ঠাকুরদালানের অভিধান থেকে ‘পুজোর ছুটি’ কথাটাকেই সরিয়ে দিতে হবে। ছুটি নিয়ে তো মর্তে এসেছেন মা দুর্গা। দিন পাঁচেকের সফর, তাঁকে তো একটু আদরযত্নে রাখতে হবে! ফলে ঠাকুরদালানে ‘ছুটি’ শব্দটিই যেন ঘোর শাস্ত্রবিরোধী। তাহলে কী হয় ঠাকুরদালানে? সূর্য ওঠার আগে উঠে পড়া। আর কাক ডাকার পরে ঘুমোতে যাওয়া। বলতে গেলে, এই সময়ের রুটিন যেন আরও স্ট্রিক্ট!
পুজোয় চাই লম্বা ছুটি। বাঙালির চিরকালের আবদার। শরতের আগমন-বার্তা আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হলেই বাঙালির অন্তরমহলে উদযাপন মোড অন। সারাক্ষণ মনে হয় কখন ছুটি কখন ছুটি! এদিকে ব্যস্ততা তো কম নয়। কেনাকাটা থেকে দৌড়াদৌড়ি– লেগেই আছে। এমনকী, পুজোর পাঁচদিনও বাঙালির রেস্ট নেই। রাত জেগে প্যান্ডেল হপিং। আবার সকাল সকাল উঠে অঞ্জলি দেওয়া। বলতে গেলে, বাঙালির রোজনামচায় যে গড় ব্যস্ততা, তার থেকে খানিক বেশিই ব্যস্ত যেন পুজোর দিনকাল। তবে, এই যে নিজের ইচ্ছেখুশি মতো ক’-টা দিন কাটানো, কারও হুকুমে বাঁধা না থাকার এই যে অবাধ ছাড়পত্র, এর আস্বাদ কে আর হাতছাড়া করতে চায়! অতএব পুজোর বোনাস যেমনই হোক, পুজোর ছুটি না হলে চলে না।
কেউ কেউ আবার এই ছুটিকে বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান। অর্থাৎ তল্পিতল্পা গুটিয়ে দূরে কোথাও দূরে দূরে পাড়ি জমানো। সত্যি বলতে, লম্বা সফরের জন্য এর থেকে ভাল সময় আর নেই। তাড়াহুড়ো নেই, অফিস-কাছারি বন্ধ। এই সময় মন যদি পালাই পালাই করে, তাকে আটকায় কে! এ বছর শরতের দিনকালে যেন বড়ই বৃষ্টির প্রাদুর্ভাব। নইলে সময়টা বেড়িয়ে আসার জন্য ভারি মনোরম। শহরের পুজোর ভিড় বহুজনেরই না-পসন্দ। তাঁরা এই ক’-দিন বাইরে একান্তে নিভৃতিতে কাটাতেই ভালোবাসেন। সেই পরিকল্পনা বহু আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়, কেননা ওই যে হাতে আছে পুজোর ছুটি। তবে অনেকে আবার এর ঘোর বিরোধী। পুজোর সময় বাংলা ছেড়ে যাঁরা বাইরে যান, তাঁদের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকেন ভিড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে ঠাকুর দেখতে বেরনো বাঙালিরা। বক্তব্যখানা এই যে, আরে বাবা, ভিড়ে নাজেহাল না হলে, হেঁটে হেঁটে পায়ে ফোসকা না পড়লে আর পুজো কীসের! জ্যামে নয় আটকেই থাকা হল, রাতে নয় ঘুম হলই না! তাতে কী! কষ্ট যা হয় হোক, পুজো পারফেক্ট না হলে চলে না।
এ আসলে দু’রকমের পুজোর মুড। কোনওটিকেই উপেক্ষা করা যায় না। এবার আসা যাক তৃতীয় মুডের কথায়, যা থাকে আমাদের ঠাকুরদালানে। প্রথমেই এখানকার অভিধান থেকে ‘পুজোর ছুটি’ কথাটাকেই সরিয়ে দিতে হবে। ছুটি আবার কী! ছুটি নিয়ে তো মর্তে এসেছেন মা দুর্গা। দিন পাঁচেকের সফর, তাঁকে তো একটু আদরযত্নে রাখতে হবে! ফলে ঠাকুরদালানে ‘ছুটি’ শব্দটিই যেন ঘোর শাস্ত্রবিরোধী। তাহলে কী হয় ঠাকুরদালানে? সূর্য ওঠার আগে উঠে পড়া। আর কাক ডাকার পরে ঘুমোতে যাওয়া। বলতে গেলে, এই সময়ের রুটিন যেন আরও স্ট্রিক্ট! শাস্ত্র মেনে আচার পালন করতে হয়। সবকিছু সময়ে বাঁধা। তার তো অন্যথা হওয়ার জো নেই। অতএব সকাল থেকে রাত সব নিখুঁত সময়ে নির্বিঘ্নে হচ্ছে কি না, এইটা খেয়াল রেখে রেখেই চলতে হয়। মাঝেমধ্যে একটু অবসরের সময় অবশ্য মেলে। তবে, সেখানে আবার অন্য কাজ থাকে। পুজোর সময় বাড়িতে বহু মানুষের আনাগোনা। তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর দিতে হয়। অতিথি আপ্যায়নেও অনেকটা সময় চলে যায়। সব মিলিয়ে হিসাব করলে দেখা যায়, ছুটি বলে আদৌ কিছু থাকেই না।
আমি তো তাই বলি, আমার কাছে পুজোর ছুটির ঘণ্টা বাজে না। বাজে ঘুম থেকে উঠে পড়ার অ্যালার্ম। বাঙালির আবদার পুজোর ছুটির। আমি সেই বাঙালি, যার কাছে পুজো মানেই শুধুই ছুটোছুটি।
শান্ত অবস্থা থেকে উত্তেজিত হয়ে পড়া কিংবা হঠাৎ আনন্দ পাওয়ার যে অভিব্যক্তি– তাতেও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং এক সুতোও অতি অভিনয় না-করা মানুষ। হাতে একটি কাজ করতে করতে কারও সঙ্গে গপ্প করা কিংবা খাবার খেতে খেতে কথা বলার দৃশ্য তিনি এত ভালো করতেন যে, মনেই হত না পর্দায় কারও অভিনয় দেখছি।
আজ যখন আমরা মার্কস ও এঙ্গেলসের বন্ধুত্বকে নতুন চোখে দেখে কমিউনিস্ট ইতিহাস রচনার কথা ভাবি, তখন একই সঙ্গে কমিউনিস্ট আন্দোলনের নারীবাদী ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের মেয়েদের এই বিপ্লবী কমরেডশিপের সম্ভাবনার, নারীবাদী বন্ধুত্বের রাজনীতির দিকেও নজর দিতে হবে।
২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পেলেন কোরিয়ান সাহিত্যিক হান কাং। অস্তিত্বের অতীন্দ্রিয় অস্বস্তি ধরা পড়ে তাঁর লেখায়। উত্তরাধুনিক সমাজে আমাদের প্রত্যেকেরই বুকের ভিতর রক্তক্ষরণ চলছে অবিরত। আমরা চেপে যাচ্ছি রোজ। লোকলজ্জার ভয়ে, মানহানির ভয়, গড্ডলিকা প্রবাহের বিপরীতে একা হওয়ার ভয়ে। কাং সেসব টেনে খুলে ফেলেন।