সূর্যযাত্রার মতোই শ্রীজগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার অনুবৃত্তি স্মরণাতীত কালে শুরু হয়েছিল। স্মরণাতীত বললাম এই কারণে যে, সঠিক শুরুর সময়টা নির্ধারণ করা যায়নি। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকেও এই আচারের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। স্নানযাত্রার পূর্বদিবস রত্নসিংহাসন থেকে শোভাযাত্রা করে প্রভু জগন্নাথ, প্রভু বলভদ্র ও মাতা সুভদ্রাকে আনা হয় স্নানবেদিতে। শোভাযাত্রা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ। একে ‘পাহাণ্ডি’ বলা হয়। মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে তালে তালে বাজে ঢাক-ঘণ্টা-বাঁশি-শিঙা। তিন দারুমূর্তিকেই নৃত্যের দোলায় মন্দির থেকে বের করে আনা হয়। মন্দিরের বাইরে প্রতিষ্ঠিত স্নানমণ্ডপে মূর্তিত্রয়ী স্নানশুদ্ধ হন পরের দিন।
বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ, তর্কে টাটা স্টিল– সর্বাগ্রে এই পাঞ্চলাইনটা আপনারা ধর্তব্যের মধ্যে রাখুন, যদি নীললোহিতকে চিনে থাকেন। বৃন্দাবন ভ্রমণকালে তিনি একটা দোলনায় বসলেন। গাইড বললেন আপনি যে দোলনায় এখন বসেছেন, সেখানে একসময় রাধা-কৃষ্ণ দোল খেতেন। অচিরাত উপস্থিত ভক্তবৃন্দ টপাটপ প্রণাম সারলেন। মানসলোকে দোদুল্যমান যুগলকেও প্রত্যক্ষ করলেন হয়তো। হয়তো কেন, নিশ্চয়ই করলেন। না হলে প্রণাম করবেনই বা কেন! কিন্তু ঘাড় বেঁকিয়ে নীললোহিত দেখলেন দোলনার লোহায় দিব্য টাটা স্টিলের ছাপ মারা। তাই বলি ভক্তজনের ওই বেধড়ক বিশ্বাসখানা না আগলে ধরলে সব লীলাবর্ণনেই কিন্তু নীললোহিতের টাটা স্টিল নেত্য করবে। অতএব সাধু পাঠক সাবধান।
বৃন্দা দূতী। অর্থাৎ, আমাদের প্রাণের বিন্দে। রাধা-কৃষ্ণের প্রণয়বার্তা-বাহিনী। কৃষ্ণের লীলাসংবাদ রাধিকার গোচরে আর রাধিকার প্রেমবৈচিত্ত্য কৃষ্ণ-সকাশে আনাই ছিল সে আলোকসম্ভব নারীর কাজ। তাঁরই নামে বৃন্দাবন। দ্বারকার পুরনারীদের কাছে প্রণয়-বিরহ-আবির-গুলাল মাখা রাধা-কৃষ্ণের সেই বৃন্দাবনলীলা বর্ণনা করছিলেন বলভদ্র ও সুভদ্রার মা রোহিণী। সে কাহিনির অভিঘাতে জগদীশ্বর-সহ বলভদ্র, সুভদ্রার চোখ হল ক্রমাগত বিস্ফারিত, হাত-পা অন্তর্হিত শরীর প্রাকারে। সে এক অলৌকিক অত্যাশ্চর্য চোখ জুড়ানো লীলামূর্তি। এক মাসাধিক কাল ওই রূপেই বিরাজ করলেন দেবত্রয়ী। সুন্দরতম এই লীলামূর্তি দর্শনের স্বাদ থেকে তো মর্তজনকে বঞ্চিত করা যায় না! দেবর্ষি নারদ প্রভুকে অনুরোধ করলেন কলিকালে এই লীলাময় রূপ প্রচারিত করতে। ভক্তের দাস ভগবান সেই অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলেন না। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের জগন্নাথ মূর্তিনির্মাণ প্রচেষ্টায় ওই রূপেই সাকার হলেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দারুবিগ্রহে আবির্ভূত হলেন শ্রীজগন্নাথ। ‘নীলাচলনিবাসায় নিত্যায় পরমাত্মনে। বলভদ্র সুভদ্রাভ্যাং জগন্নাথায় তে নমঃ।’
স্নানাভিষেক করিয়ে রাজা তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিলেন পুরী মন্দিরে। সরস্বতী পূজার দিন দারুব্রহ্ম সাকার রূপ পরিগ্রহ করতে শুরু করেন। অক্ষয় তৃতীয়ায় এসে জগন্নাথের মানবলীলার অঙ্গ হিসেবে প্রকট হয় তীব্র শিরঃপীড়া। পরমব্রহ্ম মানবশরীর নিচ্ছেন। কাজে-কাজেই মানবশরীরের রোগ-ভোগ-যন্ত্রণাও নেবেন যথাবিহিত। দ্বারস্থ হবেন চিকিৎসকের। চিকিৎসকের পরামর্শে কপাল হল চন্দনচর্চিত। এই হল অক্ষয় তৃতীয়ায় মহাপ্রভুর চন্দনযাত্রা। এরপর সেই চন্দন ধৌতকরণের জন্যে পুরী মন্দিরের উত্তরকোণে অবস্থিত কুয়ো থেকে ১০৮ সুবর্ণ কলসে জল এনে স্নানবেদিতে অপেক্ষমান দেবতাত্রয়ীকে মহাস্নান করানো হয়। ত্রিলোকেশ্বরের স্নানযাত্রা। বিশ্বাস, এই দিনটাই দারুশরীরে জগন্নাথ মহাপ্রভুর আবির্ভাব। স্কন্দপুরাণের ২৯তম অধ্যায় অর্থাৎ উৎকলখণ্ডে অত্যন্ত বিশদে বর্ণিত হয়েছে স্নানযাত্রার মহিমা, সম্পাদন পদ্ধতি। নানাদিক থেকেই এই স্নানযাত্রা বিশেষ।
যাত্রা হিন্দু সংস্কৃতির প্রাকপুরাণিক অনুষঙ্গ। সূর্যযাত্রার মতোই শ্রীজগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার অনুবৃত্তি স্মরণাতীত কালে শুরু হয়েছিল। স্মরণাতীত বললাম এই কারণে যে, সঠিক শুরুর সময়টা নির্ধারণ করা যায়নি। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকেও এই আচারের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। স্নানযাত্রার পূর্বদিবস রত্নসিংহাসন থেকে শোভাযাত্রা করে প্রভু জগন্নাথ, প্রভু বলভদ্র ও মাতা সুভদ্রাকে আনা হয় স্নানবেদিতে। শোভাযাত্রা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ। একে ‘পাহাণ্ডি’ বলা হয়। মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে তালে তালে বাজে ঢাক-ঘণ্টা-বাঁশি-শিঙা। তিন দারুমূর্তিকেই নৃত্যের দোলায় মন্দির থেকে বের করে আনা হয়। মন্দিরের বাইরে প্রতিষ্ঠিত স্নানমণ্ডপে মূর্তিত্রয়ী স্নানশুদ্ধ হন পরের দিন। পুরী মন্দিরে অহিন্দু প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু জগন্নাথ মহাপ্রভুর স্নানযাত্রা হল সেই বিরল আচার, যা হিন্দু-অহিন্দু নির্বিশেষে প্রত্যক্ষ করতে পারেন। লাখো ভক্তের সমাগমে ১০৮ স্বর্ণকলসের জলে ও নানা সুবাসিত উপকরণে সম্পন্ন হয় মহাস্নান।
