Robbar

আমরা যারা স্টেফিকে ভালোবাসতে পারিনি…

Published by: Robbar Digital
  • Posted:June 13, 2024 6:04 pm
  • Updated:June 13, 2024 11:10 pm  

প্রজন্মের পর প্রজন্ম টেনিস তার আঙ্গিক বদলেছে। প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে, খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা বেড়েছে, টেনিস র‍্যাকেট বা বল প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে। র‍্যাকেটের মাথা অনেক বড় হয়েছে, ওজন কমেছে। খেলাটাই পাল্টে‌ গেছে একেবারে। ঠিক এই কারণেই হয়তো ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের সেরাদের নিয়ে তুলনা চলতে পারে না। যেভাবে সুজানে লেংলেন নিজের সময়ে সেরা ছিলেন, বা মার্গারেট কোর্ট, ক্রিস এভার্ট, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা বা পরবর্তীতে সেরেনা উইলিয়ামস। সেভাবেই নিজের সময়ে স্টেফি গ্রাফও। মোনিকা সেলেস বা মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার উপস্থিতি সত্ত্বেও।

সৌরাংশু

আমরা যারা স্টেফি গ্রাফকে ভালোবাসিনি কখনও, যারা জোর করে তাঁর বাহ্যিক সৌন্দর্যকে খেলার মাঠের প্রিয় হওয়া অন্তরায় বলে ধরে নিয়েছিলাম, যারা মার্টিনা বা সেলেসকে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি, প্রথাগত সুন্দরী না হয়েও সেরা হওয়া যায়, তারা কি স্টেফির প্রতি অন্যায় করলাম? অথবা টেনিস, যে খেলাটাকে ভালোবাসতে গিয়েই স্টেফিকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম, তাতে কি টেনিস আদৌ আমাদের কাছে ধরা দিয়েছিল?

সেই ’৮৫-’৮৬, যখন প্রথমবারের জন্য এক জার্মান এসডবলু ১৯-এর দখল নিচ্ছেন, তখন ষোড়শী স্টেফি চতুর্থ রাউন্ডেই সন্তুষ্ট। মাত্র এক বছরের বড় বরিসের দু’-দুটো উইম্বলডন জেতা হয়ে গেলেও খাতা খোলা হল না তাঁর তার পরের বছরেও। তখনও মহিলা টেনিসে মার্টিনা আর ক্রিসের যুগ চলছে। বা বলা ভালো মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার রাজত্বে ক্রিস এভার্টের ক্লে কোর্টের মস্তানি। তারই মধ্যে কিশোরী স্টেফি মাথা ভর্তি সাদা চুল আর পায়ে নর্তকীর ক্ষিপ্রতা নিয়ে প্রবেশ করে ফেললেন।

26 Candid Photographs of a Young Steffi Graf While Performing on Stages in the Late 1980s and 1990s ~ Vintage Everyday
স্টেফি গ্রাফ

মার্টিনা পেশিবহুল, মার্টিনা অ্যাপ্রোচ শটে বিপক্ষকে বেসলাইনে ঠেলে রেশমি ভলি মারেন। সার্ভিসে শক্তি, চলাফেরায় রাজকীয়তা। কিন্তু মহিলা টেনিসকে সত্যিকারের ‘পাওয়ার’ গেম শেখালেন সেই স্টেফিই, গ্র্যান্ডস্ল্যাম আসতে আসতে ক্যালেন্ডারটা ১৯৮৭-র হয়ে গেলেও। শ্বাপদের ক্ষিপ্রতা আর ফোরহ্যান্ডের শক্তিতে মহিলা টেনিসের পরিমণ্ডলটাই পাল্টে‌ ফেলছেন।

আসলে মানহাইমের ছোটবেলা থেকেই স্টেফি অনুশীলন এবং শারীরিক ট্রেনিং-এর বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন। সেই তিন বছর বয়সেই যখন বাবা পিটার গ্রাফ মেয়ের হাতে র‍্যাকেট ধরিয়ে দিলেন, তখন থেকেই বোধহয় ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল স্টেফির। জুনিয়র টেনিসের বছরগুলিতে, যখন জার্মান কোচ বরিস ব্রেস্কভারের কাছে বেকার এবং স্টেফি উভয়েই ট্রেনিং করছিলেন, তখনই বলেছিলেন কোচ ব্রেস্কভার যে, বেকারের একটা স্বাভাবিক অ্যাথলেটিক শরীর আছে, কিন্তু নিয়মিত মেহনত করাতে হয়। অথচ স্টেফিকে কখনই শারীরিক অনুশীলনের জন্য বলতে হয় না। স্টেফি এতটাই ফিট যে মাত্র ৩০ বছর বয়সে টেনিসকে বিদায় জানানোর সময় পর্যন্ত যখন হ্যামস্ট্রিং, শিরদাঁড়ার নিচের দিক এবং হাঁটুর চোটে ভুগেও তাঁর কোর্ট কভারেজে কোনও প্রভাব পড়েনি।

35 years ago today: Steffi Graf wins first WTA title · tennisnet.com
চেনা মেজাজে স্টেফি গ্রাফ

স্টেফি আসার সঙ্গে সঙ্গে মহিলা টেনিসের শক্তি, গতি এবং কোর্ট কভারজের বিষয়ে আমূল পরিবর্তন হয়ে যায়। স্টেফি যখন টেনিস পৃথিবীতে আসেন, তখন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা আর ক্রিস এভার্ট রয়েছেন গগন ছাপিয়ে। তাঁদের থেকে সাম্রাজ্য কেড়ে নেওয়ার পরপরই মোনিকা সেলেস এসে গেলেন পর্দায়।

স্টেফি গ্রাফ ও মোনিকা সেলেস

মোনিকা, তাঁর জোড়া হাতের ফোরহ্যান্ড ও ব্যাকহ্যান্ড নিয়ে উইম্বলডনের ঘাসের কোর্ট ছাড়া বেশ সমস্যায় ফেলে দিলেন গ্রাফকে। কোর্টে নড়াচড়া যথেষ্ট ভালো, এবং দু’হাতের শট মেকিং আরও শক্তিশালী। মানসিক স্থিতিহীন স্টেফি-ভক্ত গুন্টার পার্চে দ্বারা ১৯৯৩ সালের হামবুর্গ ওপেনে মোনিকার ডান দিকের কাঁধের কাছে ছুরিকাঘাত বোধহয় সবথেকে প্রত্যাশিত টেনিস টেনিস রেষারেষির বুকেই ছুরিকাঘাত। এটা ঘটনা যে, এই আঘাত থেকে সুস্থ হয়ে আরও দু’বছর পরে ফিরে এসে মোনিকা তাঁর কেরিয়ারের চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ১৯৯৬-এ জিতেছিলেন বটে। কিন্তু ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে থাকাকালীন দুটো বছর নষ্ট হওয়ায় ফিরে এসে আর সেই তীক্ষ্ণতা অবশিষ্ট ছিল না।

অবশ্য সেলেসের এই অপ্রত্যাশিত দুর্ভাগ্যজনক আঘাতের জন্য স্টেফিকে তো দোষ দেওয়া যায় না। স্টেফি বরং নিজের চোট আঘাতের সঙ্গে যুঝেও সর্বোচ্চ ফিটনেস বজায় রেখেছেন এবং ’৯৫ আর ’৯৬ পরপর দু’বছর চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন না খেলেও তিনি বাকি তিনটেই গ্র্যান্ডস্ল্যাম পকেটস্থ করেছেন, পরপর দু’বার!

খেলার ধরন যদি দেখি, স্টেফি যখন পেশাদার টেনিস খেলতে আসছেন, তখন সবে গ্রাফাইট র‍্যাকেট এসেছে, স্ট্রিং প্রযুক্তির বিবর্তন হচ্ছে। টাচ টেনিস থেকে পাওয়ার টেনিসের দিকে যাচ্ছে পৃথিবী। আর স্টেফি যখন টেনিস ছাড়ছেন, তখন লিন্ডসি ড্যাভেনপোর্ট, ভেনাস উইলিয়ামস, সেরিনা উইলিয়ামস, মেরি পিয়ার্সের মতো দীর্ঘদেহীরা শক্তিশালী গ্রাউডস্ট্রোক এবং দ্রুতগতির কোর্ত কভারেজ নিয়ে টেনিস খেলাটাই বদলে দিয়েছেন।

