১৯৯০ সাল নাগাদ নিজের দেশেই গর্বাচ্যোভের এমন হাল হয়েছিল যে, সে বছর রেড স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত চিরাচরিত মে দিবস উৎসবের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি জনতার একটা বড় অংশের রোষের মুখে পড়েন, তারা তাঁকে টিটকারি দেয়, গর্বাচ্যোভ্ তাঁর ভাষণ শেষ করতে পারেননি। এরকম ঘটনা যে ঘটবে গর্বাচ্যোভ্ যে তা অনুমান করতে পারেননি এমন নয়। বার্লিন-প্রাচীরের পতনের ঠিক এক মাস আগে গর্বাচ্যোভের উপস্থিতিতে জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ৪০তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে পূর্ব জার্মানির কর্তৃপক্ষের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদল যখন পূর্ব বার্লিনের একটি প্রাসাদে সমবেত হয়েছিলেন, সেই সময় প্রাসাদের বাইরে বিপুল সংখ্যক প্রতিবাদী জনতা গর্বাচ্যোভের নাম আওড়াতে আওড়াতে চেঁচাতে থাকে।
৪৩.
পেরেস্ত্রৈকা যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত
পেরেস্ত্রৈকা (পুনর্গঠন) এবং তারই আনুষঙ্গিক আরও একটি কথা ‘গ্লাসনস্ত’ (openness, অকপট প্রকাশ) ১৯৮৫ সাল থেকে সোভিয়েত রাষ্ট্রের মূল নীতি ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত সমাজে গ্রিক পুরাকাহিনিতে কথিত প্যান্ডোরার প্যাঁটরা খোলার মতো প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ রাষ্ট্রপ্রধান গর্বাচ্যোভকে খোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন সে দেশের বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ, তাত্ত্বিক আলেকসান্দ্র ইয়াকভ্লেভ্, যার পরিণামে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে, নেমে আসে অশেষ দুঃখ-দুর্দশা। প্যান্ডেমোনিয়াম– ব্যাপক দানবীয় তাণ্ডব।
একজন পার্টিকর্মী হিসেবে ইয়াকভ্লেভ্-এর কর্মজীবনের শুরু। ১৯৬৫ সালে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার বিভাগ Agitprop-এর উপপ্রধান নিযুক্ত হন। পরে তিনি উক্ত সংস্থার অস্থায়ী পরিচালকের পদে চার বছর কাজ করেন। গণপ্রচার মাধ্যমকে সেন্সর করার দায়িত্ব এই সংস্থার ওপর ন্যস্ত ছিল।
পশ্চিমের সোভিয়েত বিশেষজ্ঞদের কাছে তিনি এমনই এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব, যাঁর কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা মেলা দুষ্কর। একজন উদারপন্থী এবং মানবাধিকারের অন্যতম প্রবক্তা হয়ে কি না তিনি কমিউনিস্ট সেন্সরশিপের দপ্তরে অত বড় দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন! তবে কমিউনিস্ট প্রশাসনের মধ্যে যাঁরা কট্টরপন্থী, তাঁদের অনেকেই তাঁকে ‘পশ্চিমের প্রভাবিত এজেন্ট’ বলেই মনে করতেন, তাঁরা এমনও ইঙ্গিত করেন যে, ১৯৫৭-’৫৮ সালে যখন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Columbia University-তে অধ্যায়ন করেন, তখন থেকেই নাকি বিদেশি গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৭২ সাল থেকে পার্টিকর্মী হিসেবে তাঁর ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে। তিনি ততদিনে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ গণ্যমান্য একজন সদস্য। এরকম একজন মূল্যবান ব্যক্তির সেই সময় সেখান থেকে উঠিয়ে কানাডার রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ করা হল। এটাকে এক ধরনের শাস্তিই বলা চলে। ১০ বছর তিনি ওই পদে নিযুক্ত ছিলেন।
