‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর রোববার-কে অনলাইনে নিয়ে আসাটা যথোপযুক্ত, সময়োপযুক্ত। এমনকী, এটা অনেক আগেই হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। রোববার-এর নয়া যাত্রায় শুভকামনা জানালেন মীর।
‘সংবাদ প্রতিদিন’ যখন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, তখনও আমার কেরিয়ার তৈরি হয়নি। যদিও তখন থেকেই আমি এই সংবাদপত্রের নিয়মিত পাঠক। আমি কাজ করছি ১৯৯৪ সাল থেকে। সে সময়টায় স্ট্যান্ড থেকে কাগজ কেনা হচ্ছে, বা সাইকেলওয়ালা বাড়িতে ছুড়ে দিয়ে যাচ্ছে কাগজ– এরকমই চল ছিল। এখন নানা জনের অনুযোগ-অভিযোগ যে, এমনটা আর নেই। সত্যিই নেই। সাবস্ক্রিপশনও অনেকেই ক্যানসেল করে দিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন যে, কাগজ পড়ার কেউ সময় পান না। এমনকী, ধৈর্যটাও নেই। কিন্তু ‘সংবাদ প্রতিদিন’, প্রতিদিন যে জনপ্রিয়তা পেয়ে এসেছে, যেভাবে কাছে টানতে পেরেছে মানুষকে, তা এই কাগজের দাপুটে স্বভাবকে চেনায়। আমি যখন রেডিও করতাম, অফিসে প্রায় ১০-১২টা খবরের কাগজ আসত, স্বাভাবিকভাবেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’ও। আমার কিন্তু ইনফরমেশন সোর্স-এর জন্য এই ‘সংবাদ প্রতিদিন’ খুব কমফর্টেবল একটা জায়গা ছিল। বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, যে, আমি যে খবর চাই, তা কোন পাতায় থাকতে পারে।
গত ৩২ বছর ধরেই এই সংবাদপত্র ধরে রেখেছে জনপ্রিয়তা, নানা রাজনৈতিক উত্থান-পতনকে মাথায় রেখেই বলছি একথা। এই ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর যে সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘রোববার’, তা যে ‘স্পেশাল’ হবে– এ তো জানা কথাই। বাঙালি যেমনটা রবিবারের জন্যই মাংস-ভাত খাওয়াটাকে তুলে রাখে। অন্যদিন ডাল-ভাত-সবজি-মাছের কালিয়া, ডিমের তরকা– এইসব দিয়ে চালায়। কিন্তু রবিবার দুপুরবেলা, যে শ্রেণি বা বর্গের মানুষই হোন না কেন, তিনি যদি পাঁঠা না-ও কিনতে পারেন, চিকেনটুকুর জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যান। কারণ, ওই যে বললাম, রবিবার মানেই ‘স্পেশাল’। ওই দুপুরবেলার মাংস-ভাতটা।
রবিবারের লাঞ্চটা যদি পাঁঠার মাংসের আলু দিয়ে গরম ভাতে মেখে খাওয়ার ঝোল হয়, আমাদের রবিবারের জলখাবারে কিন্তু লুচি-ডালপুরি বা কচুরি-তরকারি বা শিঙাড়া-জিলিপির মতো বস্তুও থাকে। অর্থাৎ শুরু। সেই শুরুটা মনের দিক থেকে করে দেয় ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর ‘রোববার’ পত্রিকা। যবে থেকে পড়তে শুরু করেছি ‘রোববার’, এটাই মনে হয়েছে। এখন যে খুব নিয়মিত পড়ে ওঠা হয়, তা নয়। এ আমার সৎ স্বীকারোক্তি। কিন্তু তাই বলে এই অনুভবটা মিথ্যে নয়। আবার, রবিবার দিনই যে ‘রোববার’ পড়তাম, তা-ও নয়। মনে পড়ে, রোববার-এর সম্পাদকীয়টা যেভাবে সাজানো হত, এখনও হয়, তা অসাধারণ। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় মানুষটা আমার বন্ধু বলে বলছি না, ওর গান যেমন বহু মানুষকে স্পর্শ করেছে, ওর এই লেখাগুলোও অসামান্য! আমি ঋতুপর্ণ ঘোষের পর আর কারও সম্পাদকীয় ধারাবাহিকভাবে পড়িনি, শুধুমাত্র অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ছাড়া।
‘রোববার’ এখন ডিজিটালও হচ্ছে। আশ্বস্ত হচ্ছি যে, প্রিন্টও থাকছে। সঙ্গে ডিজিটালেও। খবরের কাগজ আমি পড়ি অবশ্যই, কিন্তু এখন, ঢের বেশি খবর পড়ছি মোবাইলে। এখন মোবাইলই খবর পাওয়ার, পড়ার সহজ উপায়। তার জন্য কোনও ‘গিলটি ফিল’ করে লাভ নেই। প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে এভাবেই তো বদলাতে হবে। ঠিক সেই জন্যই ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর রোববার-কে অনলাইনে নিয়ে আসাটা যথোপযুক্ত হয়েছে। সময়োপযুক্ত হয়েছে। এমনকী, এটা অনেক আগেই হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ভাল লাগছে যে, এটা শেষমেশ হল। এমন প্রচুর বাঙালি আছেন, যাঁরা প্রবাসী, তাঁরা হয়তো ‘রোববার’ পড়তে পারতেন না কোনওভাবেই। এখন পারবেন। এবং প্রতিদিনই, যখন তখন পারবেন। আজকের দিনে এনগেজমেন্ট এবং রিচ ছাড়া যে কোনও মিডিয়ারই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অনেক মানুষকেই আমি চিনি, যাঁরা রবিবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’ কিনতেন শুধুমাত্র ‘রোববার’-এর জন্যই। আজ থেকে আর ‘রোববার’ মিস করার চান্স নেই। এমনকী, এই লেখা যে লিখছে, তারও।