গত কয়েক বছরে, পাহাড়ের ট্যুরিজম চূড়ান্তভাবে বেড়ে উঠেছে। ট্যুরিজম বাড়লে, ট্যুরিস্টরা আসবে, তার জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা হবে (সেটা সীমান্তরক্ষার জন্যেও হতে পারে), তারা থাকবে, তার জন্য ইলেকট্রিসিটির ডিমান্ড বাড়বে (নদী আটকে ড্যাম তৈরি না হলে সেটা কীভাবে হবে?)। পাহাড়ে থাকতে চাইলে, একটু ইনভেস্ট করে, একটু করিৎকর্মা হয়ে, পাহাড়ি কারও নামে, টুক করে একটা হোমস্টে, আরেকটু ইনভেস্ট করলে একটা সুইমিং পুল-টুল ওয়ালা রিসর্ট, এসব আজকের দিনে কোনও ব্যাপারই না! কিন্তু এগুলোর ফলে ঠিক কী হচ্ছে? এককথায় বলতে গেলে, আগে যে অঞ্চলের অতিবৃষ্টি বা ধ্বস, হ্যাজার্ডাস পরিস্থিতি তৈরি করত, এখন তা ডিসাস্টারাস পরিস্থিতি তৈরি করছে। পার্থক্য কী? প্রথম ক্ষেত্রে জান-মাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হয়।
কলকেতার বাবুদের প্রিয় পাহাড়ি বাগানবাড়িতে ধ্বস নামসে, দু’-তিনদিকের যাওয়া-আসার রাস্তা ভাইঙা গিসে, কিছু মানুষ মইরা গিসে, হারায়ে গিসে, ব্রিজ ভাইঙা গিসে। এইর’ম হইলে তো তাঁরা নইড়াচইড়া বসবেনই। তা বাবুরা নইড়াচইড়া উত্তরবঙ্গের দিকে তাকাইতেসেন আর ভাবতেসেন, আহা রে উত্তরবঙ্গ এত খারাপ আসে কেন? এই খারাপ থাকার পিসনে অনেকগুলা, নানা রকম কারণ আসে। মূল কারণগুলার দিকে তাকাইলে আমরা আন্তর্জাতিক কারণ দেখতে পাইতেসি। এই যেমন ‘এল নিনো’-র বছর শেষ হয়া ‘লা নিনা’ শুরু হইসে বা নিম্নচাপের স্থান পরিবর্তন– এইসব আর কী। এগলা বাবুরা জানেন। মুই এলায় মুখ্যুসুখ্যু উত্তরবঙ্গের মানষি, অত বুঝিবার পারো নাই। এই টুরিস্ট বাবুরা যেইগুলা জানেন না বা দেখতে পান না বা দেখলেও বুঝিবার পারেন না, বা বুঝিবার পারিলেও না বুঝিবার ভ্যাক ধরেন, সেগুলার কথা একটু কওয়ার কথা ভাবতেসি। ঠিক ভাবি না ভুল ভাবি মুই না জানং। মোর অপরাধ ক্ষমা কইরা দিয়েন।
এই অঞ্চলে উন্নয়নের সূচনা ধরতে গেলে ব্রিটিশ সময়কাল। দ্বিতীয় ইন্দো-ভুটান যুদ্ধে এই ডুয়ার্স অঞ্চল ব্রিটিশরা দখল করে মূলত এর বনজ সম্পদের জন্য। সে সময় থেকেই তারা এ অঞ্চলের স্থানীয় গাছ কাটতে শুরু করে ও ধীরে ধীরে সেসব অঞ্চলে চা-বাগান গড়ে তুলতে শুরু করে। এর ফলে প্রথম স্থানান্তরিত হন এই অঞ্চলের আঞ্চলিক উপজাতির মানুষরা (বোরো, রাভা ইত্যাদি), এবং তাঁরা চলে যান আরও পূর্বের দিকে, আলিপুরদুয়ার, আসাম অঞ্চলে। কারণ, এঁরা বনকে রক্ষা করতেন, এবং এই অঞ্চলের গাছ কেটে ফেলায়, যা মূলত পশুপাখিদের কাছে উপাদেয় ফলের গাছ ছিল (এর ফলে সে সময় থেকেই স্থানীয় পশুপাখিরা হারিয়ে যেতে থাকে), পশুপাখিদের সঙ্গেই, তাদের খাদ্যাভ্যাসেও টান ধরে। পরবর্তীতে এখানে গাছ লাগানো শুরু হলেও, শাল, সেগুনের মতো প্রধানত কাষ্ঠল গাছ লাগানো শুরু হয়। যার এমন কোনও ফল নেই, যা বনের মানুষ বা প্রাণীদের খাওয়ার যোগ্য। এই অঞ্চলের পরিবর্তনের সূত্রপাত সেই সময় থেকে।
