
একই গল্প বিভিন্ন সংকলনের অন্তর্ভূক্ত হবার সময় ছবি এঁকেছেন পৃথক শিল্পীরা– ফলে সেইসব গল্পের স্বাদ পরিবর্তিত হয়েছে লক্ষ্যণীয়ভাবে। সেইরকম একটি উদাহরণ– তাঁর বিখ্যাত গল্প ‘মই নিয়ে হইচই’-এর সঙ্গে ছবি এঁকেছেন রেবতীভূষণ (‘নাক নিয়ে নাকাল’ এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি, ১৩৬৪)। আবার সেই একই গল্প যখন তাঁর ‘যত হাসি ততই মজা’ (দেব সাহিত্য কুটীর) বইয়ে প্রকাশিত হয় তখন সেখানে ছবি আঁকছেন বলাইবন্ধু রায়। এরকম আরও বেশ কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আগ্রহী পাঠক তা এতদিনে নিজের মতো করে খুঁজে পেয়েছেন নিশ্চিত। আবার একই গল্প ভিন্ন শিরোনামে একটু পরিবর্তিত চেহারায় যখন প্রকাশিত হচ্ছে তখন অন্য ছবির সংযোজনে তার স্বাদ একেবারেই বদলে গেছে– তাও নিশ্চয়ই অনেকেরই দেখা হয়ে গিয়েছে।
প্রেমেন্দ্র মিত্র, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এবং শিবরাম চক্রবর্তী– এই তিন লেখক-সৃষ্ট চরিত্রগুলি দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি পাঠকের, বিশেষত কমবয়সি পাঠকের, চিত্তে অতি প্রিয় হয়ে বিরাজ করছে। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই আনন্দের ধারা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, যে সব সেকালের সৌভাগ্যবান পাঠকরা ঘনাদা-টেনিদা-হর্ষবর্ধনের কীর্তি সরাসরি পত্রিকা বা বার্ষিকীর পাতায় পড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে ইদানীংকালের বাধ্যত রচনাবলি-প্রত্যাশী-পাঠকদের পাঠানুভূতির কী পার্থক্য বা আদৌ কোনও পার্থক্য আছে কি না– তা নির্ণয় করার উপায় নেই, কিন্তু সাত-আট-নয় দশক ধরে এইসব চরিত্র, অন্তত নামে, পাঠকদের কাছে আপন হয়ে থাকছে প্রজন্মান্তরে, তা কম কথা নয়। এঁরা ছাড়াও আরও বেশ কিছু লেখক একই চরিত্রাবলি নিয়ে বছরের পর বছর ক্রমান্বয়ে গল্প-উপন্যাস-নাটক লিখে গিয়েছেন বা এখনও লিখে চলেছেন, সেকথা অনস্বীকার্য। তাদের অনেকগুলিই যদিও অভিযান বা রহস্যের ধারাবাহিক আখ্যান, তথাপি কেবলমাত্র লঘু বা গম্ভীর হাস্যরস নির্ভর কাহিনি দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পাঠককে সম্মোহিত করে রাখা এই তিনজন লেখক পৃথক যশের অধিকারী।
শ্রীযুক্ত ঘনশ্যাম দাস অথবা ‘ঘনাদা’, বাহাত্তর নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ির টঙের ঘরের বাসিন্দা; শ্রীমান ভজহরি মুখোপাধ্যায়– পটলডাঙার হাবুল-প্যালা-ক্যাবলার টেনিদার প্রথম বার্ষিকীর পৃষ্ঠায় আর্বিভাবের প্রায় এক দশক আগেই কাঠের কারবারে বিদঘুটে রকমের ধনী হয়ে ওঠা বর্ধন ভ্রাতৃদ্বয়– হর্ষবর্ধন (প্রথমদিকের কাহিনিতে ‘হর্ষবর্দ্ধন’) এবং গোবর্ধন কলকাতায় উপস্থিত হয়েছে ‘কলকাতার হালচাল’ (১৯৩৬) উপন্যাসেই সম্ভবত। ভিন্নতর গল্পের ক্ষেত্রে শিবরামের বিবিধ কাহিনির প্রধান চরিত্র যে ‘আমি’– শিবরাম চকরবরতি, উপস্থিত হয়েছেন হয়তো ওই একই সময়ে। পরবর্তীকালে কীভাবে তাঁরা পারস্পরিক অপরিচিতির ব্যবধান অতিক্রম করে একইসঙ্গে উপস্থিত হয়ে পাঠকদের অধিকতর আনন্দের কারণ হলেন, অজস্র বইয়ের অগণন গল্পের মধ্যে সেই তথ্য আজ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব! ‘এটিই প্রথম’– এই ধরনের প্রতীতি প্রকাশ করা এতদিন আগের ঘটনাক্রমের ক্ষেত্রে অনির্ভরযোগ্য হতে বাধ্য। বিশেষ করে, শিবরাম চক্রবর্তী বা হেমেন্দ্রকুমার রায়ের মতো ক্রমান্বয়ে লিখে যাওয়া লেখকদের ক্ষেত্রে, কারণ উভয়ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে এঁদের প্রথমদিকের বইগুলিতে অনেকসময়ই, এমনকী, প্রকাশকাল পর্যন্ত উল্লেখ করা হত না। সুতরাং ঠিক কবে বাঙালি পাঠক শিব্রাম-হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের সঙ্গে প্রথম একত্রে পরিচিত হলেন, তা নির্ণয়ের চেষ্টা না করাই শ্রেয়। তবে গত শতাব্দীর তৃতীয় দশকের মাঝামাঝি সময়েই যে তা ঘটেছিল, তা আন্দাজ করা যায়। ধরে নেওয়ার যেতে পারে গত প্রায় ন’দশক ধরে এঁরা বাঙালি পাঠকের মনোহরণ করছেন।




সুতরাং প্রথমোক্ত চরিত্রগুলির মধ্যে শিবরাম-সৃষ্ট হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন-শিব্রামই জ্যেষ্ঠতম। আমৃত্যু (১৯৮০) শিবরাম চক্রবর্তী এই হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন-শিব্রাম-রামডাক্তার-প্রিসিলা-নকুড়মামা-বিনি-জবা-ভালুমাসি-ইতু-আলুমাসি-কল্কেকাশি-কাঞ্চন-সুশীলাদির সঙ্গে অসংখ্য গল্পে আমাদের আনন্দ দিয়েছেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রর গল্পে ঘনাদার নানা রসকাহিনির উৎকর্ণ শ্রোতা যে শিবু-শিশির-গৌর-সুধীর-বাপী দত্ত প্রমুখ, তাদের মধ্যে ‘আমি’ (সুধীর) নিতান্তই আর পাঁচজনের একজন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পের প্যালারাম পটলডাঙার সুখ্যাত চারমূর্তির অন্যতম, টেনিদার নানা রং-বেরঙের গল্প শুনে যে থেকে থেকে বিজ্ঞজনোচিত মন্তব্য করেছে এবং চারমূর্তির নানা অভিযানে টেনিদা-হাবুল-ক্যাবলার সঙ্গে যে সোৎসাহে উপস্থিত থেকেছে। শিবরাম চক্রবর্তীর গল্পের ‘আমি’– হৃষ্টপুষ্ট, সাধারণ বাঙালিদের মতো ধুতি-পাঞ্জাবি পরা, কানের পাশে লম্বমান একগোছা চুল নিয়ে হাস্যমুখ সেই যুবক প্রধান চরিত্র– গল্পগুলি তার চোখ দিয়ে দেখা তো বটেই, কাহিনি আবর্তিত হয় তাকে কেন্দ্র করেই।




হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন-শিব্রামের এই যে চিরপরিচিত চেহারা– পুষ্টবপু, ধুতি এবং কালো কোট পরা, মাথায় কোঁকড়া চুল, পুষ্ট গুম্ফসমন্বিত শ্রী হর্ষবর্ধন; ‘তস্য ভ্রাতা’ মাথাভর্তি এলোমেলো চুল, কিঞ্চিৎ দীর্ঘকায় এবং ক্ষীণতনু শ্রীমান গোবর্ধন এবং শিব্রাম– তাদের বাঙালি পাঠকের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য শৈল চক্রবর্তীই কৃতজ্ঞতাভাজন। এই রূপগুলি পাঠকের কাছে এবং সম্ভবত লেখকের কাছেও, ধাতস্থ হওয়ার আগে এঁদের অবয়বের নানা পরিবর্তন হয়েছে। এমনকী, শৈল চক্রবর্তীও যথাযথ রূপটি খুঁজে না পাওয়ার জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্তে অবশেষে এই জনপ্রিয় আকৃতিগুলিতে স্থিত হন। অপরাপর শিল্পীরাও দ্রুত এই চেহারাগুলিকেই আত্মস্থ করে নেন, যদিও প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায় বা রেবতীভূষণ চোখের কোণে সূক্ষ্ণ আঁচড় বা চিবুকে সামান্য মেদের সংস্থান করে শিব্রাম-চরিত্রটির ক্রমবর্ধমান বয়সের দিকে নজর দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবিতে মাঝবয়সি বা অনতিপ্রৌঢ় শিবরাম চক্রবর্তীর রূপ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।




শিবরাম এবং শৈল চক্রবর্তী উভয়ের স্মৃতিচারণে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সাত-আট দশক আগে, যখন অলংকরণ শিল্পীদের নামই অনেকসময় উল্লেখ করা হত না, আঁকার ধরন বা ছবির কোণে সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর দেখে তাঁদের পরিচয় আন্দাজ করে নিতে হত, তখন শৈল চক্রবর্তীর পরিচিতি কত বিশদভাবে নির্দেশ করা হত, তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হল–
১. ছবি– শৈল চক্রবর্তী
২. প্রচ্ছদ এঁকেছেন শৈল চক্রবর্তী
৩. শ্রী শৈল চক্রবর্তী কর্তৃক বিচিত্রিত
৪. চিত্রশিল্পী– শৈল চক্রবর্তী
৫. রূপকার শৈল চক্রবর্তী
৬. শ্রী শৈল চক্রবর্তী বিচিত্রিত




এছাড়া ‘প্রেমের পথ ঘোরালো’ (স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স, ১৯৫৩) বইতে এক পাতায় লেখকের নাম এবং পরের পাতায় পৃথকভাবে ‘চিত্রশিল্পী শৈল চক্রবর্তী’– বাক্যটি মুদ্রিত এবং দু’ জায়গায় শৈল চক্রবর্তী অঙ্কিত উভয়ের কার্টুন দেওয়া হয়েছে। (তবে ‘বসুধারা’ পত্রিকায় ধারাবাহিক ‘শেষ পাতা’ কলমে ‘শিবরাম চক্রবর্তী রচিত’ এবং ‘রেবতীভূষণ পরিসজ্জিত’ উল্লেখ থাকত।) অর্থাৎ এই ধরনের গল্পে অলংকরণের গুরুত্ব, প্রয়োজন এবং অপরিহার্যতা তখন প্রকাশক এবং লেখকরা উপলব্ধি করেছিলেন এবং শিবরাম চক্রবর্তী-শৈল চক্রবর্তীকে একত্রে একটি গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। এর আগে পরশুরামের গল্পের সঙ্গে যতীন্দ্রকুমার সেন অথবা মোটামুটি শিবরামের রচনাকালেই বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের গল্পের সঙ্গে বিনয় বসুর ছবিকেও যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।




ছেলেবেলা থেকে অসংখ্যবার পড়া এবং একইসঙ্গে ছবিগুলিকে পরম পরিতোষপূর্বক উপভোগ করার পর মনে হয়, এই যে বিপুল পরিমাণে শিবরামের লেখা বই এতদিন ধরে পড়া গেল– তাতে কোন কোন শিল্পী কেমন ছবি এঁকেছেন প্রধান চরিত্রগুলিকে এবং তাঁদের মধ্যে কতজনকে আর এখন স্মরণে আনা যাচ্ছে। শিবরাম চক্রবর্তীর গল্প এবং শৈল চক্রবর্তীর ছবি পরস্পরের অনন্য পরিপূরক তো বটেই, কিন্তু আরও তো অনেকেই ছিলেন, প্রায় সমগুরুত্বসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও নানা সংকলন বা পত্রিকার পাতায় যাঁরা সেই থেকে রয়ে গিয়েছেন– এখন আর তাঁদের ছবি তেমন চোখেই পড়ে না। সেই অতি-উপভোগ্য ব্যক্তিগত পুুনরাবলোকনের পরে শিবরামের শতাধিক বইয়ের আদি সংস্করণের আদ্যোপান্ত পুনঃপাঠ এবং তৎসহ ছবিগুলির সোৎসাহ স্বাদগ্রহণের পর নিম্নলিখিত তথ্যে উপনীত হওয়া গেল। বলা বাহুল্য, এই অতি প্রাচীন-ছিন্নপৃষ্ঠা বইগুলি প্রায়শই প্রচ্ছদচ্যুত এবং সময়ের পীড়নে ভগ্নজানু অবস্থায় অধুনা উপনীত হয়েছে।




শিব্রামের ছবি এঁকেছেন অন্যূন ৩০ জন শিল্পী। হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের ছবিও এঁকেছেন ১৫ জন, বিনির (শিব্রামের এই বোনটি, আরেক বোন ইতুর সঙ্গেই পাঠকের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই সমধিক পরিচিত) ছবি এঁকেছেন সাতজন শিল্পী। প্রিসিলা-(ভাগনি, সুশীলাদির মেয়ে)কে এঁকেছেন তিনজন, গোয়েন্দা কল্কেকাশিরও তিনজন এবং ইতুর ছবিও তিনজন শিল্পী এঁকেছেন। এছাড়া নকুড়মামা, ভালুমাসি, আলুমাসি, রামডাক্তার এবং জবার ছবি এঁকেছেন একজনই– শৈল চক্রবর্তী। ‘বাড়ী থেকে পালিয়ে’ বইয়ের যে তিনটি সংস্করণ (এবং রচনাবলিতেও উপন্যাসটির ভিন্নরূপ) দেখার সুযোগ হয়েছে তার চিত্রকরও শৈল চক্রবর্তী। একই ঘটনার বর্ণনার জন্য পৃথক সংস্করণে তিনি আলাদা-সব ছবি এঁকেছেন। বলা বাহুল্য, এই হিসাব বা পরিসংখ্যান সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত উদ্যোগে কৃত, হয়তো সমপরিমাণ বা তারও বেশি শিল্পীর আঁকা না-দেখাই রয়ে গিয়েছে। তবে শৈল চক্রবর্তীর প্রাধান্য অনস্বীকার্য।



শিব্রামের ছবির শিল্পীদের মধ্যে শৈল চক্রবর্তী ছাড়াও ফণীভূষণ গুপ্ত, পিসিয়েল (প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী), সূর্য রায়, রেবতীভূষণ, কালীকিঙ্কর ঘোষ দস্তিদার, প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়, বলাইবন্ধু রায়, ধীরেন বল, সমর দে, বিনয় বসু, সুবোধ দাশগুপ্ত, নারায়ণ দেবনাথ, অরবিন্দ দত্ত, অহিভূষণ মালিক ইত্যাদি অতি জনপ্রিয় সুখ্যাত অলংকরণ-শিল্পীরা আছেন। তুলনামূলকভাবে আধুনিক কালের সুধীর মৈত্র, পূর্ণেন্দু পত্রী, মদন সরকার, সমীর সরকার, চণ্ডী লাহিড়ী, অলোক ধর, সত্য চক্রবর্তী ছবি এঁকেছেন। প্রথম প্রকাশিত টেনিদার গল্প ‘খট্টাঙ্গ ও পলান্ন’র ছবি যিনি এঁকেছেন সেই কমল চট্টোপাধ্যায়ও এঁকেছেন শিব্রামের ছবি। আবার স্বল্প বা প্রায় অনালোচিত সুবোধ গুপ্ত, প্রশান্ত রায়, এ কে ঘোষ, মানস সরকার বা শতদল ভট্টাচার্যের মতো নানা শিল্পীর গল্প সংকলন, মাসিক পত্রিকা বা পূজাবার্ষিকীর পাতায় নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বাংলা সাহিত্যের এই অতি জনপ্রিয় চরিত্রটির রূপ দিয়েছেন।






হর্ষবর্ধনের ছবি (তৎসহ গোবর্ধনেরও) এই বহু পরিচিত শিল্পীদের অনেকেই এঁকেছেন– শৈল চক্রবর্তী, পিসিয়েল, ধীরেন বল, নারায়ণ দেবনাথ, সূর্য রায়, পূর্ণেন্দু পত্রী, রেবতীভূষণ, সুবোধ দাশগুপ্ত প্রমুখরা তো আছেনই; অতিরিক্তের মধ্যে একদা অতি-জনপ্রিয় তুষার চট্টোপাধ্যায় এবং সাম্প্রতিকতম শিল্পীদের মধ্যে দেবাশীষ দেবও এঁকেছেন ছবি।




শিবরামের লেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম দিকের কয়েকটি বইয়ের প্রথম সংস্করণ, যেমন ‘কলকাতার হালচাল’ (ভট্টাচার্য গুপ্ত এন্ড সন্স, ১৯৩৬), ‘পঞ্চাননের অশ্বমেধ’ (এম সি সরকার, ১৯৩৫), ‘কালান্তক লাল ফিতে’ (সেন ব্রাদার্স, ১৯৩৭), ‘বাড়ী থেকে পালিয়ে’ (প্রথম সংস্করণ, ১৯৩৭), ‘শুঁড়ওলা বাবা’ (ডি এম লাইব্রেরী, ১৯৩৫), ‘হর্ষবর্ধন অপহরণ’ (বুক সোসাইটি, ১৯৩৯) এই নিবন্ধকারের এখনও পর্যন্ত অদেখা থাকার কারণে এই লেখাটি যে অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে তা স্বীকার করে নেওয়া কাম্য। হয়তো কোনও দিন এই না-দেখা সংস্করণগুলি দেখার সুযোগ হবে এমন আশা নিয়েই এই লেখা।




শিব্রামের সব থেকে প্রথম ছবি যে বইতে চোখে পড়েছে সেই ‘ঘোড়ার সঙ্গে ঘোরাঘুরি’ (ভট্টাচার্য গুপ্ত এন্ড সন্স) প্রকাশিত হচ্ছে ১৯৩৭ সালে। সেখানে ফণীভূষণ গুপ্তর আঁকা শিব্রাম আর পাঁচজন বাঙালির মতোই হৃষ্টপুষ্ট কমনীয় চেহারার এক যুবক। এর ঠিক পরের বছর, ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত ‘যুদ্ধে গেলেন হর্ষবর্দ্ধন’ বইয়ে, ‘স্যাঙ্গাতের সাক্ষাৎ’ গল্পের সঙ্গে পিসিয়েল-কৃত অলংকরণে গোঁফওয়ালা বিচিত্রদর্শন ব্যক্তিটি অথবা ‘হর্ষবর্ধনের হর্ষধ্বনি’ (১৯৩৯) বইয়ে শৈল চক্রবর্তী অঙ্কিত অকিঞ্চিৎকর চেহারার যুবক অথবা ‘বক্কেশ্বরের লক্ষ্যভেদ’ (কমলা বুক ডিপো, প্রকাশকাল অনুল্লেখিত) বইয়ে প্রশান্ত রায়ের আঁকা ভালোমানুষ চেহারার যুবকের ছবিতে বা ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত ‘দেবতার জন্ম’ (বুক এম্পোরিঅম) বইতে বিরলকেশ নিরীহ চেহারার যে শিব্রামকে দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে আমাদের পরিচিতি আকৃতির কোনও মিলই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ওই ‘দেবতার জন্ম’ বইতেই সূর্য রায় বা শৈল চক্রবর্তী সেই চেহারারই ছবি এঁকেছেন (এবং রেবতীভূষণও অতি দ্রুত সেই চেহারাতেই অভ্যস্থ হয়ে পড়েন, কারণ সেটি ইতিমধ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে)।




১৯৪১ সালে প্রকাশিত ‘আমার ভূত দেখা’ (ফাইন আর্ট পাবলিশিং, ১৩৪৮) বইয়ের অলংকরণ শৈল চক্রবর্তীর। সেখানে বিনির সঙ্গে উদ্ভ্রান্তদর্শন,বিস্রস্তকেশ যে ‘আমি’র দেখা পাওয়া যায় তার সঙ্গে পরবর্তীকালের গোবর্ধনের কিছু মিল থাকলেও থাকতে পারে। কানের কাছে ঝুলন্ত চুলের গোছা সমেত হাস্যমুখ অতি পরিচিত শিব্রামের ছবির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও কয়েকটি বছর– মাঝের সময়টা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যয়িত হয়েছিল ধরে নিতে হবে। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত পূর্বোক্ত ‘প্রেমের পথ ঘোরালো’ (স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স, ১৩৫৩) বইয়ের শৈল চক্রবর্তীর আঁকা শিব্রাম সেই সদাহাস্যময় যুবকটি, যার কমনীয় গোলগাল মুখের আনন্দ দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চারিত হবে বাঙালি পাঠকের মনে। সুতরাং একটু আগে উল্লেখ করা ‘দেবতার জন্ম’ বইয়ে সূর্য রায় বা শৈল চক্রবর্তী নিজেই সেই ধরনটি ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছেন, সম্ভবত এই উপলব্ধির কারণেই যে, এই অবয়বটিই শিল্পী এবং লেখকের কল্পনার সব থেকে কাছাকাছি। পরবর্তীকালে প্রায় সমস্ত শিল্পীরাই, একটি-দু’টি তাৎক্ষণিক ব্যতিক্রম ছাড়া, এই চেহারাটিই ব্যবহার করেছেন। শৈল চক্রবর্তীর ছবির বৈচিত্র সর্বাপেক্ষা বেশি। নানা বিচিত্র বিভঙ্গে শিবরামের ছবি– তবলাবাদন বা ধূমপানরত, চরকা-কাটা বা তানপুরা বাদনরত, অতি-বিরল কণ্ঠলগ্না নারী সহযোগে কৃতার্থবদন, ফুটবল খেলিয়ে, টাক-পড়া বা শ্মশ্রুগুম্ফসমাচ্ছন্ন, বালক অথবা কিশোর– নানা ধরনের শিব্রাম তিনি সকৌতুকে এঁকে গিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। বছরের পর বছর ধরে এই একই চরিত্রের ছবি আঁকতে আঁকতে তিনি নিজেও লেখকের মতোই চরিত্রটির সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে পরিচিত হচ্ছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রকরণগত দক্ষতাও ঈর্ষণীয় হয়ে উঠছিল– ফলে অলংকরণ হয়ে উঠছিল আরও যথাযথ, গল্পের সঙ্গে সেগুলিকে আর পৃথকভাবে ভাবাই যায় না, মানব-শরীরে ত্বকের মতোই অবিচ্ছেদ্য সেসব ছবি– গল্পের রসকে যা প্রগাঢ়তর এবং অধিক লাবণ্যময় করে। অন্য শিল্পীরাও, যাঁরা প্রত্যেকেই দক্ষ এবং অভিজ্ঞ, নিশ্চয়ই সেই সত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন, ফলে এই অপরিহার্য ধরনটিতে সামান্যতম পরিবর্তন বা পরিমার্জন করলেও মূল চেহারাটি একইরকম থেকে যায়। সুধীর মৈত্র সাতের দশকে ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’-র ধারাবাহিক প্রকাশের সময় অলংকরণে তখন রিনি বা লালির মতো উচ্ছল কিশোরীর সঙ্গে বা রিনির মায়ের বহু-আলোচিত স্নানপর্বটির ছবি আঁকার সময় কিশোর শিবরামের ছবিতে শৈল চক্রবর্তী-সৃষ্ট ধারাটিই সযত্নে রক্ষা করেছেন।




হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন-নিজের অসংখ্য ভগিনীকূল এবং ভাগনে-ভাগনিদের প্রতি উৎসর্গীকৃতপ্রাণ হাস্যমুখ, পরোপকারী, সর্বদা আর্থিক অভাবে জর্জর কিন্তু তবুও জীবনের অচেনা-অদেখা আনন্দকে উৎসুকভাবে স্বাগত জানানো যে যুবকটিকে আমরা ‘শিব্রাম চকরবরতি’ নামে চিনি, কথার ঘোরালো মারপ্যাঁচে দশকের পর দশক ধরে যিনি পাঠককে একইসঙ্গে বিপর্যস্ত এবং হাস্যমুখর করে রেখেছিলেন, সেই শিব্রামের প্রতিচ্ছবি নির্মিত হতে কিছু সময় লেগেছিল। প্রথমদিকে সে ছিল সমসাময়িক বন্ধুবান্ধবদের মতোই ফ্যাশনদুরস্ত, নারীসঙ্গলিপ্সু আধুনিক যুবক। ছোটদের জন্য লেখা গল্পে তাকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে বটে, কিন্তু বয়স্কভোগ্য কাহিনিতেও সে সমান বা অধিক স্বচ্ছন্দ। ‘মেয়েদের মন’ (দি বুক এম্পোরিয়ম লিমিটেড, ১৩৫২), ‘মেয়েধরা ফাঁদ’ (দি বুক এম্পোরিয়ম লিমিটেড, প্রকাশকাল অনুল্লেখিত) ‘মনের মতো বৌ’ (এম. সি. সরকার অ্যান্ড সন্স লিঃ, ১৩৫৩), ‘আমার লেখা’ (রীডার্স কর্ণার, ১৩৫৫), ‘বড়দের হাসিখুশি’ (কমল বুক ডিপো, ১৩৫৮), ‘হারানো-প্রাপ্তি-নিরুদ্দেশ’, (১৩৫৮) ‘পাত্র-পাত্রী সংবাদ’ (দি চলন্তিকা পাবলিশার্স, ১৩৫৬), ‘প্রেমের পথ ঘোরালো’ (স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স, ১৩৫৩), ‘মেয়েদের মহিমা’ (নিও-লিট পাবলিশার্স, ১৩৬৩)– অজস্র গ্রন্থে সেই অদ্ভুতকর্মা, সপ্রতিভ যুবকের ছবি এঁকেছেন শৈল চক্রবর্তী এবং কখনও রেবতীভূষণ। ছোটদের গল্পের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সঙ্গে ক্রমশ এই যুবকটি বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীকালে ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’ ধারাবাহিকভাবে লেখার সময় এই যুবকের পুনরাগমন হয় কিন্তু এই অভিনব স্মৃতিচারণ রচনার সময় লেখকের দেখার দৃষ্টি পরিবর্তিত হয়েছে– যৌবনোচিত্ত চাঞ্চল্য এবং চাপল্যের পরিবর্তে লেখক তখন অনেক স্থিতধী– তার ছাপ পড়েছে লেখায়। এইসব বইতে কমনীয় রমণীদের সঙ্গে যুবকটির ছবি আঁকা হয়েছে এবং উল্লেখ্য যে, তাঁরা কেউই তাঁর ভাগনি-ভগনী নন। গত শতাব্দীর চার-পাঁচের দশকে আধুনিক শিক্ষিত বাঙালি যুবকের যথার্থ বিবরণে আগ্রহী পাঠকদের কাছে এই বইগুলি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যদিও সমাজচিত্র-উপলব্ধির জন্য শিবরামের রচনা কেউ পড়তে আগ্রহী আজ আর হয়তো হবেন না। লেখক হিসাবে এটা তাঁর অন্যতম ট্র্যাজেডিই বলা যেতে পারে।




একই গল্প বিভিন্ন সংকলনের অন্তর্ভূক্ত হবার সময় ছবি এঁকেছেন পৃথক শিল্পীরা– ফলে সেইসব গল্পের স্বাদ পরিবর্তিত হয়েছে লক্ষ্যণীয়ভাবে। সেইরকম একটি উদাহরণ– তাঁর বিখ্যাত গল্প ‘মই নিয়ে হইচই’-এর সঙ্গে ছবি এঁকেছেন রেবতীভূষণ (‘নাক নিয়ে নাকাল’ এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি, ১৩৬৪)। আবার সেই একই গল্প যখন তাঁর ‘যত হাসি ততই মজা’ (দেব সাহিত্য কুটীর) বইয়ে প্রকাশিত হয় তখন সেখানে ছবি আঁকছেন বলাইবন্ধু রায়। এরকম আরও বেশ কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আগ্রহী পাঠক তা এতদিনে নিজের মতো করে খুঁজে পেয়েছেন নিশ্চিত। আবার একই গল্প ভিন্ন শিরোনামে একটু পরিবর্তিত চেহারায় যখন প্রকাশিত হচ্ছে তখন অন্য ছবির সংযোজনে তার স্বাদ একেবারেই বদলে গেছে– তাও নিশ্চয়ই অনেকেরই দেখা হয়ে গিয়েছে।




হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের গল্পের সঙ্গে ছবি আঁকার সময় প্রারম্ভিক সন্ধানপর্ব চলেছিল অনুরূপভাবে দীর্ঘদিন। সেই শিল্পী যদি পিসিয়েল-এর মতো দক্ষ ব্যঙ্গচিত্রকর হন, তা হলেও। দি বুক সোসাইটি প্রকাশিত ‘যুদ্ধে গেলেন হর্ষবর্দ্ধন’ (১৩৪৫) বইতে পিসিয়েলকৃত অলংকরণে হর্ষবর্ধনকে দেখা যায় চারটি চেহারায়। কখনও তাঁর মাথায় চমৎকার পরিপাটী-কেশভার, কখনও তিনি টাকসর্বস্ব প্রৌঢ়, কখনও সুদর্শন ধুতি-চাদর পরা মধ্যবয়সি, কখনও বা প্রায় প্রৌঢ় রাশভারী এক ব্যক্তি। আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, ‘রংমশাল’ পত্রিকায় প্রায় একই সময় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘অসম্ভবের দেশে’ উপন্যাসের অলংকরণে সেই একই ছবি ব্যবহৃত হয়েছে, যদিও দুটি লেখা সম্পূর্ণ ভিন্ন রসের তা পাঠকরা অবগত আছেন। এমনকী শৈল চক্রর্বর্তীও ‘হর্ষবর্ধনের হর্ষধ্বনি’ (ফাইন আর্ট পাবলিশিং, ১৩৪৬)-এ পরিচিত হর্ষবর্ধনকে খুঁজে পাননি– সেখানে মাথাজোড়া টাকসর্বস্ব হর্ষবর্ধন এবং অতি ষণ্ডামার্কা গোবর্ধনকে দেখা যায়।






অবশ্য এই প্রাথমিক দ্বিধাদীর্ণ সময় দ্রুতই কেটে যায়। ১৩৫০ সনে প্রকাশিত ‘মানুষের উপকার করো’ বইতে চিরপরিচিত মাথাভর্তি কোঁকড়া চুল এবং গুম্ফসম্বলিত হর্ষবর্ধন আবির্ভূত হয়েছেন। এরপর যতদিন আমরা এই সদালাপী, বাধ্যতামূলকভাবে ধনী, ব্যয়ে অকুণ্ঠিতচিত্ত, সর্বদা পরোপকার-প্রয়াসী (এই পরোপকারস্পৃহা অনেক সময়েই বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ালেও), খাদ্যরসিক, অনাবিল উদারহৃদয় প্রৌঢ় এবং তাঁর ভাইয়ের গল্প পড়ব, নানা শিল্পীর কল্পনায় তাঁরা প্রায় সেই একইরূপে উপস্থিত হতে থাকবেন। শৈল চক্রবর্তী ছাড়াও প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীরেন বল, নারায়ণ দেবনাথ, সূর্য রায়, সুবোধ দাশগুপ্ত, পূর্ণেন্দু পত্রী, রেবতীভূষণ, তুষার চট্টোপাধ্যায়, অলোক ধর, দেবাশীষ দেব– আদি যশস্বী শিল্পীরা শৈল চক্রবর্তীর মডেলই অনুসরণ করেছেন। অবশ্য অনেক পরে ‘অদৃশ্য হন হর্ষবর্ধন’, (শৈব্যা পুস্তকালয়, ১৩৭৭) বইয়ে ধীরেন বল-কৃত একজন টাকমাথা হর্ষবর্ধনও উপস্থিত হয়েছিলেন– একই বইয়ে, বিস্ময়করভাবে, শিল্পী দু’-রকম চেহারার হর্ষবর্ধনকেই এঁকেছেন! অবশ্য শুধু তিনিই বা কেন, পরিচিত চেহরারায় অভ্যস্থ হয়ে যাবার পরও, স্বয়ং শৈল চক্রবর্তীই একবার, ভ্রমবশতই সম্ভবত, টাকমাথা হর্ষবর্ধন এঁকেছিলেন (‘হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন, ‘অরবিন্দ, শরৎ-সাহিত্য-ভবন, ১৩৬১), এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে শিবরামের চলে যাওয়ার অনেক পরে সত্য চক্রবর্তী, সেই উদাহরণে উৎসাহিত হয়েই সম্ভবত, অনুরূপ টাকসর্বস্ব হর্ষবর্ধনকে এঁকেছেন। (‘হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের কেরামতি’, ১৩৯৩)। শৈল চক্রবর্তী একবার অন্তত হর্ষবর্ধনের বাল্যরূপটিও পাঠকদের দেখিয়েছেন (শারদীয়া কিশোর ভারতী, ১৩৭৭), সেই পুষ্টবপু বালকের মাথার চুল প্রৌঢ় হর্ষবর্ধনের মতোই কোঁকড়া! ঘন গোঁফটি অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই অনুপস্থিত।




‘কলকাতায় এলেন হর্ষবর্ধন’ (১৩৯০) বইয়ের ভিতরে প্রচ্ছদকার হিসাবে সুবোধ দাশগুপ্তর নাম মুদ্রিত হলেও সে বইয়ে ছবি এঁকেছিলেন শৈল চক্রবর্তীই। (সুবোধ দাশগুপ্ত অবশ্য ‘হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন’ বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন, তবে ইঙ্গিতধর্মী সেই অনন্য প্রচ্ছদ সম্পর্কে বিশদ হওয়ার কোনও উপায় নেই। প্রচ্ছদটি সচক্ষে দেখাই কাম্য।)
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved