২০১৯ সালে হেমন্ত শুরু করে এক বিরাট প্রোজেক্ট। যার জন্য হেমন্ত জিপে করে ঘুরে বেরিয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা। গিয়েছে ১৭টা রাজ্যে! কেন? কারণ হেমন্ত পুরনো সিনেমা হলের ছবি তুলবে। কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া, কিছু খোলা। শেষ কথা বলেছি যখন, তখন বলেছিল ১০৫৫টা সিনেমা হলের ছবি তুলেছে ও।
১৮.
দু’দিন হল ফোনে পাচ্ছিলাম না হেমন্তকে। ফোন কানেক্টই হচ্ছে না। চার-পাঁচদিন পর দেখি ফোন বাজছে। দেখলাম ‘হেমন্ত কলিং’। ধরলাম। শোঁ-শোঁ করে আওয়াজ, হাওয়ার। কী ব্যাপার? কোথায়? বলল, রাজস্থানের ইন্টিরিয়ারে ছবি তুলছে সিনেমা হলের। হেমন্তের গুর্খা জিপ রয়েছে একটা। সেই জিপে করেই এই কাণ্ডকারখানা করে চলেছে হেমন্ত। খুব সম্ভবত জানলা খোলা, তাই ওই শোঁ-শোঁ আওয়াজ।
হেমন্ত, হেমন্ত চতুর্বেদী এক সময়ের সেরা সিনেমাটোগ্রাফার (ক্যামেরাম্যান)। ওর তোলা কিছু ছবি– রামগোপাল বর্মার ‘কোম্পানি’ (২০০২), বিশাল ভরদ্বাজের ‘মকবুল’ (২০০৩), অপর্ণা সেনের ‘ফিফটিন পার্ক অ্যাভিনিউ’ (২০০৫) এবং আরও অনেকই। তার পাশাপাশি প্রচুর বিজ্ঞাপনের ছবিও করেছে।
আমার সঙ্গে ওর আলাপের প্রায় একযুগ হতে চলল। যদিও যখন আলাপ হয়েছিল, তখনই আমরা দু’জন রিটায়ার্ড। ও সিনেমা বানানো থেকে এবং আমি বিজ্ঞাপনের ছবি তৈরি করা থেকে। আমাদের আলাপ করিয়ে দেয় এক ‘কমন ফ্রেন্ড’। দু’জনেই তখন অনেক ছবি তুলি। আমার মনে হয়, হেমন্ত আমার থেকে অনেক বেশি অর্গানাইজ। ছবি, টুকরোটাকরা জিনিসের ব্যাপারে ও অনেক গোছানো। আমাদের আড্ডার বিষয় ছিল ছড়ানো-ছেটানো– ফোটোগ্রাফি, মিউজিক, সাহিত্য ইত্যাদি, সঙ্গে সিনেমা তো বটেই। আর একটা ব্যাপার, তা হল, আমরা অনেকটা একধরনের মিউজিক ভালোবাসি। ৬-৭ দশকের ‘পপ’ আর ‘রক’ মিউজিক। হেমন্তের কাছে এইসব মিউজিক রেকর্ডের বিরাট সংগ্রহ রয়েছে। রেকর্ড ছোট-বড় দু’রকমেরই হত। ওর কাছে থাকা রেকর্ডগুলো ছিল বড়– যাকে বলা হয় ‘লং প্লেয়িং’।
রেকর্ড ছাড়াও হেমন্তের কাছে বিপুল পরিমাণে এইচএমটি ঘড়ির সংগ্রহ রয়েছে। মাঝেমধ্যে এটা-ওটা মডেল খুঁজে পেলে তা নিয়ে খুবই এক্সাইটেড হতে দেখছি ওকে। যদিও আমার হাতে গত ২০-২২ বছর ধরে হাতে একটাই ঘড়ি। তাতে লেখা রয়েছে ‘কোড্যাক’। ঘড়ির ব্যাপারে এই দু’রকম বিপরীতার্থক মানুষের বন্ধুত্ব জমে গিয়েছে, ভাবতে মজা লাগে।
…………………………………………………………………………………………
আমার সঙ্গে ওর আলাপের প্রায় একযুগ হতে চলল। যদিও যখন আলাপ হয়েছিল, তখনই আমরা দু’জন রিটায়ার্ড। ও সিনেমা বানানো থেকে এবং আমি বিজ্ঞাপনের ছবি তৈরি করা থেকে। আমাদের আলাপ করিয়ে দেয় এক ‘কমন ফ্রেন্ড’। দু’জনেই তখন অনেক ছবি তুলি। আমার মনে হয়, হেমন্ত আমার থেকে অনেক বেশি অর্গানাইজ। ছবি, টুকরোটাকরো জিনিসের ব্যাপারে ও অনেক গোছানো।
…………………………………………………………………………………………
