আমাদের ধর্মশাস্ত্র বলে, জীবন একটা মস্ত বড় সুযোগ। যদি সুযোগ হয়, তাহলে তার সদুপযোগ কীভাবে করব, তা জানা দরকার। তবে সুযোগের ব্যবহার করতে গেলে একটা সৎ উদ্দেশ্য থাকা বড় প্রয়োজন। তবে শুধু তাই যথেষ্ট নয়, দরকার শ্রদ্ধা। ‘শ্রদ্ধা’ একান্তভাবে ভারতীয় শব্দ।
আমাদের প্রত্যেকেরই আছে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব। আছে প্রত্যেকের আলাদা চলার ভঙ্গি। অনেকের কাছে এই নিরন্তর চলার পথে জীবন যেন নিরবচ্ছিন্ন এক যন্ত্রণা। সে যন্ত্রণা মানসিক হলে, তার কষ্ট আরও তীব্র। জীবন নিয়ে হাজারো নেতিবাচক ভাবনা মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এর থেকে আশু পরিত্রাণের আশায় রয়েছি সকলেই। কিন্তু, কোথায় সেই পরিত্রাণের পথ?
আমাদের ধর্মশাস্ত্র বলে, জীবন একটা মস্ত বড় সুযোগ। যদি সুযোগ হয়, তাহলে তার সদুপযোগ কীভাবে করব, তা জানা দরকার। তবে সুযোগের ব্যবহার করতে গেলে একটা সৎ উদ্দেশ্য থাকা বড় প্রয়োজন। তবে শুধু তাই যথেষ্ট নয়, দরকার শ্রদ্ধা। ‘শ্রদ্ধা’ একান্তভাবে ভারতীয় শব্দ। এর রয়েছে একাধিক অর্থ। সহজ কথায়, যা করতে চাই, যে-উপায়ে করতে চাই, তার প্রতি শ্রদ্ধা। পারলৌকিক বিষয়ের কথা না বললেও, জাগতিক কোনও বিষয় লাভ করার জন্যও যে প্রয়াস দরকার, সেখানে নেতিবাচক ভাবনা স্থান পেলে, তা কাম্য বস্তু পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। বলা যায়, চতুর্বগের মধ্যেও যে যা চায়, সেইটির প্রতি সেই ব্যক্তির শ্রদ্ধা বড় প্রয়োজন। এর উপস্থিতি তার পুরুষার্থ লাভের পথকে সুগম করে। এই শ্রদ্ধা যদি থাকে, তাহলে পথ চলার জন্য যে ইচ্ছাশক্তি দরকার, তা পোক্ত হয়। একটা প্রেরণা নিরন্তর কাজ করে।
আরও পড়ুন: খিদে মেটার পরও কেন ধানের শীষ নিয়ে যেত পাখিটি?
সেইসঙ্গে যা দরকার, সেইটি হচ্ছে নিজের প্রতি শ্রদ্ধা। নিজের প্রতি একটু ভালবাসার বোধ। আমি এগোতে পারি, কিছু করতে পারি এই বোধ। এই আত্মশ্রদ্ধা থেকে জন্ম নেয় আত্মবিশ্বাস। এই শ্রদ্ধা যা আমাদের সফল হতে অনুপ্রাণিত করবে প্রতিনিয়ত। এই শ্রদ্ধা একই সঙ্গে নিজের প্রতি, প্রিয়জনদের প্রতি, বা জীবনের লক্ষ্যের প্রতি যেকোনও ক্ষেত্রেই হওয়া বাঞ্ছনীয়।
শ্রদ্ধা এলে মনে জোর আসে। পদে পদে ব্যর্থতা এলে, মাটি কামড়ে সংগ্রাম করা যায়। মানুষ সাধারণত নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকে না। তার থাকে আরও আরও কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। মনে জেগে থাকে তাই অতৃপ্তির ভাব। এই অতৃপ্তিই তাকে কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। শ্রদ্ধা যদি হৃদয়ে থাকে, লক্ষ্য যদি সম্মুখে থাকে, তাহলে এই অতৃপ্তি কল্যাণকর উদ্দেশের দিকে নিয়ে যায়।
বাঁচার ইচ্ছা শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্যও বটে। আমরা প্রত্যেকে ভালভাবে বাঁচতে চাই, যাতে নিজের এবং অন্যের কল্যাণ হয়। আমাদের সব শুভ প্রচেষ্টা হল হৃদয়ে একটা আলোকশিখা জ্বালিয়ে তোলা, যা সহস্র প্রাণকে স্পর্শ করবে। এই সকল শুভ প্রচেষ্টাকে সার্থক করার জন্য বড় জরুরি শ্রদ্ধা।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এতে অবশ্যই ‘সম্পদ’ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ভয় হয় যে তা নিতান্তই বিনামূল্যের ঘরোয়া শ্রম হয়ে থেকে যাবে না তো? উৎপাদিত সম্পদের মূল্যভাগ, পাবেন তো মেয়েরা? তা না-হলে দেশীয় সম্পদ হয়তো সৃষ্টি হবে, কিন্তু নারীউন্নয়নের পথটি অধরাই থেকে যাবে।