ভেতরে চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়ার মতো ভক্ত সমাগম দেখলাম না। কয়েক জায়গায় মৌজ করে বসে আঁকতেও অসুবিধে হয়নি। আশপাশে ভিড়ও করেনি তেমন কেউ। কিন্তু গিন্নি ঘণ্টাখানেক বাদে ফিরলেন বেজায় খাপ্পা হয়ে। পুজোর নামে এরা দেড়-দু’হাজারের কমে কথাই বলছে না! পাণ্ডাই শেষে অনেক কষ্টে ৫০০ টাকায় রফা করিয়েছে। বললাম, মনে যথেষ্ট ভক্তি না থাকলে এই হয়।
সেবার আমাদের পুরীর সফরসঙ্গী দাদা-বউদির উৎসাহে জগন্নাথ মন্দির ঘোরা হয়ে গেল। পাণ্ডা অজয় ওদের চেনা, কথা হল মন্দিরের কাছে একটা দোকানে ও থাকবে। প্রায় আধ কিলোমিটার আগেই আমাদের অটো নামিয়ে দিল, বাকিটা হাঁটা। প্রবীণদের জন্য অবশ্য ফ্রি অটো সার্ভিস রেখেছে। তবে নড়বড়ে অনেকেই সামাল দেওয়ার জন্য সঙ্গে নবীনদের এনেছেন। তারাও দিব্যি উঠে জায়গা দখল করে ফেলছে। আমরা ‘ধুত্তেরি’ বলে হাঁটা দিলাম।
অজয় ছিল একটা ফলের দোকানে। আমাদের মোবাইল-ব্যাগ-জুতো ইতাদি ওখানে জমা রাখা হল। বউদি আর গিন্নি পুজো দেবে, আমি সেই ফাঁকে একটু স্কেচ করে নেব– এই ছিল মতলব। ঢোকার মুখে কড়া নিরাপত্তা বলয় দেখে ঘাবড়ে গেলাম। যদিও আমার হাতে ধরা একরত্তি খাতাটাকে ওরা কী ভাগ্যিস ক্ষমাঘেন্না করে দিল! ভেতরে চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়ার মতো ভক্ত সমাগম দেখলাম না। কয়েক জায়গায় মৌজ করে বসে আঁকতেও অসুবিধে হয়নি। আশপাশে ভিড়ও করেনি তেমন কেউ। কিন্তু গিন্নি ঘণ্টাখানেক বাদে ফিরলেন বেজায় খাপ্পা হয়ে। পুজোর নামে এরা দেড়-দু’হাজারের কমে কথাই বলছে না! পাণ্ডাই শেষে অনেক কষ্টে ৫০০ টাকায় রফা করিয়েছে। বললাম, মনে যথেষ্ট ভক্তি না থাকলে এই হয়।
একদিন বিকেল থেকে জোর বৃষ্টি, আমার রসিক দাদা অমনি বলল, ‘আজ একটু মোচ্ছব হবে না?’ তাহলে তো মাছভাজা লাগবেই লাগবে! কর্তা-গিন্নি দু’জনে মিলে ছাতা মাথায় গিয়ে হাজির হলাম সেই রবি নায়কের দোকানে। বেচারা রেনকোট জড়িয়ে জবুথবু হয়ে বসেছিল। একটাও খদ্দের নেই, আমাদের চিংড়ি আর পমফ্রেটের বড় অর্ডার পেয়ে প্রায় নেচে উঠল। পরে আমাদের খুব আপন ভেবে রবি শুনিয়েছিল, এই ফরেনার বিচের দোকানিরা কীভাবে লড়াই করে টিকে আছে। কোনও এক বড়সড় শিল্প প্রতিষ্ঠান নাকি গোটা জায়গাটা সরকারের কাছ থেকে কিনে নিয়ে শপিং কমপ্লেক্স বানাতে চায়। এদিকে ওরাও জমি ছাড়বে না।
কাছেই সি ফুডের একটা রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে নিজের চোখেই দেখলাম, ব্যাটারা বালির ওপর বেড়া দিয়ে অনেকটা জমি দিব্যি দখল করে সেখানে খড়ের চাল দেওয়া ছোট ছোট খাবার জায়গা বানিয়ে নিয়েছে। অবশ্য ওদের দই দিয়ে কাতলা মাছের রান্নাটা আমাদের সব ভুলিয়ে দিয়েছিল। আরেক দিন আমরা দুপুরে খেতে গেলাম এদিককার এক অভিজাত হোটেল হলিডে রিসর্ট-এ। যেমন খাবার, তেমনই সুন্দর ব্যবহার পেলাম। শুধু এদের সি-ফুড সুপটা খেতেই ওখানে বারবার যাওয়া যায়।
শেষের দিন বিকেলে, কাছেই দাঁড়িয়ে স্কেচ করছি, পাশে এসে একটি বছর পনেরোর মেয়ে সরাসরি বায়না ধরল ওরও একটা ছবি এঁকে দিতে হবে। দেখলাম বেশ সপ্রতিভ হাবভাব মেয়েটির। ঠাকুরমার সঙ্গে ও গিরিডি থেকে এসেছে। নাম সেজল কুমারি, স্কুলের উঁচু ক্লাসে পড়ে। ওকে কাটিয়ে দিতে গিয়েও গিরিডি শুনে মনটা অন্যদিকে চলে গেল। ওর কাছে জানতে চাইলাম উশ্রী নদী ওদের বাড়ির কতটা কাছে, আর প্রতিদিন ভোরবেলা নদীর ধারে একজন দাড়িওলা বুড়ো লোককে হাঁটতে দ্যাখে কি না।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved