
অতীতে এখানে গৌরীদি, যমুনাদি ও অন্যান্য শিল্পশিক্ষকের নেতৃত্বে বৃত্তাকার আলপনা দেওয়া হয়েছে, তা আমরা নানা ছবিতে দেখে এসেছি। পরবর্তীকালে আমরাও সেই পথ অনুসরণ করেছি। সেখানে শিক্ষাসত্রের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সে এক আনন্দ-উৎসব। খড়ি ও সুতো দিয়ে কম্পাসের মতো বৃত্ত এঁকে কত কি না আঁকাজোঁকা চলত! বৃত্তকে দু’ভাগ করে ওপরের অংশে প্রস্ফুটিত পদ্ম ও লতাপাতা এবং নিচের অংশে জলাশয়ে সঞ্চরণরত হাঁস, জলজ উদ্ভিদের গলাগলি।
শীতের শান্তিনিকেতন– একদিকে স্মৃতি আর একদিকে বর্তমান।
শীত আমার খুব প্রিয় ঋতু না হলেও সে আসবেই প্রতি বছর নভেম্বরের সঙ্গে সঙ্গে। শীতের সেই স্মৃতির নানা ছবি।

প্রথম ছবি মোটেই সুখকর নয়। ১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বরের বিকেলে, দানাপুর প্যাসেঞ্জার থেকে একটা টিনের ট্রাঙ্ক ও হোল্ড-অল নিয়ে বাবার সঙ্গে বোলপুর স্টেশনে নামলাম। রিকশায় আসতে আসতে দোকান ও বাড়ি পেরতে পেরতে শান্তিনিকেতনকে খুঁজছিলাম। তারপর ভুবনডাঙা মাঠ ও জলা পেরতে হঠাৎ বাঁ-দিকে রিকশা বাঁক নিতেই এক মুহূর্তে শান্তিনিকেতনের ছবি পরিষ্কার দেখতে পেলাম।
বাঁ-দিকে পরপর দু’টি মাটির বাড়ি আর সামনে টালির চাল দেওয়া ‘দ্বিজবিরাম’। বাড়ির পাশে ডানদিকের রাস্তা ধরে চিনাভবনের সামনে দিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম বিশাল খেলার মাঠ। এরপর ‘চৈতি’ আর মেয়েদের হোস্টেলগুলো পেরিয়ে বুদ্ধমূর্তির পাশ দিয়ে ঢুকে বাঁ-দিকে ‘কালো-বাড়ি’ ও ডানদিকে ‘কলাভবন’-এর মাঝখানে রিকশা দাঁড়িয়ে গেল। শীতের বিকেলে তখনই আলো কমতে শুরু করেছে। আমার স্থান হল কলাভবন দ্বিতীয় হোস্টেল, শ্রীপল্লিতে ‘স্কলার্স কর্নার’।