এই মহাস্নানে ঋতু পরিবর্তনের তাৎপর্যও সমাহিত হয়ে আছে। কথিত আছে এতে গ্রীষ্মের দাবদাহের শেষে বর্ষা আগমনের অনুমতি পায় প্রভুর কাছে। স্বাভাবিকভাবে কৃষি-ভারতের যাপনচিত্রও গাঁথা হয়ে যাচ্ছে এই অনুষ্ঠানের চালচিত্রে। মহাস্নান শেষে প্রভু অধিষ্ঠিত হন রত্নবেদিতে। নতুন পোশাকে সজ্জিত করা হয় মূর্তিগুলিকে। একে বলা হয় ‘সাদা বেশ’। জগন্নাথের পোশাক নির্মাণের জন্যে ‘খাণ্ডুয়া পাতা’ নামের সিল্ক ও সুতির এক বিশেষ ওড়িশি তাঁত-কাপড় ব্যবহার করা হয়। সুতোর বিভিন্ন রং বিভিন্ন বার ও গ্রহের প্রতিনিধিত্ব করে। ওড়িশার খুরদা জেলার রাউতপাদা গ্রামে জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রার পোশাক তৈরি করা হয়। সেখানকার তন্তুবায় সম্প্রদায় বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন। বিকেলে ধারণ করেন ‘গজবেশ’। এর পিছনেও রয়েছে এক মনোমুগ্ধকর কিংবদন্তি। মহাপ্রভুর সেবক গণপতি ভট্ট জানলেন শ্রীজগন্নাথ পূর্ণব্রহ্ম স্বরূপ সংবরণ করছেন দারুবিগ্রহে। পূর্ণব্রহ্ম সাকার রূপ নিলে সেখানে একটি তুণ্ড বা শুণ্ড থাকা উচিত বলে বিশ্বাস গণপতির। কিন্তু স্নানসিক্ত মহাপ্রভুকে দেখলেন শুঁড়বিহীন রূপে। তাতে তাঁর ধারণা হল এই মূর্তি প্রভুর পরমব্রহ্ম মূর্তি হতে পারে না। তিনি তৎক্ষণাৎ পুরী ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। ভগবান ভক্তের মনোকষ্ট বুঝে ব্রাহ্মণরূপে দেখা দিয়ে তাঁকে পুনরায় মন্দিরে দেবদর্শনের পরামর্শ দেন। দ্বিতীয়বার দর্শনে গণপতি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন। সেই দিব্য দর্শনে দেখলেন জগন্নাথ ও বলভদ্র গণেশের মতো হস্তিমস্তকে আবির্ভূত। শুণ্ডের দু’পাশে করাল হস্তিদন্ত। সুভদ্রা সেখানে পদ্মমুখী। বুঝলেন কলিকালে শ্রীজগন্নাথ মূর্তিতেই একমাত্র পরমব্রহ্ম প্রকাশিত। সেই পরম্পরা মেনে স্নানযাত্রার বিকেলে জগন্নাথ ও বলভদ্রকে সাজানো হয় গজবেশে। শুণ্ডশিরাবরণসজ্জিত দুই ভ্রাতার মাঝে সুভদ্রার মুখমণ্ডল পদ্মে আচ্ছাদিত করা হয়। এই মহাস্নান ও মোহন গজবেশে শ্রীজগন্নাথ দর্শন করলে নাকি সপ্তজন্মের সঞ্চিত পাপ বিধৌত হয়, সংসারপাশমুক্ত হয় মানব।
ওদিকে রাত্রিকালে মানবলীলারত প্রভুর জ্বর আসে বিপুল স্নানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। প্রভুকে বলভদ্র ও সুভদ্রা-সহ স্থানান্তরিত করা হয় মন্দিরের গোপন কক্ষে, লোকচক্ষুর অন্তরালে। ১৫ দিনের জন্যে। এইসময় ভক্তের জন্যে মন্দিরে প্রতিস্থাপিত হয় ত্রয়ীমূর্তির পটচিত্র। মহাপ্রভু তখন রাজবৈদ্যের তত্ত্বাবধানে থাকেন। ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। কিছু মুখে রোচে না এই সময়। রাজবৈদ্য দেন পাঁচন। মহাপ্রভুর এই দশাকে ‘অনসর’ পর্ব বলা হয়। ভক্তগণ বিশ্বাস করেন, এইসময় প্রভুর দিব্য আবির্ভাব ঘটে ব্রহ্মগিরিস্থিত অলরনাথের মধ্যে। একপক্ষকাল রাজবৈদ্যের তত্ত্বাবধানে থেকে আরোগ্যপ্রাপ্তি ঘটে জগন্নাথ মহাপ্রভুর। রাজবৈদ্যের পরামর্শেই হাওয়া বদলের আয়োজন হয়। সজ্জিত হয় নান্দিঘোষ, তালধ্বজ আর দেবদলন। যথাক্রমে জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রার রথ। শুরু হয় বিশ্ববিশ্রুত রথযাত্রা।
চন্দনযাত্রা থেকে স্নানযাত্রা হয়ে রথযাত্রা শুধু তিন দারুমূর্তিকে ঘিরে আয়োজিত উৎসব নয়। হিন্দুধর্মের একাধারে জটিল আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক পরিক্রমা। ছান্দোগ্য উপনিষদে উচ্চারিত হয়েছে ‘তত্ত্বমসি’। তুমিই সেই। হিন্দুধর্মে নিজেকে জানার সাধনা। কী সেই জানা? অন্নময় কোষ, প্রাণময় কোষ, মনোময় কোষ, বিজ্ঞানময় কোষ আর আনন্দময় কোষ নিয়ে যে অস্তিত্ব, তার থেকেও তুমি বড়। তুমিই ব্রহ্ম, তুমি ব্রহ্মাণ্ডও। কারণ মহাবিশ্ব থেকে তোমার শরীর, সর্বত্র একই পঞ্চতত্ত্বের সম্মিলন। মাটি, জল, আগুন, বাতাস, শূন্যতা। তোমার শরীরে অস্থি-মজ্জা-মেদ-মাংসরূপে ক্ষিতি, রক্ত-লসিকারূপে অপ, ক্ষুধা-শরীরাগ্নিরূপে তেজ, শ্বাস-প্রশ্বাস বায়ুরূপে মরুৎ এবং চিন্তা-বুদ্ধি-প্রজ্ঞারূপে ব্যোম তাৎপর্যময় হয়ে আছে। ফলে তুমিই ব্রহ্ম। তোমার মধ্যেই তিনি এবং তাঁর মধ্যে তুমিই। এর বাইরে আর কিছুই নেই। সবই নশ্বর, সবই শরীরের ভোগ। তুমি অবিনশ্বর। চন্দনযাত্রা থেকে স্নানযাত্রা হয়ে রথযাত্রায় সেই গভীর বেদান্ত দর্শন একটা সংকেতময় বহিরাধার পরিগ্রহ করে। চন্দনপ্রলেপ মৃত্তিকাসদৃশ। অর্থাৎ মাটি। মহাস্নানে জলের তাৎপর্য। স্নানপরবর্তী জ্বরে উষ্ণতা অর্থাৎ তেজের বার্তা। জ্বরের নিরাকরণে রথযাত্রার হাওয়াবদলে মরুৎ সংকেত। উল্টোরথে পুনরায় মন্দিরে পরমব্রহ্মে স্থিতি ব্যোম বা শূন্যতাকেই উপলব্ধি করায়। বহুরূপে সম্মুখেই সব ছড়ানো থাকে। বুঝে নিতে হয় কেবল।