মিখাইল গর্বাচ্যোভ্ যখন ক্ষমতার অধিকারী হলেন, তখনই তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এই সহযোগী ও সমমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে তাঁকে মস্কোয় ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। আটের দশকে জাতীয় প্রচার মাধ্যমকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও পার্টিকর্তাদের কবল থেকে উদ্ধার করে অন্তত খানিকটা স্বাধীনতা দানের মতো ‘গ্লাস্নস্ত’-এর কিছু কিছু আদর্শ বাস্তবায়নে ইয়াকভ্লেভের প্রভূত অবদান ছিল। ‘গ্লাস্নস্ত’-এর নীতি প্রচারে তাঁর ভূমিকার জন্য সেই সময় তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল ‘মিস্টার গ্লাস্নস্ত’। সেই সময় তিনি এমন কথাও বলেছিলেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি পেরেস্ত্রৈকার কর্মসূচি সূচনা করে সমাজে তার অগ্রণী ভূমিকা প্রমাণ করল। পার্টিতে তিনি তখন লব্ধপ্রতিষ্ঠিত– সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরোর সদস্য।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের আগস্টে ক্ষমতা দখলের জন্য কমিউনিস্টদের যে অভ্যুত্থান ঘটেছিল তার সম্ভাবনা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি গর্বাচ্যোভ্-কে সতর্কও করে দিয়েছিলেন।
যেমন বয়সে, তেমনই কাজেও তিনি ছিলেন গর্বাচ্যোভের অগ্রণী, অনেক সময়ই তাঁর পথপ্রদর্শক। ১৯৯১ সালের আগস্টের ঘটনার পর পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদ পরিত্যাগ করলেন গর্বাচ্যোভ্। ইয়াকভ্লেভ্ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদই ছেড়ে দিলেন– তাও আগস্ট ঘটনার মাত্র দিন কয়েক আগে। তখনই তাঁর মনে হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির গঠন কাঠামোর মধ্যে থেকে পুনর্গঠনের কাজ করতে যাওয়া নীতি বহির্ভূত।
১৯৯২ সালের জুন মাসে প্রাক্তন মার্কসবাদী হিসেবে নিজের অপরাধ স্বীকার করে আত্মসমালোচনামূলক একটি গ্রন্থ তিনি প্রকাশ করেন। অবশ্য শুরু নাকি করেছিলেন সেই ১৯৮১ সালে– পেরেস্ত্রৈকার সূচনাকাল থেকে।
এরই মধ্যে একদিন সকলকে চমকে দিয়ে ইয়াকভ্লেভ্ ঘোষণা করলেন– আমাদের সমাজের একেবারে উপযুক্ত নয় গণতন্ত্র। তার পক্ষে অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক– স্বৈরতন্ত্রী ব্যবস্থা– তবে স্তালিন আমলের নয়। বেশ আলোকপ্রাপ্ত।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে নতুন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন তাঁকে সোভিয়েত রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকারদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান নিযুক্ত করলেন। যে মহৎ কর্মযজ্ঞ তিনি শুরু করেছিলেন তার ধারা অব্যাহত রাখলেন।
বার্লিন প্রাচীরে ভাঙন, ইউরোপে কমিউনিজমের পতন, সোভিয়েত ইউনিয়নের অবসান
১৯৬১ সাল থেকে ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মাঝখানে এই প্রাচীর দাঁড়িয়েছিল। নির্মাণকর্ম শুরু হয়েছিল ১৯৬১ সালের ১২ আগস্ট রাতে, ওয়াল্টার উল্ব্রিখ্টের পূর্ব জার্মান সরকারের সময়, সমর্থন করেন তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা খ্রুশ্শ্যোভ্। ২৪ বছর ধরে এই দেওয়াল পূর্ব ও পশ্চিমের সীমান্ত স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল।
১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে ক্রেমলিনে আরও একজন সোভিয়েত রাষ্ট্রনেতা চেরনেন্কোর অন্ত্যেষ্টি উপলক্ষে বিশ্বের রাষ্ট্রনেতারা যখন সমবেত হয়েছিলেন সেই সময় নবনিযুক্ত সোভিয়েত পার্টি-কর্ণধার গর্বাচ্যোভ্ তাঁর পূর্ব ইউরোপের মিত্র দেশগুলির পোড়খাওয়া রাষ্ট্রপ্রধানদের ডেকে স্বল্পকালীন আলাপ-আলোচনার ফাঁকে তাঁদের কানে একটি মন্ত্র ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে গর্বাচ্যোভ্ নিজে সেই সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে বলেন: ‘আমি তাঁদের বলেছিলাম আপনাদের দেশে কী ঘটে না ঘটে আপনাদের নিজেদের এবং আপনাদের পার্টিগুলিকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে। তাঁরা আমার কথা শুনে গেলেন বটে… আসল বিষয়টা কতদূর কী বুঝেছিলেন আমার সন্দেহ আছে।’
কোনও কোনও পর্যবেক্ষকের মতে মস্কোর ওই মিটিংই নাকি ইউরোপের কমিউনিজমের অবসানের সূচনাস্থল এবং তারই জেরে ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের ভাঙন– যা ছিল আটের দশকের সর্বাধিক চমকপ্রদ এক নাটকীয় ঘটনা। এই ঘটনার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতে এই দুই জার্মানি এক হয়ে গেল, আরও এক বছরের মাথায় ভেঙে গেল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে আটের দশকটি শুরুই হয়েছিল বড় দুর্বিপাকের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করল। ১৯৮০ সালের গোড়ার দিকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর শক্তি ছিল পঞ্চাশ হাজার। ব্রেজ্নেভ্ তখন এমন কথাও বলেছিলেন যে, তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে সব মিটে যাবে, কিন্তু সে যুদ্ধ চলল এক-দশক ধরে। দশ হাজারেরও বেশি সৈন্যের এবং হাজার হাজার আফগান মানুষের প্রাণহানি ঘটল।
আফগানিস্তানে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পশ্চিমের কূটনৈতিক সম্পর্ক মাত্রাতিরিক্ত বিষিয়ে উঠল। পশ্চিম ১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিক বয়কট করল, প্রত্যুত্তরে চার বছর বাদে সোভিয়েত ব্লকও লস এঞ্জেলেসের অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় যোগদান থেকে বিরত থাকল, অস্ত্র প্রতিযোগিতায় তীব্র গতি সঞ্চারিত হল, মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান সোভিয়েত ইউনিয়নকে ‘দুষ্ট সম্রাজ্য’ আখ্যা দিলেন।
কিন্তু গর্বাচ্যোভ্ ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টে গেল। রেগান এবং থ্যাচার– দু’জনেরই কেন যেন মনে হল এঁর সঙ্গে কথা বলা যায়। ১৯৮৬ সালে আইসল্যান্ডের রেক্ইয়াভিকে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে রেগান ও গর্বাচ্যোভ্ দু’জনেরই দূরপাল্লার স্ট্রাটেজিক অস্ত্র সংকোচনের ক্ষেত্রে সমঝোতার কাছাকাছি চলে এলেন।
দশক শেষ হতে-না-হতে গর্বাচ্যোভের পেরেস্ত্রৈকা-গ্লাস্নস্তের অন্তর্নিহিত দুর্বলতার সুযোগে পূর্ব ইউরোপের ঘটনাবলির দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে লাগল। একের পর এক সেসব দেশের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটতে লাগল। এর পর ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বল্টিক উপকূলবর্তী তিনটি অঙ্গ রাজ্যই এবং পরে উক্রাইনা, তারপর একে একে অন্যেরাও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল। শেষ পর্যন্ত গর্বাচ্যোভের নিজেরই চাকরি চলে গেল।
১৯৯০ সাল নাগাদ নিজের দেশেই গর্বাচ্যোভের এমন হাল হয়েছিল যে, সে বছর রেড স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত চিরাচরিত মে দিবস উৎসবের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি জনতার একটা বড় অংশের রোষের মুখে পড়েন, তারা তাঁকে টিটকারি দেয়, গর্বাচ্যোভ্ তাঁর ভাষণ শেষ করতে পারেননি।
এরকম ঘটনা যে ঘটবে গর্বাচ্যোভ্ যে তা অনুমান করতে পারেননি এমন নয়। বার্লিন-প্রাচীরের পতনের ঠিক এক মাস আগে গর্বাচ্যোভের উপস্থিতিতে জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ৪০তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে পূর্ব জার্মানির কর্তৃপক্ষের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধিদল যখন পূর্ব বার্লিনের একটি প্রাসাদে সমবেত হয়েছিলেন, সেই সময় প্রাসাদের বাইরে বিপুল সংখ্যক প্রতিবাদী জনতা গর্বাচ্যোভের নাম আওড়াতে আওড়াতে চেঁচাতে থাকে। তা দেখে সেখানে উপস্থিত জনৈক পূর্ব জার্মান নেতা গর্বাচ্যোভের দিকে ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তাহলে কি এখানেই শেষ?’ গর্বাচ্যোভ্ জানলা দিয়ে এক দৃষ্টে বাইরে তাকিয়ে থেকে প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ, এখানেই শেষ।’
গর্বাচ্যোভের ভবিষ্যদ্বাণী সফল হয়েছিল। অতএব স্বীকার করতে হয় গর্বাচ্যোভ্ যা করেছিলেন সচেতনভাবেই করেছিলেন। গর্বাচ্যোভের সমস্যাটা এখানে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর কথায় ও কাজে ব্যবধান দুষ্কর। দুই জার্মানির সংযুক্তির সময় যে সমস্ত শর্ত তিনি ইচ্ছে করলেই আরোপ করতে পারতেন বা যে ধরনের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারতেন অথবা নিজের লোকদের সেখান থেকে বের করে আনতে পারতেন তার কিছুই তিনি দাবি করলেন না। এমনকী সংযুক্ত জার্মানির ন্যাটো-ভুক্ত হওয়ার অধিকারেও তেমন কোনও আপত্তি প্রকাশ করলেন না।
বার্লিনের প্রাচীর ভাঙার মাত্র কয়েক মাস আগেও ১৯৮৯ সালের জুন মাসে তৎকালীন পূর্ব জার্মান রাষ্ট্রপ্রধান এরিক হোনেকারকে কথা দিয়েছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে প্রতারণা করবে না। কিন্তু কার্যত কিছুদিন বাদে সেটাই ঘটল। নিজের লোকদের কাছে কথা তিনি কোনও কালেই রাখতে পারেননি। হোনেকারকে সাদরে গ্রহণ করে পরে তিনি আর হালে পানি পেলেন না। অবশ্য ততদিনে তিনি ক্ষমতাও হারিয়েছেন। আফগানিস্তানের ব্যাপারেও তাই, তবে এসবের অর্ধেক দায় পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান ইয়েল্ৎসিনের ওপরেই বর্তেছিল, আর তাঁর বিশ্বাসভঙ্গের কথা তো সুবিদিত।
…পড়ুন রুশকথা-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৪২। পেরেস্ত্রৈকা শুরু হলে বুঝেছিলাম ‘প্রগতি’ ‘রাদুগা’– এসব কিছুই থাকবে না
পর্ব ৪১। কল্পনা যোশীর তুলনায় ইলা মিত্রকে অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি বলে মনে হয়েছে
পর্ব ৪০। বেসরকারিকরণের শুরু দিকে রাস্তাঘাটে ছিনতাই বেড়ে গেছিল, কারণ সব লেনদেন নগদে হত
পর্ব ৩৯। হাওয়া বদলের আঁচ অনেকেই আগে টের পেয়েছিল, বদলে ফেলেছিল জীবনযাত্রা
পর্ব ৩৮। শুধু বিদেশে থাকার জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ করেও ছোটখাটো কাজ করে কাটিয়ে দিয়েছেন বহু ভারতীয়
পর্ব ৩৭। একটা বিদেশি সাবানের বিনিময়েও নাকি মস্কোয় নারীসঙ্গ উপভোগ করা যায়– এমনটা প্রচার করেছে ভারতীয়রা
পর্ব ৩৬। মস্কোর ঠান্ডায় লঙ্কা গাছ দেখে পি.সি. সরকার বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে বড় ম্যাজিক হয় নাকি?’
পর্ব ৩৫। রুশদের কাছে ভারত ছিল রবীন্দ্রনাথের দেশ, হিমালয়ের দেশ
পর্ব ৩৪। সোভিয়েত শিক্ষায় নতুন মানুষ গড়ে তোলার ব্যাপারে একটা খামতি থেকে গিয়েছিল
পর্ব ৩৩। দিব্যি ছিলাম হাসপাতালে
পর্ব ৩২। মস্কোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাধারণ ডাক্তাররা অধিকাংশই মহিলা ছিলেন
পর্ব ৩১। আমার স্ত্রী ও দুই কন্যা নিজভূমে পরবাসী হয়ে গিয়েছিল শুধু আমার জন্য
পর্ব ৩০। শান্তিদা কান্ত রায়ের প্রিয় কাজ ছিল মস্কোয় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কমিউনিজম পড়ানো
পর্ব ২৯। পেরেস্ত্রৈকার শুরু থেকেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন গোপেনদা
পর্ব ২৮। দেশে ফেরার সময় সুরার ছবি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাননি গোপেনদা
পর্ব ২৭। বিপ্লবের ভাঙা হাট ও একজন ভগ্নহৃদয় বিপ্লবী
পর্ব ২৬। ননী ভৌমিকের মস্কোর জীবনযাত্রা যেন দস্তইয়েভস্কির কোনও উপন্যাস
পর্ব ২৫। ননীদা বলেছিলেন, ডাল চচ্চড়ি না খেলে ‘ধুলোমাটি’র মতো উপন্যাস লেখা যায় না
পর্ব ২৪। মস্কোয় শেষের বছর দশেক ননীদা ছিলেন একেবারে নিঃসঙ্গ
পর্ব ২৩। শেষমেশ মস্কো রওনা দিলাম একটি মাত্র সুটকেস সম্বল করে
পর্ব ২২। ‘প্রগতি’-তে বইপুথি নির্বাচনের ব্যাপারে আমার সঙ্গে প্রায়ই খিটিমিটি বেধে যেত
পর্ব ২১। সোভিয়েতে অনুবাদকরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত, সে দেশের কম মানুষই তা পারত
পর্ব ২০। প্রগতি-র বাংলা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ননীদাই শেষ কথা ছিলেন
পর্ব ১৯। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি খুব ভালো রুশভাষা জানতেন, প্রমথনাথ বিশী সাক্ষী
পর্ব ১৮। লেডি রাণু মুখার্জিকে বাড়ি গিয়ে রুশ ভাষা শেখানোর দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর
পর্ব ১৭। একদিন হঠাৎ সুভাষদা আমাদের বাড়ি এসে উপস্থিত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে নিয়ে
পর্ব ১৬। মুখের সেই পরিচিত হাসিটা না থাকলে কীসের সুভাষ মুখোপাধ্যায়!
পর্ব ১৫। রুশ ভাষা থেকেই সকলে অনুবাদ করতেন, এটা মিথ
পর্ব ১৪। মস্কোয় ননীদাকে দেখে মনে হয়েছিল কোনও বিদেশি, ভারতীয় নয়
পর্ব ১৩। যিনি কিংবদন্তি লেখক হতে পারতেন, তিনি হয়ে গেলেন কিংবদন্তি অনুবাদক
পর্ব ১২। ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’র অধঃপতনের বীজ কি গঠনপ্রকৃতির মধ্যেই নিহিত ছিল?
পর্ব ১১। সমর সেনকে দিয়ে কি রুশ কাব্যসংকলন অনুবাদ করানো যেত না?
পর্ব ১০। সমর সেনের মহুয়ার দেশ থেকে সোভিয়েত দেশে যাত্রা
পর্ব ৯। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা, ঠিক তখনই ঘটে গেল আকস্মিক অঘটন
পর্ব ৮: একজন কথা রেখেছিলেন, কিন্তু অনেকেই রাখেননি
পর্ব ৭: লেনিনকে তাঁর নিজের দেশের অনেকে ‘জার্মান চর’ বলেও অভিহিত করত
পর্ব ৬: যে-পতাকা বিজয়গর্বে রাইখস্টাগের মাথায় উড়েছিল, তা আজ ক্রেমলিনের মাথা থেকে নামানো হবে
পর্ব ৫: কোনটা বিপ্লব, কোনটা অভ্যুত্থান– দেশের মানুষ আজও তা স্থির করতে পারছে না
পর্ব ৪: আমার সাদা-কালোর স্বপ্নের মধ্যে ছিল সোভিয়েত দেশ
পর্ব ৩: ক্রেমলিনে যে বছর লেনিনের মূর্তি স্থাপিত হয়, সে বছরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সূচনাকাল
পর্ব ২: যে দেশে সূর্য অস্ত যায় না– আজও যায় না
পর্ব ১: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রাশিয়ার খণ্ডচিত্র ও অতীতে উঁকিঝুঁকি