কোটি কোটি সমর্থক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল কেনের ট্রফিজয়ের জন্য। ফেসবুকে একটা ছোট্ট পোস্ট। একটা ট্রফির ছবি। ‘হা হা’ নয়, বাড়ছে লাভ রিঅ্যাক্টের সংখ্যা। ফুটবল ভক্তরা খুশি। এতদিনের চোখের জল, মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়া, উদাসী দৃষ্টিতে বিজয়ীদের দিকে তাকিয়ে থাকা, সব এক লহমায় মুছে গেল। ইউরো ফাইনালের আগে কেন বলেছিলেন, গোটা কেরিয়ারের বদলে একটা ট্রফি চান। ইংল্যান্ডের এক ফুটবলারের সেই প্রত্যাশা পূরণ হল জার্মানির মাটিতে। ইতিহাসের অধিষ্ঠাত্রী দেবী যে কখন মুচকি হাসবেন কে বলতে পারে?
রবার্ট ব্রুসের গল্পটা মনে আছে নিশ্চয়ই। যার যুদ্ধে যাওয়া মানে নিশ্চিত হার। একবার যায়, দু’বার যায়, সাত-সাত বার! পরাজিত রাজা আশ্রয় নেন গুহার অন্ধকারে। তারপর তো মাকড়সার অধ্যবসায় দেখে শিক্ষা পেলেন, ফের যুদ্ধে গেলেন। আর রাজত্ব ফিরে পেলেন।
কিন্তু তারপর? যুদ্ধ জেতার পর ব্রুস কী করলেন? আর পাঁচজন রাজার মতো রাজত্ব বিস্তার করলেন। অনেক যুদ্ধ জিতলেন, অনেক হারলেন। হয়তো তিনি ভালো রাজা, কিংবা অত্যাচারী। কেউ মনে রাখেনি! তখন তিনি আর পাঁচজনের মতো। আমার-তোমার গল্প কোথাও ছাপা হয় না। ভুলে যাওয়াটাই দস্তুর।
আচ্ছা, হ্যারি কেনের (Harry Kane) সঙ্গেও কি তাই হবে? এখন আর পাঁচজন ফুটবলারের সঙ্গে তাঁর কী পার্থক্য? ঝুলিতে শয়ে-শয়ে গোল আছে, অনেক অ্যাসিস্টও। সে তো লুইস সুয়ারেজ, ওয়েন রুনি, রবার্ট লেওয়ানডস্কিদেরও আছে। মেসি-রোনাল্ডোর কথা না-হয় বাদই দিলাম।
কিন্তু যে কারণে হ্যারি কেন ‘স্পেশাল’, এবার সেই তকমাও হারালেন!
আপনি প্রত্যেকটা টুর্নামেন্টে নামবেন, হেরে বিদায় নেবেন, এটাই সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মতো চিরসত্য ছিল। একটা দুটো তো নয়, ছয়-ছয়টা ফাইনাল। তিনবার অল্পের জন্য লিগ খেতাব হাতছাড়া। সেটা টটেনহ্যামের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হোক বা ইংল্যান্ডের জার্সিতে ইউরো ফাইনাল। আপনার জন্য রুপোর পদক ছাড়া কিছুই বরাদ্দ ছিল না। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা। ক্লাব কেরিয়ারে মোট ২৯৮ গোল। প্রিমিয়ার লিগে গোল্ডেন বুট। সব তুচ্ছ, আসলে আপনি চির পরাজিতের দলে। হোয়াইট হার্ট লেন থেকে অ্যালিয়াঞ্জ এরিনা, অভাগার সাগর জলশূন্য হয়ে যায়।
………………………………..
ট্রফিলেস হ্যারি কেনকে নিয়ে ট্রোলের বন্যা হয়। ফেসবুক পোস্টে ‘হা হা’ রিঅ্যাকশনের সংখ্যা বাড়ে। বায়ার্নের বুন্দেশলিগা জয় তো আসলে প্রাত্যহিক ব্যাপার। না জিতলেই বরং তা দুর্ঘটনা। গতবার যেমন সেটাই হয়েছিল। মনে আছে, গত মরশুমের আগে একটা মিম ভাইরাল হয়েছিল। যার একদিকে কেনের বায়ার্ন সতীর্থ কিংসলে কোমান। যিনি কি না, এর আগে কেরিয়ারে কোনও লিগ ট্রফি হারেননি। তার মোকাবিলা ট্রফিলেস কেনের সঙ্গে। ‘জিতলেন’ কে? হ্যারি কেন!
………………………………..
ট্রফিলেস হ্যারি কেনকে নিয়ে ট্রোলের বন্যা হয়। ফেসবুক পোস্টে ‘হা হা’ রিঅ্যাকশনের সংখ্যা বাড়ে। বায়ার্নের বুন্দেশলিগা জয় তো আসলে প্রাত্যহিক ব্যাপার। না জিতলেই বরং তা দুর্ঘটনা। গতবার যেমন সেটাই হয়েছিল। মনে আছে, গত মরশুমের আগে একটা মিম ভাইরাল হয়েছিল। যার একদিকে কেনের বায়ার্ন সতীর্থ কিংসলে কোমান। যিনি কি না, এর আগে কেরিয়ারে কোনও লিগ ট্রফি হারেননি। তার মোকাবিলা ট্রফিলেস কেনের সঙ্গে। ‘জিতলেন’ কে? হ্যারি কেন! কে ভেবেছিল, চমকে দিয়ে বেয়ার লেভারকুসেন চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। তাও আবার অপরাজিত থেকে।
কয়েনের উলটো পিঠও আছে। এটা ঠিক যে, কোটি কোটি সমর্থক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল কেনের ট্রফিজয়ের জন্য। ফেসবুকে একটা ছোট্ট পোস্ট। একটা ট্রফির ছবি। ‘হা হা’ নয়, বাড়ছে লাভ রিঅ্যাক্টের সংখ্যা। ফুটবল ভক্তরা খুশি। এতদিনের চোখের জল, মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়া, উদাসী দৃষ্টিতে বিজয়ীদের দিকে তাকিয়ে থাকা, সব এক লহমায় মুছে গেল। ইউরো ফাইনালের আগে কেন বলেছিলেন, গোটা কেরিয়ারের বদলে একটা ট্রফি চান। ইংল্যান্ডের এক ফুটবলারের সেই প্রত্যাশা পূরণ হল জার্মানির মাটিতে। ইতিহাসের অধিষ্ঠাত্রী দেবী যে কখন মুচকি হাসবেন কে বলতে পারে?
কিন্তু আমরা কেন খুশি? নিশ্চয়ই কেনের অপ্রাপ্তির ঝুলি বন্ধ হওয়ায়। এতদিন যাকে ছুটিয়ে মেরেছে ঝড়, পুড়িয়ে মেরেছে বালি– সে তো আমাদেরও গল্প। হয়তো মনে হতেই পারে, লেগে থাকলে সাফল্য পায়ে পায়ে ঘোরে। হ্যারি কেন হতে পারেন অনুপ্রেরণার আরেক নাম। তাই কি? এতটাই সহজ? পাশের বন্ধুর সাফল্যে আনন্দে চিৎকার করে উঠতে পারি না, হ্যারি কেন কে! তাও যদি বিশ্বকাপ, ইউরো বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হত।
……………………………….
আরও পড়ুন অর্পণ দাস-এর লেখা: ভাঙা পেনসিলেও রূপকথা লেখা যায়, দেখিয়ে দিলেন বিরাট-রোহিত
……………………………….
বুন্দেশলিগা জয়ে তারতম্যের প্রসঙ্গটা আসবেই। আমাদের অভিব্যক্তি তাই আরও জটিল। যেন অনেকটা, ‘আহা, কোনও দিন কিছু পায়নি। আজ না-হয় একটু পেল।’ আমরা যারা লক্ষ-লক্ষ জনের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকি, তারা ভাবি সেকেন্ডও না-হয় একটু ফার্স্ট বয় হল। কেন যদি সত্যিই ‘অভিশাপ’ কাটিয়ে ফেলেন, আর ধারাবাহিকভাবে ট্রফি জিততে শুরু করেন, তখনই কিন্তু খাঁটি ফুটবল-ভক্তদের আসল পরীক্ষা শুরু হবে। তখন যেন মজার ছলেও ঘৃণা করবেন না।
এ-ও যেন এক সিসিফাসের মিথ। পাহাড়ের উপর অবিরাম পাথর তোলা। গড়িয়ে পড়া। ফের তুলতে থাকা। পৌনঃপুনিকতার একটা অবসাদ থাকে। কেনের জন্য এতদিন তা ছিল ট্রফিহীনতা। সেটা ঘুচল। ভবিষ্যতে আরও ট্রফি নিশ্চয়ই জিতবেন। তখন নিশ্চয়ই আর এত হইচই হবে না। আর ব্যর্থ হলে দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসবে ‘অভিশাপ’-এর বোঝা। সেই পাথরটা কিন্তু কেনকে একাই বহন করতে হবে।
………………………………………
ফলো করুন আমাদের ওয়েবসাইট: রোববার ডিজিটাল
………………………………………
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved