আমাদের দেশে কি এরকম বাজারের কোনও পরিকল্পনা রয়েছে? আইনসিদ্ধ নকল ছবির বাজার। সত্যিকারের বিখ্যাত ছবির রেপ্লিকা অর্থাৎ অনুলিপি, প্রতিলিপির দোকান। যেখানে প্রকাশ্যেই সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে, ‘জেনুইন ফেক্’ বা ‘খাঁটি এবং উৎকৃষ্ট নকল ছবির গ্যালারি’! মহৎ চিত্রকলা নকল করার মানে, নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করার নতুন উপায় খুঁজে বার করা। তা যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য, তেমনি সংগ্রাহক আর দর্শকের জন্য ওই একই নিয়মগুলো যদি প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তাদেরও ছবি দেখার অভ্যাস তৈরি হবে।
‘নকল ছবির বাজার‘ বলতে যেমন জাল, জালিয়াতির একটা আতঙ্ক, তেমনই বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটা হয়তো একেবারে নতুন আলোচনার বিষয়। পরিষ্কার দু’টি ভাগ। নকল ছবি আর ছবির বাজার। আমাদের দেশে শিল্পের বাজারটাই ঠিক গুছিয়ে তৈরি হল না, তায় আবার ‘নকল‘ ছবির বাজার! বাজার মানে কিন্তু বিক্রির জায়গা শুধু নয়, কেনাবেচা সংক্রান্ত যাবতীয় সব কিছুই। আসলে ছবির বাজার একটা অস্পষ্ট ধারণা। এই অস্পষ্টটাকে স্পষ্ট করতে বেশ কিছু লোক আজকাল মাঠে নেমে পড়েছে। এদিকে তৈরি হল না শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর ঠিকমত ব্যবস্থা, না ছবির দরদামের স্থিরতা। ছবির সুরক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ বা চিকিৎসার অভাব। নেই ছবির যথাযথ প্যাকিং, স্থানান্তরের যথেষ্ট পেশাদারী ব্যবস্থা। ছবির ফ্রেমিং-এর কোনও শিক্ষিত ফ্রেমার নেই, যার হাতে থাকবে বহু দামি ছবির স্বাস্থ্য, সুরক্ষার ভার। যে জানবে কোন আঠাটির ব্যবহারে ছবির অ্যাসিডিটি বাড়বে, কোন কাচে শত্রু আলোর কণা থেকে ছবিটি বাঁচবে। অন্যদিকে, গৃহবধূ থেকে গিফ্ট শপ, অনেকের ভিজিটিং কার্ডে নামের পাশে লেখা ‘কিউরেটর’। প্রদর্শনীর জন্য ভালো গ্যালারি নেই। এমন পরিবেশ নেই যেখানে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত থাকবে। তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের আনাগোনা থাকবে। সঠিক আলো-সমেত ভালো দেওয়ালের ব্যবস্থা নেই। নেই কোনও ডিসপ্লে ডিজাইনার। শিল্পের আঙিনায় সাধারণ মানুষের আদর-কদর, আলোচনা-সমালোচনা, লেখা-পড়া, তর্ক-বিতর্ক না থাকলে দর্শক তৈরি হবে কী করে? সেই শিক্ষিত দর্শকের মধ্যে থেকেই তো আমরা পাব আমাদের শিল্পের সমর্থক, সমঝদার, পৃষ্টপোষক আর ক্রেতা বা সংগ্রাহক। বাণিজ্যিক গ্যালারি যা আছে সেখানে কেমন যেন জনসাধারণের ‘প্রবেশ নিষেধ’ মার্কা একটা বোর্ড ঝুলছে।
