সম্প্রতি সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু মামলায় নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছেন তাঁর তৎকালীন সঙ্গিনী রিয়া চক্রবর্তী– যাঁর ওপর বিভিন্ন বিতর্কিত মিডিয়া ট্রায়াল চলেছে ২০২০ থেকে। বিচারের পক্ষে এবং ন্যায়ের কণ্ঠস্বর হওয়ার পরিবর্তে, বিগত চার বছরে রিয়ার ওপর সংবাদমাধ্যমের আক্রমণ, সম্ভাব্যের ওপর নির্ভর করে তাদের প্রচার, বিপুল এক বিরুদ্ধ জনমতের জন্ম দিয়েছে– যার জন্য মাশুল গুনলেন রিয়া তাঁর অনেকখানি আয়ু দিয়ে। অবশ্যই, ভারতে মিডিয়া ট্রায়ালের ইতিবাচক ফলাফলও আছে। জেসিকা লাল, প্রিয়দর্শিনী মাটুর মামলা– এই উদাহরণগুলি ব্যবহার করাই যায়। কিন্তু হাজারটি উদাহরণের ভিত্তিতেও কি একজনও নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা যায়?
‘ডাইনি’ বললেই চোখের সামনে কে এসে দাঁড়ায়? আর যেই হোক, সে অবয়ব কোনও পুরুষের নয়। ঠাকু’মার ঝুলি থেকে বেরিয়ে এসে আজও দেশের বিভিন্ন কোনায় ডাইনিরা নাকি মানুষ মেরে বেড়াচ্ছে। ধরা পড়লে, জনসমক্ষে জ্যান্ত পুড়িয়ে দুষ্টের দমন করে নিচ্ছে মানুষ নিজেই। এই বিনা তদন্তে, জেল আদালতের বাইরে যে বিচারসভা বসে, তার শহুরে রূপ ‘মিডিয়া ট্রায়াল’। এই ট্রায়ালে মিডিয়া পরিচালিত বা গঠিত জনমত, অভিযুক্তকে টেনে দাঁড় করিয়ে দেয় জনমতের আদালতে, যেখানে আইনি রায়ে পৌঁছনোর আগেই অভিযুক্তের বিচার হয়ে যাচ্ছে, জনমতেই দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন অভিযুক্তরা।
সম্প্রতি সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু মামলায় নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছেন তাঁর তৎকালীন সঙ্গিনী রিয়া চক্রবর্তী– যাঁর ওপর বিভিন্ন বিতর্কিত মিডিয়া ট্রায়াল চলেছে ২০২০ থেকে। বিচারের পক্ষে এবং ন্যায়ের কণ্ঠস্বর হওয়ার পরিবর্তে, বিগত চার বছরে রিয়ার ওপর সংবাদমাধ্যমের আক্রমণ, সম্ভাব্যের ওপর নির্ভর করে তাদের প্রচার, বিপুল এক বিরুদ্ধ জনমতের জন্ম দিয়েছে– যার জন্য মাশুল গুনলেন রিয়া তাঁর অনেকখানি আয়ু দিয়ে।
অবশ্যই, ভারতে মিডিয়া ট্রায়ালের ইতিবাচক ফলাফলও আছে। জেসিকা লাল, প্রিয়দর্শিনী মাটুর মামলা– এই উদাহরণগুলি ব্যবহার করাই যায়। কিন্তু হাজারটি উদাহরণের ভিত্তিতেও কি একজনও নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা যায়? এমনকী, তদন্তকারী সংস্থাগুলির কাজে হস্তক্ষেপ বা বাধা দেওয়ার অধিকার তৈরি হয়? এই মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বৃহত্তর জনমত গঠন হয়, কিন্তু তার পাশাপাশি এই বৃহত্তর জনমতের আয়নায় উদ্ভাস দেখা যায় আপামর সমাজ ভিন্ন রঙে দেখতে পায় অভিযুক্তদের, যদি তাঁদের লিঙ্গপরিচয় ‘নারী’ হয়।
এখানে কিছু মামলার কথা মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি।
২০০৭ সালে, ‘ইন্ডিয়া লাইভ টিভি’ একটি স্টিং অপারেশন চালিয়ে দাবি করে যে, দিল্লির একটি স্কুলের শিক্ষিকা উমা খুরানা, ছাত্রীদের নিয়ে যৌন র্যাকেট চালাচ্ছেন। উত্তেজিত জনতা স্কুলে ঢুকে পড়ে এবং শিক্ষিকার ওপর আক্রমণ করে, এমনকী তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেলে। পরে প্রমাণিত হয় যে স্টিংটি ‘ভুয়া’ ছিল এবং আদালতও তাতেই সায় দেয়। উল্লেখযোগ্য, নারীদেহ ব্যবসার মতো জঘন্য অপরাধ চালাতে যে, তাকে বিবস্ত্র করতে অনুমতি লাগে না, বা তা করা ‘অপরাধ’ নয়।
আরেকটি উদাহরণ, ‘লাভ-জিহাদ’ মামলা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, আখিলা অশোকার বাবা অশোকন, তাঁর মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন এবং কেরল হাই কোর্টে একটি ‘হেবিয়াস কর্পাস’ আবেদন করেন। আখিলা অশোকার (হাদিয়া) জোর দাবি সত্ত্বেও যে সে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং শাফিনকে বিয়ে করেছে, মেয়েটির বাবা-মা অভিযোগ করেন যে, মেয়ের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। হুড়মুড় করে এটি ‘লাভ জিহাদ’-এর অভিযোগে পরিণত হয় এবং কেরল হাই কোর্ট পর্যন্ত বিবাহ বাতিল করে দেয় তাঁদের। শাফিনের বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা রুজু হয় এবং হাদিয়াকে তার বাবা-মায়ের বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর শাফিন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় এবং এনআইএকে লাভ জিহাদের অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৮ মার্চ ২০১৮ তারিখে, সুপ্রিম কোর্ট এই বিয়ে পুনরুদ্ধার করে।
…………………………………
এক এক করে বিশ্লেষণ করা দরকার যে কীভাবে মিডিয়া নারী অভিযুক্তদের, সে আদতে হত্যাকারী হোক বা না হোক; তার ভূমিকা উপস্থাপন করেছে এবং সমাজ ও আইনের সঙ্গে সংযোগ নির্ধারিত করেছে সেই ভূমিকার। এই প্রতিটি মামলার মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে যে জনমত তৈরি হতে দেখা গিয়েছে, সেখানে নারী হত্যাকারীদের প্রতি প্রচলিত তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রধানভাবে চিহ্নিত: ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’, ‘খারাপ’, ও ‘দুঃখী’ (Mad, Bad, Sad) নারী।
………………………………..
একই আলোকে, নয়ডা ডাবল মার্ডার মামলা (২০০৮) মিডিয়ার সীমা লঙ্ঘনের আরেকটি নমুনা। আরুষি তলোয়ার এবং হেমরাজ বানজাদের হত্যাকাণ্ড জনসাধারণের মধ্যে প্রবল আগ্রহ জাগায়, কারণ ডাবল মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়েছিল খোদ নিহত মেয়েটির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে। মামলাটি জল্পনা-কল্পনা এবং গুজবের ফানুসে পরিপূর্ণ হয় এবং মিডিয়া একে তাদের বাণিজ্য ফলনের স্বার্থে কোনও গাফিলতি রাখেনি। একতরফা বিচার পরিচালনা করা ছাড়াও, বেশিরভাগ ভারতীয় মিডিয়া এই মামলায় তদন্তকারীর ভূমিকা স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছিল, গোপনীয়তা নষ্ট করেছিল মৃত একটি কিশোরী মেয়ের। মিডিয়া এমনও একটি বর্ণনা প্রচার করেছিল যে বাবা-মা মেয়ে এবং গৃহকর্মীকে ‘আপত্তিকর অবস্থায়’ দেখেছিলেন, এবং তার জেরেই এই দুই হত্যা। ভারতীয় মিডিয়া মৃতের ব্যক্তিগত বিবরণ প্রকাশ্যে এনে অবমাননা করেছিল মৃতের, অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীদের অপমান করেছিল চরম। পরে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে আদালত দম্পতিকে মুক্তি দিলেও, মিডিয়া ইতিমধ্যেই তাঁদের ‘খুনি’ ঘোষণা করে দিয়েছিল।
কোনও কোনও মামলায় মিডিয়া ট্রায়াল উপকারী হয়েছে; আবার কোথাও বা অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়েছে অভিযুক্তের, নির্দোষ মানুষকে সমাজের চোখে অপরাধী কায়েম করে ধ্বংস করে দিয়েছে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক অবস্থানও। কিন্তু উপরোক্ত সমস্ত ক্ষেত্রেই, এক এক করে বিশ্লেষণ করা দরকার যে কীভাবে মিডিয়া নারী অভিযুক্তদের, সে আদতে হত্যাকারী হোক বা না হোক; তার ভূমিকা উপস্থাপন করেছে এবং সমাজ ও আইনের সঙ্গে সংযোগ নির্ধারিত করেছে সেই ভূমিকার। এই প্রতিটি মামলার মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে যে জনমত তৈরি হতে দেখা গিয়েছে, সেখানে নারী হত্যাকারীদের প্রতি প্রচলিত তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রধানভাবে চিহ্নিত: ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’, ‘খারাপ’, ও ‘দুঃখী’ (Mad, Bad, Sad) নারী। এই শ্রেণিবিভাগের মাধ্যমে মিডিয়া মেয়েদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধকে একটা কাঠামোর মধ্যে এনে ফেলেছে, যেখানে তাঁদের অপরাধের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের ব্যাখ্যা অত্যন্ত অন্যরকম, বা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারীরা যখন খুনের মতো অপরাধ করে বা সেই অপরাধে অভিযুক্তও হয় কেবল, তখন সমাজ তাদের দ্বিগুণ অপরাধী হিসেবে দেখে– একদিকে আইন ভঙ্গ তো বটেই, কিন্তু তার সঙ্গে আবার তার প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয়েছে অভিযুক্ত। এই দ্বিতীয় বিচ্যুতির ভার বিবিধ এবং বেশি। দেখা গেছে, মিডিয়ার রিপোর্টিং প্রায়শই নারীদের মানসিক রোগী (পাগল) হিসেবে চিত্রিত করে, অথবা তাদের দানবীয় রূপ দেয় (খারাপ), অথবা সমাজের শিকার হিসেবে তুলে ধরে (দুঃখী)।
এই সমস্ত সংবাদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মেয়েদের কেস রিপোর্টিংয়ে, প্রেক্ষাপট প্রায়শই অনুপস্থিত। যেসব নারী পারিবারিক হিংসার শিকার হয়ে প্রতিশোধ নিতে খুন করেছে, তাদের কাহিনিগুলো সাধারণত তাদের প্রতি অত্যাচারের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং তাদের অপরাধের ভয়ংকর দিক থেকে দেখানো হয়েছে। আবার যারা মা, তাদের জন্য মিডিয়ার ভ্রুকুটি আরও কঠোর। ‘ভালো মা’ হওয়ার বিপরীতে গেলে, তারা অতি দ্রুত ‘দানবীয় নারী’ হিসেবে চিত্রিত হয়। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, খুনের কারণ, খুনির সঙ্গে নিহতের সম্পর্কের সমীকরণ, খুনটি কোনও বিশেষ পরিস্থিতির জন্য হল কি না– এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রাথমিক মান্যতা না পেয়ে, তদন্তকেও চালনা করে ভিন্ন পথে, বা দেরি করায় মামলা নিষ্পত্তির।
তাই রিয়া চক্রবর্তী সুশান্তের ‘ডাইনি’ প্রেমিকা, উমা খুরানা ‘ধান্দাবাজ দুশ্চরিত্রা’, আরুষির মা হয়ে গেছিলেন ‘রাক্ষসী’ মা। এই যে সম্ভাব্য অপরাধকে একটা জঘন্য, নোংরা কিছুর সঙ্গে একাত্ম করে একটা বীভৎসতা আঁকার চেষ্টা; এটা কিন্তু কোনও মা, কোনও স্ত্রী, বা কোনও প্রেমিকার প্রতিই সম্ভব হয়েছে বারবার।
নারীর দ্বারা সংঘটিত হত্যায় মিডিয়ার এই ভাষা এবং দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, তার মধ্যে পিতৃতান্ত্রিক ভাবনা এবং পৌরাণিক কাহিনির অবলম্বন প্রবল। নারীকে কেন্দ্র করে সামাজিক একটা চাহিদা আছে, নারীসুলভ কমনীয়তা। আরও সহজ করে বলতে গেলে, যথাযথ নারীত্বের মধ্যে অপরাধের ঠাঁই নেই। নারী– যার বিশেষণ নরম, কোমল, লাজুক, ভীরু, মৃদুভাষী, মাতৃসুলভ; তাকে ‘খুনি’ সাব্যস্ত করা যায় না। খুনি নারী হওয়ার জন্য তাকে ডাইনি, বেশ্যা, নষ্ট, রাক্ষসী ইত্যাদি নানা শ্রেণিতে পতিতা হতে হয়। একটু ভেবে দেখুন, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পরে, রিয়া কী জামা পরে বাইরে বেরিয়েছেন, কতটা শরীর দেখিয়েছেন, কারও সঙ্গে হেসেছেন কি না, সেই ছবিও প্রচার হয়েছে মিডিয়াতে– কারণ একমাত্র অত্যন্ত নিম্নমানের মহিলা হলে তবেই খুন করে এমন নির্বিকার থাকা যায়। তাঁর নির্বিকার খুনি-চিত্তের সার্টিফিকেট তাঁর পোশাক, তাঁর হাসি, তাঁর শরীর উন্মুক্ত রাখার মাত্রা; তৎক্ষণাৎ ঘটে যাওয়া তার প্রেমিকের খুনের পর।
………………………….
পড়ুন অন্য কপিও: অন্বিতা সুইসাইড নোট লিখেছে, কিন্তু আমি বা আমরা বারবার লিখতে গিয়েও ফিরে আসি
…………………………..
যেখানে ভারত খাপ পঞ্চায়েত, অনার কিলিং, ধর্মীয় উগ্রতার দেশ, সেখানে ‘লাভ-জিহাদের’ ঘটনায় হাদিয়ার ওপর কিন্তু কোনও আঘাত নেমে আসেনি। আখিলা অশোকার (হাদিয়া) পরিবারের পক্ষ থেকে ‘লাভ জিহাদ’-এর অভিযোগ তোলার পর থেকে, আঞ্চলিক এবং জাতীয় মিডিয়াই উন্মত্ত প্রচার চালায়। হাদিয়ার পূর্ব হিন্দুধর্মী জীবনের বিস্তারিত বিবরণ প্রতিটি পদক্ষেপে জনসমক্ষে প্রকাশিত হতে থাকে, নিউজ ফ্ল্যাশের নামে; এবং সমাজের বেশ কয়েকটি অংশ মেয়েটিকে তার ‘নিজের বোকামি’ থেকে ‘রক্ষা’ করার অধিকার দাবি করে এবং মিডিয়া এই প্ল্যাটফর্ম জোগানও দেয়। এখানে দেখেছেন, নারী কেমন সুন্দর মানিয়ে গেছে তার ‘বোকা’, ‘নির্বোধ’, ‘দুর্বল’ ভূমিকায়? তাই এখানে তাঁর ওপর কোনও আক্রমণ নেই; এখানে আক্রমণ সম্পূর্ণটাই ছিল শাফিনের ওপর, কারণ সে সংখ্যালঘু। নির্বোধ হিন্দু নারীকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বংশ বৃদ্ধিই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য; তাই অপরাধীও সেইই।
পিতৃতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য মিডিয়া ও বিচারব্যবস্থার যুগলবন্দি অতুলনীয়। মিডিয়া জনপ্রিয় জনমতের মধ্যে দিয়ে কিছু নারীকে দানবীয় একটা পৌরুষের মোড়কে মুড়ে ফেলে, খুব নিপুণভাবে, ‘সুরক্ষিত নারীত্ব’ বলয় থেকে তাদের বের করে দেয়, এবং একই সঙ্গে পৌরাণিক কাল থেকে চলে আসা নারীত্বের উদযাপন প্রচার করে। প্রতিটি মিডিয়া ট্রায়ালের পরে, বিচারব্যবস্থা পদক্ষেপ নেয়, শাস্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে অনুমোদিত এবং প্রয়োগ হয় লিঙ্গশৃঙ্খলার। যেখানে নারী হত্যাকারী প্রমাণও হল না, সেখানেও মিডিয়া ট্রায়ালের চাবুক দগদগে ঘা রেখে আজীবন মনে করিয়ে যাবে– নিয়মের বাইরে পা দিলে প্রতিঘাতের কতরকম রূপ সম্ভব। সাবধানবাণী ছুড়ে রেখে যায় অন্যান্য নারীর মননে, বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই শৃঙ্খলা যৌন এবং শ্রেণি শৃঙ্খলাও বটে।
……………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………..
‘যৌনতার পাঠশালা’র ভাবনা শুরুই হয়েছিল যৌনতা নিয়ে ‘যা খুশি তাই বলা’ বা ভাবার লাইসেন্স নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করার জন্য যে, যৌনতা মানে কে কাকে কার সঙ্গে শুয়ে পড়তে চায় সেই সংক্রান্ত তাল পাকানোই শুধু নয়, যৌনকর্ম এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে আলোচিত হতে পারে।
শেষের দিকে তাঁর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন তাঁর মেয়ে শিষ্যরা—শান্তি হিরানন্দ, অঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়, রীতা গাঙ্গুলি। সকলেই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেন, বেগম আখতার তাঁদের মাতৃসম স্নেহে মুড়ে রেখেছিলেন। এ মাতৃত্ব তাঁর ওপর কেউ চাপিয়ে দেয়নি। এ মাতৃত্ব তিনিই বেছে নিয়ে হতে পেরেছিলেন শিষ্যদের প্রিয় ‘আম্মি’।