র্যাগিংয়ের সঙ্গে এবার পকসো গেঁথে দেওয়ার কথাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি আরও কড়া হবে। পরিসংখ্যান বলছে, পকসোতে শাস্তি পেতে বেলা ভোর হয়ে যায়, তার কী হবে? লিখছেন মলয় কুণ্ডু।
পরিস্থিতি এমনই, যে মনে হচ্ছে, উচ্চশিক্ষার কোল্যাটারাল ড্যামেজ হল ‘র্যাগিং’! কিন্তু এও সত্যি যে রোগটা দীর্ঘদিনের। কেন হচ্ছে, কীভাবে হয়, কখন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে, সেটাও বিলক্ষণ জানা। এমনকী, ওষুধ কোন মাত্রায় দিতে হবে, সেই প্রোটোকল নিয়েও বিস্তর চর্চা লাট খাচ্ছে। আর তারই মাঝে ফসকে যাচ্ছে দু’-চারটে প্রাণ। কয়েকজন পড়াশোনার পাট চোকাচ্ছে। বাপ-মা-র কান্না দেখে ইশ-উশও কম হচ্ছে না।
মুক্তি চেয়ে উড়ন্ত পাখির মতো খোলা আকাশে ডানা মেলে দেওয়া ছেলেটার পরনে নাকি কিছুই ছিল না। মেধাবী অগ্রজরা জানতে চেয়েছিল এমন কিছু, যা জানাতে পারেনি সে। ‘শূন্যে ঝাঁপ দাও’ মানে যে শূন্য লিখে তার মধ্যে ধপাস করে পড়া, বারান্দার ওপর টলমল পায়ে হাঁটতে গিয়ে নিচে পড়ে যাওয়া নয়, তা জানতে অনেক সময়ই বড্ড দেরি যায় অনেকের।
তাই তামিলনাড়ুর রাজা মুথিয়া মেডিক্যাল কলেজের পন নভরাসু, হিমাচলের রাজেন্দ্র প্রসাদ মেডিক্যাল কলেজের আমন সত্যা কাচরু, বেঙ্গালুরুর এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আজমল পি এম কিংবা এই শহরের ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজির ফার্মাসির ছাত্র আকাশ আগরওয়ালের সঙ্গে এক বন্ধনীতে এসে গেল যাদবপুরের আর এক কিশোরও।
বহুদিন পর খড়্গপুর আইআইটিতে এসেছিলেন নক্ষত্রখচিত প্রাক্তনী সুন্দর পিচাই। প্রশ্ন ছিল, আপনাকে কখনও র্যাগিংয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে? পিচাইয়ের জবাব ছিল, ‘সিজি চেঞ্জ। মানে সেন্ট্রাল গ্র্যাভিটি চেঞ্জ। ঘরে চাবি দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ফিরে এসে দেখলেন দরজা খোলা। ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র রি-অ্যারেঞ্জ করা রয়েছে। মানে জামাকাপড়, বইপত্তর, এমনকী, ফার্নিচারগুলো পর্যন্ত। দরজা খুলে দেখলে অবাক লাগবে যে গোটা ঘরটাই কে যেন রি-অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছে।’ না, এর বেশি কিছু বলেননি তিনি। গল্পটার পরে র্যাগিংটা বেশ বুদ্ধিদীপ্ত মনে হতে পারে। কিন্তু সেটা র্যাগিংই। এই সারসত্যটা মাথায় ঢুকতে দেরি হচ্ছে। কারণ, বাস্তব হচ্ছে, এই এখনও হাই কোর্টের চৌহদ্দিতে দফায় দফায় শুনানি চলছে আইআইটি-তে এক ছাত্রের রহস্যমৃত্যু নিয়ে। অভিযোগ, সেই র্যাগিংয়েরই।
কৈশোর পার না-হওয়া ছেলেটার গ্রাম থেকে শহরে জায়গা করে নিতে হস্টেলে চলে আসা, বাবা-মার থেকে দূরে, পরিবারের থেকে একা হয়ে পড়াশোনা করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ের প্রথম বাম্পারটাই যে বেশ কঠিন, সেটা সবাই জানে। প্রতিযোগিতামূলক সব কড়া পরীক্ষায় উপচে পড়া নম্বর না বাগালে তো এসব নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ ঢুকতে পারে না। অথচ, এত পড়াশোনা করে প্রাক্তন হয়ে যাওয়ারা তাদের পরের প্রজন্মের প্রতি এতটা নির্দয় হয় কী করে? শুধু তো তা-ই নয়, হস্টেলের এমন ধরন-ধারণ অজানা না হলেও কতিপয় বজ্জাতের গলায় বেড়ি পরানোর সাহস কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও করতে পারে না, সেটা যেন উহ্যই থেকে যায়।
র্যাগিংয়ের সঙ্গে এবার অবশ্য পকসো গেঁথে দেওয়ার কথাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি আরও কড়া হবে। কিন্তু পকসোতেও যে শাস্তি পেতে বেলা ভোর হয়ে যায়, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। রিপোর্ট বলছে, গত সাত বছরে পকসো কেস ৪০ গুণ বেশি হয়েছে। তবে র্যাগিংয়ে পকসো হওয়ার ঘটনা কমই। কত দ্রুত, কত কঠিন বিচার হয়, তার উপর নিশ্চয়ই নজর থাকবে, কিন্তু শুধু শাস্তিই যে অপরাধ কমানোর মাপকাঠি নয়, তা প্রমাণিতই। তাহলে আরও কিছু বাড়তি রসদ লাগবে এমন ঘৃণ্য অত্যাচারের কফিনে শেষ পেরেক পুঁততে।
এমন তো নয়, যাদবপুরের ঘটনায় কোনও নতুনত্ব রয়েছে। র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠতেই থাকে। কারও কাছে শব্দ প্রয়োগেই থেমে যায় র্যাগিং। কোথাও আবার মেধাবীদের মজা কোল খালি করে দেয় কোনও দুর্ভাগা বাপ-মার। হস্টেলের রেখে এসে কোন ভরসায় চোখের পাতা এক করবেন তাঁরা?
না কি কেরিয়ার নির্ভর-সভ্যতায় এটা স্রেফ আরও একটি ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসাবেই থেকে যাবে? প্রতিবাদের কলরবের মাত্রা এখনও যে তেমন কানের পর্দায় ধাক্কা দিচ্ছে না!
১৯০২ থেকে ১৯৪০ মহারাজ কৃষ্ণরাজা মাইসোরে রাজত্ব করেছেন। বলা হয় মাইসোরের স্বর্ণযুগ। কৃষ্ণরাজা ছিলেন খাদ্যরসিক। তাঁর রসনাতৃপ্তির কাজে সদা তৎপর মাডাপ্পা নিত্যনতুন খাবার তৈরি করতে গিয়ে, একদিন জন্ম হল মাইসোর পাকের– যা অচিরেই হয়ে উঠল ভারতবর্ষ নামটার সঙ্গে জুড়ে থাকা সমস্ত খাবারের মধ্যে একটি।