প্রশ্ন হল, নকল শিল্পের বাজারটা কোথায়? বাজার সেইসব শহরে, যেখানে প্রধানত দীর্ঘদিন ধরে শিল্পকলা বিক্রির একটা চল আছে। পৃথিবীর নিরিখে যেমন প্যারিস, নিউ ইয়র্ক। এই যে শিল্পকর্ম জাল করা, এটাও শিল্পের আরেকটা রূপ, বলছে কোথাও। শিল্পের জালিয়াতি ছিল, এখনকার জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তা বজায় আছে। জাল শিল্পের বাজার নাকি খুব লাভজনক। সহজে বড়লোক হওয়ার লোভ আর ইচ্ছে থেকেই এটা আসে। তবে আধুনিক সময়ে শনাক্তকরণের পদ্ধতি আর নকল ধরার রাস্তাগুলো আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। শিল্পকলার জাল করার ইতিহাস যা জানা যায়, তা প্রায় দু’হাজার বছর আগের। যেখানে প্রাচীন রোমানরা প্রাচীন গ্রিক শিল্পের নকল করছেন! বিখ্যাত শিল্পী মাইকেল এঞ্জেলোর কথাই ধরা যাক। রেনেসাঁস পিরিয়ডের একজন বিখ্যাত শিল্পী হওয়ার আগে, তিনি প্রাচীন রোমান ভাস্কর্যের অনুকরণ করে অর্থ উপার্জন করেছিলেন। পশ্চিমের বিংশ শতাব্দীর ছবির বাজারে বিখ্যাত শিল্পীরা, যাঁরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, যেমন সালভাদর দালি, পাবলো পিকাসো, পল ক্লি, মাতিস, সেজান প্রমুখ। তাঁদের কাজের প্রচুর পরিমাণে চাহিদা বাজারে। স্বাভাবিক কারণে অসৎ ব্যবসায়ীরা এই সমস্ত শিল্পীর কাজ নকল করিয়েছে।
আমাদের দেশে মুম্বই কিংবা দিল্লি ধরা যাক– শিল্পের বাজার হিসেবে ভালো। এদিকে জাল ছবি তৈরির ডেরাগুলো খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ের সংবাদমাধ্যম থেকে যা জানা গেল, তাতে ভারতের নকল শিল্পের রাজধানী নাকি কলকাতা এবং পরবর্তীকালে সরে গিয়ে দিল্লি আর মুম্বই! বুম পিরিয়ড-এ, মানে কয়েক বছর আগে অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ ছবির বাজারে বেচাকেনা এবং দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। সেই সময়ে যেসব শিল্পী বাজারে বহু জনপ্রিয় হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ভিএস গায়তোন্ডে, মকবুল ফিদা হুসেন, এসএইচ রাজা, ফ্রান্সিস নিউটন সুজা, অঞ্জলি এলা মেনন, রাজা রবি বর্মা, বাংলার যামিনী রায়, নন্দলাল বসু, বিকাশ ভট্টাচার্য, গণেশ পাইন আরও অনেকে। স্বভাবতই এসব শিল্পীদের বাজারে চাহিদা বাড়ে এবং ছবির নকল শুরু হয়ে যায়।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
ল্যুভ্ মিউজিয়ামের দেওয়ালে মোনালিসার যে ছবিটা আমরা দেখি সেটা নাকি একটি নকল ছবি। আসলটা ভল্টে রাখা আছে। অতএব প্রাচীন এবং আধুনিক মহৎ শিল্পের প্রতিলিপি নিজের দেওয়ালে প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে বোধবুদ্ধি আর অনুভবের পরিবর্তন হবে। আর তা থেকে তৈরি হবে সত্যিকারের নতুন শিল্পের রসগ্রহণের দিকে যাওয়ার রাস্তা। প্রসারিত হবে সমকালীন আসল শিল্পের বাজার। মনে রাখতে হবে, শিল্পচর্চা আর সংস্কৃতির সমৃদ্ধির দায় বা দায়িত্ব শুধু শিল্পীর নয়, দর্শকেরও।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
২.
ছবির নকল করার কি কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে? হ্যাঁ, আছে। অধিকাংশ শিল্প শিক্ষায়তনে শিক্ষার্থীদের শুরুতে তো নকল করতেই উৎসাহিত করা হয়। বিখ্যাত শিল্পকর্ম, মহৎ চিত্রকলা, নকল করার মানে, হাতে-কলমে জ্ঞান অর্জনের একটি সহজ উপায়। বড় শিল্পীদের কাজের কৌশল, তাঁদের শিল্প-শৈলী, চিন্তা-ভাবনা, তাদের ধ্যান-ধারণা ইত্যাদি থেকে নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করার নতুন উপায় খুঁজে পাওয়া। পশ্চিমের নবজাগরণের সময় ওল্ড মাস্টারদের কাজ শেখার অছিলায় এবং তাদের টেকনিক নকল করার জন্য অনেকেই সহকারী বা শিষ্য হিসেবে নিযুক্ত হত। পরে তাদের কাজগুলো এতই নিখুঁত হত যে সেগুলো বিক্রি করা হত। এরপর মূল শিল্পী কখনও কখনও সেগুলোতে সই করে শিল্পীর আসল কাজ বলেও চালিয়ে দিয়েছেন।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
পড়ুন সমীর মণ্ডল-এর লেখা: চিন্তা ও রুচির দুর্ভিক্ষের কোনও ছবি হয় না, বলেছিলেন জয়নুল আবেদিন
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
প্রাচীন চিন দেশে তো নকল ছবি আসল ছবির মতো সমান মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের দেশে ছবি নকল করার কাজটা মূলত করে সেই শিল্পী, যারা মেধাবী নয়, অথচ অসাধারণ দক্ষ এবং জীবনে অসফল। হয়তো তারা পেটের তাগিদে রাস্তা খুঁজে না পেয়ে বিখ্যাত শিল্পীর ছবি নকল করছে। পরে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেগুলোকে বেআইনিভাবে কাজে লাগিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ হয়তো যে শিল্পীর কাজ নকল করে তাঁর শিষ্য, স্টুডিওতে যাতায়াত এবং তাঁর কাজের কৌশল ইত্যাদি কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছে অথবা একই শহরে বাস করে শিল্পীর অনেক কাজ, বারবার দেখার সুযোগ পেয়েছে।
অপরাধটা কী? প্রধানত মিথ্যে বলা, লোক ঠকানো, জালিয়াতি। বিখ্যাত শিল্পীর কাজ আসল বলে চালিয়ে দেওয়া। মানহানির অপরাধ, রাতারাতি অনেক পয়সা পাওয়ার লোভ। গরিব শিল্পীকে অসৎ কাজে লাগানো। মিথ্যে অথেন্টিকেশন সার্টিফিকেটের আয়োজন করা এবং সেগুলোকে অসৎ লোক দিয়ে তৈরি করা একদিকে। অন্যদিকে, ‘প্রভেন্যান্স‘ অর্থাৎ শিল্পকর্মের উৎস বা জন্মস্থান, তারপর এর গতিপথ, মালিকানা এবং হাতবদল, এসবের একটা মিথ্যে চেহারা দেওয়ার চেষ্টা। বিশেষ করে প্রয়াত শিল্পীদের ক্ষেত্রে, আত্মীয়-স্বজনের, বন্ধুদের মধ্যে থেকে একটা মিথ্যে গল্প বানানোর প্রবণতা।
তাহলে কে বা কারা অপরাধী? নকল ছবির শিল্পী না জ্ঞানদাতা? অসাধু আর্ট ডিলার না ক্রেতা? এই সুযোগে এখানে এসে পড়ে ‘আর্ট অ্যাডভাইজার‘। ভয়ের ব্যাপার, কখনও কখনও এই শিল্পের পরামর্শদাতারা সারা পৃথিবীতে কিন্তু ক্রেতা এবং বিক্রেতা দু’জনের কাছ থেকেই পয়সা নিয়ে থাকে। দেখা যাচ্ছে এ-জাতীয় আলোচনায় ক্রেতাদের কথা কিন্তু খুব একটা উঠে আসছে না। অথচ আসল ভুক্তভোগী তো তাঁরা, কারণ বিশাল অঙ্কের টাকার লোকসান তো তাঁদেরই হয়। একজন ক্রেতা যখন সম্পত্তি, জমি বা বাড়ি কিনছেন তখন যতটা খুঁটিয়ে তার সমস্ত কাগজপত্র আর আইনি খুঁটিনাটি দেখে নেন, ছবি কেনার ব্যাপারে কিন্তু তাঁরা সামান্যতম পরিশ্রম করেন না।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
পড়ুন সমীর মণ্ডল-এর লেখা: জীবন জোড়া কাজের ‘খসড়া খাতা’ শৈশবেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল মাণিদার
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
একটি ছবি কখনও কখনও একটি বড় সম্পত্তির চেয়েও অনেক বেশি দামি। ধনী ক্রেতা বা ধনকুবের নিজে দেখে সবসময় শিল্পকর্ম সংগ্রহ করেন না। তাঁদের অভিজ্ঞ আর্ট অ্যাডভাইজার এই সমস্ত দেখাশোনা করতে এবং শিল্পকর্ম কেনার দায়িত্বে রয়েছে। বৃহত্তর ক্ষেত্রে পৃথিবীর নামীদামি বড় মিউজিয়ামগুলোর যাঁরা সংগ্রহের দায়িত্বে, তাঁরাও সবাই কিন্তু ধোঁয়া তুলসীপাতা নন। শিল্প সংগ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির বা অতিরিক্ত সতর্ক যাঁরা, তাঁরাও নকল শিল্পকর্ম কেনার সময় প্রতারিত হন।
৩.
জালিয়াতি থেকে তাহলে বাঁচব কীভাবে? এটা চলছে এবং চলবেও বলে তো হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। বসে নেইও কেউ। যেটা বেশি জরুরি তা হল, সব রকমের মানুষের মধ্যে শিল্প সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা। সবরকম সুরক্ষা এবং অবিরত নজরদারি। আইন আদালত। শাস্তি। এই সমস্ত বিষয়ের কাজগুলো শিল্পী এবং শিল্পপ্রেমী মানুষ সব সময়ে করেই চলেছে। নকল ছবি ধরার নানা পদ্ধতি ও পরীক্ষানিরীক্ষার কাজও থেমে নেই। পৃথিবীর বাজারে সেই রেনেসাঁস পিরিয়ড থেকেই সমানে এই কাজটা চলছে। ফরেনসিক টেস্ট। কার্বন ডেটিং, হোয়াইট লেড ডেটিং থেকে কমন এক্স-রে, বিভিন্ন ধরনের আলাদা বিশেষ এক্স-রে, মায় ডিজিটাল অথেন্টিকেশন। তাই আমাদের বিশ্বাস, এই কুকর্মটি ধীরে ধীরে কমে যাবে বা অন্য রূপ ধারণ করবে। আমরা অদূরভবিষ্যতে এআই-এর দিকে চেয়ে আছি। একদিকে, এই আচরণটি যেমন অসম্মানজনক তেমনই অন্যদিকে অনেক দেশে এ অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা আছে। কে আর সাধ করে জেলের ঘানি টানতে চায়! আর যে সমস্ত শিল্পীরা এই কাজে নিযুক্ত আছে, তাদের মধ্যে দক্ষতার অভাব বেড়ে যাচ্ছে দিন-কে-দিন।
আর একটা জিনিস, সেটা হচ্ছে এই অপরাধমূলক কাজগুলো অন্ধকার জগতের, সবই হয় গোপনে। সেই কারণে এই দলে যারা কাজ করে, মানে টেকনিশিয়ান, ভণ্ড শিল্পপণ্ডিত, শিল্পী, তারাও সহজে মুখ খুলবে না এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রতারিত হবে। পারিশ্রমিক কম দেবে অথবা কাজ করিয়ে নিয়ে পয়সাই দেবে না। এই সমস্ত কারণে এই কাজের বাজার আস্তে আস্তে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা।
নকলের জন্যই নকল এবং তারও বাজার আছে। পৃথিবীর যে সমস্ত শহরে টুরিস্টদের আনাগোনা বেশি সেখানে নকল ছবির বাজারের কিন্তু বেশ রমরমা। সেসব নকল ছবি বলতে, ছবির কপির জন্য কপি, রেপ্লিকা, রিপ্রোডাকশন। সেখানে দক্ষ শিল্পীদের কাজের গুণমান যত বেশি তাঁদের পারিশ্রমিকও তত বেশি এবং এই কাজের জন্য তাঁদের আর এক ধরনের সম্মান। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতায় কয়েকটি দেশ ভ্রমণকালে এসব চোখে পড়েছে। দীর্ঘদিন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকালে অ্যাবরিজিনাল আর্টের খোঁজ খবর করতে গিয়ে পুরনো কাজের ডেরা বা গ্যালারিতে ঘুরে বেড়িয়েছি অনেক দিন। সেখানেও দেখেছি পুরনো কাজের নকল। অস্ট্রেলিয়ার বাইরে অন্যান্য শহরে সে ছবির বাজারও ভালো। চিন দেশে তো দেখলাম একেবারে আর্ট ভিলেজের মতো করে শিল্প নগরী। সেখানে সিংহভাগ শুধু এই নকল কাজ করাই চলছে। তাছাড়া হাতের কাছে দুবাইতে, কিংবা ব্যাংককে, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বা মস্কোতে। এইসব বাজারে ছবির সংগ্রাহকের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
পড়ুন সমীর মণ্ডল-এর লেখা: মারিও মিরান্ডার ছবির দেশে জনসংখ্যা খুব বেশি
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
আমাদের দেশে কি এরকম বাজারের কোনও পরিকল্পনা রয়েছে? আইনসিদ্ধ নকল ছবির বাজার। সত্যিকারের বিখ্যাত ছবির রেপ্লিকা অর্থাৎ অনুলিপি, প্রতিলিপির দোকান। যেখানে প্রকাশ্যেই সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে, ‘জেনুইন ফেক্’ বা ‘খাঁটি এবং উৎকৃষ্ট নকল ছবির গ্যালারি’! শুরুতে বলেছিলাম, মহৎ চিত্রকলা নকল করার মানে, নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করার নতুন উপায় খুঁজে বার করা। তা যেমন বলেছিলাম শিক্ষার্থীদের জন্য, তেমনি সংগ্রাহক আর দর্শকের জন্য ওই একই নিয়মগুলো যদি প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তাদেরও ছবি দেখার অভ্যাস তৈরি হবে। এ-প্রসঙ্গে সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পটি হল, ল্যুভ্ মিউজিয়ামের দেওয়ালে মোনালিসার যে ছবিটা আমরা দেখি সেটা নাকি একটি নকল ছবি। আসলটা ভল্টে রাখা আছে। অতএব প্রাচীন এবং আধুনিক মহৎ শিল্পের প্রতিলিপি নিজের দেওয়ালে প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে বোধবুদ্ধি আর অনুভবের পরিবর্তন হবে। আর তা থেকে তৈরি হবে সত্যিকারের নতুন শিল্পের রসগ্রহণের দিকে যাওয়ার রাস্তা। প্রসারিত হবে সমকালীন আসল শিল্পের বাজার। মনে রাখতে হবে, শিল্পচর্চা আর সংস্কৃতির সমৃদ্ধির দায় বা দায়িত্ব শুধু শিল্পীর নয়, দর্শকেরও। শুধুমাত্র সই নকল করেই কোটি কোটি টাকা উপার্জনের লোভ না করে অল্প মূল্যে সহজলভ্য করে উৎকৃষ্ট ছবিকে জনসাধারণের মধ্যে নিয়ে এসে দর্শকের দেখার মানসিকতা বদল করে দেওয়ার মধ্যেও তো একটা ভালো দিক আছে। ঠিক যেমন সঙ্গীতে, অভিজ্ঞ সঙ্গীতজ্ঞের সঙ্গীত সাধনার অনুকরণেও তৈরি হয় শ্রোতাদের কান। হয়তো সেটাই হবে সত্যিকারের মহান শিল্পীদের প্রতি অন্য ধরনের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অশোক ঘোষ মনে করতেন, ট্রাম আন্দোলন কলকাতার হকারদের একটি রাজনৈতিক চেতনা জুগিয়েছিল। এই আন্দোলন ছিল ছাত্র, শিক্ষক, কেরানি, হকার, আর উদ্বাস্তুদের লড়াই। আর ট্রাম-ডিপো মানেই হকার। এইসব দোকানেই আন্দোলনকারীদের আড্ডা বসত। দেশ-বিদেশের নানা ধরনের কথা আলোচনা হত। সকালে হয়তো কোনও এক চায়ের দোকানে জটলা পাকিয়ে খবরের কাগজ পড়া হত।