Robbar

অন্তরালে শুধু সুচিত্রা সেন যাননি, উমা দাশগুপ্তও গিয়েছিলেন

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 20, 2025 7:58 pm
  • Updated:September 20, 2025 7:58 pm  

‘পথের পাঁচালী’র শুটিংয়ের সময় আমি খুবই ছোট। বয়সে আমি অনেক ছোট ছিলাম বলেই বোড়ালের সেই শুটিংয়ে– সুবীরদা ও উমাদির অত্যন্ত স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছিলাম। লোকমুখে শুনেছিলাম, উমাদিকে বাবা কোনও ইন্সট্রাকশন দেননি। অর্থাৎ, সেভাবে কোনও ডিরেকশনই দিতে হয়নি। চিত্রনাট্য পড়ে এতটাই নাকি তৈরি ছিলেন তিনি! এবং স্বাভাবিকভাবেই মনে হয়নি যে, এটা ওঁর প্রথম ছবি। সকলেই খুবই চমৎকৃত হয়েছিলেন ওঁর কাজ দেখে। এমনকী, ওঁকে নাকি কখনও সেকেন্ড টেক দিতে হয়নি।

সন্দীপ রায়

উমাদি। উমা দাশগুপ্ত। ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা। বাংলা সিনেমায় কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সিনেমার সংখ্যা? একটিই। ‘পথের পাঁচালী’ই তাঁর প্রথম ও শেষ ছবি। বিস্মিত হই একথা ভাবলে! অন্তরালে চলে যাওয়া অভিনেত্রী বলতে বাঙালি সুচিত্রা সেনকেই বোঝে, কিন্তু অন্তরালে চলে যাওয়া এক কিশোরী অভিনেত্রী, যিনি বাঙালির স্মৃতিতে চিরায়ু– তিনি উমা দাশগুপ্ত।

Uma Das Gupta - IMDb

মা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলেন উমাদিকে। গ্রাম্য বালিকার মতো করে। বাবা ছবি তুলেছিলেন আমাদের লেক অ্যাভিনিউয়ের বাড়ির ছাদে। সে ছবিগুলো দেখেই বাবার ভীষণ পছন্দ হয়েছিল দুর্গাকে, ওঁর ইউনিটের সকলেরই পছন্দ হয়েছিল। কোনও ‘ফিল্ম টেস্ট’ দিতে হয়নি।

 

‘পথের পাঁচালী’র শুটিংয়ের সময় আমি খুবই ছোট। বয়সে আমি অনেক ছোট ছিলাম বলেই বোড়ালের সেই শুটিংয়ে– সুবীরদা ও উমাদির অত্যন্ত স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছিলাম। লোকমুখে শুনেছিলাম, উমাদিকে বাবা কোনও ইন্সট্রাকশন দেননি। অর্থাৎ, সেভাবে কোনও ডিরেকশনই দিতে হয়নি। চিত্রনাট্য পড়ে এতটাই নাকি তৈরি ছিলেন তিনি! এবং স্বাভাবিকভাবেই মনে হয়নি যে, এটা ওঁর প্রথম ছবি। সকলেই খুবই চমৎকৃত হয়েছিলেন ওঁর কাজ দেখে। এমনকী, ওঁকে নাকি কখনও সেকেন্ড টেক দিতে হয়নি। কী করে উমাদি, ওই বয়সে এত সাবলীল, স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ক্ষমতা দখল করেছিলেন, জানি না। তা রহস্যই। একই সঙ্গে রহস্য এই যে, এই রকম একটি ছবি করার পর, তিনি একেবারে আড়ালে চলে গেলেন পর্দার জগৎ ছেড়ে। কেন উনি অন্য ছবি করেননি, কখনও কাউকে বলেছেন বলে জানি না।

উমা দাশগুপ্ত

উমাদির সঙ্গে অল্পস্বল্প যোগাযোগ হয়েছে পরেও। অত্যন্ত লো প্রোফাইল থাকতে ভালোবাসতেন। অনুষ্ঠান-সভায় প্রায় যেতেনই না। গোড়ায় এক-দুটো অনুষ্ঠানে গেলেও, পরে যেতেনই না। শুনেছিলাম, শারীরিক নানা সমস্যা ছিল। ফলে শেষের দিকে ঘরকুনো উমাদির সঙ্গে আর দেখাসাক্ষাৎ হয়ে ওঠেনি। যখন খবর পেলাম ওঁর মৃত্যুর, তীব্র একটা মনখারাপ হয়েছিল। জীবনের একেবারে শুরুর দিকে স্নেহ পাওয়া একজন চলে গেলেন, যাঁর সঙ্গে বহুকাল কথা নেই– ভাবতেই ভার হয়ে এসেছিল মন।

……………………..

রোববার.ইন-এ পড়ুন সন্দীপ রায়-এর অন্যান্য লেখা

……………………..