রক্তমাংসে গড়া ওই মানুষটি শিশুর মতোই কাঁদছে! আজ ‘সব পেয়েছির দেশে’-র মুক্তশ্বাসও তার চোখের জলের গতিরোধ করতে পারেনি। আমেদাবাদের ক্রিকেট মহাযজ্ঞ তখন সমাপ্তির দোরগোড়ায়, গ্যালারি ট্রফি জয়ের উল্লাসে উদ্বেল। সেই আবেগ-সুনামিতে ভাসছেন এবি ডিভিলিয়ার্স নামক ক্রিকেট-নক্ষত্র, সাধনার বেদীমূলে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েও বারবার শূন্য হাতে ফিরে আসাটা যাঁর নিয়তি নির্ধারিত ছিল। ক্রিকেট দেবতা আজ আর নিষ্ঠুর হননি। অবসরের পৃথিবীতে চলে যাওয়া মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রির প্রাপ্তির ঝুলি পূর্ণ করে দিয়েছেন বিধাতা।
আপনি কি ক্লান্ত?
জীবন যুদ্ধে লড়াই করতে করতে হতোদ্যম?
হতাশার পাড়ে দাঁড়িয়ে শেষের প্রহর গুনছেন?
ভাবছেন, ব্যস, আর নয়, অনেক হয়েছে, আমার দ্বারা হবে না! কিচ্ছু হবে না!
ভাববেন না!
ভাববেন না, মশাই, একদম ভাববেন না!
এসব ভাবার আগে অন্তত ওই মানুষটার দিকে তাকান। অন্তত একবার তাকান। দেখুন, হাপুস নয়নে কাঁদছে কেমন! অঝোর ধারায় যেমন আকাশের ঘ্রাণ নিয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে আসে বারিধারা। দেখুন, ওই পোক্ত চোয়ালের শক্ত ‘দেওয়াল’ বেয়ে তেমনই নেমে আসছে অশ্রুধারা, মুক্তোধারার মতো ঝরঝর করে।
না, মশাই, ও কান্নায় কোনও খেদ নেই, বরং খুশি আছে। আক্ষেপ নেই, আনন্দ আছে, প্রাপ্তি আছে। যে পরমপ্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা করা যায় ১৮ বছর! বিলিয়ে দেওয়া যায় নিজের যৌবন, শ্রেষ্ঠত্ব। শুধু আঁকড়ে ধরা যায় ফুরিয়ে আসা বিকেলের একমুঠো রোদের মতো স্বপ্নকে, যা তাকে প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে পৌঁছে দেবে সাফল্যের দেবলোকে। এক অনন্য মানস সরোবরে।
তবু রক্তমাংসে গড়া ওই মানুষটি শিশুর মতোই কাঁদছে! আজ ‘সব পেয়েছির দেশে’-র মুক্তশ্বাসও তার চোখের জলের গতিরোধ করতে পারেনি। আমেদাবাদের ক্রিকেট মহাযজ্ঞ তখন সমাপ্তির দোরগোড়ায়, গ্যালারি ট্রফি জয়ের উল্লাসে উদ্বেল। সেই আবেগ-সুনামিতে ভাসছেন এবি ডিভিলিয়ার্স নামক ক্রিকেট-নক্ষত্র, সাধনার বেদীমূলে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েও বারবার শূন্য হাতে ফিরে আসাটা যাঁর নিয়তি নির্ধারিত ছিল। ক্রিকেট দেবতা আজ আর নিষ্ঠুর হননি। অবসরের পৃথিবীতে চলে যাওয়া মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রির প্রাপ্তির ঝুলি পূর্ণ করে দিয়েছেন বিধাতা। যেমন দিয়েছেন ক্রিস গেইল নামক ‘ইউনিভার্স বস’-কে। অথচ, ওই মানুষটিকে দেখুন। তখনও কাঁদছে! কেঁদেই চলেছে!
এবং তার ফোঁপানো কান্নায় মিশে যাচ্ছে আবেগের চোরাস্রোত। নিভে হয়ে আসছে ব্যর্থতার দহন। দানবের মতো ওই বিশাল মোতেরায় শুধু উজ্জ্বল দেখাচ্ছে তার গায়ে লেপ্টে থাকা জার্সি– ওই ১৮ নম্বরটুকু। যে জার্সি আসলে পূর্ণতার। ধৈর্যের। যা অন্তরের বিশ্বাসকে জারিত করে এক আত্মবিশ্বাসী স্ফুলিঙ্গে, অনন্ত রাত্রি শেষে জাগিয়ে তোলে আলো, চলিষ্ণু জীবনকে শুনিয়ে যায় অমোঘ বাণী, ধৈর্যের পরম শক্তি গভীর সাধনায়, যা পৌঁছে দিতে পারে অভীষ্ট লক্ষ্যে।
যে ধৈর্যের পরীক্ষায় নিজেকে সঁপে কেরিয়ারের প্রথম ট্রফি জয়ের স্বাদ পান হ্যারি কেন। ব্যর্থতার কুহক মুছে শিরোপা জয় করে সন হিউন-মিনের নেতৃত্বে টটেনহ্যাম। ওই একই পথে আলো জ্বেলে ট্রফি জয়ের ভাগীদার হয় জাবি আলেন্সোর কোচিং-এ বেয়ার লেভারকুসেন। ব্যর্থতার চোরাগলি ছেড়ে সাফল্যের রাজপথে ফেরে লিভারপুল।
খেলা এমনই এক ধৈর্য পরীক্ষার অগ্নিকুণ্ড, যা তার মহীরুহকেও রেয়াত করে না। ক্রিকেট কেরিয়ারের অন্তিম লগ্নে পৌঁছে বিশ্বকাপ পেয়েছিলেন শচীন। ২৪ বছরের শবরীর প্রতীক্ষা শেষে। লিওনেল মেসিও সহজে পাননি বিশ্বজয়ীর বরমাল্য। ক্রিশ্চিয়ানো তো চল্লিশেও যক্ষের মতো আকাঙ্ক্ষা আগলে বসে। আসলে ধৈর্যের ফল বরাবরই মিঠে হয়। কান্তিরাভার রাত যেমন জানে অপেক্ষা শেষে সবুজ-মেরুন উচ্ছ্বাসের আকুলতা। বাংলার মাটি জানে, ৩৪ বছরের অপশাসনের অবসানে এক অগ্নিকন্যার ঐতিহাসিক উত্থান। রবিবাসরীয় রাতে তাই আইপিএলের ইতিহাসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অবাঞ্ছিত নয়, বরং কাঙ্ক্ষিত ছিল। অভিপ্রেত ছিল আরসিবি-র ‘ইয়ে সালা কাপ নামদু’ স্লোগানের সার্থকতা। আসলে অন্যথা চাননি ক্রিকেট দেবতাও, শুধু একটি মানুষের বিরাটত্বের অভিলাষে।
কে?
কেন, ওই যে, ওই মানুষটা। ১৮ বছরের অপেক্ষা যাঁকে পৌঁছে দিয়েছে অভীষ্টে। যিনি আজ কাঁদছেন। বাধাহীন আবেগে কাঁদছেন। ক্রিকেটযাত্রায় তাঁর প্রাপ্তির ঘরা অবশেষে পূর্ণ। আর হারানোর কিছু নেই। লুকানোর কিছু নেই। পুরোটাই ওপেন সিক্রেট। তাই তাঁর চোখে জল। কষ্ট নয়, আনন্দাশ্রু।
ওহ্, দেখেছেন ভদ্রলোকের নামটাই বলতে ভুলে গেছি!
বিরাট কোহলি (Virat Kohli), অলওয়েজ রিমেম্বার দ্য নেম!
…………………… পড়ুন ওপেন সিক্রেট-এর অন্যান্য পর্ব …………………….
পর্ব ২০: মনকে শক্ত করো টেস্ট, রাজা আর ফিরবেন না
পর্ব ১৯: মুকুল কিংবা ফিলিস্তিনি বালক, খুঁজে চলেছে যে যার ঘর
পর্ব ১৮: ধোনিবাদ: ধাঁধার চেয়েও জটিল তুমি…
পর্ব ১৭: সাদা সাদা কালা কালা
পর্ব ১৬: গতবারের বিক্রি প্রতিবারই ছাপিয়ে যায় বইমেলা, কারণ দামবৃদ্ধি না পাঠকবৃদ্ধি?
পর্ব ১৫: সেন ‘মায়েস্ত্রো’কে ভুলে বাঙালি দেখিয়েছে, সে আজও আত্মবিস্মৃত
পর্ব ১৪: শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসই বাঙালির প্রকৃত সান্তা
পর্ব ১৩: প্রবাসে, দোতলা বাসে, কলকাতা ফিরে আসে
পর্ব ১২: না-দেখা সেই একটি শিশিরবিন্দু
পর্ব ১১: ঘোর শত্রুর বিদায়বেলায় এভাবে বলতে আছে রজার ফেডেরার?
পর্ব ১০: অভিধানের যে শব্দটা সবচেয়ে বেশি মনুষ্যরূপ ধারণ করেছে
পর্ব ৯: জোট-অঙ্কে ভোট-রঙ্গ
পর্ব ৮: দক্ষিণ বিসর্জন জানে, উত্তর জানে বিসর্জন শেষের আগমনী
পর্ব ৭: পুজো এলেই ‘সর্বজনীন’ নতুবা নিঃসঙ্গ?
পর্ব ৬: এক্সক্লুসিভের খোয়াব, এক্সক্লুসিভের রোয়াব
পর্ব ৫: শাসন-সোহাগের দ্বন্দ্বসমাস
পর্ব ৪: পাঁকাল সাধনায় নাকাল
পর্ব ৩: দেখা ও না-দেখার সিদ্ধান্ত
পর্ব ২: মহাবিশ্বে যে টোকে না, সে বোধহয় টেকেও না
পর্ব ১: অফিসে দৈবের বশে প্রেমতারা যদি খসে
মজার বিষয়, শ্যাম বেনেগাল যখন হঠাৎই 'বোস: দ্য ফরগটেন হিরো' বানাচ্ছেন, এনডিএ আমলের শেষ ও ইউপিএ আমলের শুরুর আবহে, তার আশপাশে ভগৎ সিংয়ের গোটা দুই বায়োপিক মুক্তি পেয়ে গেছে, একটিতে নায়ক অজয় দেবগণ, অন্যটিতে সানি দেওল। অজয় দেবগণ অভিনীত বায়োপিকটিই বেশি স্মর্তব্য হয়ে রইল, সানি দেওলের 'ঢাই কিলো কা হাত' এক্ষেত্রে অকেজো হয়ে গেল।