রোজা লুক্সেমবার্গের প্রেম, ভালোবাসা, তত্ত্ব, সমালোচনা, বিপ্লবী কাজ, প্রকৃতি প্রেম, বাগান গড়া, ঠোঁট কাটা, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ, উত্তাল আবেগ– এই সমস্তটুকু নিয়েই আজ যে রোজাকে আমরা দেখতে পাই, তা তাঁর নারী কমরেডদের ভালোবাসার ফসল, তাঁদের নারীবাদী রাজনীতির প্রতিফলন। কারণ এই সমস্তটুকুই একসঙ্গে না দেখলে রোজার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত বিপ্লবের প্রতি অফুরান আস্থা, স্বপ্ন, খেটে-খাওয়া মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি অঙ্গীকার বোঝা মুশকিল। মৃত্যুর আগেরদিনও তাঁর শেষ লেখায় বলতে পারেন, ‘কাল আবার বিপ্লব জেগে উঠবে, অস্ত্রের ঝলকানিতে তোমাদের সন্ত্রস্ত চোখে চোখ রেখে ভেঁপু বাজিয়ে বলবে, আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকব।’ প্রচ্ছদের ছবি: সোমোশ্রী দাস
ফেব্রুয়ারি, ১৯১৬। বার্নিম স্ট্রিটের মহিলা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন রোজা লুক্সেমবার্গ। জেল গেটের বাইরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে প্রায় হাজার মেয়ে। সেই সময় যখন রাজনৈতিক মহলের নেতৃত্বে প্রায় হাতেগোনা কিছু মেয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছে, রোজার অদমনীয় নির্ভীক প্রত্যয়, কাউকে তোয়াক্কা না করে পরিষ্কারভাবে নিজের বক্তব্য রাখা, সেই সময়কার নামকরা তাত্ত্বিকদের সঙ্গে নিরলস তর্ক করে যাওয়া, ঠোঁট কাটা ‘রেড রোজা’, এই মেয়েদের কাছে এক অন্য সম্ভাবনার দিক খুলে দেন। কাজেই সেই কমরেডকে আগলে রাখতে, জেল-গেটে অধীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল তারা।
ফুল, কেক, নানা রকমের খাবার, চা, চকোলেট– নিজেদের শ্রমে, নিজেদের হাতে বানানো নানা উপহারে যত্নে ভরে দিয়েছিল তাঁর বাড়ির আনাচ-কানাচ। জেল থেকে বেরিয়ে পার্টি নেতৃত্বের থেকে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া না পেলেও, এই মেয়েদের অফুরান ভালোবাসা নতুন লড়াইয়ের শক্তি জোগায়। লজ্জায় চিৎকার করতে ইচ্ছে হলেও, তাই ঘনিষ্ঠ কমরেড ক্লারাকে এই ঘটনার বিবরণী দিতে গিয়ে বলেন, এই মেয়েদের ভালোবাসা, যত্ন, এই সংহতি, বন্ধুত্বের রাজনীতিই তাঁর জিয়নকাঠি, তাদের এই আগলে রাখা, এই যত্ন আসলে রোজাকে বোঝায়, তিনি একটি খুঁটি মাত্র, যেখানে এই মেয়েরা, এই কমরেডশিপের মধ্য দিয়েই সংগ্রামে অংশগ্রহণের আগ্রহ ব্যক্ত করছে।
ব্লাডি রোজা, গুরুগম্ভীর মার্কসবাদী তাত্ত্বিক রোজা, সংস্কারবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো রোজা, আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তোলা রোজা, সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম চালানো রোজা, বিরুদ্ধ-স্বরের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করে যাওয়া রোজা– এই সমস্ত রোজাকে একসূত্রে বেঁধে তার সমস্ত জটিলতা, সমস্ত দ্বন্দ্বের সঙ্গে আরও জীবন্ত করে এক অন্য রোজার সম্মুখীন করে আমাদের।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
ক্লারার সঙ্গে রোজার বন্ধুত্বও ছিল তীব্রভাবে রাজনৈতিক, যার ভিত ছিল তাঁদের যুদ্ধ ও সামরিকীকরণ, এবং সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে যৌথ সংগ্রাম, ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যেকার আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই। একইসঙ্গে দু’জনকেই প্রতিনিয়ত লড়তে হয়েছে পার্টির নেতাদের পৌরুষের দাম্ভিকতার বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ে শাণিত বন্ধুত্ব আরও জোরালো হয়েছে দু’জনের, বিপ্লবের প্রতি অগাধ আস্থা ও দৃঢ় অঙ্গীকারে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
রোজার মৃত্যুতে তাই ক্লারা জেটকিন লেখেন, ‘কঠোর কাজের মানুষ হলেও, রোজা তাঁর বন্ধুদের অদ্ভুত আশকারা দিতেন। তাদের দুঃখ, কষ্ট তাকে নিজের সমস্যার থেকেও বিচলিত করত। বন্ধু হিসেবে তিনি ছিলেন একইসঙ্গে বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসার প্রতীক, আত্মবিলুপ্তি ও একাগ্রতার প্রতীক।’ ক্লারার সঙ্গে রোজার বন্ধুত্বও ছিল তীব্রভাবে রাজনৈতিক, যার ভিত ছিল তাঁদের যুদ্ধ ও সামরিকীকরণ, এবং সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে যৌথ সংগ্রাম, ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যেকার আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই। একইসঙ্গে দু’জনকেই প্রতিনিয়ত লড়তে হয়েছে পার্টির নেতাদের পৌরুষের দাম্ভিকতার বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ে শাণিত বন্ধুত্ব আরও জোরালো হয়েছে দু’জনের, বিপ্লবের প্রতি অগাধ আস্থা ও দৃঢ় অঙ্গীকারে। তাই জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দ্বারা শুধুমাত্র মেয়ে বলে নারী-প্রশ্নে আবদ্ধ থাকতে রোজার আপত্তি থাকলেও, তাঁর নারী আন্দোলন নিয়ে ভাবনা ফুটে ওঠে ক্লারা জেটকিনের সঙ্গে বিপ্লবী বন্ধুত্বে।
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের পত্রিকার সম্পাদনার ভার পেয়েও রোজা প্রতিনিয়ত বোঝেন, কাগজের পুরুষ-কমরেডরা তাঁর নেতৃত্ব অত সহজে মেনে নিয়ে পারছে না, পার্টির মধ্যেকার এই প্রতিদিনের লড়াই তাঁকে আরও বুঝিয়েছিল, মেয়েদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের গুরুত্ব। ১৯০২-এ রোজা লেখেন, ‘মেয়েদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এক নতুন টাটকা বাতাস আনবে, (সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের) রাজনৈতিক জীবনে, এই সংকীর্ণ পারিবারিক জীবন, যা আমাদের পার্টির সদস্যদের, শ্রমিকদের এবং তাদের নেতাদের ওপরেও প্রভাব ফেলে, সেই দমবন্ধ করা মানসিকতাকে চূর্ণ করবে।’ পার্টির মধ্যেকার পরিবারতন্ত্রের, সংকীর্ণতার সঙ্গে যুঝতে যুঝতেই আসলে রোজা উপলব্ধি করেছিলেন, নারী আন্দোলনের স্বতন্ত্রতার প্রয়োজন। ১৯০৭-এর মেয়েদের কনফারেন্সে তাই ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরোর প্রতিনিধিত্ব করলেও রোজা কৌতুকের সঙ্গে জানান, তিনিই ব্যুরোর একমাত্র নারী সদস্য এবং ক্লারার সঙ্গেই নারী আন্দোলনের স্বাতন্ত্র্যর কথা বলেন।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আরও পড়ুন: সফদর মারা গেছে, কিন্তু ধমনীতে সে বেঁচে
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
১৯১০-’১১-তে কাউটস্কি, বেবেলের সঙ্গে মতাদর্শগত লড়াইয়ের ফলে যখন সম্পর্কে ছেদ ধরে, তখন বন্ধু ক্লারার সম্পাদনায় চলা ‘ডাই গ্লিছেইট’ (সমতা) পত্রিকাই তাঁর বিপ্লবী ভাবনা প্রকাশের প্রধান জায়গা হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই পত্রিকাই যুদ্ধ-বিরোধী রাজনৈতিক স্বরকে বলিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯১১-র আন্তজার্তিক নারী দিবস, রোজার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ভোটাধিকারের লড়াই তখন তুঙ্গে! রোজার লেখাতেও ফুটে উঠছে শ্রমজীবী মেয়েদের বিপ্লবী শক্তি হিসেবে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা, মেয়েদের ঘরে-বাইরে শ্রমের কথা, ঘরে-বাইরের ঘেরাটোপ ভেঙে শ্রমজীবী মেয়েদের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের কথা। সেই লড়াইয়ের ময়দানেই ভোটাধিকারের লড়াই ঢেউ জাগায় পরবর্তীকালের যুদ্ধ-বিরোধী কর্মসূচিতে, যার কেন্দ্রে ছিলেন শ্রমজীবী মেয়েরা। ১৯১৫-তে গোপনে যুদ্ধ-বিরোধী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাওয়ার জন্য রোজা ও ক্লারা– দু’জনেই গ্রেপ্তার হলেও, তাই SPD-কে সম্মুখীন হতে হয়, বিপ্লবী মেয়ে দলের জোরালো প্রতিরোধের। খাদ্যসংকট নিয়ে মিটিং-এ এই মেয়েদের দলকে ঢুকতে না দিলে তারা জোর করে মিটিং-এ ঢুকে তাদের মত রাখে। এই মেয়েদের বিপ্লবী ভূমিকা, রোজাকে নারী আন্দোলনের দিকে আকর্ষিত করছিল। ১৯১১-এ কমরেড ল্যুই কাউটস্কিকে নারী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কথা চিঠিতে উল্লেখ করে রোজা মজার ছলে লেখেন, ‘ভাবো! আমিও নারীবাদী হয়ে গেলাম!’
ব্যক্তিগত জীবনেও সম্পর্কের নানা ভাঙাগড়া রোজাকে বারবার আশ্রয় নিতে শিখিয়েছে বন্ধুত্বে, কমরেডশিপে। কমিউনিস্ট ইতিহাস চর্চায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোজার জীবন, রোজার পরিচয় বারবার নির্মিত হয়েছে, হয় লিও জোগিচের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দিয়ে, নয় বেবেল, কার্ল কাউটস্কি, লেনিনের সঙ্গে তাঁর তর্কের মধ্য দিয়ে। রোজার জীবনী লিখতে গিয়ে নেটল, জোগিচের সঙ্গে রোজার সম্পর্ক ভাঙাকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, ১৯০৬-’০৯-এর সময়পর্বকে রোজার জীবনের হারিয়ে যাওয়া সময় হিসেবে গণ্য করেছেন, লিখেছেন– এই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, রোজার জীবনকে চিরতরে কতটা বদলে দিয়েছে। অথচ ওই সময়েই আমরা দেখি, রোজা মেয়েদের কনফারেন্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, ক্লারার সঙ্গে লেনিনের পরিচয় করাচ্ছেন, পার্টি স্কুলের একমাত্র নারী-তাত্ত্বিক হিসেবে ঝড় তুলছেন।
রোজার জীবনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভাঙাগড়া, আবেগ, অনুভূতি ছাড়া যেমন রোজার জীবন আঁকা সমস্যার, কারণ এই নিরন্তর আবেগ আসলে রোজার রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, এই আবেগই তাঁকে জনগণের অমৃত শক্তির, বিপ্লবের সম্ভাবনার প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখতে শেখায়, তেমনই শুধুমাত্র এই সম্পর্কের নিরিখে রোজার জীবন ও রাজনীতি নির্মাণ করলেও আসলে রোজা, রোজার রাজনীতিকে বোঝা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই সূত্রেই, রোজার নারী কমরেডরা, রোজার বন্ধুরা এক অন্য ইতিহাস তুলে ধরেন রোজার চিঠির মধ্য দিয়ে। যে চিঠিতে রোজা অকপটে বলে যান তাঁর রাজনৈতিক ভাবনার চলনের কথা, গরাদের ওপারের জীবনের কথা, জেলে বাগান গড়ার কথা, ফুল, পাখি, গাছেদের কথা, যুদ্ধের কথা, রাস্তার লড়াইয়ে প্রাণ দেওয়ার কথা। সোফি লিবকনেখ্ট, ক্লারা জেটকিন, ল্যুই কাউটস্কি, ম্যাথিল্ড জ্যাকব, হেনরিয়েট রোল্যান্ড হোস্ট–পার্টি সেন্সরশিপ, রাষ্ট্রীয় চোখ রাঙানি, নাৎসি হামলার সঙ্গে যুঝেও তাঁরা সযত্নে আগলে রেখেছেন রোজার চিঠি, অন্যান্য কমরেডকে লেখা, নানা জায়গায় পড়ে থাকা চিঠি উদ্ধার করেছেন রোজার স্মৃতি আগলে রাখতে, এক অন্য ইতিহাস লিখতে।