তখনও ছাতিম ফুলের মায়াজড়ানো গন্ধ বিকেলের বাতাসে। আমার জীবনে সেই প্রথম আমি বাড়িছাড়া। হোস্টেলের ভেতরে দু’টি আমগাছে বাড়িফেরা পাখিদের কলরব। বাবা আমাকে হোস্টেলের ঘরে নামিয়ে দিয়ে সেই রিকশাতেই বোলপুর স্টেশনে ফিরে গেলেন। গায়ে চাদর জড়িয়ে, মাথায় টুপি দিয়ে বিহারের এক ছাত্র সচ্চিদানন্দ আমাকে কিছুক্ষণের মধ্যে আপন করে নিতে চাইলেও আমি মনে মনে নিঃসঙ্গই রয়ে গেলাম।
পরদিন ভোরে, ঘরের জানলা খুলতেই পিচের রাস্তার ওপাশে কুয়াশামাখা এক দোতলা বাড়ি। দু’একজন হেঁটে বা সাইকেলে যাতায়াত করছে। জলে চিঁড়ে ভিজিয়ে মিল্ক পাউডার মিশিয়ে তা মুখে দিতেই কান্না পেল। শান্তিনিকেতনে আমার প্রথম সেই শীতের সকাল এক নিষ্ঠুর নির্বাসন মনে হয়েছিল।
এর পরের ছবি সেই বছরই ৭ পৌষ কুয়াশাচ্ছন্ন ‘ছাতিমতলা’। কপালে ফুল-চন্দনের ঠান্ডা ফোঁটা নিয়ে কনকনে শীতের সেই সকাল আমার কাছে পরম রমণীয় হয়ে উঠল। গাছের ফাঁক দিয়ে আসা সূর্যরশ্মির আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে মোহরদির কণ্ঠে শুনলাম– ‘প্রাণের প্রাণ জাগিছে তোমারি প্রাণে’। এরপর স্তোত্রপাঠ ও সমবেত কণ্ঠের গান– ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও’। সে গান, সে মন্ত্রোচ্চারণ, ব্রহ্মসংগীত, এসব মিলে কবির ভাষায় আমার কাছে সে যেন ‘চিত্তের এক প্রবল উদ্বোধন’। ‘আগুনের পরশমণি’ গাইতে গাইতে ‘উত্তরায়ণ’-এ প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমিও যেন আশ্রমের অন্তরে প্রবেশ করলাম।

পরের ছবি– ১৯৮৪ সালের সম্ভবত ১৭ ডিসেম্বর। সকাল ৮টার মধ্যেই শিশিরভেজা আম্রকুঞ্জে পৌঁছে গিয়েছি। জহর বেদির সামনে দীর্ঘ প্রশস্ত গোবর-নিকোনো মাটির পথ আলপনার জন্য প্রস্তুত। শিশিরভেজা হালকা নরম মাটি, হালকা সূর্যের আলোয় শুকোতে শুরু করতেই ক্ষমাদি (ক্ষমা ঘোষ) সাদা খড়ি গোলার মালসায় হাত ডুবিয়ে রেখা টানতে শুরু করলেন। ক্ষমাদি থামছেন না। পূর্বপরিকল্পিত কোনও ড্রয়িং ছাড়াই সে রেখা নানা দিকে বাঁক নিতে নিতে এগিয়ে চলল। ভরে উঠতে লাগল দড়ি-খড়ি দিয়ে টানা দুই সরলরেখার মধ্যবর্তী লম্বা প্যানেল। আমি তখন শিল্পশিক্ষক হলেও বিস্ময়ে হতবাক! ছাত্রছাত্রীরা সব একে একে আসতে শুরু করেছে। আমগাছতলায় মহেন্দ্রদা অনেকগুলো মাটির মালসা নিয়ে কোনওটায় এলামাটি গুলছেন, কোনওটায় গেরিমাটি। না, আমি আঙুল দিয়ে পারিনি বা পারতামও না– অগত্যা তুলি দিয়েই মাটি স্পর্শ করলাম।
সেই বছর থেকে ডিসেম্বরের আলপনার দিনগুলোর অপেক্ষায় থাকতাম। সে ছবিও ক্রমশ পালটাতে লাগল। ছাতিমতলা থেকে শুরু করে ‘শান্তিনিকেতন বাড়ি’, ‘আম্রকুঞ্জ’, ‘ঘণ্টাতলা’, ‘মাধবীবিতান’ যেন আমার সমস্ত নান্দনিক ভাবনা-চিন্তার উৎসক্ষেত্র হয়ে উঠল। যে শান্তিনিকেতন আমার মনে হয়েছিল এক ‘নির্বাসন পুরী’, সেই শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জ হয়ে উঠল ছবির পট– আমার সকল আনন্দের উৎস।
৮ পৌষের প্রতিষ্ঠাদিবস পালনের জন্য এই আলপনা চলত মেলা শুরুর আগের দিন পর্যন্ত। সকাল থেকে আলপনা দিতে দিতে রোদ যতই চড়া হত, আমাদের গায়ের সোয়েটার, চাদর, মাফলার সব জড়ো হত জহর বেদির ওপরে। ১২:৩০ বাজতেই রং-তুলি রেখে আনন্দ পাঠশালার পাশের গেট দিয়ে বেরিয়ে সেন্ট্রাল অফিসের গা বেয়ে মেলার মাঠ। সেখানে ততদিনে জিলিপি রসে ডুবতে শুরু করেছে। ডোকরা ও রূপদস্তার অলংকার সাজানো চলছে। মেলার এই প্রস্তুতিপর্ব ছিল ভীষণ উপভোগ্য। সেখান থেকে ফেরার পথ আবার সেই আম্রকুঞ্জ কোনাকুনি পেরিয়ে আলপনা শুকিয়ে কেমন ফুটে উঠল তা দেখতে দাঁড়িয়ে যেতাম। উপাসনা মন্দিরের সামনের আমলকী গাছ থেকে পড়ে থাকা দু’একটা আমলকী কুড়িয়ে বিশ্বভারতীর বাসে ওঠা।
এবার উপাসনা মন্দিরের ছবি।

রেলিং ও গেট পেরিয়ে উপাসনা মন্দিরে হাতে খড়িমাটি, গেরিমাটি নিয়ে প্রবেশ করেছিলাম ২০১২ সালে। তার আগে মন্দিরে গিয়েছি বহুবার উপাসনার সময়ে। প্রতিটি উপাসনা চলাকালীন সংগীত ও মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে যে ভাবান্তর ঘটে, তা এক বিশেষ অনুভূতি। ২০১২-র শীতেই খ্রিস্টোৎসবের জন্য আলপনা দেওয়ার ডাক পড়ল। আমি তখন একা মন্দিরে প্রায় সারাদিন। চারপাশের কাচ ছেঁকে সূর্যালোকের রঙিন প্রতিফলত শ্বেতপাথরের মেঝের ওপরে। মহর্ষি এই মন্দির পরিকল্পনার সময় ভেবেছিলেন সূর্যাস্তের আলোর প্রতিফলন যেন এই উপাসনাগৃহকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে।

মন্দিরে হিমশীতল মেঝের ওপর হাতে চকখড়ি নিয়ে বসে কিছুক্ষণের মগ্নতা। এসরাজের সুর, সংগীত ও মন্ত্রপাঠের সঙ্গে আলপনাও যেন সঠিক সঙ্গত করতে পারে। যে আত্মনিবেদন, যে আধ্যাত্মিক চেতনা আচার্য, গায়ক ও পাঠকের মনের ভেতর কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্থায়ী হয়, সেই ‘পূজা’ যেন আলপনার গড়নে, রেখার চলনে, আকারের ছন্দেও প্রকাশ করার জন্য শিল্পীকে ধৈর্য ধরতে হয়। আমাদের পূর্বসূরি শান্তিনিকেতনের মহান শিল্পীরা এই মন্দিরের মেঝে কতরকম ভাবনায় অলংকৃত করে গিয়েছেন– কতরকমভাবে রঙে ও রেখায় সেই নিরাকার ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’-কে আলাপনায় প্রকাশ করে গিয়েছেন। আমাদেরই এক মাস্টারমশাই উপাসনা মন্দিরে খ্রিস্টোৎসবের আলপনায় এঁকেছিলেন ‘সান্তা ক্লজ’-এর ছবি। অদ্ভুত ও বিস্ময়কর সেই ভাবনা। এক বিদেশি কাল্পনিক মূর্তিকে তিনি শান্তিনিকেতনী আলপনার ভাষায়, রেখায় ও ছন্দে রচনা করেছিলেন।

বেলা গড়িয়ে সন্ধে নামে ২৫ ডিসেম্বর। সারা বিশ্বজুড়ে সেদিন খ্রিস্টমাস ডে। গির্জায় গির্জায় ঘণ্টাধ্বনি, আলোকসজ্জা, প্রার্থনায় মেতে ওঠে আপামর জনসাধারণ। শান্তিনিকেতনে শীতের সেই সন্ধ্যা অন্যরকম। সেখানেও মহান শান্তির দূত যিশু খ্রিস্টকে স্মরণ করা হয়। ঘণ্টাধ্বনি হতে থাকে উপাসনা মন্দিরে। আচার্য, গায়ক-গায়িকা, যন্ত্রসংগীত শিল্পী, শ্রোতা, দর্শক সর্বোপরি পৌষমেলার উপচে পড়া ভিড় জমে ওঠে মন্দির চত্বরে, গাছতলায়, মাটিতে। চারপাশের রেলিং-এ জ্বেলে দেওয়া হয় মোমবাতি। শুরু হয় উপাসনা– ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো’। স্নিগ্ধ মোমের, আলোয় উদ্ভাসিত কাঁচের উপাসনাগৃহ তখন যেন এক স্বপ্নপুরী। বাইরে কনকনে ঠান্ডায় বসে থাকে শান্ত, মগ্ন জনতা।
বছর শেষ হয়ে আসে। শীতের সঙ্গে ভাঙ্গা মেলার ভিড় বাড়তে থাকে। আম্রকুঞ্জের আলপনা ততদিনে পায়ে পায়ে ধূলি-ধূসরিত বিবর্ণ হয়ে আসে।

জানুয়ারির প্রথম ১৫-২০ দিন অন্য ছবি। তীব্র শীতে আলোকজ্জ্বল দিনের বেলায় সেন্ট্রাল অফিসের মোড় থেকে উত্তরায়ণ, ছাতিমতলা, কলাভবন চত্বর একদিকে ছাত্রছাত্রী ও আশ্রমিকদের আনাগোনা, অন্যদিকে বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তেই থাকে। এর বিপরীত চিত্র রাতের শান্তিনিকেতনে। সন্ধে সাতটার পর থেকে রাত যত গভীর হতে থাকে মন্দিরে থেকে ছাতিমতলা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে কালো গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে অন্ধকার আকাশের তারাগুলো যেন এক মায়া তৈরি করে। মনে হয় পুরনো শান্তিনিকেতনের ভেতর দিয়েই আমি চলেছি। ‘মাস্টারমশাই’ বলতেন যে, অন্ধকার আকাশের গায়ে ছায়ামূর্তির মতো গাছগুলোর বহির্সীমা ধরেই তো এক একটি গাছের আকার চিনে নেওয়া যায়। ‘গৌরীদি’ ও ‘মাস্টারমশাই’-এর বাড়ি বাঁ-দিকে রেখে যেতে যেতে মনে হয় ওঁরা আছেন– এখানেই আছেন।
একবার যে শান্তিনিকেতনের মাটি ছুঁয়েছে অন্তর থেকে, তার তো আর অন্য কোথাও ঠিকানা হয় না। আর সবার ওপরে আছ ‘তুমি’– সেই ‘সত্য মঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে’।

পৌষ-সংক্রান্তি পেরিয়ে যায়। শান্তিনিকেতনে তার আলাদা কোনও তাৎপর্য নেই। বাড়ির ভিতরে ‘পিঠেগুলি’র আয়োজন চললেও শান্তিনিকেতনের বাইরের পরিবেশ নিস্তরঙ্গ। এই সময়ে মনে হয় বড় দীর্ঘ এই নির্জন শৈত্য। কবিও বলেছেন– ‘একি মায়া, লুকাও কায়া জীর্ণ শীতের সাজে।/ আমার সয় না, সয় না, সয় না প্রাণে কিছুতে…’
কবে আবার মৃদুমন্দ বাতাসে ফুলের গন্ধে বাতাস মুখর হয়ে উঠবে। শীত তো বসন্তেরই বার্তাবহ দূত। রিক্ততা, রুক্ষতা, শীর্ণতাই তার সাজ। বর্ষার অকৃপণ দানে উপচে ওঠা শরতের প্রকৃতি হেমন্তকে বলে– এবার তৈরি হও, গাছের মাথার মাথায় সবুজ লতাপাতার ওড়না খসে পড়বে। নিস্তরঙ্গ হয়ে আসবে কাশের ঢেউ। শান্তিনিকেতনের শীতে হালকা উষ্ণতার ছোঁয়া পাই জানুয়ারির শেষে। পৌষমেলার পরের চরম শীতল দিনগুলো অপেক্ষা করে মাঘমেলার জন্য। ছোট্ট পরিসরে শ্রীনিকেতনের এই মেলায় গ্রামীণ বৈশিষ্ট্য এখনও খুঁজে পাওয়া যায়– অন্তত কুটিরশিল্প, মাটির কাজে ও সবজির প্রদর্শনীতে। ছোটগল্পের মতো এই মেলা শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যায়। ফ্রেসকো মঞ্চের বিপরীত দিকের চতুষ্কোণ বেদিতে আলপনা দেওয়ার স্মৃতি আমার কাছে খুবই মূল্যবান এক ছবি।

অতীতে এখানে গৌরীদি, যমুনাদি ও অন্যান্য শিল্পশিক্ষকের নেতৃত্বে বৃত্তাকার আলপনা দেওয়া হয়েছে, তা আমরা নানা ছবিতে দেখে এসেছি। পরবর্তীকালে আমরাও সেই পথ অনুসরণ করেছি। সেখানে শিক্ষাসত্রের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সে এক আনন্দ-উৎসব। খড়ি ও সুতো দিয়ে কম্পাসের মতো বৃত্ত এঁকে কত কি না আঁকাজোঁকা চলত! বৃত্তকে দু’ভাগ করে ওপরের অংশে প্রস্ফুটিত পদ্ম ও লতাপাতা এবং নিচের অংশে জলাশয়ে সঞ্চরণরত হাঁস, জলজ উদ্ভিদের গলাগলি। বেলা যত বাড়ত, অলিপনার খড়িগোলার রেখা দুধের মতো সাদা হয়ে ফুটে উঠত। বেলার হালকা উষ্ণতায় ঘর্মাক্ত কলেবর হয়ে উঠি। সেই সময় একবার কোনও ছাত্র এসে খবর দিল যে, শ্যামবাটিতে না ক্যানেলপাড়ের এক পলাশ গাছে দু’-তিনটে পলাশ দেখা গেছে। হাতে তখন আমার হলুদ এলামাটির সরা– তাতে কয়েক ফোঁটা লাল গেরি মাটিগোলা ফেলে দিলাম। পলাশ ফুটে উঠল আলপনায়।

শীতের তো আরও কয়েকটা দিন বাকি। সেই বিদায়ের সাজটুকু কি তার পরে নেওয়ার সময় হল? সে জানে–
‘এই মলিন বস্ত্র ছাড়তে হবে, হবে গো এইবার–
আমার এই মলিন অহংকার।’

শান্তিনিকেতন যেন ঋতুরঙ্গের এক নাট্যমঞ্চ। প্রকৃতির রূপবদলের যেন একের পর এক মঞ্চসজ্জায় সেজে ওঠে সে। ঋতুর পর ঋতুর পালাবদলের খেলা সেখানে জমে ওঠে। প্রতিটি ঋতু তার আগমন ও বিদায় জানিয়ে যায় ফুলের গন্ধে ও পত্রপল্লবের সাজে।
মাঘমেলা শেষ। বসন্ত এবার বিদায়বেলার মালাখানি পরিয়ে দেবে শীতের গলায়। তাই সে হলুদ উত্তরীয়খানি জড়িয়ে নিয়ে চুপিসারে উইংসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved