জাত গণনার রিপোর্ট লোকসভা ভোটে কি আদৌ তুরুপের তাস?
Published by: Robbar Digital
Posted on: November 19, 2023 7:52 pm
Updated: November 21, 2023 3:53 pm
যে কংগ্রেস বরাবর জাতিভিত্তিক জনগণনার বিরোধিতা করে এসেছে, তারাই হঠাৎ জাত গণনার রিপোর্ট তৈরির প্রতিশ্রুতি দিতে শুরু করেছে রাজ্যে রাজ্যে। যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট প্রক্রিয়া চলছে, তার সর্বত্র ইস্তাহারে কংগ্রেস জাত গণনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। লোকসভা ভোটে জিতলে গোটা দেশে জাত গণনা হবে বলে রাহুল গান্ধীরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, বিজেপির হিন্দুত্বর রাজনীতিকে মোকাবিলা করতেই কংগ্রেস এতদিন বাদে ভি. পি. সিংয়ের লাইনে হাঁটতে শুরু করেছে।
সুতীর্থ চক্রবর্তী
খুব অল্প সময়ে ১৩ কোটি মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে জাত গণনার রিপোর্ট প্রকাশ করে দেশে কিছুটা হইচই ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। নীতীশের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে বিহারের ৮৩ শতাংশ বাসিন্দাই নিম্নবর্ণের। এর মধ্যে ৩৬.০১ শতাংশ ‘অতি পিছড়ে বর্গ’ তথা ইবিসি। ২৭.১ শতাংশ অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতি তথা ওবিসি। তফসিলি জাতি ১৯.৬৫ শতাংশ। তফসিলি উপজাতি ১.৬৮ শতাংশ। বিহারে উচ্চবর্ণের বাসিন্দা, তথা ব্রাহ্মণ, রাজপুত, ভূমিহার ও বানিয়ারা জনসংখ্যার মাত্র ১৫.৫ শতাংশ। ইবিসি ও ওবিসি মিলিয়ে জনসংখ্যার ৬৩ শতাংশ হওয়ায় নীতীশ তাঁর রাজ্যে সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় ৬৫ শতাংশ সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন।
নীতীশের এই তড়িঘড়ি জাত গণনার রিপোর্ট প্রকাশ এবং সংরক্ষণ বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। লোকসভা ভোটের মুখে নীতীশ প্যানডোরার বাক্স খুলেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের কোনও কোনও অংশ থেকে বলা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, ১৯৯০ সালে মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতি সেই ৩০ বছর আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। ফলে, ‘মণ্ডল বনাম কমণ্ডল’ লড়াই ফিরিয়ে আনা কার্যত অসম্ভব। নীতীশের জাত গণনার রিপোর্টের কোনও প্রত্যক্ষ প্রভাবই নেই।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস অবশ্য নীতীশের পদক্ষেপে জাদু দেখছে। যে কংগ্রেস বরাবর জাতিভিত্তিক জনগণনার বিরোধিতা করে এসেছে, তারাই হঠাৎ জাত গণনার রিপোর্ট তৈরির প্রতিশ্রুতি দিতে শুরু করেছে রাজ্যে রাজ্যে। যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট প্রক্রিয়া চলছে, তার সর্বত্র ইস্তাহারে কংগ্রেস জাত গণনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। লোকসভা ভোটে জিতলে গোটা দেশে জাত গণনা হবে বলে রাহুল গান্ধীরা ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, বিজেপির হিন্দুত্বর রাজনীতিকে মোকাবিলা করতেই কংগ্রেস এতদিন বাদে ভি. পি. সিংয়ের লাইনে হাঁটতে শুরু করেছে।
নয়ের দশকের গোড়ায় লালকৃষ্ণ আদবানি যখন রামরথ বের করার প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের হাতিয়ার ছিল মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট। যে রিপোর্ট রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে প্রকাশ করতে চাননি। মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট সামনে এনে ভি. পি. সুকৌশলে বিজেপির হিন্দুভোট একত্রীকরণের প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন। মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরই দেশজুড়ে দপ করে আগুন জ্বলে উঠেছিল। হিন্দি বলয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ওবিসি ও উচ্চবর্ণের জনগোষ্ঠী। মণ্ডল রাজনীতি হিন্দি বলয়ে হিন্দু ভোটে যে বিভাজন তৈরি করে দিয়েছিল, তা রামমন্দির আন্দোলনের উত্তাল ঢেউকে অন্তত ব্যালট বাক্সে রুখে দিতে সক্ষম হয়েছিল। লালুপ্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিং যাদব, মায়াবতী, নীতীশ কুমাররা জাতের নামে ও সামাজিক ন্যায়ের কথা বলে কোটি কোটি মানুষকে নিজেদের ছাতার তলায় আনতে পেরেছিলন। হিন্দু পরিচিতিসত্ত্বার রাজনীতি পরাস্ত হয়েছিল। ১৯৯১ সালের লোকসভা ভোটে আদবানি সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড় করতে পারেননি। এমনকী, ১৯৯৮ ও ’৯৯-তেও অটলবিহারী বাজপেয়ীকে জাতভিত্তিক দলগুলির সঙ্গে আপস তথা ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ করে ‘কোয়ালিশন’ বা মিলিজুলি সরকার গড়তে হয়েছিল।
২০১৪ থেকে হিন্দি বলয়ে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা যে হিন্দুত্বের ঘোড়া ছোটাচ্ছেন, তা ওই নয়ের দশকের মতোই জাতি গণনার রিপোর্ট তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রোখা সম্ভব বলে রাহুল গান্ধীর পরামর্শদাতারা সম্ভবত মনে করছেন। সেই কারণে রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ থেকে বলা হচ্ছে, জাত গণনার রিপোর্ট লোকসভা ভোটে তুরুপের তাস, অর্থাৎ ‘গেম চেঞ্জার’ হতে পারে। নীতীশ কুমার জাত গণনার রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনে বিহারে ‘অতি পিছড়ে বর্গ’-এর আবেগকে উসকে দিতে পারছেন এবং বিজেপির ভোটব্যাঙ্কেও আঘাত করেছেন, এমন একটা বিশ্বাস কাজ করছে এই অংশের মনে। বিহারের এই ছায়া সমগ্র হিন্দি বলয়ে গিয়ে পড়বে বলেও এই অংশের ধারণা।
মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হিন্দি বলয়কে জ্বলে উঠতে দেখা গিয়েছিল। দিল্লিতে প্রকাশ্য রাস্তায় গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চবর্ণের ছাত্র। নীতীশ কুমার গত ২ অক্টোবর জাত গণনার রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। নীতীশের জাত গণনার রিপোর্টের বিরুদ্ধে পাটনাতেও একজন উচ্চবর্ণের মানুষকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। এমনকী, বিজেপিও জাত গণনার রিপোর্টের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করেনি।
আসলে মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পর গত চার দশকে ভারতের রাজনীতিতে সামাজিক ন্যায়ের বিষয়টি যেভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছে, তাতে পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে উচ্চবর্ণের আজ সমস্যা হয় না। নরেন্দ্র মোদি নিজেও একজন ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষ। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরাও অধিকাংশ ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষ। হিন্দি বলয়ের রাজনীতিতে উচ্চবর্ণের আধিপত্য বহুদিন শেষ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের বর্তমান যুব সমাজের উচ্চাশার স্তরটি সরকারি চাকরি বা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। নয়ের দশকে বিশ্বায়ন প্রকৃত অর্থেই উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ভারতবাসীকে, যারা রাজনীতির মূল কুশীলব ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, বিশ্বনাগরিক করে তুলেছে। সুতরাং, সংরক্ষণের ইস্যুকে সামনে রেখে হিন্দু বলয়ের সিংহভাগ অঞ্চলের ভোটারদের আবেগকে আদৌ উসকে দেওয়া কতখানি সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। উল্টোদিকে ধর্ম ও উগ্রজাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করে মানুষের আবেগ উসকে দেওয়ার রাজনীতি দুনিয়া জুড়ে সাফল্য পাচ্ছে। যাকে কিছুটা শালীনতার মোড়ক দিয়ে দক্ষিণপন্থার উত্থান বলা হয়ে থাকে।
পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলের পর হয়তো জাত গণনার স্লোগানটি নিয়ে রাহুল গান্ধীরা ফের মূল্যায়ন করতে বসবেন। তখন হয়তো আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে জাত গণনার রাজনৈতিক তাৎপর্য।
ছবি বুঝতে হলে ‘দেখবার চোখ’-এর সঙ্গে তাকে বোঝার ‘অনেক দিনের অভ্যেস’
রবীন্দ্রনাথের চিত্রভাবনার আড়ালে আছে বিশের দশকে বিভিন্ন মিউজিয়াম ও গ্যালারিতে বিদেশি ছবি ও ভাস্কর্য দেখার অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে পেরুভিয়ান শিল্পকলা এবং জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট আর্টের সঙ্গে তাঁর সম্যক পরিচয়।
এক গভীর রাতে সমুদ্রতীরে বসে রাজনীতিতে আসার সংকল্প নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে যে মন্ত্রিত্বই তাঁর হাতে থাক, বুদ্ধদেব ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে অতি নির্ভরযোগ্য এক সেনাপতির মতো। ‘আপনারা বুদ্ধর কাছে যান, বুদ্ধ ওসব কালচার-ফালচার বোঝে’– জ্যোতিবাবুর এই উক্তি যথার্থ কি না জানি না, কিন্তু কথাটা মিথ্যে ছিল না।