ডাকঘর লাগোয়া কুসুমডিহা সবুজ সংঘের উদ্যোগে এক রবিবার দাতব্য চিকিৎসালয়ের উদ্যোগ নিল। কলকাতা থেকে তার দুই ডাক্তারবন্ধু-সহ চারজন আশার কথা। রেশমী তার বাহিনী নিয়ে উৎসাহে নেমেছিল। এখানকার নার্সিংহোমের মালিক পঞ্চায়েতবাবুর সহ্য হল না। পুলিশ দিয়ে আটকালেন।
৬.
সুমিত সাগরটিলার ওপরে ঘুরে এসেছে। ঘরগুলোর সঙ্গে আলাপ জমে গিয়েছে। মাস্টারমশাই এসেছে গো, বিরাট আন্তরিকতা। দু’-তিনটে ঘরেই বসতে হয়েছে। ভারি চমৎকার পথ! জংলি গাছ ভরা। পল্টু রানার সব চেনাতে চেনাতে যাচ্ছিল। পল্টুর বাবা, ঠাকুরদাও রানার ছিল। একেবারে সুকান্তর কবিতার মতো রানার। এখন তো আধুনিক প্যাকেজ, পোস্টটা শুধু আছে।
সুমিতের আলাপ হল সাগরটিলার ওপরের বাসিন্দাদের সঙ্গে। মুড়ি-বাতাসায় জমল আড্ডা। ঈশ্বর, পূর্ণিমা, লালু, পবনরা খুশি। শুনে ভালো লাগল পূর্ণিমার দিদির নাম জ্যোৎস্না, কাজের খোঁজে এখন এখানে এসে রয়েছে। পল্টু বলল, ‘শান্তির জায়গা তো, এ তল্লাটের অনেকের আত্মীয়, বন্ধুরা কাজের জন্য এদিক পানে চলে আসছে। কিছু না কিছু কাজ পেয়েও যায়।’ ওখানে পল্টুর বেশ খাতির।
সুমিত তার পরেও একদিন টিলায় গিয়েছে। আর একদিন টিলা থেকে ঈশ্বর, পবনরা হাটে এসেছিল, ডাকঘরে এসে দেখা করে গিয়েছে। একটু থিতু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুমিতের গতিবিধি বেড়েছে। অফিস আর টিউশনির সময়টা বাদ দিলে এদিক-সেদিক চলে যায়, এর-ওর বাড়ি বা ঝুপড়িতে যাওয়ার মতো পরিচিতি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আর এই পরিচয় যত বাড়ছে, সুমিত অনুভব করছে এলাকা গরম হচ্ছে। পশ্চিমগড়ের জমি নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। চাষি, খেতমজুররা ক্ষুব্ধ! মাধাই প্রতিবাদের সুর চড়াচ্ছে। এর মধ্যে একদিন মাধাইয়ের সঙ্গে সুমিতের দেখা হয়েছিল। মাধাই একরাশ ঘৃণা নিয়ে বলেছে, ‘এই যে আবার দমন-পীড়ন শুরু হচ্ছে, আপনারা বসে বসে দেখবেন?’ সুমিত বলেছে, ‘আমি সাধারণ মানুষ। আমি কী করছে পারি?’ মাধাই বলেছে, ‘একদম সুবিধাবাদী কথাবার্তা। আপনার কাছে এতগুলো ছেলেমেয়ে পড়ে। তাদের তো বিপদটা বোঝাতে পারেন?’ সুমিত বলেছে, ‘ওরা লেখাপড়া করতে আসে। সামনে পরীক্ষা।’ মাধাই বলেছে, ‘আপনাদের মতো কিছু লোকের জন্য বজ্জাতগুলো আরও সুবিধে পেয়ে যায়।’ সুমিত ঝগড়া না করে বলেছে, ‘সকলের দ্বারা সবকিছু হয় না।’ মাধাই বলেছে, “বুঝবেন। ক’টা দিন যাক। কার্তিক যেদিন ঢুকবে, বুঝবেন।”
সুমিত কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গিয়েছে। কার্তিক মানে কী সেই অদৃশ্য মাওবাদী নেতার নাম বলল মাধাই? কাগজে, টিভিতে টুকটাক দেখা যায় ওই নামে বিবৃতি। লোকটাকে দেখা যায় না। মাধাইয়ের কি ওদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, না কি স্রেফ রাগ দেখাতে হুমকি দিল?
তবে সবটা এড়িয়ে থাকতে পারল না সুমিত। ডাকঘর লাগোয়া কুসুমডিহা সবুজ সংঘের উদ্যোগে এক রবিবার দাতব্য চিকিৎসালয়ের উদ্যোগ নিল। কলকাতা থেকে তার দুই ডাক্তারবন্ধু-সহ চারজন আশার কথা। রেশমী তার বাহিনী নিয়ে উৎসাহে নেমেছিল। এখানকার নার্সিংহোমের মালিক পঞ্চায়েতবাবুর সহ্য হল না। পুলিশ দিয়ে আটকালেন। থানায় ডেকে সুমিতকে বলে দেওয়া হল, কেন এসব করছেন? ওই জায়গা-জমিতে এসব চলবে না। সুমিত বলল, ‘বিনা পয়সায় গরিবের চিকিৎসা হবে, বিনা পয়সায় ওষুধ দেব। এতে তো মানুষের উপকার।’ থানা বলল, ‘চিঠি বিলি করার কাজ, সেটা করুন, মানুষের তাতে আরও উপকার।’ রেশমী দেখল সুমিত ফুঁসছে। কিন্তু এ মানুষ তো তার বেশি গলা তোলার লোক না।
গোলমালটা আবার বাধল পশ্চিমগড়ের জমিতে, মন্দার ইন্ডাস্ট্রিজের কয়েকজন জমির কিছু মাপজোকের কাজ করতে এসেছিল। হু হু করে খবর গেল রটে। গরিব আদিবাসী পরিবারের মা-বোনেরাও বেরিয়ে এলেন হাতা, খুন্তি, কাস্তে নিয়ে। মাধাই প্রবল হাঁকডাক শুরু করল। পুলিশ গেল বটে। তবে জনতার মেজাজ দেখে মন্দারের লোকেদের ভালোয় ভালোয় বিদায় হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিল।
আর ওদিকে বিদ্যুৎ তখন বাবা বাঁশরিলালকে বলল, ‘আজ একটা অ্যাকশন করে দিই। এদের সাহস না হলে বেড়ে যাচ্ছে। ওদিকে মন্দার পেমেন্ট ক্লিয়ার করছে না।’
বাঁশরির পরামর্শ, ‘কর। তবে এমন কিছু করিস না যাতে সবটা লোকাল থানার হাতের বাইরে যায়। এখন মাঠে কিছু করিস না। যা হবে রাতে, অন্ধকারে। বুঝবে সবাই, কিন্তু সাক্ষী থাকবে না।’
(চলবে)
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved