Robbar

যারা অরণ্য বাঁচাচ্ছে, তারাই আজ ধ্বংসের মুখে

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 28, 2023 4:08 pm
  • Updated:September 28, 2023 4:58 pm  

২০২২ সালে প্রকাশিত একটা গবেষণাপত্র জানায়, বনজঙ্গলের ওপরে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীগুলি একের পর এক প্রজন্ম ধরে বন সংরক্ষণ করে আসছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে তাদের সবচেয়ে কম অবদান। তবুও তারাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘটে চলা বিপর্যয়ের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন তাদের ওপর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে নারীদের ওপর। ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও বাড়বে। পর্যটন প্রসারের ফলে চাহিদা বেড়েছে হোটেল, রিসর্ট, হোম স্টে-র, দরকার পড়ছে ঝাঁ চকচকে হাইওয়ের। 

নীলাদ্রি সরকার

বিগত এক দশকে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় বাঙালির পছন্দের পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায়পরে উঠে এসেছে ছোটনাগপুর মালভূমির পূর্বতম দিকে, মূলত পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় অবস্থিত অযোধ্যা পাহাড়ের সৌন্দর্যায়নের প্রধান কারণ ঘন দুর্গম অরণ্য এবং ছোট বড় অসংখ্য ঝরনা কংক্রিটে আবৃত শহুরে কোলাহল থেকে সাময়িক পরিত্রাণ পেতে লাখো পর্যটক এখন বেছে নেয় অযোধ্যা পাহাড়ের সবুজ শ্যামল বনানীকে। সঙ্গে পুরুলিয়া জেলারই গড়পঞ্চকোট, জয়চণ্ডি, গাজাবুরু পাহাড়কে জুড়ে দিলেই পারফেক্ট উইকএন্ড গেটঅ্যাওয়ে রেডি 

পর্যটন শিল্পে অযোধ্যা পাহাড়ের সাম্প্রতিক ক্লেম টু ফেমের রূপকথায় অবশ্য বাংলার মূলধারার টিভি এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নাম করতেই হবে এই শতকের প্রথম দুই দশকে টিভি সিরিয়াল এবং সিনেমার সৌজন্যে আদিবাসী ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি, বিশেষত ছৌ নাচ, এখন কলকাতার মূলধারার সাংস্কৃতিক পরিসরে সুপ্রতিষ্ঠিত ফলে সুশীল বাঙালি সমাজে আদিবাসীদের জীবন বুনিয়াদি জীবনের পদ্ধতি এবং তাদের কৃষ্টি-সৃষ্টি নিয়ে নতুন করে কল্পনাশক্তি এবং কৌতূহলের উদয় ঘটেছে, যার টানে কলকাতা বারবার আদিবাসী অধ্যুষিত অযোধ্যা পাহাড়ে ছুটে যায় এই তালিকায় ঝাড়গ্রাম এবং বীরভূমকে অবশ্যই রাখতে হয়, কিন্তু প্রয়োজন অযোধ্যা পাহাড়ের ব্যাপারেই কয়েকটা জরুরি কথা বলার, মূলত সেখানকার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের যাপন প্রসঙ্গে। 

আদিবাসী এবং জঙ্গল দেখার লোভ সামলাতে না পেরে সুশীল বাঙালি অযোধ্যা পাহাড়ের দিকে দৌড়চ্ছে– এই কথা যেমন সত্য, তেমনই এটাও বাস্তব যে, বাঙালি পর্যটকদের সেখানকার সাঁওতাল সমাজের বেঁচে থাকার হালহকিকত সম্বন্ধে কোনও জ্ঞান নেইসিরিয়াল-সিনেমা দেখে আদিবাসী চেনা সুশীল বাঙালি পর্যটকদের ধারণা এটাই যে, স্থানীয় আদিবাসী মহিলারা সারা দিন পাঞ্ছি শাড়ি পরে নাচে অথবা তারা পুরুষের সঙ্গে ছৌ শিল্পের প্রদর্শন করে এবং রাতে মহুয়া দিয়ে শুয়োরের মাংস খায় সাঁওতাল এবং বৃহত্তর আদিবাসী সমাজের মানুষও যে পশ্চিমবঙ্গের আর পাঁচটা মফস্‌সল, গ্রামগঞ্জের মানুষের মতোই জামাকাপড় পরে, চাষ করে, দিনমজুর খাটে এবং আমাদের মতোই ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ, মাংস খেয়ে অভাবের জীবন কাটায়, এই তথ্য সুশীল বাঙালি পর্যটকের কল্পনার বাইরে এর ফলে ব্যক্তিগত পরিসরে সাঁওতাল এবং আদিবাসীদের সঙ্গে কোনও রকমের মেলবন্ধন ঘটাতে আমরা ব্যর্থ 

পর্যটকরা চার বেলা পেটভরে খেয়ে, দিনের বেলা জঙ্গলের সাইটসিইং করে আর সন্ধ্যায় ট্যুর অপারেটরের আয়োজন করা ছৌ নাচের পারফরম্যান্স দেখেই নিজের শখ মিটিয়ে নেয় রিপোর্টিংয়ের কাজে অযোধ্যা পাহাড় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে কয়েকবার সেরকমই এক ট্রিপে এক হোম স্টে-র মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছিল মজা করে বলেছিলেন, ‘আমি আর আমার বউ নাচতে পারি না, তাই আমাদের হোম স্টে-তে কেউ থাকতে আসে না বেশিরভাগ হোম স্টে আমাদের মতো মানুষরাই চালায়, আর এই কারণেই হোম স্টে-র কনসেপ্ট এখনও এদিকটায় অত জনপ্রিয় হয়নি।’ 

এক কামরার হোম স্টে-টা দেখাতে দেখাতেই উনি আরও বলেছিলেন, ‘আপনিই বলুন তো আপনি মালিক হলে এই একটা ননএসি বেসিক রুমের জন্য কত ভাড়া চাইতেন? পিক সিজনে ম্যাক্সিমাম ২০০০ সেই টাকা দিয়ে দুটো মানুষকে তিনটে ফুল মিল আর দু’বার স্ন্যাক্স দিয়ে আবার শিল্পী ভাড়া করে শো দেখানো সম্ভব না আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে তাই একটু বেশি টাকা ব্যয় করে হলেও সবাই বড় হোটেল-রিসর্টেই যায় এসি রুম প্লাস বিনোদনের ভরপুর ব্যবস্থা।’

পাল্টা কী বলব, সেদিন বুঝে উঠতে পারিনি পরে অবশ্য ভেবে অবাক হয়েছি যে, অযোধ্যায় ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের মনে কেন এই প্রশ্ন জাগে না, কীভাবে এই প্রত্যন্ত জঙ্গলে কীসের বিনিময়ে একের পর এক ঝাঁ চকচকে বহুতল হোটেল এবং রিসর্ট তৈরি হয়ে চলেছে প্রশ্ন করলে জানতে পারত, তাদের জঙ্গল আর আদিবাসী দেখার বাসনা চরিতার্থ করতে একর-একর অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে, স্থানীয়রা হারিয়ে ফেলছে তাদের প্রকৃত জীবনযাপনের পদ্ধতি, জীবিকা উপার্জনের মাধ্যমগুলি, যেগুলি পুরোপুরি বনজঙ্গলেরপর নির্ভরশীল 

পর্যটন প্রসারের ফলে চাহিদা বেড়েছে হোটেল, রিসর্ট, হোম স্টে-র, দরকার পড়ছে ঝাঁ চকচকে হাইওয়ের, এক সময়ে অন্ধকারের কবলে থাকা আদিবাসী অঞ্চল আজ ভিন্ন ধরনের আলোয় আলোকিত পর্যটন শিল্পের আগমনের অনেক আগেই অবশ্য আধুনিকতার নজর অযোধ্যা পাহাড়েরপর পড়েছিল আটে দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চারটি বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য অযোধ্যা পাহাড়কে বেছে রেখেছিল। বামনী নদীরপরে ৯০০ মেগাওয়াটের প্রথম প্রকল্পটি, যার নামপুরুলিয়া পাম্পড স্টোরেজ প্রোজেক্ট’ (পিপিএসপি), ২০০৭ সালে সম্পূর্ণ হয় দ্বিতীয় প্রকল্পটি, টুর্গা নালার মধ্যে ১০০০ মেগাওয়াটেরটুর্গা পাম্পড স্টোরেজ প্রোজেক্ট’ (টিপিএসপি) কেন্দ্র সরকারের থেকে সমস্ত ছাড়পত্র পেয়ে গেছে এবং খুব শীঘ্রই হয়তো নির্মাণ শুরু হয়ে যাবে তৃতীয় প্রকল্পটি হবে ৯০০ মেগাওয়াটেরবান্দু পাম্পড স্টোরেজ প্রোজেক্ট’-এর (বিপিএসপি), যার টেন্ডার পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই বের করেছে এবং এক ইংরেজি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, আদানির সংস্থা এই ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে 

খাতায়-কলমেপিপিএসপি’-র সৌজন্যে ৩৭৩ হেক্টর বনভূমি জলের তলায়টিপিএসপি’ আরও ২৩৪ হেক্টর বনভূমি ডুবিয়ে দেবে এর ফলে দুই দশকের ব্যবধানে ৬০৭ হেক্টর (৯৫০ একরের বেশি) বনভূমি সাঁওতাল আদিবাসীদের হাতছাড়া হবে ব্রিটিশ আমল থেকে শিল্পায়নের নামে অরণ্য ধ্বংস এবং আদিবাসীদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া রুখে দিতে ভারত সরকার ২০০৬ সালে তপশিলি উপজাতি এবং বনের মূলনিবাসী অধিকার আইন (বনাধিকার স্বীকৃত), সংক্ষেপেবনাধিকার’ আইন নিয়ে এসেছিল এই আইন স্বাধীন ভারতে প্রথমবার বন-জঙ্গলের সমস্ত সম্পদেরপরে বনভূমিতে বসবাসকারী আদিবাসী এবং ঐতিহ্যগতভাবে বনের মূলনিবাসীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যারপরে তাদের জীবিকা, বাসস্থান এবং অন্যান্য সামাজিকসাংস্কৃতিক প্রয়োজনীয়তা নির্ভরশীল দেশের একের পর এক বনভূমিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্র এবং সমাজের ঐতিহাসিক অবিচারকে প্রত্যাহার করাই এই বনাধিকার আইনের উদ্দেশ্য বন সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রধানত বনবাসীদেরপর দিয়ে, এই আইন জানায় বনভূমিরপর কোনও রকমের উন্নয়নমূলক কাজ করতে হলে আগে ওখানে অবস্থিত প্রত্যেকটা গ্রামের গ্রমসভার অনুমতি নিতে হবে 

তবে অযোধ্যা পাহাড়েপিপিএসপি’ যে সময় নির্মাণাধীন ছিল, সেই সময় বনাধিকার আইনের বাস্তবায়ন হয়নি যার ফলে গ্রামসভার অনুমতি যেমন নেওয়া হয়নি, তেমনই ওই বনভূমিরপর নির্ভরশীল সমস্ত জনগোষ্ঠীকে চিরকালের জন্য তাদের বনসম্পদেরপর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার টুর্গা প্রোজেক্টের জন্যেও রাজ্য সরকার একই পথ অবলম্বন করতে চেয়েছে তবে এইবার স্থানীয়রা আন্দোলনের পথে হেঁটেছে 

বনাধিকার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সরকারকে হাই কোর্ট অবধি নিয়ে গেছে কিন্তু এমন পোড়া কপাল তাদের যে, যে কেন্দ্রীয় সরকার একসময় বনাধিকার আইনের মতো অধিকার আদায়ের অস্ত্র তুলে দিয়েছিল, সেই কেন্দ্রীয় সরকার এখন দেশের পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের স্বার্থে বন সংরক্ষণের নতুন নিয়ম এনে এবং ১৯৮০-র বন সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে বলেছে, বনভূমিতে কাজের জন্য গ্রামসভার অনুমতি ছাড়াই এখন থেকে ফরেস্ট ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যাবে এর সঙ্গে গোদেরপর বিষফোঁড়ার মতো জুড়ে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রামসভা সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে ২০০৬ সালের বনাধিকার আইনকে অগ্রাহ্য করা পশ্চিমবঙ্গে গ্রামসভার নির্ধারণ করা হয় রাজ্যের পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী এর ফলে গ্রাম স্তরে না, মৌজার স্তরে গ্রামসভা তৈরি করা হয় এই রাজ্যে 

একটি ইংরেজি ডিজিটাল পত্রিকার হয়ে রিপোর্টিংয়ের সময় একজন স্থানীয় মহিলা, যিনি টুর্গা বিরোধী আন্দোলনের সদস‌্য, ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছিলেন, ‘পিপিএসপি চলাকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, আমরা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ পাব টুর্গার ব্যাপারেও এখন আবার সেই এক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সরকার কিন্তু বাস্তবে মাত্র তিনজন স্থানীয়কে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়েছিল আর আমরাও সবার মতো আলোর বিল দিয়েই বিদ্যুৎ কিনি।’

২০১০ সালে প্রকাশিত একটি যৌথ গবেষণাপত্রে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভিষেক চক্রবর্তী এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌমেন্দু চ্যাটার্জি প্রমাণ করেছিলেন যে, সামাজিক পরিবেশগত খরচ বিবেচনা করলে, যার মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি এবং জ্বালানি কাঠ, মহুয়া ফুল এবং অরণ্যবিনাশের ফলে মধুর ক্ষয়ক্ষতির মূল্য, পিপিএসপি বার্ষিক মুনাফা (INR ৮৭২.৭ কোটি বা USD ১১৫.৭ মিলিয়ন) প্রকল্পের বার্ষিক ব্যয়ের থেকে ছয় গুণ কম (INR ৫৮১৯.৫ কোটি বা USD ৭৭২ মিলিয়ন) 

টিপিএসপি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সরকারি ভাবে জানিয়েছে যে, এই প্রকল্প ১৬৯ জনকে স্থায়ী কাজ দেবে এবং অস্থায়ী ভাবে ১৮. লক্ষ ‘ম্যান-ডে’ নিশ্চিত করবে তবে অধ্যাপক সৌমেন্দু চ্যাটার্জি মনে করেন, টুর্গা প্রকল্পেও লাভের থেকে লোকসান বেশি বছর খানেক আগে একটি ইংরেজি রিপোর্ট লেখার সময় ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল, উনি বলেছিলেন, ‘টুর্গা প্রকল্পের ফলে যে অর্থনৈতিক লাভ হতে পারে, তা স্থানীয় জনগণ এবং এই অঞ্চলের ইকোলজির যে ক্ষতি, তার তুলনায় অনেকটাই কম টুর্গার মতো নদীগুলি শুধুমাত্র বর্ষাকালে প্রবল প্রবাহ দেখতে পায় বছরের বাকি সময়গুলিতে জলের স্তর খুব কম থাকে, কারণ পুরুলিয়া সাধারণভাবে একটি শুষ্ক অঞ্চল পিপিএসপির মতো, জল সঞ্চয় করার ফলে, টুর্গা এবং পিপিএসপি জন্য অযোধ্যা পাহাড়ের নিচের অঞ্চলগুলিতে জলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে তিনি যোগ করেন যে, ভবিষ্যতে ওইসব জায়গায় কৃষিকাজ করাও খুব কঠিন হতে পারে 

কিন্তু উন্নয়নশীল থেকে উন্নত হওয়ার দৌড়ে এই দেশে এখন পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রের যে বিশাল ক্ষতি, তা নিয়ে গুণী মানুষরা খুব একটা চিন্তিত নয় ফলে কেন্দ্রের ইউটার্ন এবং রাজ্য সরকারের নিজস্ব আইনি ব্যবস্থার মরণফাঁদে পড়ে অযোধ্যা পাহাড়বাসী আরও একবার নিজেদের অধিকার, নিজেদের প্রাপ্যকে হারিয়ে ফেলার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তবে অযোধ্যা পাহাড়ের সাঁওতাল আদিবাসীদের লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার প্রভাব ওদের জীবনেই সীমিত থাকবে, এটা মনে করে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সৌভাগ্য আমাদের নেই ভারতে বনবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জড়িত এই দেশের ক্লাইমেট চেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়াই 

২০১৯ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘেরইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর  (আইপিসিসি) একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বনবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার এবং বন সংরক্ষণ পরিচালনার অধিকারকে স্বীকৃতি দিলে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা আমাদের সবার পক্ষে সহজ হবে বনভূমির মূলনিবাসীদের পরম্পরাগত বনজঙ্গল পরিচালনা এবং রক্ষা করার পদ্ধতি কার্বন সঞ্চয়স্থান-সহ বনের ব্যবস্থাপনাও আরও উন্নত করে, দাবি করেছিল আইপিসিসি 

আইপিসিসি রিপোর্টকে আরও খুঁটিয়ে দেখে ২০২২ সালে প্রকাশিত একটা গবেষণাপত্র এই সম্বন্ধে বলে, বনজঙ্গলেরপরে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীগুলি একের পর এক প্রজন্ম ধরে বন সংরক্ষণ করে আসছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে তাদের সবচেয়ে কম অবদান তবুও তারাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘটে চলা বিপর্যয়ের মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন তাদেরপর প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে নারীদের ওপর ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও বাড়বে 

সমাধানে এই গবেষণাপত্রটি একই কথা বলে যে, বনবাসী মানুষদের জঙ্গলের ব্যাপারে চিরাচরিত জ্ঞান এবং বন সংরক্ষণের পদ্ধতিই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রধান অস্ত্র কিন্তু পর্যটন শিল্পর চাহিদা মেটাতে গিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে সাঁওতালদের এই বুনিয়াদি জীবনের পদ্ধতিগুলি এখন সংকটকালে