ক্যামেরা এবং প্রজেক্টারের কালেকশনও রয়েছে ওর কাছে। যাতে আছে প্রায় ২০০টা ক্যামেরা ও ফোটো প্রোজেক্টর। বোঝা যায়, হেমন্ত সিনেমাটোগ্রাফি ছেড়ে দিলেও, সিনেমাটোগ্রাফি ব্যাপারটার সঙ্গে ওর যোগাযোগ ও ভালোবাসা রয়ে গিয়েছে। ‘দ্যা ম্যানেজমেন্ট অব শ্যাডোস’ নামে একটা ডকুমেন্টারিও বানিয়েছিল হেমন্ত, যার বিষয় ওর আগের জেনারেশনের সিনেমাটোগ্রাফাররা। বড় ছবি– ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিটের। এই ছবিতে গোবিন্দ নিহালিনী, বরুণ মুখোপাধ্যায়, অপূর্ব কিশোর বীর ছাড়াও বহু সিনেমাটোগ্রাফার রয়েছেন।
২০১৯ সালে হেমন্ত শুরু করে এক বিরাট প্রোজেক্ট। যার জন্য হেমন্ত জিপে করে ঘুরে বেরিয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা। গিয়েছে ১৭টা রাজ্যে! কেন? কারণ হেমন্ত পুরনো সিনেমা হলের ছবি তুলবে। কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়া, কিছু খোলা। শেষ কথা বলেছি যখন, তখন বলেছিল ১০৫৫টা সিনেমা হলের ছবি তুলেছে ও।
……………………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………….
গত বছর হেমন্ত কলকাতায় এসেছিল। সিনেমা হলের ছবি তুলতে না, অন্য কাজে। পার্ক স্ট্রিটে লাঞ্চ খেতে গিয়েছিলাম। অর্ডার দিয়েছিলাম স্টেক। আমি একটা ছোট্ট উপহারও দিয়েছিলাম ওকে। হেমন্ত সেই উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত! সেই উপহার হল নতুনের মতো থেকে যাওয়া সম্পূর্ণ অব্যবহিত চন্দননগরের এক পুরনো সিনেমা হলের টিকিটের বান্ডিল! যাতে লেখা: শ্রী দুর্গা সিনেমা হল। ১৯৩৬।
…পড়ুন ফ্রেমকাহিনি-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ১৭। এক বাঙালি বাড়ি আসবে বলে দু’রকমের মাছ রেঁধেছিলেন নানা পাটেকর
পর্ব ১৬। সুব্রত মিত্র ও সৌম্যেন্দু রায়ের মধ্যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না
পর্ব ১৫। ১০ বছর বয়সেই ব্রাউনি ক্যামেরায় ছবি তোলা শুরু করেছিল রিনামাসি
পর্ব ১৪। তাল ও সুর দিয়ে তৈরি এক গ্রহে থাকতেন উস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ
পর্ব ১৩। মৃণাল সেনকে এক ডলারেই গল্পের স্বত্ব বিক্রি করবেন, বলেছিলেন মার্কেস
পর্ব ১২: পুরনো বাড়ির বারান্দায় মগ্ন এক শিল্পী
পর্ব ১১। প্রায় নির্বাক গণেশ পাইন আড্ডা মারতেন বসন্ত কেবিনে
পর্ব ১০। আজাদ হিন্দ হোটেল আর সুব্রত মিত্রর বাড়ির মধ্যে মিল কোথায়?
পর্ব ৯। শান্তিনিকেতনের রাস্তায় রিকশা চালাতেন শর্বরী রায়চৌধুরী
পর্ব ৮। পুরনো বইয়ের খোঁজে গোয়েন্দা হয়ে উঠেছিলেন ইন্দ্রনাথ মজুমদার
পর্ব ৭। কলকাতার জন্মদিনে উত্তম-সুচিত্রার ছবি আঁকতে দেখেছি মকবুলকে
পর্ব ৬। বিয়ের দিন রঞ্জা আর স্যমন্তককে দেখে মনে হচ্ছিল উনিশ শতকের পেইন্টিং করা পোর্ট্রেট
পর্ব ৫। আলো ক্রমে আসিতেছে ও আমার ছবি তোলার শুরু
পর্ব ৪। মুম্বইয়ের অলৌকিক ভোর ও সাদাটে শার্ট পরা হুমা কুরেশির বন্ধুত্ব
পর্ব ৩। রণেন আয়ন দত্তর বাড়ি থেকে রাত দুটোয় ছবি নিয়ে বেপাত্তা হয়েছিলেন বসন্ত চৌধুরী
পর্ব ২। ইশকুল পার হইনি, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত একটা ছোট্ট রামের পেগ তুলে দিয়েছিল হাতে
পর্ব ১। ঋতুর ভেতর সবসময় একজন শিল্প-নির্দেশক সজাগ ছিল