একটু লায়েক হতে সানগ্লাস আর গগলসের ফারাক বুঝেছি, ছানি কাটানোর পরে পরা কালো চশমা, আর রে ব্যানের ফারাক বুঝেছি। তারপর রজনীকান্তের স্টাইলে সানগ্লাস খোলা-পরার বৃথা চেষ্টা অনেক করেছি, পেরে উঠিনি। ভীষণ ইম্পসিবল মিশনে টম ক্রুজের সানগ্লাসকে চকিতে বিস্ফোরক হয়ে উঠতে দেখেছি। হালে এই সানগ্লাস নিয়ে একটা হালকা বিতর্ক চালু হয়েছে। দলীপ ট্রফিতে সানগ্লাস পরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন শ্রেয়স আইয়ার, যা সচরাচর ব্যাটাররা করেন না। কিন্তু ওই, ব্যাট করতে নেমে খান সাতেক বলের মধ্যে শূন্য রানে আউট হয়েছেন, অর্থাৎ ‘ডাক’ করেছেন।
আমরা তখন অবোধ ছিলাম। বলতাম গগলস! হিন্দি সিনেমার হিরোইনরা পরে, হিরোরা পরে। বাংলায় উত্তমকুমারকে সত্যজিৎ রায় ‘নায়ক’ ছবিতে পরিয়েছিলেন নায়কের সঙ্গে পাবলিকের রহস্যময় দূরত্ব তৈরির জন্য। পরে উত্তমকুমারকে ওই কালো চশমা পরে ‘এই আলো এতো আকাশ আগে দেখিনি’ গানে লিপ দিতে দেখেছি। যদি কালো রোদচশমা পরে আলোর গান গাওয়া নিয়ে মনের মধ্যে খুঁতখুঁতানি যায়নি। আর ‘ইনার আই’ তথ্যচিত্রে দেখেছিলাম শিল্পী বিনোদবিহারীকে। কালো চশমায় চোখ ঢাকা শিল্পী ছিলেন জন্মাবধি একটি চোখ দৃষ্টিহীন, অন্য চোখে মাইয়োপিয়া। তাঁর ওই কালো চশমা পরা ছবিই আইকনিক হয়ে থাকল। তবে অনেক দিন পর্যন্ত চোখে কালো চশমা পরা লোক দেখলে– এই রে, জয় বাংলা নির্ঘাত– ভেবে দূরে থাকতাম।
তারপর লায়েক হতে সানগ্লাস আর গগলসের ফারাক বুঝেছি, ছানি কাটানোর পরে পরা কালো চশমা, আর রে ব্যানের ফারাক বুঝেছি। তারপর রজনীকান্তের স্টাইলে সানগ্লাস খোলা পরার বৃথা চেষ্টা অনেক করেছি, পেরে উঠিনি। ভীষণ ইম্পসিবল মিশনে টম ক্রুজের সানগ্লাসকে চকিতে বিস্ফোরক হয়ে উঠতে দেখেছি। হালে এই সানগ্লাস নিয়ে একটা হালকা বিতর্ক চালু হয়েছে। দলীপ ট্রফিতে সানগ্লাস পরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন শ্রেয়স আইয়ার, যা সচরাচর ব্যাটসম্যানরা করেন না। তবে তার আগে একটু পুরনো কথায় ফিরি।
………………………………………………………..
কালক্রমে ওয়ান ডে, আইপিএল ইত্যাদির চাপে টেস্ট ক্রিকেট হারাল তার মর্যাদা। ধৈর্যের, সূক্ষ্ম হাতের মোচড়ের কারুকাজ, স্পোর্টসম্যানশিপের উজ্জ্বল উদাহরণ ভুলে শুরু হল দে দনাদ্দন পিটিয়ে রান তোলার যুগ। আস্কিং রেটের পিছনে দৌড়। গোটা খেলাটা হয়ে গেল মূলত ব্যাটসম্যান নির্ভর। সঙ্গে মিডিয়া, স্পন্সরশিপ, প্রোডাক্ট এনডোর্সমেন্টের বিশাল অর্থনৈতিক জগৎ। অ্যাগ্রেসিভ হল নিও নর্মাল, সোয়াগ হল গিয়ে সোহাগের বস্তু। তো আমাদের শ্রেয়স আয়ার খেলোয়াড় হিসেবে খুবই ভালো, সোয়াগও বেজায়। ইদানীং যদিও সময় ভালো যাচ্ছে না।
………………………………………………………..
ক্রিকেট ছিল রাজার খেলা। পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ। শীতের খেলা। কমলা রঙের রোদে পিঠ দিয়ে কমলালেবু খেতে খেতে বা সোয়েটার বুনতে বুনতে সানগ্লাস পরা শর্মিলা ঠাকুর দেখবেন অভিজাত পতৌদির নবাব ঠুকে ঠুকে ব্যাট করছেন। তখন প্রথম এক দু’-ওভার ব্যাটসম্যান ডিফেন্সিভ খেলতেন। আমরা বলতাম ‘আই সেট’ করতে টাইম নিচ্ছে। তারপর এলেন কেরি প্যাকার। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন যেকোনও লোকের বরাতে যা বরাদ্দ থাকে, এই ধনকুবেরের বিরুদ্ধেও তাই ছিল। এর প্রবর্তিত নতুন ধারার ক্রিকেটকে লোকে ‘পাজামা ক্রিকেট’ বলে নাক সিঁটকাল, বলল, প্যাকার্স সার্কাস!
কালক্রমে ওয়ান ডে, আইপিএল ইত্যাদির চাপে টেস্ট ক্রিকেট হারাল তার মর্যাদা। ধৈর্যের, সূক্ষ্ম হাতের মোচড়ের কারুকাজ, স্পোর্টসম্যানশিপের উজ্জ্বল উদাহরণ ভুলে শুরু হল দে দনাদ্দন পিটিয়ে রান তোলার যুগ। আস্কিং রেটের পিছনে দৌড়। গোটা খেলাটা হয়ে গেল মূলত ব্যাটসম্যান নির্ভর। সঙ্গে মিডিয়া, স্পন্সরশিপ, প্রোডাক্ট এনডোর্সমেন্টের বিশাল অর্থনৈতিক জগৎ। অ্যাগ্রেসিভ হল নিও নর্মাল, সোয়াগ হল গিয়ে সোহাগের বস্তু। তো আমাদের শ্রেয়স আয়ার খেলোয়াড় হিসেবে খুবই ভালো, সোয়াগও বেজায়। ইদানীং যদিও সময় ভালো যাচ্ছে না। সে তো সবার কেরিয়ারেই ব্যাড প্যাচ আসে। কিন্তু ওই, ব্যাট করতে নেমে খান সাতেক বলের মধ্যে শূন্য রানে আউট হয়েছেন, অর্থাৎ ‘ডাক’ করেছেন।
……………………………………………………………..
আরও পড়ুন অর্পণ দাস-এর লেখা: বিদায়বেলায় তোমার পাশে ‘কিতনে আদমি থে গব্বর?’
……………………………………………………………..
ধারাভাষ্যকাররা, যাঁরা আবার প্রাক্তন ক্রিকেটার, বলছেন সেদিন মোটেই চড়া রোদ ছিল না। এখন ডার্কগ্লাস না পরে ব্যাট করতে নামলে তিনি ‘ডাক’ করতেন না সেঞ্চুরি করতেন সে প্রশ্ন শ্রোয়েডিংগারের বিড়াল হয়ে আমাদের মনে উঁকি দেবেই। আসলে আমাদের মনের মধ্যে একটা পুরনো দিনের গার্জিয়ান, কমল মিত্র টাইপের, ঘাপটি মেরে বসে থাকে। অঙ্কে ফেল করে চুলে টেরি বাগানো! এত আস্পর্ধা! শ্রেয়স ভালো খেললে এসব প্রশ্ন উঠত না, বলাই বাহুল্য।
…………………………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার.ইন
…………………………………………………….
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved