের কাজকর্মে হাসি জিনিসটা কীরকম চারদিকে চেগে উঠেছে সেটা সবার জানা। কিন্তু মজাটা বীভৎস। কুণাল কামরা বা বরুণ গ্রোভার কিংবা আমাদের সামান্য খ্যাক করে হাসা অনির্বাণ কীরকম ঝামেলায় পড়ছে, সেটা দেখতেই পাচ্ছি।
এবার কাজের কথাটা বলি। মনে হচ্ছে হাসির প্রাগ্-ইতিহাস থেকে এ-কাল অবধি টানলে দেখা যাবে এদেশে হাসিও নানা সামাজিক স্তরে ইউরোপের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে, আর আমাদের নিজেদের শর্তে বেঁচে থেকে এখন একটা জটিল জাল রচনা করেছে। ভোজপুরি বিয়ের গান, কিংবা আমাদের পুরুলিয়ার যৌন সংগীত যাঁরা শুনেছেন তাঁরা জানেন, সেখানে ‘রতি’ থেকে ‘হাস’ কত সহজে চলাফেরা করে। এর থেকে বোঝা যায়, ভারতে আধুনিকতা আর মধ্যযুগ দিব্যি একইসঙ্গে গলাগলি চলে। সমাজটার নানা মানুষ নানা যুগ বয়ে নিয়ে চলেছেন। এটাই তার শক্তির জায়গা। ঘৃণার গোমড়ামুখো মিছিলে হাসির কার্নিভাল যদি গোঁত্তা মারতে পারে, বাঁচার আশা আছে। তবে সংশয় আর সংকট উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে কই? এখানে আর একজন বেজায় বুদ্ধিমান তবে আমাদের বাঙালি-সমাজে কম গৃহীত মানুষের প্রসঙ্গ তুলতে চাইব।

চার্লি চ্যাপলিন, লরেল-হার্ডি কিংবা বাস্টার কিটনের কথা ভাবলেই হাসি পায়। চ্যাপলিনকে নিয়ে ওঁর ছোট প্রবন্ধে আর খানিকটা কালচার ইন্ডাস্ট্রি তত্ত্বে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের অন্যতম তাত্ত্বিক থিওডোর আডর্নো কিছু কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, চ্যাপলিন প্রাথমিকভাবে ওঁর ট্র্যাম্প চরিত্রের আদল গড়ে তুলেছিলেন শ্রমিক শ্রেণির শরীর দিয়ে। যেখানে সে বেকার, কখনও ভবঘুরে, কখনও-বা শ্রমিক। তার শরীরটা, হাঁটা-চলা, লাঠি ঘোরানো সবই যেন একটা যন্ত্রের অংশ। আডর্নো বলছেন, চ্যাপলিন প্রথম আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন– আধুনিক মানুষ নিজেই একটা ভাঙা মেশিন। তার কাজকর্ম দেখে মানুষ হাসলেও একইসঙ্গে টের পায় তার অসহায়তা। কিন্তু ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’, কিংবা ‘মঁসিয়ে ভের্দ্যু’ ছবিতে চ্যাপলিন আবেগ-ব্যবস্থার এক মানবিকতাবাদী ছবি তৈরি করলেন। আবেগে ভেসে গিয়ে আক্রমণ আর দ্বন্দ্বটাই গেল হারিয়ে। নিজেই হয়ে গেলেন কালচার ইন্ডাস্ট্রির শিকার। পুঁজির কাছে হেরে গেলেন চ্যাপলিন।
এই মতের সমালোচনা থাকতেই পারে, কিন্তু ক্ষমতার গায়ে আঁচড় কাটছেন যাঁরা তাদের আবেদনটা কোথায়, কাদের কাছে, কতটা পৌঁছে যাচ্ছে এই হতচ্ছাড়া দেশে– সেটা ভাবলে যে বীভৎস মজার ভেতর জীবন কাটাছি আমরা, সেটা একটু বদলে যেত। জয় হিন্দ।
… এক, দুই, আড়াই-এর অন্যান্য পর্ব …
১১. গুরুদত্ত চেয়েছিলেন, বিজয়ের চলে যাওয়া দিয়ে শেষ হবে ‘পিয়াসা’
১০. কবির বিশ্রাম
৯. গত ২০ বছরে নস্টালজিয়ার এত বাড়বাড়ন্ত কেন?
৮. কলকাতার মূর্তি-আবর্জনা কি বাড়ছে?
৭. ভাবা প্র্যাকটিস করা, কঠিন এখন
৬. লেখার অত্যাচার, লেখার বাঁচা-মরা
৫. বিশ্বকর্মা পুজোর সন্ধেবেলাটার মতো বিষাদ আর হয় না
৪. কথা শেষ হতে পারে, ‘শেষ কথা’ বলে কিছু হয় না
৩. দেখা হলে বলে দিও, আজও বেঁচে আছি
২. ফুলের রং শেষ পর্যন্ত মিশে যায় নন্দিনীর বুকের রক্তের ইমেজে
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved