ফের করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় আতঙ্কে শিশুরা– আবার কি স্কুল বন্ধ হবে?
ইন্ট্রো: ক্রাই ও টিস-এর সাম্প্রতিকতম সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে শিশুরা স্কুলে যেতে, অফলাইন পড়াশোনা করতে চায়। স্কুল বন্ধ হলে তাদের মন ভাল থাকে না। হঠাৎ করে আবার এই সর্বভারতীয় সমীক্ষার কারণ, কিছু রাজ্যে করোনার সামান্য হলেও ফিরে আসা। লিখছেন তরুণকান্তি দাস।
মানুষ একটা মানুষ চায়। মন চায় একটা মন। কেউ টিফিন কেড়ে না খেলে, নতুন কলম ঝেড়ে না নিলে, খেলার মাঠে ল্যাং মেরে ফেলে সাদা জামায় কাদা না লাগালে মন ভাল থাকে না। সেই মজা থেকে বঞ্চিত হয়ে একেবারে মনমরা ছিল ওরা। কানমলা না খেলে, পড়া না পারায় বেঞ্চে না দাঁড়ালে যে মন কেমন করে, তাও জানা ছিল না বুঝি। জানিয়ে দিল একটা সমীক্ষা। দেশের ১৩টি রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলে যে সমীক্ষা তৈরি করেছে চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ (ক্রাই) এবং টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সেস (টিস)। করোনার সময়কাল এবং বছরখানেক পরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করা সমীক্ষা বলছে, মানুষ একটা মানুষ চায়। না হলে বিরিয়ানিও উচ্ছেভাজার মতো লাগে, আখের রস বদলে যায় চিরতার জলে। স্কুলের মার্কশিটের ওপরও যে ক্লাসঘর ও খেলার মাঠের বড় ভূমিকা আছে, তা যে জানে সে জানে। যে জানে না, তাদের বোঝার জন্য ক্রাই ও টিস-এর সাম্প্রতিকতম সমীক্ষাটাই যথেষ্ট। যা তারা যৌথভাবে পেশ করেছে গত শুক্রবার। করোনা পরবর্তী সময়ে প্রথম স্কুল খোলা হবে শুনে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল। তাদের ৮৯ শতাংশর মনে খুশির হাওয়া বয়ে এনেছিল ক্লাসঘরে ফিরে যাওয়ার চেয়েও সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখতে পাওয়ার বিষয়টি। হঠাৎ করে আবার বিচ্ছিন্নভাবে করোনার প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখা যায়, তারা আবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ঘরবন্দি হওয়ায়! ভয় পাচ্ছে ক্লাসঘর ছেড়ে ঘরে আটকে পড়ার, খেলার মাঠের কাদা-মাটির জায়গায় টিভিতে চোখ রাখতে হবে, নয়তো মোবাইলেই দুনিয়া খুঁজে নিতে হবে, এই ভেবে। ৮৩ শতাংশ পড়ুয়া জানিয়েছিল, তারা অফলাইনে পড়শোনা করতে পারবে ভেবেই আত্মহারা। তাদের মধ্যে আবার ৮০ শতাংশর দাবি, অনলাইনে নয়, অফলাইনেই আসল মূল্যায়ন সম্ভব। পরীক্ষার টেনশন ছাড়া পড়ায় অ্যাটেনশন আসে নাকি!
আরও পড়ুন: অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মানেই সাম্য প্রতিষ্ঠা নয়, আদৌ কি বুঝবে সরকার?
সিলেবাস শেষ করতে গেলে ক্লাসঘরের বিকল্প নেই। ৫৬ শতাংশ বলেছে, তাদের বিশ্বাস, শিক্ষকদের মুখোমুখি হলে তবেই নিজেকে পড়ুয়া বলে মনে হয়। এই সমীক্ষায় পড়ুয়াদের মধ্যে যে আতঙ্ক ধরা পড়েছে, ফের করোনা সংক্রমণ হলে ঘরবন্দি হওয়ার কথা ভেবেই তারা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, তা বেশ মজার। একা টিফিন খেতে ভাল লাগে না, বন্ধুর টিফিনের ভাগ না পেলে, ভাগ না দিলে মন কেমন করে। ক্লাসঘরে বন্ধুর পেনসিল ভেঙে, ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুর মোজায় জল ঢেলে খুঁজে পাওয়া যায় অনাবিল আনন্দ, যেমন আকাশে ডানা মেলে পাখি। শিক্ষকের বকাঝকা, অনুশাসনের অভাববোধও মনখারাপ করিয়ে দেয় ওদের। দিয়েছিল তো। হঠাৎ করে আবার এই সর্বভারতীয় সমীক্ষার কারণ, কিছু রাজ্যে করোনার সামান্য হলেও ফিরে আসা। ইউরোপের একাধিক দেশেও করোনা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তাই সেই আতঙ্ক কতটা প্রভাব ফেলছে কিশোর বা শিশু মনে, তা বুঝতে আবার তাদের মুখোমুখি হওয়া। তারা আতঙ্কিত হয়ে বলছে,‘আবার!’
আসলে এই সমীক্ষার ভিতরে আরও একটা সমীক্ষা আছে। যা অলিখিত। যা বুঝে নেওয়ার। মূল কথা হল, প্রতিটি মন একটা মন চায়। মানুষ চায় আর একটা মানুষ। মানুষ ছাড়া মানুষ চলে না।