প্রায় তেল ছাড়া চুনো মৌরলা লাউপাতায় মুড়ে ভাজাপোড়া নিভু উনুনের আঁচে বসিয়ে চচ্চড়ি রান্নার তরিকাটির সঙ্গে পঞ্চাশ তেল কেনার সামর্থ, টালির চালে লাউডগা লতিয়ে ওঠা এবং আঁচের শেষটুকুতে ‘যেটুকু যা হয়’ জড়িত, অন্য কোনও ‘ঐতিহ্য’ নয়।
আমার ঠাকুরদা সিদ্ধেশ চৌধুরী। খুব বেশি বাঁচেননি তিনি। ‘সিদ্ধেশ’ মানে সিদ্ধি বা সাফল্যের দেবতা, তার মানে তো গণেশই। বাবার হয়তো এই সূত্র ধরেই গণেশ সংগ্রহের প্রতি এক ধরনের ঝোঁক গড়ে উঠেছিল। বসন্ত চৌধুরীর ২৫-তম প্রয়াণ দিবসে বসন্ত পঞ্চমীর শেষ পর্ব।
বসন্তপঞ্চমীর এই পর্বে বসন্ত চৌধুরীর থিয়েটারের কথা। এসেছে খেলাধুলোর কথাও। মাহজং নামের এক আশ্চর্য চিনা খেলায় আসক্ত ছিলেন তিনি ও ছবি বিশ্বাস। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় থেকে শুরু করে বসন্ত চৌধুরীর কালানাক্রমিক থিয়েটার করার কথা রইল এই পর্বে।
বসন্তপঞ্চমীর এই পর্বে, বসন্ত চৌধুরীর আলাপ-পরিচয়ের সিনেমার লোক। রাতে নেমন্তন্ন খেতে আসা উত্তমকুমার হোক, কিংবা একই পাড়ায় থাকা কানন দেবীর আশ্চর্য বাড়ির কথা।
বসন্তপঞ্চমীর প্রথম পর্ব ছিল বসন্ত চৌধুরীর পোশাকআশাক নিয়ে। দ্বিতীয় পর্বে, তাঁর বাড়ির পোষ্য জীবজন্তু। কখনও পপি নামের আহ্লাদী কুকুর, কখনও-বা রোজি নামের কচ্ছপ। দুম করে অন্দরমহলে ঢুকে পড়া বিদেশি একটি বিড়াল, অথচ যার ততটা বিড়ালপ্রেম নেই– এহেন বসন্ত চৌধুরীরও একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
মনসুরের তৈরি করে দেওয়া এক ধরনের পাঞ্জাবিই রীতি মেনে বাবাকে পরতে দেখেছি। পাঞ্জাবি অবশ্যই অনেকগুলো, নানা সময়ে তৈরি করতে দেওয়া। কিন্তু প্রতিটা পাঞ্জাবিই এক্কেবারে একইরকম দেখতে। ছয়ের দশকের পাঞ্জাবির নকশা বা কাপড় যা, নয়ের দশকেও তাই।
জীবনের ১০টা বছর কারাগারে থাকার পর কেউ যখন বাইরে আসে তখন এই ১০ বছরে পালটে যাওয়া পৃথিবীর সঙ্গে সমঝোতা কীভাবে করে? এর দায় রাষ্ট্র নেয় না। যেমন কোনও দায় নেয় না জেলে থাকা রাজবন্দিদের জীবন-জীবিকার। চলতে থাকে ফেলে আসা সময়, হারিয়ে যাওয়া সময় ও বর্তমান সময়ের সঙ্গে জোর লড়াই।
রাষ্ট্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই জেল এবং বাইরের প্রিয়জনদের সেতু গড়তে থাকে। জামিনপ্রাপ্ত বন্দিরা জান কবুল করেন ভিতরে থাকা বন্ধুদের বার্তা তাঁর প্রিয়জনদের পৌঁছে দিতে। নজরদারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলতে থাকে চিঠি চালাচালি। প্রিয়জনদের কাছে যাওয়ার জন্য, ক্ষণিকের মুলাকাতের জন্য।
কখনও ইশারায়, চিরকুটে অন্য বন্দিদের সঙ্গে কথা বলে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে, কখনও পুলিশি নির্যাতনের আহত কমরেডকে নজরদারি এড়িয়ে গার্ডদের ফাঁকি দিয়ে কোনও কমরেডের মন ভালো করতে রুটিতে কিছুটা চিনি মাখিয়ে চমকে দেওয়ার মাধ্যমে, তো কখনও একসঙ্গে বসে সুখ দুঃখ বৃষ্টি বজ্রপাত ভাগ করে এই নিরন্তর অপেক্ষা কাটানোর মাধ্যমে, প্রতিদিন নানাভাবে সংগঠিত হতে থাকে প্রতিরোধ, প্রতিবাদ।
আত্মীয়তা, সংহতি, বন্ধুত্বের রাজনীতিকেই ভয় করে শাসক। তাই জনমানসে কারাগার, কারাজীবনকে বরাবর এক অপরাধ সম্পৃক্ত বিপজ্জনক পরিসর হিসেবে চিহ্নিত করতে লাগে। বন্দিদের অপরাধ প্রমাণের আগেই তাঁদের অপরাধী করে তুলতে লাগে, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই সাজা চলতে থাকে। মেয়েদের রাজনৈতিক সত্তাকে অস্বীকার করলেও, মেয়েদের রাজদ্রোহিতা তাই শাস্তিযোগ্য।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved