হেমিংওয়ে কোন দোকানে বই কিনতেন, দিতেন আড্ডা, নিয়ে যাব সেই বিখ্যাত গ্রন্থবিপণি ‘শেক্সপিয়র অ্যান্ড কম্পানি’-তে! যে ক্যাফে ও বার-এ বসে হেমিংওয়ে লিখতেন, সেখানেও যাবেন আমার সঙ্গে। টি. এস. এলিয়ট থেকে জেমস জয়েস, জঁ পল সার্ত্রে থেকে সিমন দে বভোয়া, আলব্যের কামু থেকে পাবলো পিকাসো– কে না আসবেন ভিড় করে আমার প্যারিসের চিঠিতে!
১.
দিন কয়েকের জন্য হঠাৎ আমি প্যারিসে। অন্য এক প্যারিসের খোঁজে। এই প্যারিসের খোঁজ কেউ তেমন রাখে না। কারণ, এই সন্ধানের উৎসে যে প্রশ্নটি, সেই প্রশ্ন জাগে খুব কম বাঙালির মনে, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে খুব কম বাঙালি আসেন প্যারিস ভ্রমণে।
প্রশ্নটি হল, কেন প্যারিস যুগে যুগে টেনেছে শিল্পী, লেখক, দার্শনিক এবং পাগল-পারা ভাবুকদের? কী পেয়েছেন তাঁরা প্যারিসের কাছে? এই ভুবনবিখ্যাত ইন্টেলেকচুয়ালরা কতভাবে ঋণী প্যারিসের কাছে? সদ্যপ্রয়াত চেক লেখক মিলান কুন্দেরা কেন স্ত্রী ভেরার সঙ্গে পালিয়ে এলেন প্রাগ থেকে প্যারিসে? প্যারিসের কোন গলিতে ছাদের ওপর সংসার বিছিয়ে বেছে নিলেন পরদেশে নির্বাসন? সেই ঠিকানার খোঁজ কি দিতে পারব আপনাদের? জর্জ অরওয়েল, খাস ইংরেজ, তিনিও এলেন নিজেকে আবিষ্কার করতে প্যারিসে! এবং লিখলেন সেই রক্তাক্ত প্যারিস-অভিজ্ঞতার কথা তাঁর ‘ডাউন অ্যান্ড আউট ইন লন্ডন অ্যান্ড প্যারিস’ বইয়ে।
আরও পড়ুন: একশো বছর আগের এক দুপুর
ভুলে যাচ্ছি না আমেরিকান লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কথা। তরুণ হেমিংওয়ে প্যারিসে। লিখলেন, আপনি যদি তেইশ বছর বয়সে প্যারিসে আসেন, কাটিয়ে যান এখানে স্বপ্নের যৌবন, তাহলে প্যারিস আপনার সঙ্গে থাকবে বাকি জীবন, কারণ প্যারিস এক ‘মুভেবল ফিস্ট’– প্যারিস চলন্ত চড়ুইভাতি! এই চড়ুইভাতি আদিগন্ত ভাবনার। প্যারিস বদলে দেয় জীবনদর্শন, প্যারিস পাল্টে দেয় সাংস্কৃতিক যাপন।
হেমিংওয়ে কোন দোকানে বই কিনতেন, দিতেন আড্ডা– অবশ্যই আপনাদের নিয়ে যাব সেই বিখ্যাত গ্রন্থবিপণি ‘শেক্সপিয়র অ্যান্ড কম্পানি’-তে! যে ক্যাফে ও বার-এ বসে হেমিংওয়ে লিখতেন, সেখানেও যাবেন আমার সঙ্গে। সেই ক্যাফেতেই তো হেমিংওয়ে দেখা পেলেন সেই তরুণীর, যার মুখ ‘অ্যাজ ব্রাইট অ্যাজ আ ফ্রেশলি মিন্টেড কয়েন!’
টি. এস. এলিয়ট থেকে জেমস জয়েস, জঁ পল সার্ত্রে থেকে সিমন দে বভোয়া, আলব্যের কামু থেকে পাবলো পিকাসো– কে না আসবেন ভিড় করে আমার প্যারিসের চিঠিতে!
আরও পড়ুন: মিলান কুন্দেরার দরজায়
বেশি বড় লেখা লিখব না আমি। ভারি লেখাও নয়। হালকা শব্দের ছোট লেখা– যা পড়তে হয়তো তেমন ধৈর্যের অভাব হবে না আপনাদের। এই লেখার একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে প্যারিসের মন। প্যারিসের মধ্যরাত। প্যারিসের সুন্দরী। প্যারিসের মন নিয়ে ভারি সুন্দর সংবেদনার একটি বই লিখেছেন ‘পিটার ওয়াটসন’– বইটির নাম, ‘দ্য ফ্রেঞ্চ মাইন্ড’। সেই বইয়ের একেবারে শুরুতেই লিখছেন ওয়াটসন: The greatest marvels of Paris are the hundreds and thousands of women whose smiles, whose cleavages, whose legs bring incessant happiness to those who take promenades. প্যারিসের পথে যারা ঘুরে বেড়াতে পারে, তারাই পায় প্যারিসের নারী-সৌন্দর্যের সাক্ষাৎ– সেইসব চিরায়ত বিভাজিকা, চিরকালের হাসি এবং প্যারিসের নারীর অবসানহীন খোলা পা– যে-পায়ের কথা লিখেছেন শার্ল বোদলেয়র! সব আসবে আমার চিঠিতে। প্রশ্ন হল, জানুভ্রষ্ট্র আমি, খঞ্জ তিরাশি নিয়ে কেমন করে হাঁটব প্যারিসের রাস্তায়? উত্তর, এবার প্যারিস হুইলচেয়ারে! সঙ্গে থাকবেন।
(চলবে)