যাক সেসব ভারিক্কি কথাবার্তা। ফিরে আসি প্রভুর স্নানযাত্রায়। সেখানে খাওয়াদাওয়ার কথা না থাকলে চলবে কেন? স্নান শেষে প্রভু বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন-সহ বসেন ভোজনে। স্নানযাত্রার সারাদিনে ছ’বার ভোগ হয় প্রভুর। দুই ধরনের ভোগ। সিদ্ধ ভোগ আর শুকনো ভোগ। শুকনো ভোগে থাকবে মুড়ি, মুড়কি, খই, খাজা, গজা, মালপোয়া, প্যাঁড়া, শুকনো মিষ্টি। অন্যদিকে ৫৬ আয়োজনে সিদ্ধভোগ। ভাত, ডালমা, বেসর, সবজি, শুক্তো, নানা তরকারি, বেগুন মরিচপানি, নারকেল বাঁটা দেওয়া চাটনি, পায়েস, ক্ষির, রসাবলি, দই ইত্যাদি। থাকে মহাপ্রভুর প্রিয় ‘কণিকা ভোগ’। চাল-চিনি-ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে এই ব্যঞ্জন নির্মিত হয়। সঙ্গে অনুপান ‘টঙ্ক তোরানি’। প্রভুর প্রিয় পানীয়। নির্মিত হয় মন্দিরের নিজস্ব পাকশালে। প্রতি চুলার ওপরে সাতটি করে হাঁড়ি একটির ওপরে আর একটি চাপিয়ে অন্ন-ব্যঞ্জন রান্না হয়। আশ্চর্যের বিষয় চুলা থেকে দূরবর্তী হাঁড়িটির রান্না সর্বাগ্রে প্রস্তুত হয়। পুরীর মন্দিরের ছায়া না পড়ার মতোই এই ঘটনা ভক্তদের বিস্ময় জাগায়। মহাপ্রভুর প্রসাদে নিষিদ্ধ আলু ও টমেটো। বহির্ভারত থেকে আমদানি সবজির দেবপাকশালে নো এন্ট্রি। নিজের জমির সবজিই পছন্দ প্রভুর। একইসঙ্গে মহাপ্রসাদে ব্যবহৃত হয় না বিট, ভুট্টা, মটরশুঁটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, ধনেপাতা, শালগম, ক্যাপসিকাম, করলা, শশার মতো সবজিও। পুরীর প্রভু পুরোপুরি ভারতীয়। দিনের শেষে যখন নানা ক্ষুদ্রতার অত্যাচারে আপনি লাঞ্ছিত, যখন সংসারের নানান তীর্যক উজান আপনাকে দোফলা করে চলেছে, তখন চেষ্টা করুন বিশ্বাস নিয়ে স্নানরত সেই বিরাট মূর্তির সামনে নতজানু হয়ে বসতে। এক তীব্র ভাবাবেগ আপনাকে ক্ষুদ্রতাময় ঊর্মির ওপরে ভাসিয়ে তুলবেই। অনুভব করতে পারবেন সুন্দরের স্বরূপ, যেখানে উচ্চ-নীচ, সাদা-কালো, আলো-আঁধার, যুক্তি-আবেগ, সাম্য-অসাম্যের সীমারেখা নিয়ে ভাবনা অবান্তর হয়ে যায়। স্নানযাত্রার আনুষ্ঠানিকতার মতো পুষ্পিণী ঋতুচক্রের অধীনতা স্বীকার, জলাশয় সংরক্ষণের শিক্ষা, শরীরী ভোগের তুচ্ছতা সম্পর্কে সংবেদ আপনাকে এতটা নির্ভার পথে আর কে বোঝাতে পারবে? তাই আপাতত নীল লোহিতকে বিদায় দিন। মহাপ্রভুর সংসারে তিনি একাই লীলাময় পুরুষ। আমরা সকলেই নারী, রাধার অংশ। সেই ভাব সংগ্রহ করেই স্নানযাত্রার দিন প্রভুর নামে ডুব দিয়ে ধুয়ে নিন নিজের পঞ্চতত্ত্বের অস্তিত্ব। জয় জগন্নাথ।
…………………………
ফলো করুন আমাদের ওয়েবসাইট: রোববার ডিজিটাল
…………………………
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved