চায়ের নামে বাঘ আর ছাগল? ব্রাউন পেপারের ঠোঙা, একটা স্টিকার দিয়ে সিল করা। স্টিকারের ওপর ব্র্যান্ড লোগো হলো এক কুস্তিগির বাম দিকে বাঘ আর ডানদিকে ছাগল নিয়ে, সামনে জল। আর বড় করে লেখা WAGH-BAKHRI, The strongest tea. অর্থাৎ এই চায়ের এমনই শক্তি যে বাঘে ছাগলে এক ঘটে জল খাওয়াতে পারে। মাথা ঘুরে গেল। বিজ্ঞাপনী শিক্ষা ঘেঁটে ঘ!
চা-এর গল্প বলতে শুরু করলে থামা মুশকিল। আজ আর এককাপ গল্প না বললেই নয়।
আসলে ব্রিটিশ সাহেবরা আমাদের অনেক কিছু ভালো জিনিস শিখিয়েছিল। সুগন্ধি চা পান, তার মধ্যে অন্যতম। অসাধারণ টি-কুকারিজের ব্যবহার, চা পানের একটা রয়্যাল স্টাইল, সুগন্ধি চা তৈরির রহস্য– এসবই আমাদের সাহেবদের কাছ থেকে শেখা। তবে হ্যাঁ, সব ভারতীয় এগুলো শেখেনি, যতটা বাঙালিবাবুরা শিখেছিল।
সাধারণত ভারতীয়রা কড়া অসম চা বেশি পছন্দ করে। দুধে-চিনিতে মাখামাখি বেশ কড়া চা। একবার অসম কোম্পানির একটা স্পেশাল চায়ের বিজ্ঞাপন করবার আগে মার্কেট স্টাডি করতে গুজরাতের বরোদা, আহমেদাবাদ প্রভৃতি জায়গায় গিয়েছিলাম। কারণ, ওই চা প্রথমেই গুজরাতের বাজারে বিক্রি করা হবে। ওখানে গিয়ে জীবনের সবথেকে বড় বিস্ময়ে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম! শুনলাম, গুজরাতের সব থেকে প্রিয় ব্র্যান্ড ‘বাঘ-বকরি’! চায়ের নামে বাঘ আর ছাগল? ব্রাউন পেপারের ঠোঙা, একটা স্টিকার দিয়ে সিল করা। স্টিকারের ওপর ব্র্যান্ড লোগো হলো এক কুস্তিগির বাম দিকে বাঘ আর ডানদিকে ছাগল নিয়ে, সামনে জল। আর বড় করে লেখা WAGH-BAKHRI, The strongest tea. অর্থাৎ এই চায়ের এমনই শক্তি যে বাঘে ছাগলে এক ঘটে জল খাওয়াতে পারে। মাথা ঘুরে গেল। বিজ্ঞাপনী শিক্ষা ঘেঁটে ঘ!
এরপর যে বাড়িতেই পছন্দের চায়ের খোঁজখবর করতে যাই, প্রায় সবাই আতিথেয়তা করে চা খাওয়াতে ব্যস্ত। সে কী চা! একে ‘বাঘ-বকরী’ তায় আবার দুধে গরম মশলাতে জম্পেশ গরম কী যেন একটা পানীয়! ওরা আবার ‘দার্জিলিং চা’ শুনে হাসতে হাসতে বলে, ‘ওটা তো গরম জল, চা না কি?’
সে যাই হোক, বলার কিছু নেই। আপ রুচি খানা…
আমরা এবার সুগন্ধি চায়ের গল্পে আসি। এক ব্রিটিশ সাহেব মিস্টার রোমের গল্প বলি। ওঁর সঙ্গে কাজও করেছি। এঁরা সত্যি চা নিয়ে প্রচণ্ড অবসেসড ছিল। কোয়ালিটি সম্পর্কে সদা সচেতন। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন যে, চা বাগানে চা প্রসেসড হওয়ার পর বাক্সবন্দি হয়ে চা চলে যায় অকশন সেন্টারে। খুব উত্তম দার্জিলিং ও আসাম চা চলে যায় লন্ডন অকশনে। আর মন্দের ভালো চা আসে শিলিগুড়ি ও কলকাতা অকশনে। সেখান থেকে যায় যারা ব্র্যান্ড করে বিক্রি করে তাদের ঘরে– যেমন লিপটন, ব্রুকবন্ড প্রভৃতি। আর যারা লুজ টি অর্থাৎ খুচরো চা বিক্রি করে, তাদের ঘরে। উদাহরণ, সুবোধ ব্রাদার্স বা ধ্রুব চা। যাঁরা চা বিলাসী, মনে রাখবেন লুজ টি সবসময় ফ্রেশ হয়। কারণ সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। আর প্যাকেজড টি, তা সে যত ভালোই প্যাকেজিং হোক কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ মাসের পুরনো হয়। কারণ, অনেকগুলো ফর্মাল প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাতে সময় লাগে এবং ভেতরের চা তার ঐশ্বর্য হারাতে পারে।
তা, সেই কোনও এক লন্ডন অকশনের আগে রোম সাহেব হঠাৎ অসম চায়ের একটা পেটি খুলেই তাজা চায়ের গন্ধে এক মন্দের আঁচ পেলেন। ভালো করে শুঁকে আসামের একরকম সুপুরি গুয়ার গন্ধ পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই চায়ের অকশন বন্ধ করে দিলেন। কী সাংঘাতিক ঘ্রাণশক্তি ভাবুন! তারপর খোঁজ খোঁজ। দেখা গেল, মাস তিনেক আগে, অসম বাগানের যে ফ্যাক্টরি তে সেই চা প্রসেসড হয়ে ছিল, সেখানে ওই ফ্যাক্টরিতে কাজ করা এক আদিবাসী গুয়া (কাঁচা সুপুরি) ভক্ত মহিলা গুয়া খেতে খেতে ওই হাতে শুকনো চা, বাক্সবন্দি করেছিলেন। যদিও গুয়া নিয়ে চায়ের কাছে যাওয়া ক্রিমিনাল অফেন্স। আর সাহেবের নাক বা ঘ্রাণশক্তি কী পাওয়ারফুল! তিন মাস পরেও ঠিক ধরে ফেলে ছিলেন। সত্যি করে সাহেবরাই চায়ের মাহাত্ম্যকে বুঝতেন, আমরা কতটুকু বুঝি!
না হলে ‘বাঘ-বকরী’ চায়ের নাম হয়?
আজ যখন আমরা মার্কস ও এঙ্গেলসের বন্ধুত্বকে নতুন চোখে দেখে কমিউনিস্ট ইতিহাস রচনার কথা ভাবি, তখন একই সঙ্গে কমিউনিস্ট আন্দোলনের নারীবাদী ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের মেয়েদের এই বিপ্লবী কমরেডশিপের সম্ভাবনার, নারীবাদী বন্ধুত্বের রাজনীতির দিকেও নজর দিতে হবে।
সোমেন চন্দ খুন হয়েছিলেন সংগঠক হিসেবে। সক্রিয়তার মাপকাঠিতে তাঁর কাছে ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছিলেন তথাকথিত জাতীয়তাবাদী শক্তি। এবং এটাই যে তাঁকে হত্যা করার কারণ, এতেও আমাদের সন্দেহ নেই। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যেসব মেসেজ জনমানসে; বিশেষ করে শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল, তার সঙ্গেও মতাদর্শগত বিরোধ কম ছিল না। রাজনৈতিক সংগঠক সোমেন এবং লেখক সোমেন ছিলেন গা জড়াজড়ি করে।