সেই সময় থেকেই, এই চূড়ান্ত ভঙ্গিল ও ক্রমবর্ধমান হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে ছুটি কাটানো বা ঘুরতে আসাও শুরু করেন এই ইংরেজরাই। স্থানীয় হালকা ছোটখাটো বাড়ির জায়গায় পাহাড়ের গায়ে তৈরি হতে থাকে ইট-কাঠ-পাথরের স্থাপত্য। এই অঞ্চল ধ্বসপ্রবণ, পাহাড়ি নদীর নিজস্ব ছন্দ রয়েছে, গতিপথ রয়েছে, বৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি, হড়পা বান, এই অঞ্চলের স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কিন্তু ব্রিটিশ এইসব স্থাপত্য, আমরা দেখতে পাব যে চূড়ান্ত বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তৈরি হওয়ার ফলে, এখনও দাঁড়িয়ে আছে। ভাঙছে কী?
গত কয়েক বছরে, পাহাড়ের ট্যুরিজম চূড়ান্তভাবে বেড়ে উঠেছে। ট্যুরিজম বাড়লে, ট্যুরিস্টরা আসবে, তার জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা হবে (সেটা সীমান্তরক্ষার জন্যেও হতে পারে), তারা থাকবে, তার জন্য ইলেকট্রিসিটির ডিমান্ড বাড়বে (নদী আটকে ড্যাম তৈরি না হলে সেটা কীভাবে হবে?)। শুধু ট্যুরিজম কেন, পাহাড়ের একটু নিচে, জঙ্গলের আশপাশমাঝ দিয়ে চাইলে টুক করে ফ্ল্যাটও কিনে ফেলা যায়। পাহাড়ে থাকতে চাইলে, একটু ইনভেস্ট করে, একটু করিৎকর্মা হয়ে, পাহাড়ি কারও নামে, টুক করে একটা হোমস্টে, আরেকটু ইনভেস্ট করলে একটা সুইমিং পুল-টুল ওয়ালা রিসর্ট, এসব আজকের দিনে কোনও ব্যাপারই না! কিন্তু এগুলোর ফলে ঠিক কী হচ্ছে? এককথায় বলতে গেলে, আগে যে অঞ্চলের অতিবৃষ্টি বা ধ্বস, হ্যাজার্ডাস পরিস্থিতি তৈরি করত, এখন তা ডিসাস্টারাস পরিস্থিতি তৈরি করছে। পার্থক্য কী? প্রথম ক্ষেত্রে জান-মাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হয়।
একটা হোমস্টে আর একটা রিসর্টের গল্প বলি
ধরুন গত কয়েক বছরে পাহাড়ি কোনও ছোট্ট জায়গা, ট্যুরিস্টদের ‘হিডেন জেম’ বা ‘অফবিট ডেস্টিনেশন’ হয়ে উঠেছে। সেখানে গিয়ে থাকাটা সত্যিই একটা অনবদ্য অভিজ্ঞতা, কারণ সেখানে ট্যুরিস্টদের রাখা হয় প্রায় পাহাড়ি কোনও নদীর বেডের ওপর। সে নদী তো সেখানে ছিলই, কিন্তু তার আশপাশের উঁচু জায়গায় মানুষ থাকলেও, সেই নদীর বেডের ওপরে কেউ স্থায়ীভাবে কিছু তৈরি করার বা থাকার কথা ভাবত না, কারণ তারা জানত ওটা নদীর বেড, জল আসাটা স্বাভাবিক। এখন সিকিম-দার্জিলিং-কালিম্পং মিলিয়ে বহু ড্যাম গজিয়ে ওঠায়, সেখানে হয়তো বেশ কয়েক বছর ঠিকঠাক জল আসেনি। জল আসেনি দেখেই, সেখানে জায়গা পেয়ে একটা হোমস্টে তৈরি হয়ে গেছে। এবার ধরুন কোনও বছর, অতিবৃষ্টি হল, ভুটান জল ধরে রাখতে পারল না, ড্যাম থেকে জল ছেড়ে দেওয়া হল, হোমস্টে সমেত জায়গাটা ভেসে গেল। বা ধরুন একটা রিসর্ট, স্যুইমিং পুল-টুল আছে, তৈরি হয়েছে, ‘প্রিস্টিন’ ও ‘সেরেন’ (মূল গ্রাম থেকে একটু দূরে পাহাড়ের ঢালে) কোনও জায়গায়, যেখান থেকে বিছানায় শুয়ে আপনি জানলা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। সেখানে কেউ থাকত না আগে, কারণ তারা জানত, ও জায়গাটা ৩০ ডিগ্রির থেকে বেশি ঢালযুক্ত, ধ্বস নামলে ওখানেই নামবে। কোনও একদিন ভঙ্গিল পর্বত গা ঝাড়া দিল, বা পাশের কোনও পাহাড়ে ডিনামাইট ফাটানো হল। পাহাড়ের সেই ঢালে ধ্বস নেমে গেল। এ দু’ক্ষেত্রেই, ফল? সেই হ্যাজার্ডস জায়গাটা খামোখাই ডিজাস্টারাস হয়ে গেল। এ ঘটনা এখন পাহাড়ে আখছার ঘটে চলেছে।
এবার আসি এই ড্যামটার গল্পে
(এ গল্পের জল ধরে রাখা বা ছাড়ার বা জলের গতিপথ বদলে দেওয়ার পলিটিকাল দিকটা নিয়ে আলোচনা করছি না। তাই জলপাইগুড়ির কোনও একটা স্পারে, হোমস্টেটার মতোই গজিয়ে ওঠা রেস্টুরেন্ট কেন ভেসে গেল, বা তোর্সা কেন ফেঁপে উঠে আশপাশ ভাসিয়ে নিল, কেন দুধিয়ার ব্রিজ ভেঙে পড়ল, সে গল্পটা বাদ রাখি।)
পাহাড়ে মানুষ বাড়ছে, বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়ছে। পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুতের জন্য ড্যাম প্রয়োজন। এবার সে ড্যাম তৈরি হয়েছে নিম্ন-হিমালয়ের পাহাড়ি নদীখাতে। ভঙ্গিল পর্বত হিমালয় গঠিত পাললিক শিলা দিয়ে। সে পাললিক শিলায় জল ধরে রাখলে তাকে সে টেনে নেয়, নরম হয়ে আসে। তো আগে সে নদী বইত নির্দিষ্ট খাত দিয়ে। খাত কীভাবে তৈরি হয়? ধারলো জল নরম অংশটাকে খইয়ে খাত তৈরি করে, শক্ত অংশের কাছাকাছি দিয়ে বইতে শুরু করলে। ড্যাম তৈরি করলে কী হবে? জল জমা হবে, নদীর ছেড়ে আসা, নরম খাতের অংশে। পাললিক শিলায় তৈরি সে নরম জায়গা জল টেনে নেবে ও ছড়িয়ে দিয়ে আশপাশের এলাকাকেও নরম করে দেবে। ফল? সে অঞ্চলের বেশ খানিকটা ওপর দিয়ে যে রাস্তাটা তৈরি হয়েছিল, সে রাস্তার চাপ, নিচের নরম অংশ ধরে রাখতে পারল না আর রাস্তাটা ধ্বসে গেল। ডিজাস্টারাস ব্যাপার। এরকম ড্যাম এই পুরো পাহড়ি অঞ্চল জুড়ে বেশ কয়েকটা গড়ে উঠেছে। উন্নয়নের আনন্দে ভেসে গেছে পুরো পাহাড়, খানিক সমতলও।
খুব ভয়ে ভয়ে সীমান্তরক্ষার গল্পে যাই
আমাদের উত্তরে চিন। তারা ভারতের জমি দখল করে। সীমান্তরক্ষা আবশ্যক। যুদ্ধের ভারী ভারী অস্ত্র-যন্ত্র-পাতি নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করতে হবে। ‘বিশ্বকর্মা’-র ছোটভাইরা তাই পাহাড় কেটে, ফাটিয়ে টানেল বানিয়ে, আশপাশের জঙ্গল ধ্বংস করে রাস্তা বানিয়েছে। সে রাস্তা দিয়ে সীমান্তরক্ষা হয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ভঙ্গিল পাহাড়ের কী হয়েছে? হিমাচলে যা হয়েছে, উত্তরবঙ্গে কী হতে চলেছে তার পূর্বাভাস সেখানেই পাওয়া গিয়েছিল। ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এ যেভাবে ডোয়ার্ফরা অতিরিক্ত লোভে পাহাড় কাটতে কাটতে ‘বালরগ অফ মরগথ’-কে জাগিয়ে তুলেছিল, যে পরবর্তীতে সেই ডোয়ার্ফদের সাম্রাজ্যই ধ্বংস করে দেয়, সেভাবেই, পাহাড়ের বাঁধুনিকে এই ভাঙাভাঙি, খোঁড়াখুঁড়ি হালকা করে দিয়েছে, ফল, আগে যে অঞ্চল দিয়ে কোনও পাহাড়ি ঝোরা ঘোর বর্ষাতেও সহজেই বয়ে যেত, সেখান দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময়, সে অঞ্চলটা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে তার অসুবিধা হয় না। ফলে, একটা রোমান্টিক ঝোরা হয়ে ওঠে ডিজাস্টারাস ফ্লাড অ্যান্ড ল্যান্ডস্লাইড।
একটু বন্যপ্রাণের গল্পও শুনুন
একইভাবে এই পাহাড়ি মাটির বাঁধন ধরে রাখে গাছ। পাহাড়ে থাকার জায়গা বেড়ে ওঠা, সেখানে যারা থাকবে তাদের খাবারের চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত চাষের জমি, এসবের ফলে সে মাটি ধীরে ধীরে আলগা তো হয়ে পড়েই, তার সঙ্গে সে সব অঞ্চলের বণ্যপ্রাণীরা বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। ভারী বর্ষায় তাদের ‘সেফ প্লেস’ কমে আসায়, তারা ভেসে আসে জলঢাকা, তোর্সা বা তিস্তা নদীতে। এইসব ন্যাচারাল রিজার্ভে, তাদের ন্যাচারালি রিজার্ভ করার দিকে নজর কমে আসায় তারা ছড়িয়ে পড়ছে তাদের অচেনা সব জায়গায়। পাখিরা বাসা বাঁধতে না পেরে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। এখানে খালি ট্যুরিস্ট থাকে এখন। নেচার ট্যুরিজম বেড়ে ওঠে। পাহাড়ি নদীর পাথরের ফাঁকে জমা হয় ভাঙা বিয়ারের বোতল। কোনও রিসর্টের ইনফিনিটি পুলে গা ডুবিয়ে স্কচে চুমুক আর পাহাড়ের ফাঁকে সূর্যাস্ত দেখতে গিয়ে কেউ খেয়াল করে না, তাদের উদ্দাম মিউজিক বাদে আর কোনও আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না কোথাও।
সমতলেরও তো গল্প আছে
জলপাইগুড়ি জেলায়, এই নিম্ন হিমালয়ে ওঠার একটা রাস্তা শুরু হয় চালসা থেকে। লাটাগুড়ি আর চাপড়ামারি ‘অভয়ারণ্য’ এই জায়গার সামনে আর একপাশে। এই চালসার পথে একটু উঠে দুটো বাঁক ঘুরলেই, ‘সিনক্লেয়ারস’ হোটেল। এই হোটেলের সামনেই একটা ভিউ পয়েন্ট আছে। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে, আজ থেকে দশ-বারো বছর আগেও নিচে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজে ঢাকা, হালকা কুয়াশায় ছাওয়া লাটাগুড়ি দেখা যেত। এই কয়েক মাস আগে সেখানে গিয়ে, ডুয়ার্সের একজন অধিবাসী হিসাবে কান্না পেয়ে গেছিল। বন সেখানে এখন দিগন্তেই দেখা যায়। তার আগে পর্যন্ত দেখা যায় প্লট আর চাষের জমি। আর লাটাগুড়ির রাস্তায় গেলে যে ফ্লাইওভারটা দেখা যায়, তার পারপাস এখনও বুঝতে পারলাম না এখানকার একজন অধিবাসী হিসাবে। শুধু দেখতে পেয়েছিলাম দেদার গাছ কাটা হয়ে গিয়েছিল রাস্তার দু’পাশে, এই ফ্লাইওভার বানানো স্যাংশন হতেই। ডুয়ার্সের অন্যান্য অঞ্চলের কী অবস্থা আমি নিজে চোখে দেখিনি, তবে আশা করি এর থেকে আলাদা কিছু নয়, কারণ তার ফলাফল আমরা এই অঞ্চলে দেখতে পাই। গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গের সমতলে গরম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
এ বছরের জল দেখে অনেকেই ১৯৬৮ সালের তিস্তার বিধ্বংসী বন্যার কথা মনে করছেন। সে সম্ভাবনা কি মিথ্যা? রায়ডাক নদী, যা ভুটানে ‘ওয়াঙচু’ নামে পরিচিত, সেখানে তৈরি টালা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ড্যামের ওপর দিয়ে জল যাচ্ছে। লকগেট খোলা যাচ্ছে না, কারণ জলের চাপ এতটাই বেশি যে লকগেট খোলার মেকানিজম কাজ করছে না। এই অবস্থায় ভুটান সরকার চিঠিতে সাবধানবাণী পাঠিয়েছে ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। এই প্রকল্পটা তৈরি করতে কেন্দ্রীয় সরকারের এনএইচপিসি (NHPC) এবং বিএইচইএল (BHEL) কারিগরি সহায়তা করেছিল। তারা বলছে জলের চাপে গেট খুলতেই পারছে না। ওই বাঁধটা কোনও কারণে জলের চাপে ভেঙে গেলে গোটা ডুয়ার্স এক নিমেষে ভেসে যাবে।
উত্তরবঙ্গের এই পরিস্থিতির পিছনে ঘোরতর পলিটিক্স রয়েছে, পলিটিকাল টানাপোড়েন রয়েছে। ভোটযন্ত্রণা রয়েছে। নদী-নির্ভর প্রতিবেশী দেশকে কতটা জল তার নদীর উত্তরের অংশের জলের নিয়ন্ত্রক দেশ তাকে দেবে, সেই নিয়ন্ত্রণ কীভাবে হবে, এসব বিষয় তো হাজার বারণ থাকলেও অস্বীকার করা যায় না বা তার থেকে চোখ ফেরানো যায় না। পাহাড় আদতেই মানুষের (পড়ুন, ভোটারের), সরকারের, রোজগারের, ভোটরক্ষার চাপে ভেঙে পড়ছে। হ্যাজার্ডাস জায়গাগুলো ক্রমে ডিজাস্টারাস হয়ে উঠছে। এ অনস্বীকার্য। এবং দ্রুত এর সমাধান রাজ্য হোক বা কেন্দ্র হোক, সেই সরকারকেই করতে হবে। ট্যুরিস্ট জাগ্রত হয়ে আর কী করবে? আফটার অল, এই ট্যুরিজমই তো এই অঞ্চলের বড় অংশের মুখে ভাত তুলে দেয়।
তথ্য কৃতজ্ঞতা: শ্রেয়সী গাঙ্গুলি, কৃষ্ণেন্দু রায়, অর্ণব রায়
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved