২০২৫ সালের কলকাতা বইমেলায় আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে শুরু করি এই আতরের যাত্রা। ধীরে ধীরে তা মানুষদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হতে থাকে। আমরা তারপর ঠিক করি, অনলাইনে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেভাবে সম্ভব এই আতর মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। আমরা মনে করি, এই দুর্গন্ধ ভরা পৃথিবীতে সুগন্ধেরই ক্ষমতা আছে এক মানুষকে অন্য মানুষের কাছে টানার। সুগন্ধই পারে মানুষের মনে ভালোবাসা সঞ্চার করতে। তাই আমরা, বাঙালিদের মধ্যে যেসব গন্ধ হারিয়ে যেতে বসেছে তা ফিরিয়ে আনার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।
গ্রাফিক্স: দীপঙ্কর ভৌমিক
আমি মৈনাক। আমি এবং আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে মিলে কারবার করি সুগন্ধের। আমাদের ব্র্যান্ডের নাম ‘সোঁদা’। আমরা সুগন্ধি আতর তৈরি করি। সেই আতর আমরা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিই অনলাইনে অথবা অফলাইনে। আমরা কয়েকজন বিভিন্ন জায়গায় আমাদের আতরের সম্ভার নিয়ে থাকি। মানুষ এসে গন্ধ শুঁকে পছন্দ করে নিয়ে যান আমাদের থেকে।
গত রবিবার আমি ছিলাম টালিগঞ্জ মেট্রোর সামনে আমাদের আতরের সম্ভার নিয়ে। সেখানে সাধারণ বৃদ্ধ মানুষ এসে আতর দেখতে গিয়ে বলে যান আমরা নাকি বাংলাদেশ থেকে এসে এসব ব্যবসা ফেঁদে বসেছি। জানি না, উনি কেন এটা বললেন! সে প্রশ্ন করেও কোনও উত্তর পাইনি। ওঁর সঙ্গে আরেকজন বলে যান বর্তমানে তৃণমূলের রাজত্বে পশ্চিমবঙ্গে নাকি আমাদের মতো বাংলাদেশির নাকি এত বাড়বাড়ন্ত।
এমনিতে ‘বাংলাদেশি’ শব্দটায় কোনও আপত্তি নেই আমার। কিন্তু যখন সম্পূর্ণ অপরিচিত কেউ কাউকে তীব্র ঘৃণার সহযোগে ‘বাংলাদেশি’ বলে তাহলে তার মানে দাঁড়ায়– সে এদেশের নাগরিক নয়। যাঁরা দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে করে এদেশে এসে কোনও মতে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে নিজেদের শ্রম, ঘাম, রক্ত দিয়ে দেশ গড়ে চলেছেন– এই কথায় তাঁদের খুব খারাপ লাগে। আমার জন্ম বাংলাদেশে না হলেও এই কথার বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানাই।
এই মুহূর্তে আমাদের দেশে শুধুই ঘৃণার চাষ চলছে। কখনও কোনও দলিত পিএইচডি স্কলারের স্টাইফেন/ সাম্মানিক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। কখনও কোনও সাংবাদিক সরকারের বিরুদ্ধে সঠিক প্রশ্ন তুললে মেরে ফেলা হচ্ছে। ছাত্রনেতাদেরও অবদমন করা হচ্ছে নানা উপায়ে। কোনও মুসলিম ব্যক্তির হাতে মাংসের ব্যাগ দেখলে হিন্দুরা পিটিয়ে মেরে ফেলছে। এইসবই আমরা দেখে চলেছি। সরকার মানুষের পেটে ভাত না জোগাক, কিন্তু ঘৃণা জুগিয়ে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দিনের পর দিন ধরে হারিয়ে যাচ্ছে।
আমরা সেখান থেকেই ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলাম এমন কিছু বানাব, যা দূরত্ব কমিয়ে মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে আসবে। আমার বন্ধু অনির্বাণ দাসের মাথায় এই সুগন্ধি আতর তৈরির আইডিয়া আসে। সে এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করে বছর দুয়েক আগে এবং বিভিন্ন ধরনের গন্ধ তৈরি করতে থাকে ঘরে বসে।
২০২৫ সালের কলকাতা বইমেলায় আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে শুরু করি এই আতরের যাত্রা। ধীরে ধীরে তা মানুষদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হতে থাকে। আমরা তারপর ঠিক করি, অনলাইনে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেভাবে সম্ভব এই আতর মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। আমরা মনে করি, এই দুর্গন্ধ ভরা পৃথিবীতে সুগন্ধেরই ক্ষমতা আছে এক মানুষকে অন্য মানুষের কাছে টানার। সুগন্ধই পারে মানুষের মনে ভালোবাসা সঞ্চার করতে। তাই আমরা, বাঙালিদের মধ্যে যেসব গন্ধ হারিয়ে যেতে বসেছে তা ফিরিয়ে আনার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।
সম্পূর্ণ অ্যালকোহলবিহীন এই সুগন্ধি আতর যেমন হিন্দুরা পুজােয় ব্যবহার করেন, মসজিদের নামাজিরাও ব্যবহার করেন। তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে বৃদ্ধ দম্পতি বা চাকুরীজীবী থেকে গৃহবধূ– সবার জন্য আমাদের এই বিভিন্ন গন্ধের আতর-সম্ভার। এই সুগন্ধি আতর যত বেশি মানুষের মনে প্রেমের সঞ্চার ঘটাবে, ততই আমাদের এই পরিশ্রম সার্থক হবে।
……………………….
ফলো করুন আমাদের ওয়েবসাইট: রোববার.ইন
……………………….
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved