Robbar

আরও আরও জয়ের তৃষ্ণা যেভাবে গ্রাস করে অস্তিত্বকে

Published by: Robbar Digital
  • Posted:August 27, 2023 9:02 pm
  • Updated:August 28, 2023 3:25 pm  

নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধেই যুদ্ধোদ্যত হয়েছিলেন বারাণসীরাজ। কিন্তু তিনিই একদিন সে রাজসিংহাসন হেলায় ছেড়ে এসেছিলেন। বৈরাগ্যর সেই পথে কখন যে ঢুকে পড়েছিল জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, ক্ষমতার লোভ। এবার বুদ্ধ হাজির হয়েছেন তরুণ চিকিৎসকের বেশে। শুনুন সে গল্প।

দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত

বারাণসীরাজের বড় কঠিন অসুখ। তাঁর অনিদ্রা, গায়ে জ্বালা, পেটে অজীর্ণ, মাথা দপদপ। দেশ বিদেশের নামী-দামী যত কবিরাজ বৈদ্যকে ডাকা হল, সবাই হার মানলেন।

বুদ্ধদেব সেবার বারাণসীতে জন্মেছেন। তক্ষশিলা থেকে সর্ববিদ্যাবিশারদ হয়ে উজ্জ্বল তরুণ ফিরছেন বাবা-মায়ের কাছে। রাজার অসুখের কথা শুনে তিনি সরাসরি গেলেন রাজসভায়, আমি চেষ্টা করব। তাঁর অপরিপক্ব বয়সের জন্য অমাত্যরা বিশেষ ভরসা করেননি। তবু তাঁর আয়ত চোখে আত্মবিশ্বাস দেখে তাঁরা রাজামশাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিলেন।

বারাণসীরাজ নিজেও বললেন, এ যে একেবারে কচি ছেলে। সে কথায় আমল না দিয়ে চিকিৎসক বললেন, মহারাজ আপনার এই অসুখের কারণটা যদি একটু বলেন।

এ আবার কেমন ডাক্তার! পেট টিপল না, চোখ টেনে দেখল না, বুকে কান বসাল না– শুধু সমস্যার কথা শুনে রুগিকেই বলে রোগের কারণ বলুন! মহারাজ একটু অবাক হলেন। তবু তাঁর মনে হল, অনেক দিন ধরে পুষে রাখা আফসোসটা উগরে দেওয়াই ভাল। তিনি বললেন, শোনো যুবক, তুমি নিশ্চয়ই জানো আমি রাজা হওয়ার পর প্রতিবেশী কয়েকটি রাষ্ট্রকে চকিত আক্রমণ করে আমাদের রাজ্যের সীমা অনেকটাই সম্প্রসারিত করেছি।

তরুণ চিকিৎসক নীরবে ঘাড় নাড়লেন।

রাজা বলে চলেন, কিছুদিন আগে আমার কাছে এক ব্রাহ্মণ গোপনে দেখা করতে এসে জানিয়ে যায় যে, নিকটবর্তী তিন সমৃদ্ধশালী দেশ অবিলম্বে আক্রমণ করলে আমার জয় অবধারিত। কথাটি জোর গলায় বলেই এত দ্রুত সে প্রস্থান করে যে, বিস্তারিত আর কিছুই আমার জানা হয় না। আমি লোক পাঠালাম তার খোঁজে, কিন্তু সে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ভাবো একবার, হাতের মুঠোয় দেশজয়ের সুযোগ পেয়েও আমি হারাতে চলেছি, এখন যদি অন্য দেশের রাজা সময়মতো আক্রমণ করে সে রাজ্য তিনটে জিতে নেয়!

তরুণ চিকিৎসক অবাক চোখে তাদের দেশের এই যুদ্ধবাজ রাজার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি শুনেছি আপনি যুবা বয়সে রাজসিংহাসন অবধি ত্যাগ করেছিলেন!

–ঠিকই শুনেছ। এক তীব্র বৈরাগ্য তখন আমার। আমি পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর আমি আমার ছোট ভাইয়ের রাজ্যাভিষেক করাই। এমনকী, রাজপ্রাসাদ ছেড়ে আমি চলে যাই এই রাজ্যের সীমানার কাছাকাছি এক গ্রামে। সেখানে আমি নিজে খেটে রোজগার করতাম।
–তারপর?
–তারপর ওখানের স্থানীয় মানুষ যখন জানতে পারল আমার পরিচয়। তারা আমাকে ভেট পাঠাতে শুরু করল। আমাকে বলল তারা রাজার বদলে আমাকে খাজনা দেবে।
–তখনই কি আপনার বৈরাগ্য ঘুচে গেল, মহারাজ?

তরুণের কথা গায়ে না মেখে মহারাজ আজ নিজের কথা উজাড় করে দিতে চান, আমি আমার ভাইকে জানালাম, আমাকে বারাণসীর রাজত্ব ফিরিয়ে না দিলে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।
–আশ্চর্য, অথচ এই সিংহাসন আপনি হেলায় ত্যাগ করেছিলেন নিজে খেটে উপার্জন করবেন এই দার্ঢ্যে!
–আমার ভাইও হাসতে হাসতে এই কথা বলেছিল। সে আমাকে সমাদরে রাজা হিসেবে বরণ করে নেয়।
–আপনার ভাই নমস্য।
–কিন্তু তারপর থেকেই আরও আরও জয়ের তৃষ্ণা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। সেই ব্রাহ্মণের অলীক আশ্বাস যেমন এখন আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

তরুণ চিকিৎসক বললেন, ‘সৌভাগ্যের কথা, মহারাজ, আপনি নিজেই নিজের রোগ নির্ণয় করেছেন। তার সমাধানও তাই আপনার করায়ত্ত।’

তরুণ বোধিসত্ত্ব বিদায় নিলেন। সুস্থ বারাণসীরাজ প্রজাপালনের কাজে সচেষ্ট হলেন।