আমরা যারা ইতিহাসের পাতায় হন্যে হয়ে মেয়েদের কথা হাতড়াতে থাকি, তারা জানি নারীবাদী ইতিহাস সব সময়েই মার্জিন থেকে নির্মিত হয়। ইতিহাস বইয়ের ফুটনোট থেকে, চিঠি থেকে, বাড়ির এক কোণে পরে থাকা ঝুলে ভরা বাক্স থেকে, বাতিল পাণ্ডুলিপি থেকে, মুছে দেওয়া শব্দ, বন্ধুদের আগলে রাখা স্মৃতি থেকে সেই ইতিহাস রূপ পায়। ১৯১৭-এ জেল থেকে লেখা চিঠিতে রোজা সোফি লিবকনেখ্টকে অকপটে বলেন, ‘…আমি হয়তো একটু অদ্ভুত বলেই সমস্ত কিছুকে এত গভীরভাবে অনুভব করি। কখনও মনে হয় আমি হয়তো মানুষ নই, পাখি বা মানুষরূপী কোনও পশু। আমাদের পার্টি কংগ্রেসের থেকে এই ছোট্ট বাগানে, এই ঘাসের মধ্যে আমি যেন অনেক বেশি ঘর খুঁজে পাই, অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এই কথাটা আমি তোমাকেই বলতে পারি খালি, কারণ আমি জানি তুমি এটা শুনলে এটাকে সমাজতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাঘাতকতা মনে করবে না। কারণ তুমি জানো আমি আসলে লড়াইয়ের ময়দানেই মরতে চাই।’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আরও পড়ুন: রোকেয়া স্বপ্ন দেখেছিলেন যখন হু হু করে বিক্রি হচ্ছিল ‘পাসকরা মাগ’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
রোজার প্রেম, ভালোবাসা, তত্ত্ব, সমালোচনা, বিপ্লবী কাজ, প্রকৃতি প্রেম, বাগান গড়া, ঠোঁট কাটা, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ, উত্তাল আবেগ– এই সমস্তটুকু নিয়েই আজ যে রোজাকে আমরা দেখতে পাই, তা তাঁর নারী কমরেডদের ভালোবাসার ফসল, তাঁদের নারীবাদী রাজনীতির প্রতিফলন। কারণ এই সমস্তটুকুই একসঙ্গে না দেখলে রোজার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত বিপ্লবের প্রতি অফুরান আস্থা, স্বপ্ন, খেটে-খাওয়া মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি অঙ্গীকার বোঝা মুশকিল। এই ফুল, পাখি, গাছের সঙ্গে একাত্মবোধ করার তাগিদে, জীবনকে জাপটে ভালোবেসে বেঁচে নেওয়ার তাগিদেই যে রোজা লড়াইয়ের ময়দানে হাসতে হাসতে জীবন ত্যাগ করতে পারলেন, এই মানুষের শেকল-ভাঙার অদম্য ইচ্ছা, সংঘবদ্ধ মানুষের স্বতস্ফূর্ততার অফুরান সম্ভাবনা ও বন্ধুত্বের, সংহতির রাজনীতির জোরেই রোজা স্পার্টাকাসদের অভ্যুত্থান অসফল হলেও মৃত্যুর আগের দিনও তাঁর শেষ লেখায় বলতে পারেন, ‘কাল আবার বিপ্লব জেগে উঠবে, অস্ত্রের ঝলকানিতে তোমাদের সন্ত্রস্ত চোখে চোখ রেখে ভেঁপু বাজিয়ে বলবে, আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকব।’ আজ যখন আমরা মার্কস ও এঙ্গেলসের বন্ধুত্বকে নতুন চোখে দেখে কমিউনিস্ট ইতিহাস রচনার কথা ভাবি, তখন একই সঙ্গে কমিউনিস্ট আন্দোলনের নারীবাদী ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের মেয়েদের এই বিপ্লবী কমরেডশিপের সম্ভাবনার, নারীবাদী বন্ধুত্বের রাজনীতির দিকেও নজর দিতে হবে।
কবির কোনও ভ্যানিটি ছিল না। যেখানে সেখানে বসে পড়তেন চায়ের ঠেকে। কেউ চাইলেই এক টুকরো কাগজে কোনও কবিতার লাইন লিখে দিতেন। তারপর সেটার কী হত, জানতেও চাইতেন না। এমনিই ছিল তাঁর সরল জীবন-যাপন। সেই প্রয়াত কবি অরুণ চক্রবর্তীকে নিয়ে এই বিশেষ স্মৃতিচারণা।