জীবন তো শুধু, হিরো-হিরোইনদের দিয়ে নয়। শাহরুখ-কাজল, উত্তম-সুচিত্রা, প্রসেনজিৎ-অর্পিতা, দেব-শুভশ্রী নয়– আমাদের ছায়া দেবী, তুলসী চক্রবর্তী, রবি ঘোষ, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়রাও আছেন। মনে রাখবেন, এঁরা পার্শ্বচরিত্র, সিনেমা এঁদের ছাড়া দাঁড়ায় না। জীবনও যেমন দাঁড়ায় না তেমন পাশবালিশ ছাড়া।
প্রচ্ছদের ছবি: অর্ঘ্য চৌধুরী
প্রেমে যে ফেল করে, তাকে পাশ করিয়ে দেয় পাশবালিশ। সে তুলো, কিন্তু তুলনীয় নয় কিছুর সঙ্গেই। বুকের তলায়, পায়ের ডিমে, মেরুদণ্ডে, ফ্রি সাইজের কোমরে, এমনকী, মাঝে মাঝে মাথার তলাতেও সে দিব্যি ফিট করে যায়। হাত নেই নেহাত, নইলে বোলাতও। প্রেমে ল্যাং খাওয়া যুবক-যুবতীর একমাত্র ডেস্টিনেশন যখন ছিটকিনি তোলা আরজিবি রুম, যখন একই ডিমে দুটো কুসুম দেখলে গা-পিত্তি জ্বলে খাক আর এক শালিখই সবচে’ মঙ্গলময় মনে হয়– তখন সেই গড়ের মাঠের মতো ফাঁকা হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানির পাশে, পাশবালিশই সহায়।
পাশবালিশের খুঁটে চোখের জল মুছে দেওয়া তো বাস্তবে, স্বপ্নে তার বাড়ানো পাসেই তো গোল দেয় উঠতি ফুটবলার। এক্স ইজ ইকুয়াল টু প্রেম ইজ ইকুয়ালটু পাশবালিশ ধরে, রাজ্যের নালিশও ঠুকে দেওয়া যায়! নতুন প্রেমে পড়লে না হয় অন্য চরিত্র বিলিয়ে দেওয়া যাবে তাকে। বাংলা থিয়েটারে গেলে এর চাইতে ভার্সেটাইল কাউকে মিলবে? ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় কড়কড়ে বস, গোলাপ ফুল দেওয়ার সময় অষ্টাদশী প্রেমিকা, রেজাল্ট দেখানোর সময় বীতশ্রদ্ধ বাবা, গোপনে কবিতা লেখার সময় একমাত্র মনোযোগী পাঠক, যৌনবিরহ জাগলে যৌনসঙ্গী– এ তো সেই পাতালঘর-এর গান: যে কোনও ভূমিকায়, সমানে লড়ে যাই, আপনি যা চান, আমি ঠিক তাই!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
পাশবালিশের খুঁটে চোখের জল মুছে দেওয়া তো বাস্তবে, স্বপ্নে তার বাড়ানো পাসেই তো গোল দেয় উঠতি ফুটবলার। এক্স ইজ ইকুয়াল টু প্রেম ইজ ইকুয়ালটু পাশবালিশ ধরে, রাজ্যের নালিশও ঠুকে দেওয়া যায়! নতুন প্রেমে পড়লে না হয় অন্য চরিত্র বিলিয়ে দেওয়া যাবে তাকে। বাংলা থিয়েটারে গেলে এর চাইতে ভার্সেটাইল কাউকে মিলবে?
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
এমনি বালিশ দূরের ব্যাপার। সে ঘ্যামা, নাকউঁচু গোছের। মাথায় তুলে রাখতে হয়। অন্য কোনও জায়গাপত্তরে সে মানিয়ে নিতে পারে না। আর পাশবালিশ আমাদেরই বডিখানার সমান্তরালে থাকা, আমাদের বুঝে-শুনে উঠতে পারা, আস্ত তুলতুলে সেন্সিটিভ বন্ধু। লিঙ্গ-টিঙ্গ মানে না, বর্ণ-জাত-গোত্র-ধর্ম কিচ্ছু না। সে রবীন্দ্রসংগীতেও হ্যাঁ, বিঠোফেনেও হ্যাঁ, বিলায়েতেও তাই। দীর্ঘদিন কেটে গেলে দুটো মাত্র আবদার, নতুন জামা আর নতুন তুলো। এক্কেবারে মানুষের মতোই।
কেন মানুষের মতো? সে-ও আসলে দীর্ঘদিন কেটে গেলে, বহুকালের বাইরেটা, আর ভেতরটা পাল্টে ফেলতে চায়। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বোরিং হতে ভালোবাসে? আমাদের নাক ডাকার পাশে, আয়ু ও বায়ু বিয়োগের পাশে, সে জেগে থাকে। অনেক রাতের মেসেজ এলে, শুধুই কি ডেকে দেয় স্মার্টফোনের সচকিত আলো? পাশবালিশ ডাকে না?
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: মাকুন্দ বলে যৌনপ্রস্তাব পেয়েছিলাম, জেনেছিলাম ওঁর বান্ধবীর মধ্যেও এত নারীত্ব নেই
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
প্রেমের চিরকালীন আন্ডাররেটেড ঘটক পাশবালিশই। সেই উঠতি বয়সে জোগান দেয় শরীর কী বস্তু। সে জানে, আলিঙ্গনে ‘লিঙ্গ’ শব্দখানা কীভাবে ঢুকে পড়ে। জানে বাবা-মাকে জানাতে না-পারা পুরুষের পুরুষপ্রেম, নারীর নারীপ্রেম। তার সত্যিই, এ নিয়ে কোনও নীতিপুলিশি নেই।
জীবন তো শুধু, হিরো-হিরোইনদের দিয়ে নয়। শাহরুখ-কাজল, উত্তম-সুচিত্রা, প্রসেনজিৎ-অর্পিতা, দেব-শুভশ্রী নয়– আমাদের ছায়া দেবী, তুলসী চক্রবর্তী, রবি ঘোষ, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়রাও আছেন। মনে রাখবেন, এঁরা পার্শ্বচরিত্র, সিনেমা এঁদের ছাড়া দাঁড়ায় না। জীবনও যেমন দাঁড়ায় না তেমন পাশবালিশ ছাড়া।