স্টেফির সমসাময়িকদের মধ্যে গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনি তো মাত্র একটিই যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতেই ক্ষান্ত দিলেন। হ্যাঁ, সেলেস হয়তো আঘাতের কারণে সেরা সময়ের দুই বছর বাদ দিয়েও ন’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। কিন্তু সেলেসের সমসাময়িক আরন্তজা স্যাঞ্চেজ ভিকারিও, মেরি জো ফার্নান্ডেজ, কনচিতা মার্তিনেজ বা ইয়ানা নোভাৎনারা তো সংখ্যাটা পাঁচেরও পার করতে পারেননি কেউই।

এতটাই আধিপত্য, এতটাই প্রভাব নিয়ে টেনিস খেলেছেন স্টেফি। হ্যাঁ, স্টেফি গ্রাফের ফোরহ্যান্ড বোধহয় পুরুষ এবং মহিলা টেনিস ইতিহাসের ঘোষিত সেরা ফোরহ্যান্ড ছিল। শক্তি এবং টপস্পিনের সঙ্গে নির্ভুল সূক্ষ্মতা যার বিশেষত্ব। কিন্তু ব্যাকহ্যান্ড? ইস্টার্ন গ্রিপের কারণে একহাতের ব্যাকহ্যান্ডে টপস্পিনটা তাঁর শক্তিশালী জায়গা ছিল না। শুধুমাত্র স্লাইস ব্যাকহ্যান্ডই ভরসা! কিন্তু তাই নিয়েই শাসন করেছেন পৃথিবী।

………………………………………………………………..

মোনিকা, তাঁর জোড়া হাতের ফোরহ্যান্ড ও ব্যাকহ্যান্ড নিয়ে উইম্বলডনের ঘাসের কোর্ট ছাড়া বেশ সমস্যায় ফেলে দিলেন গ্রাফকে। কোর্টে নড়াচড়া যথেষ্ট ভালো, এবং দু’হাতের শট মেকিং আরও শক্তিশালী। মানসিক স্থিতিহীন স্টেফি-ভক্ত গুন্টার পার্চে ১৯৯৩ সালের হামবুর্গ ওপেনে মোনিকার ডান দিকের কাঁধের কাছে ছুরিকাঘাত বোধহয় সবথেকে প্রত্যাশিত টেনিস টেনিস রেষারেষির বুকেই ছুরিকাঘাত। এটা ঘটনা যে, এই আঘাত থেকে সুস্থ হয়ে আরও দু’বছর পরে ফিরে এসে মোনিকা তাঁর কেরিয়ারের চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ১৯৯৬-এ জিতেছিলেন বটে। কিন্তু ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে থাকাকালীন দুটো বছর নষ্ট হওয়ায় ফিরে এসে আর সেই তীক্ষ্ণতা অবশিষ্ট ছিল না।

………………………………………………………………..

ঘাসের কোর্টের কথা ছেড়ে দিচ্ছি। কারণ ঘাসে স্লাইস বলকে উঠতে দেয় না। ফলস্বরূপ স্লাইসের মোকাবিলায় বিপক্ষের টপস্পিনের সঙ্গে শক্তি এবং তার সঙ্গে নিখুঁত জায়গায় বল ফেলার অসুবিধা হয়। কিন্তু ক্লে কোর্টে বা সিমেন্টের কোর্টে? বল ধীরে হয়ে গিয়ে একদম যাকে বলে বিপক্ষের সুবিধাই করে দেওয়ার কথা। অথচ স্টেফি তাঁর তীক্ষ্ণতা এবং প্লেসমেন্টের ওপর নির্ভর করে এই স্লাইস ব্যাকহ্যান্ডকেই আক্রমণের অঙ্গ করে তুলেছিলেন। দ্রুত নড়াচড়ার ওপর ভরসা রেখে স্লাইসকে অ্যাপ্রোচ শট হিসাবে ব্যবহার করে নেটের দখল নিয়েছেন এবং নির্ভুল ভলিতে পয়েন্ট পেয়েছেন।

হ্যাঁ, মার্গারেট কোর্টও ২৩টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম পেয়েছেন। কিন্তু পেশাদার যুগে মাত্র এগারোটাই। বাকি রইলেন সেরিনা উইলিয়ামস, ক্রিস এভার্ট এবং মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। সেরিনার ২৩টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম। স্টেফির থেকে একটা বেশি, কিন্তু তাও ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টেনিস খেলার পর। মার্টিনা বা ক্রিস অবশ্য ১৮টি করে গ্র্যান্ডস্ল্যাম পেয়েছেন যখন কাঠের র‍্যাকেট থেকে টেনিস কার্বন গ্রাফাইটে র‍্যাকেটে আসছে এবং ওই প্রায় ১৬-১৭ বছর পেশাদার টেনিস খেলে।

Steffi Graf | Biography, Titles, & Facts | Britannica
স্টেফি গ্রাফ

স্টেফি বরং তাঁর পেশাদার টেনিসের ১৪ বছরেই একার হাতে টেনিসটাকেই পাল্টে‌ দিয়েছিলেন। শুধু মাত্র নান্দনিকতা নয়, শক্তির মিশেলে মহিলা টেনিসকে সার্বিকভাবে দর্শকপ্রিয় করে তুলেছিলেন। আজকের যন্ত্রমানব-মানবীদের দেখলে স্টেফিকে বরং অনেক বেশি নান্দনিক মনে হয়। তাঁর টেনিসের সঙ্গে অনেক বেশি মিল ছিল আরেক সোনালি চুলের ঠান্ডা মাথার সুপারস্টার টেনিস খেলোয়াড়ের, যিনি মাত্র ২৬ বছর বয়সেই টেনিসকে বিদায় জানিয়েছিলেন, বিয়র্ন ‘আইসকুল’ বর্গ। একইরকম আগ্রাসী গ্রাউন্ডস্ট্রোক এবং কোর্ট কভারেজ। দু’জনেই প্রজাপতির মতো কোর্ট জুড়ে উড়ে বেড়িয়ে মৌমাছির মতো হুল ফুটিয়েছেন।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

আরও পড়ুন অরিঞ্জয় বোস-এর লেখা: ক্রিকেটের মহালগ্নেও ফরাসি বিপ্লব সফল করলেন আলকারাজ

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….

গ্রাফের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ১৯৮৮-র একই ক্যালেন্ডার বছরে পেশাদার টেনিসে রড লেভার এবং মার্গারেট কোর্টের পরে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে চারটিই গ্র্যান্ডস্ল্যাম এবং সঙ্গে অলিম্পিক সোনার পদক ছেড়ে দিলেও আরও চারবার তিনি বছরে তিনটে করে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতেছেন। তার মধ্যে ২ বছর তো শুরুর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন না খেলেও!

T365 Recalls: Steffi Graf announces retirement, saying 'I have the feeling I have achieved everything I could' - Tennis365
স্টেফি গ্রাফ

প্রজন্মের পর প্রজন্ম টেনিস তার আঙ্গিক বদলেছে। প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে, খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা বেড়েছে, টেনিস র‍্যাকেট বা বল প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে। র‍্যাকেটের মাথা অনেক বড় হয়েছে, ওজন কমেছে। খেলাটাই পাল্টে‌ গেছে একেবারে। ঠিক এই কারণেই হয়তো ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের সেরাদের নিয়ে তুলনা চলতে পারে না। যেভাবে সুজানে লেংলেন নিজের সময়ে সেরা ছিলেন, বা মার্গারেট কোর্ট, ক্রিস এভার্ট, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা বা পরবর্তীতে সেরেনা উইলিয়ামস। সেভাবেই নিজের সময়ে স্টেফি গ্রাফও। মোনিকা সেলেস বা মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার উপস্থিতি সত্ত্বেও।

বিদায় বেলায় চোখে জল : স্টেফি গ্রাফ

স্টেফি খেলা ছেড়েছেন সিকি শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। আমাদের চুলের রঙে গোলমরিচের ওপর নুনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। স্টেফিও ৫৫ হয়ে গেলেন। এখন পিছনে ফিরলে মনে হয়, আমরা যারা স্টেফিকে ভালোবাসোতে পারিনি, তারা হয়তো নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছি। কারণ টেনিস বা স্টেফি একে অপরকে ভালোবেসে সেরাটুকু নিয়ে সংসার করেছে। আর আজ ২৫ বছর পর, সরে গিয়েও একে অপরের পরিপূরক হয়ে রয়ে গেছে। স্টেফানি মারিয়া গ্রাফ, টেনিসের সেরা রাষ্ট্রদূত, গ্লোবালাইজেশনের প্রথম আলোকবর্তিকা!

……………………………………….

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

……………………………………….