দীর্ঘ সময়ের কাজ, রাস্তায় অনেকক্ষণ কাটানো, শৌচালয়ের অভাব, পথের নানা বিপদ, চাকরি টেকার অনিশ্চয়তা, পুরুষ সহকর্মীদের শ্লেষ, বসের হাতে হেনস্থার ভয়, কাজটা সহজ ছিল না 'মহিলা সেলসম্যান'দের। বড়লোক কাস্টমারদের মেজাজের ওঠানামাও সামলাতে হত তাঁদের।
১৯৭২-এর ‘মেমসাহেব’-এ উত্তমকুমার নিজেই সাংবাদিক। খুব খুঁটিয়ে দেখেও তাঁর কাগজের অফিসে কোনও মেয়ে চোখে পড়ে না, একজন টেলিফোন অপারেটর ছাড়া।
সরকার অভিভাবকহীন উদ্বাস্তু মেয়েদের চিরকালীন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিল। কারণ সরকার ধরে নিয়েছিল এঁরা উপার্জনে অক্ষম। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, যে সময়ে দলে দলে মেয়েরা চাকরি করতে যাচ্ছেন, সে সময় দাঁড়িয়ে সরকারি চোখে একা মেয়ে মানে বোঝা!
অবশ্য দেশভাগের পরেকার পরিস্থিতিতে, একথা বললে ভুল হবে যে, স্কুল শিক্ষিকাদের সংসার ও চাকরির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা হত না। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্প ‘ছোটদিদিমণি’তে আমরা পড়ি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তির কথা।
ভাবতে অবাক লাগে, ২০২৩ সালেও দেশের পুলিশের মাত্র ১১.৭৫% মহিলা; আর তাঁদের সিংহভাগই কনস্টেবল পদে রয়েছেন। আর আজও অধিকাংশ সময় তাঁদের ঘাড়ে পড়ে থানার ভিতরের নানা ফাইফরমাশ খাটা, কাগজপত্র সামলানোর কাজ। অন্যদিকে, পুরুষ পুলিশ কাজে ব্যর্থ হলে অবলীলায় মানুষ বলে তাঁদের চুড়ি পরা উচিত।
১৯ শতকের শেষ ও ২০ শতকের শুরুর দিকে, শুধু ব্রিটিশ প্রশাসন নয়, ভারতীয় এলিট পুরুষেরাও এই পেশায় মহিলাদের আসা রীতিমতো সমর্থন করেন। অনুমান করা হত ভারতীয় মহিলারা পুরুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ফলে আপাতদৃষ্টিতে অন্যান্য অনেক দেশের, বা এ-দেশেই অন্য অনেক পেশার তুলনায় এখানে মহিলাদের ডাক্তারি পড়া বা ডাক্তার হওয়ার পথটা অনেকটা সহজ ছিল।
কে যেন খবর দেয় বাস্তুহারা মেয়েদের জন্য বিশেষ কোটা রয়েছে নার্সিং-এর ট্রেনিংয়ে। মনটা নেচে ওঠে, নিশ্চিন্ত আশ্রয় মিলবে, দু’বেলার খাবার পাওয়া যাবে, স্বপ্নের মতো ঠেকে। শুধু সিনেমা নয়, সত্যিকারের নার্স, দেশভাগের ফলশ্রুতি যিনি, অঞ্জলি আচার্য– তাঁর পেশাগত লড়াইয়ের কথাও জানুন।
সিনেমা, সাহিত্য, স্মৃতিকথা থেকে বোঝা যায়, দেশভাগের পরে বহু বাঙালি মেয়ের, বিশেষত উদ্বাস্তু মেয়ের রোজগারের সুযোগ মেলে টাইপ-শর্টহ্যান্ডের কাজে।
টেলিফোন জরুরি পরিষেবা, রাত-দিন চালু। তাই পালা করে দিনের তিনটি পর্যায়ে ডিউটি পড়ত মেয়েদের। প্রথম পর্যায় শুরু হত সকাল ৬টা থেকে, শেষ হত দুপুর দুটোয়; তার পরের পর্যায় ছিল দুপুর দুটো থেকে রাত ৯টা এবং শেষটি ছিল রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। বাঙালি পরিবারের বৌ-মেয়েরা রাতের ডিউটি দিতে যাচ্ছেন, সমাজ সহজে তা মেনে নিয়েছিল বলে মনে হয় না।
‘চঞ্চল, চক্ষুময় অফিসে’ মেয়েরা কীভাবে, কতটা মানিয়ে নিলেন? রোজকার বোঝাপড়া, সংগ্রামের ধরন তাঁদের কেমন ছিল? আর তাঁরা যখন বাসে, ট্রামে ভিড় ঠেলে অফিস বা কলেজে যেতেন, সেই অভিজ্ঞতাই বা কেমন ছিল তাঁদের? যেসব পরিবারের মেয়েরা চাকরিতে যোগ দিলেন, সেই পরিবারের দিন যাপনের ছন্দ কী সামান্য হলেও পাল্টায়নি?
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved