দেবেন্দ্রনাথ তাঁর প্রৌঢ় বয়সে পূর্ববঙ্গের জমিদারি দেখাশোনার কাজ ছেলেদের দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ বা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ– কেউই এ ব্যাপারে উৎসাহ এবং সময় দিতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথকে যখন জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তিনি যুবক। কবি এবং গীতিকার হিসেবে মোটামুটি সুনাম অর্জন করেছেন। ‘মানসী’ কাব্যগ্রন্থ ও ‘বিসর্জন’ নাটক আর এক বছরের মধ্যেই প্রকাশিত হবে। এর আগে তিনি একবার মহর্ষির সঙ্গে একাধিকবার নতুন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে শিলাইদহে এসেছেন।
২.
পৃথিবী যে বাস্তবিক কী আশ্চর্য সুন্দরী, তা কলকাতায় থাকলে ভুলে যেতে হয়। এই-যে ছোটো নদীর ধারে শান্তিময় গাছপালার মধ্যে প্রতিদিন সূর্য অস্ত যাচ্ছে, এবং এই অনন্ত ধূসর নির্জন নিঃশব্দ চরের উপরে প্রতি রাত্রে শত সহস্র নক্ষত্রের নিঃশব্দ অভ্যুদয় হচ্ছে, জগৎ সংসারে এ-যে কী একটা আশ্চর্য মহৎ ঘটনা তা এখানে থাকলে তবে বোঝা যায়। সূর্য আস্তে আস্তে ভোরের বেলা পূর্ব দিক থেকে কী এক প্রকাণ্ড গ্রন্থের পাতা খুলে দিচ্ছে এবং সন্ধ্যা পশ্চিম থেকে ধীরে ধীরে আকাশের উপরে যে-এক প্রকাণ্ড পাতা উল্টে দিচ্ছে সেই বা কী আশ্চর্য লিখন– আর, এই ক্ষীণপরিসর নদী আর এই দিগন্তবিস্তৃত চর আর ওই ছবির মতন পরপার– ধরণীর এই উপেক্ষিত একটি প্রান্তভাগ– এই বা কী বৃহৎ নিস্তব্ধ নিভৃত পাঠশালা! যাক। এ কথাগুলো রাজধানীতে অনেকটা ‘পৈট্টি’র মতো শুনতে হবে, কিন্তু এখানকার পক্ষে কথাগুলো কিছুমাত্র বেখাপ নয়।
একথা রবীন্দ্রনাথ ১৮৮৯ সালে তাঁর ভাইঝি ইন্দিরা দেবীকে লিখছেন শিলাইদহ থেকে। দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে আটকে থাকা রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতিকে পেতেন লুকিয়ে-চুরিয়ে। কিন্তু জমিদারি দেখতে তিনি যখন পূর্ববঙ্গে গেলেন তখন উন্মুক্ত প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় নিবিড় হল। ‘পূরবী’র ‘আশা’ কবিতায় তিনি তাঁর স্বপ্নের বাড়ির কথা বলেছেন–
বহুদিন মনে ছিল আশা
ধরণীর এক কোণে
রহিব আপন–মনে;
ধন নয়, মান নয়, একটুকু বাসা
করেছিনু আশা।
কেমন হবে সে বাসা?
গাছটির স্নিগ্ধ ছায়া, নদীটির ধারা,
ঘরে-আনা গোধূলিতে সন্ধ্যাটির তারা,
চামেলির গন্ধটুকু জানালার ধারে।
নদীর ধারের সে বাড়িটিতে চামেলির গন্ধমাখা জানালা দিয়ে ভোরের প্রথম আলো দেখা যাবে– এমনটাই ছিল চাওয়া।
নদীর ধারের এই যে বাড়িটির কথা রবীন্দ্রনাথ প্রৌঢ় বয়সে লিখেছেন, সেই রকম বসবাসের সুযোগ রবীন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন পূর্ববঙ্গে বসবাসের সময়।
ইংল্যান্ডে দ্বারকানাথের মৃত্যুর খবর দেবেন্দ্রনাথের কাছে যখন পৌঁছেছিল, তখন দেবেন্দ্রনাথ গঙ্গায় বজরায়, কালনা পেরিয়ে গঙ্গায় আর কিছুটা এগিয়ে গিয়েছেন। রাজনারায়ণ বসু, সারদা দেবী ও কয়েকজন বালক পুত্রও সঙ্গে রয়েছেন। দ্বারকানাথ বিপুল দেনা রেখে গিয়েছিলেন। সেই দেনা শোধ করলেন দেবেন্দ্রনাথ। ওড়িশায় তিনটি জমিদারি এবং পূর্ববঙ্গে তিনটি জমিদারি পেয়েছিলেন দেবেন্দ্রনাথ। পূর্ববঙ্গের মধ্যে বিরাহিমপুর পরগনা (যার সদর কাছারি শিলাইদহ), ইউসুফশাহী পরগনা ও কালীগ্রাম পরগনা। ইউসুফশাহী পরগনা কাছারি ছিল সাজাদপুর, যা দেবেন্দ্রনাথের মেজভাই গিরীন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে। তবে গিরীন্দ্রনাথের দুই ছেলের মৃত্যুর পর দেবেন্দ্রনাথ বহুদিন পর্যন্ত এই সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। বিরাহিমপুর ও কালীগ্রাম পরগনা যার সদর পতিসর– দেবেন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে। দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর বিরাহিমপুর ও কালীগ্রাম দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ পান। দ্বিজেন্দ্রনাথ তাঁর অংশ সত্যেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথকে ইজারা করে দেন। ১৯২০ সালে বিরাহিমপুর যার কেন্দ্র রবীন্দ্রনাথের অতি প্রিয় শিলাইদহ চলে যায় সত্যেন্দ্রনাথের ছেলে সুরেন্দ্রনাথের দখলে। পরে অবশ্য সেই সম্পত্তিও বিক্রি করে দেওয়া হয় ভাগ্যকুলের কুণ্ডুদের।
দেবেন্দ্রনাথ তাঁর প্রৌঢ় বয়সে পূর্ববঙ্গের জমিদারি দেখাশোনার কাজ ছেলেদের দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ বা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ– কেউই এ ব্যাপারে উৎসাহ এবং সময় দিতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথকে যখন জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তিনি যুবক। কবি এবং গীতিকার হিসেবে মোটামুটি সুনাম অর্জন করেছেন। ‘মানসী’ কাব্যগ্রন্থ ও ‘বিসর্জন’ নাটক আর এক বছরের মধ্যেই প্রকাশিত হবে। এর আগে তিনি একবার মহর্ষির সঙ্গে একাধিকবার নতুন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে শিলাইদহে এসেছেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে শিকারের গল্প তিনি মজা করে লিখেছেন ‘ছেলেবেলা’ বইয়ে।
১৮৯৯ সালে তিনি প্রথমবার শিলাইদহে আসেন জমিদারি দেখতে। সে সময় থেকে ১৮৯৬ অবধি প্রায় একটানা এবং তারপরে ১৯০১ অবধি তিনি মাঝে মাঝেই এ অঞ্চলে এসেছেন। তারপর অনিয়মিত। তবে পতিসর অঞ্চলে রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ দশকেও এসেছেন।
রবীন্দ্রনাথের জীবনে এবং সাহিত্যে এই শিলাইদহ পর্বের গুরুত্বের কথা সকলেই জানেন। তাঁর কবিতা এখানে অন্য মাত্রা পায়। ‘সোনার তরী’ বিশেষত ‘চিত্রা’ কাব্যের কবিতায় যে ভাবের গভীরতা আছে, তা এর আগে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় পাওয়া যায়নি। রবীন্দ্রনাথের জীবনদেবতা তত্ত্বের অনুভব এই সময়ে। ছোটগল্পের সম্ভার ফুলে ফেঁপে উঠল এই সময়ে। ‘সাধনা’ পত্রিকার জন্য তখন তিনি দু’হাতে কবিতা ছোটগল্প প্রবন্ধ লিখছেন। লিখছেন অন্যান্য চিঠির সঙ্গে ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা অপূর্ব সব চিঠি। যা পরে ‘ছিন্নপত্র’ ও ‘ছিন্নপত্রাবলী’তে প্রকাশিত হয়। অজস্র গানও লিখছেন সেই সময়। শুধু সৃষ্টিশীল রবীন্দ্রনাথ নন, কর্মী রবীন্দ্রনাথকে বুঝতেও পূর্ববঙ্গের এই সব অঞ্চলের ভূমিকা জরুরি। এই সময়ই প্রথম রবীন্দ্রনাথ দেখলেন বাংলার গ্রাম আর সেখানকার মানুষদের অবস্থা। রবীন্দ্রনাথের দেশভাবনা, গ্রামভাবনা তৈরি হতে শুরু করে শিলাইদহ পর্বে। তাঁর প্রবন্ধে এসব ভাবনা ধরা পড়েছে। শুধু লেখায় নয় হাতে-কলমে গ্রামের কাজ শুরু করলেন রবীন্দ্রনাথ এই সময়ে। গ্রামের ছেলেদের দিয়ে গ্রামে রাস্তা তৈরি বা গ্রাম পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেন। কৃষিকে কীভাবে আধুনিক উপায়ে নতুন জন্ম দেওয়া যেতে পারে, এই নিয়ে ভাবছেন, কাজ করছেন এই সময়ে। পরে একমাত্র পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও বন্ধুপুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদারকে আমেরিকা পাঠাবেন কৃষিবিদ্যা পড়তে। রবীন্দ্রনাথে গ্রাম উন্নয়নের সূত্রপাত এখানে, পরে যা বড় আকার ধারণ করে বীরভূমের শান্তিনিকেতন সংলগ্ন শ্রীনিকেতনে।
রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, সাজাদপুরের কাছারিবাড়ি এবং পতিসরের কাছারিবাড়ি এখন মিউজিয়াম হিসেবে সংরক্ষিত। এই সব বাড়ির পাশাপাশি তিনি কিছুটা সময় কাটিয়েছেন জলপথে, বোটে। তাঁর অতিপ্রিয় পদ্মাবোট তো ছিলই চঞ্চলা ও চপলা এই দু’টি ছোট নৌকোতেও তিনি যাতায়াত করেছেন। যার কিছুটা অংশ কুঠিবাড়িতে রাখা আছে। পদ্মার ধারে তাঁর শিলাইদহের কুঠিবাড়ি রবীন্দ্রনাথের ভাইপো নীতীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় ১৮৯২ সালে। এর আগে ছিল পুরনো কুঠিবাড়ি, যা এখন আর নেই। এ অঞ্চলের নীলকুঠির কথা রবীন্দ্রনাথের ‘জন্মদিনে’র একটি কবিতায় এসেছে। এখনও রয়েছে ঠাকুরপরিবারের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা কেন্দ্র বা কাছারিবাড়ি। তবে এ অঞ্চলের আসল ধমণী পদ্মা ও তার বিরাট বালুর চর। বর্ষার সময় পদ্মার রূপ কেমন হয় তা ‘ছিন্নপত্রাবলী’র অনেক চিঠিতে আছে। রবীন্দ্রনাথের ভালো লেগেছিল মাঝিদের মুখের ভাষায় নদীর বিবরণ– নদীর খুব ‘ধার’ হয়েছে। এই একটি শব্দেই যে নদীর ভয়াবহতা ধরা পড়ে। আবার শীত বা শরতে তার অন্য চেহারা। পরের শতকের প্রথম দশকে ‘গোরা’ উপন্যাসের কিছুটা, ‘মুক্তধারা’ নাটক লেখা হয়েছিল শিলাইদহেই।
শিলাইদহ কুঠিবাড়িটি আড়াই তলার একটি বাড়ি। ছ’-বিঘে জমির উপর বাড়িটি। মোট ১৭টি ঘরের এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা একটি আরামকেদারা এখনও আছে। এই বাড়ির একটি সাদামাটা ঘরে কাঁঠাল কাঠের টেবিল নিয়ে ছিল রবীন্দ্রনাথের লেখার ঘর। দেওয়ালে ছিল বন্ধু উপেন্দ্রকিশোরের আঁকা চুনার দুর্গের একটি ছবি। এ বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুবান্ধব সমাগমের কথা জানিয়েছেন রথীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যরা। জগদীশচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, লোকেন্দ্রনাথ পালিত, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ছিলেন তাঁদের মধ্যে। গানে-গল্পে কখনও কুঠিবাড়ি কখনও পদ্মাবোট জমজমাট হয়ে উঠত। ১৮৯৯ সাল নাগাদ রবীন্দ্রনাথ মৃণালিনী ও শিশু পুত্র কন্যদের নিয়ে এখানে সংসার পাতেন। মৃণালিনীকে রবীন্দ্রনাথ একটা সময় জোড়াসাঁকোয় যৌথ পরিবারের কুটকচালি থেকে দূরে রাখতে চেয়েছেন। স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তাঁর সাক্ষ্য আছে। জমিদারি দেখা আর সংসার চালানোর জন্য রবীন্দ্রনাথ তখন ৩০০ টাকা মাসোহারা পেতেন দেবেন্দ্রনাথের কাছ থেকে। ছেলেমেয়েদের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থায় শিক্ষাদানও চালু হয় শিলাইদহে থাকতে। সে হিসেবে শুধু রবীন্দ্রনাথে গ্রামোন্নয়নের কাজ নয় বিদ্যালয়ের কাজের সূত্রপাতও শিলাইদহে। শিবধন বিদ্যার্ণব আর লরেন্স সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিবিজ্ঞানের পাঠ শেষ করে বিশেষত তার এক বছর পরে প্রতিমা দেবীর সঙ্গে বিয়ের পরে রথীন্দ্রনাথ এখানে শুধু সংসারই পাতেননি, কৃষি গবেষণাগারও খুলেছিলেন। প্রতিমা দেবীও ইংরেজ শিক্ষয়িত্রীর কাছে লেখাপড়া শুরু করেন। কুঠিবাড়ির চারদিকে তখন গোলাপ ফুলের বাগিচা। পরে অবশ্য রবীন্দ্রনাথের ডাকে তাঁকে শিলাইদহ ছেড়ে চলে যেতে হয় বোলপুরে, খুব খুশিমনে নয়। একের পর এক পুত্রকন্যাদের মৃত্যুশোকের ধাক্কা কাটিয়ে ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে বিশ্রাম নিয়েছিলেন কিছুকাল। সেই সময়ই ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’র অনুবাদগুলি করা হয়।
সাধারণত পদ্মা বোটে করে গোরাই-পদ্মা ছেড়ে ইছামতী বেয়ে করতোয়ার শাখা নদীর ধারে সাজাদপুর। রানি ভবানীর এই জমিদারি নিলামে উঠলে দ্বারকানাথ তা কিনে নিয়েছিলেন। সাজাদপুর কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ বিভিন্ন সময়ে বাস করেছেন। এই বাড়িতে পুরাতত্ত্ব দপ্তরের যে বিজ্ঞপ্তি রয়েছে, তাতে বলা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ১৮৯৭ সালে এ বাড়িতে শেষ এসেছিলেন। তারপর জমিদারি চলে যায় গিরীন্দ্রনাথের বংশধরদের হাতে। দু’তলা এই বাড়িটি সাহেবি স্থাপত্যে নির্মিত। প্রত্যেক তলায় সাতটি করে ঘর। কুঠিবাড়ির একতলায় ছিল পোস্টঅফিস। সেখানকার পোস্টমাস্টারের কথা রবীন্দ্রনাথ ‘ছিন্নপত্রাবলী’তে বলেছেন। ‘পোস্টমাস্টার’ ও ‘ছুটি’– সাজাদপুরের অভিজ্ঞতা থেকেই লেখা।
শেষ জীবনেও রবীন্দ্রনাথ যেখানে গেছেন সে হচ্ছে পতিসর। পতিসরের নাগর নদীর ধারে কাছারি বাড়ি। এ অঞ্চলটি এখনও অনুন্নত। ‘ছিন্নপত্রাবলী’র চিঠি পড়লে বোঝা যায় পতিসর অঞ্চলের প্রজাদের জন্য তাঁর মাথাব্যথা। ১৯০৫-এ কৃষকদের মহাজনদের হাত থেকে বাঁচাতে এখানেই শুরু করেছিলেন কৃষি ব্যাঙ্ক। নোবেল প্রাইজের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা-সহ যে ব্যাঙ্কের ভরাডুবি ঘটে। কাছারিবাড়ি থেকে একটু হেঁটে গিয়ে কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউশন। ১৯১৫ সালে দেবেন্দ্রনাথের নামে এটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৭-এ রবীন্দ্রনাথের শেষ পূর্ববঙ্গ যাত্রার সময় স্কুলটি উচ্চ বিদ্যালয় হয়, নামও বদলে যায়। পতিসরের কাছারিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত কিছু আসবাবপত্র, কাপড় ও একটি পুরনো গ্লোব এখনও রয়েছে।
পূর্ববঙ্গের জমিদারিতে রবীন্দ্রনাথ বললে আমরা উনিশ শতকের শেষ দশকের কয়েকটি বছর বুঝি, যাকে রবীন্দ্রসমালোচনায় ‘শিলাইদহ পর্ব’ বলা হয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের এই অঞ্চলগুলি সম্পর্কে দুর্বল ছিলেন শেষ অবধি। তাঁর অতি প্রিয় শিলাইদহ, প্রিয় ভাইপো সুরেন্দ্রনাথকে দিয়ে দেন তিনি। কিন্তু পতিসরের মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা চিরকাল ছিল। রবীন্দ্রনাথ পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে সামনে পতিসরের জনতা– এই ফোটোগ্রাফটি অনেকের দেখা। শুধু জমিদারি নয়, আসমানদারির ক্ষেত্রেও যে পূর্ববঙ্গ এক অন্য রবীন্দ্রনাথকে গঠন করেছেন তা ভোলার নয়।
আলোকচিত্র: অধ্যাপক অভ্র বসু
গ্রন্থঋণ:
ছিন্নপত্রাবলী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কবির আবাস, সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য
শিলাইদহ ও রবীন্দ্রনাথ, শচীন্দ্রনাথ অধিকারী
পিতৃস্মৃতি, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর
………… পড়ুন কবির নীড় কলামের অন্যান্য পর্ব …………
১. ডালহৌসি পাহাড়ের বাড়িতেই দেবেন্দ্রনাথের কাছে রবীন্দ্রনাথের মহাকাশ পাঠের দীক্ষা
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved