Robbar

পায়ে লেখা যৌথ-কবিতা

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 21, 2025 8:14 pm
  • Updated:November 21, 2025 8:14 pm  

যৌথ পরিসংখ্যান কেমন? দু’জনে একসঙ্গে খেলা ১৪২টি ম্যাচে একে অপরের সাহায্যে করা গোল ১৬, মেসির ৯টি গোলে অ্যাসিস্ট ডি মারিয়ার, অন্যদিকে বন্ধুকে ৭টি গোল করিয়েছিলেন তর্কাতীতভাবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট টু এভার প্লে ফুটবল’। এবং কন্ট্রাডিকশন– বিপরীত তথ্যেও চোখ বোলানো যাক। মেসির বার্সা, পরে পিএসজি– এবং ডি মারিয়ার বেনফিকা, রিয়েল– সব মিলিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে দু’জনে গোল করেছেন ১৯টি– মেসি করেছেন ১৫টি গোল, অন্যদিকে ডি মারিয়ার গোল ৪টি। যদিও তা বাহ্য। ২২ জনের সবুজ ঘাসে লিও-অ্যাঞ্জেল একে অন্যের তিন কাঠি কাঁপানোয় মুখ নিচু করছেন, প্যারালাল ইউনিভার্স ছাড়া এ ছবি বিশ্বাস করা কষ্টের।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য

৩.

‘২০০৮-এর অলিম্পিক আমার জীবন পালটে দিয়েছিল। আমি কিন্তু তখনও বেনফিকাতে স্টার্টিং লাইন আপে ছিলাম না, তবুও আর্জেন্টিনা আমাকে খেলতে ডাকল। কখনওই ভুলতে পারব না সেই দিনটা। সেই টুর্নামেন্ট আমাকে লিও মেসির পাশে খেলতে সুযোগ দিল, সেই মেসি, যে অন্য গ্রহের, যে জিনিয়াস। খেলা থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় সুখ আমার কাছে এটাই। আমার একটাই কাজ ছিল, ফাঁকা জায়গা পেলে দৌড়নো। আমি দৌড়নো শুরু করতাম আর বল আমার পায়ে এসে পৌঁছত, যেন ম্যাজিক।

লিওর চোখ ঠিক আপনার চোখ বা আমার চোখের মতো কাজ করে না। বাকি সব মানুষের মতো দু’দিকেই দেখে, আবার পাখির মতো ওপর থেকেও দেখে। আমি আজ অবধি বুঝতে উঠে পারলাম না, এটা কী করে সম্ভব!’

ইন দ্য রেইন, ইন দ্য কোল্ড, ইন দ্য ডার্ক। ট্রাজিক ২০১৪ এবং পরবর্তী সময়ে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার সেই স্বপ্নময় লেখা। কনফেশন। বন্ধু-বন্দনা নয়, যেন সলিলোকি করছেন, লেখাটা উঠে এসেছিল এমনভাবেই। ফুটবল জীবনে পাওয়া সবচেয়ে বড় সুখ– মেসি আর ডি মারিয়া– একসঙ্গে– ছুটছে ছুটছে ছুটছে…

যৌথ পরিসংখ্যান কেমন? দু’জনে একসঙ্গে খেলা ১৪২টি ম্যাচে একে অপরের সাহায্যে করা গোল ১৬, মেসির ৯টি গোলে অ্যাসিস্ট ডি মারিয়ার, অন্যদিকে বন্ধুকে ৭টি গোল করিয়েছিলেন তর্কাতীতভাবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট টু এভার প্লে ফুটবল’। এবং কন্ট্রাডিকশন– বিপরীত তথ্যেও চোখ বোলানো যাক। মেসির বার্সা, পরে পিএসজি– এবং ডি মারিয়ার বেনফিকা, রিয়েল– সব মিলিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে দু’জনে গোল করেছেন ১৯টি– মেসি করেছেন ১৫টি গোল, অন্যদিকে ডি মারিয়ার গোল ৪টি। যদিও তা বাহ্য। ২২ জনের সবুজ ঘাসে লিও-অ্যাঞ্জেল একে অন্যের তিন কাঠি কাঁপানোয় মুখ নিচু করছেন, প্যারালাল ইউনিভার্স ছাড়া এ ছবি বিশ্বাস করা কষ্টের।

আর্জেন্টিনা। সান অফ মে। নীল-সাদা, ৩৬ বছরে তিন তারা ছুঁতেও ছুঁতেও ছিটকে যাওয়া স্বপ্ন এবং ২০২২। এসবের মাঝে দেশের হয়ে খেলার ক্রনোলজি। লিওর প্রথম ম্যাচ ১৭ আগস্ট, ২০০৫, অন্যদিকে বন্ধু ডাক পেয়েছিলেন তিন বছর পর, ২০০৮-এর ৬ সেপ্টেম্বর। দু’জনে একসঙ্গে দেশের হয়ে জুনিয়র দলে মাঠে আসার স্মৃতি ২০০৮-এর সেই অলিম্পিক, ৭ আগস্ট। আইভরি কোস্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে হাতে হাত। সিনিয়র দলে একসঙ্গে খেলা সে-বছরই ৬ সেপ্টেম্বর, প্যারাগুয়ে ম্যাচে। লেগ্যাসি চলতে চলতে ২০২৪-এর কোপা ফাইনাল। গোলের ইতিহাস? ২০০৮ অলিম্পিকের কোয়ার্টার ফাইনাল, ১৬ আগস্ট। ২-১ গোলে জেতা ম্যাচে ১৪ মিনিটে লিও-র ১-০-র স্কোরলাইনের সুখ নিভিয়ে দিয়েছিল ৩৬ মিনিটের কমলা ঝড়, ওটম্যান বাক্কালের গোল। ১০৫ মিনিটের লিও-অ্যাঞ্জেলের কমরেডারি, যৌথ কবিতার প্রথম লাইনে তিন কাঠিতে বল জড়ালেন অ্যাঞ্জেল, অ্যাসিস্ট লিও-র। এবং ২৩ ডিসেম্বরের অলিম্পিক ফাইনালে সেই ‘পয়া’ আঞ্জেল ডি মারিয়ার গোল– ‘সান অফ মে উইথ ট্রফি’র সমার্থক– এবং অ্যাসিস্ট সেই লিও মেসির। শুরুর ইতিহাস, স্বপ্নের ইতিহাস এখান থেকেই…

২০০৮ অলিম্পিক, আর্জেন্টিনা বনাম আইভরি কোস্ট

২০১৪-র ফাইনালের রেট্রোস্পেক্টিভ, বারবার। ঘুমিয়ে পড়লেই দুঃস্বপ্নের মোচড়। যতোই ২০২২ আসুক, কোথাও না কোথাও রক্ত ঝরাবেই ২০১৪। প্রি-কোয়ার্টারে সুইজারল্যান্ড ম্যাচে ১১৮ মিনিটে লিওর পাস থেকে উড়ে আসা অ্যাঞ্জেলের নীল-সাদা ডানা, নিখুঁত কাঁপিয়ে দেওয়া জাল। বেলজিয়াম ম্যাচের চমৎকার টিম-গেম, হিগুয়েনকে দেওয়া গোলের পাসের পর, সেই ‘অ্যাঞ্জেল অফ আর্জেন্টিনা’র ঊরুর পেশিতে চোট, রিয়েলের থ্রেট চিঠি, কোচ সাবেল্লার চোখের দিকে, সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকা দীর্ঘতর সময়, কেরিয়ার নিয়ে প্রশ্ন। টালমাটাল, অশ্রুবৎ সেই সময়ে অ্যাঞ্জেলের সলিলোকি – ‘হোয়াট রিয়েলি মেড মি ক্রাই, দ্যাট আই উইল নট প্লে উইথ মেসি এগেইন, আই উইল নট প্লে উইথ মাই ফ্রেন্ড…’ এবং করুণ সেই লেগ্যাসি, চলছিল, চলছিল। ’১৪-র পর ’১৫-র কোপা ফাইনালের ফার্স্ট হাফে হ্যামস্ট্রিং চোটে উঠে যাওয়া, ’১৬-র কোপায় লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে ওটামেন্ডিকে গোলের পাস বাড়িয়েও চোট, ছলছল করে সবুজ ঘাস আর রিজার্ভ বেঞ্চের ভেতর কমতে থাকা দূরত্ব, একা হয়ে যাওয়া, কোনওদিন আর দেশের হয়ে শিখরে না পৌছনোর চরমতম আশাহীনতার ভয়, ট্রাজিক, ট্রাজিক।

কোপা আমেরিকায় ডি মারিয়ার চোট

আরও আরও চারটে পাঁচটা বছর। অভিশাপের রাশিয়া ২০১৮, ২০১৯-এর ধূসর কোপা, অবশ্য এর মাঝেই ’১৮-র দুঃস্বপ্নের ‘ক্লাসিক্স অফ কাজান’– ৩-৪-এর ফ্রান্স ম্যাচে ভুল করে ঘরে ঢুকে পড়া রোদ্দুরের মতো ৪১ মিনিটে অ্যাঞ্জেলের ওই লং-রেঞ্জার গোল– খারাপ সময়ে ওই গোলের স্মৃতি আসলে আত্মঘাতী হয়ে বুকে বেঁধে, মে মাসের সূর্যে ঢুকে পড়ে বিসংবাদী মেঘ। দেখা যায় না, দেখা যায় না কিছু।

এবং ঠিক এই সন্ধিক্ষণে, ’১৮-র ২৫ জুন প্লেয়ার্স ট্রিবিউনে সেই লেখা– ‘বৃষ্টির ভেতর, শীতের ভেতর, অন্ধকারের ভেতর…’। প্রিয় সাইকেল হারকিউলিস, টিনের ঘর, কয়লা খনির গন্ধ, সাইকেল করে মায়ের চড়াই পাহাড় বেয়ে ছেলেকে ফুটবল ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার শ্রম। লড়াই, লড়াই, লড়াই। ঠিক কোথায় গিয়ে এক হয়ে গিয়েছিল দুটো মানুষের ট্রাজেক্টরি? লিও-অ্যাঞ্জেল দুজনেই রোজারিও থেকে উঠে এসেছেন। জন্মদিনের এক বছরেরও কম সময়ের ফারাক। লিও-র ’৮৭-র ২৪ জুনের ঠিক আট মাস পর অ্যাঞ্জেলের ’৮৮-র ১৪ ফেব্রুয়ারি। প্রেমের দিনে ভালোবাসার সংজ্ঞার জন্ম। লিওর গ্রান্দোলি এফসি-র পর স্বপ্নের সেই নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ, ক্লাবের জুনিয়র টিমের মিথ হয়ে যাওয়া ‘মেশিন অফ এইটি সেভেন’, মোট ছ’ বছরে লিও-র একারই ৫০০ গোলের অভাবনীয়তা। পাশাপাশি অ্যাঞ্জেলের টোরিটো হয়ে ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রাল, যার পাড়ায় পাড়ায়, দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার পোস্টার, গ্রাফিত্তি। এবং মারাদোনার প্রতি আজন্ম শ্রদ্ধা। আজীবন মানুষটিকে মেন্টর হিসেবে বুকে রেখে দিয়েছেন মেসি। পাশাপাশি বলিভিয়া ম্যাচের পর ছ’ ম্যাচ নির্বাসনে থাকার পরেও ২০১০-এর বিশ্বকাপে স্কোয়াডে নির্দ্বিধায় ডেকে নেওয়ার কৃতজ্ঞতা এখনও অ্যাঞ্জেলের চোখে মুখে– ‘হি সাপোর্টেড মি হোয়েন নো ওয়াজ এলস ডিড…’

‘হি সাপোর্টেড মি হোয়েন নো ওয়াজ এলস ডিড…’

এর পরেরটুকুতে হারকিউলিসের মতো পাহাড় বেয়ে ওঠার মতো গল্পের বাঁক নিই। টু দ্য টপ, টু দ্য টপ, টু দ্য টপ। ’২১-এর কোপা ফাইনালের ঐতিহাসিক ২২ মিনিট। অলিম্পিকের পর আবার ফাইনালে লাকি অ্যাঞ্জেলের গোল। দ্যাট চিপ। বাকি সব কিছু, সমস্ত কিছুর জন্ম ওই ২২ মিনিটে। একটা কোপা, কয়েকটা দেশ মিলে খেলা একটা লাতিন আমেরিকান ট্রফি কতটা, কতটা জরুরি, বোঝানো যাবে না বাকিদের। শেষ বাঁশির কান্না। ট্রফি নিয়ে ওপরে তোলার আগের মুহূর্তে ক্যাপ্টেনের ওই সিগনেচার সেলিব্রেশন, ট্রফি কয়েকবার ঝাঁকিয়ে, ঝাঁকিয়ে, হইহই হইহই আনন্দ। সেই সিগনেচারের রিপিট টেলিকাস্ট সেখান থেকেই যে শুরু! ’২২-এর ফিনিলিসিমা। নাহ, আলাদা করে গুরুত্ব নেই। তবু, গুরুত্ব ছিল। কেন! কারণ ফাইনালের ওই লাকি-ম্যান। ওয়েম্বলি, ৪৬ মিনিটে লিওর পাস থেকে অ্যাঞ্জেল গোল। অর্থাৎ, ফাইনাল কথা বলছে মেসি-ডি মারিয়ার পায়ে। চোকার্স নয়, আর চোকার্স লেগ্যাসি নয়। কাতার। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে পিটার ড্রুরির কণ্ঠ। ‘থার্টি সিক্স ইয়ার্স আফটার মারাদোনা অ্যান্ড মেক্সিকো’। গোটা টুর্নামেন্টে অনবদ্য ফুটবল এবং জুটির পরেও দু’জনের যৌথ স্মৃতিতে ফাইনালের আগে অবধি একমাত্র পালক মেক্সিকো ম্যাচে লিওর ম্যাজিকাল গোলের আগে একটি ডি মারিয়ার একটি নির্বিষ অ্যাসিস্ট, যাকে ঠিক ‘গোলের ঠিকানা লেখা পাস’, এমনটা বলা যাবে না। ১৮ ডিসেম্বরের ফাইনাল। অপ্রতিরোধ্য অ্যালবিসেলেস্তে। ৩৫ মিনিট। ডেম্বেলের কিছু করার ছিল? না ফেলে দীর্ঘদেহী, শীর্ণকায় ওই দেবদূতকে আটকানোর? লিও-র প্রথম পেনাল্টিতে পিটার ড্রুরির কন্ঠ– ‘আ হার্টবিট, আ ব্রেথ, অ্যান্ড মেসি…’। ম্যাজিকাল টিমগেমে লিও-র ওই স্বর্গীয় টাচ, ম্যাকালিস্টারের পাস, পিটার ড্রুরির গলায় ‘ডি মারিয়া ইজ দ্য স্পেয়ার ম্যান, অ্যানহেল ডি মারিয়া, গ্লোরিয়াল গোল…’। পরিণতি ২-০। অথচ দাপুটে ৭৫ মিনিটের পর থেকে হঠাৎ অন্ধকার। ’১৮ অবধি চলতে থাকা দেশের ট্রফি-ইতিহাসের যেন পুনরাভিনয়– স্ক্রিনে, কালো কালো হতাশ চোখে অবিশ্বাস। এদিকে অ্যাঞ্জেল তখন তো মাঠে নেই। কীভাবে হাত রাখবেন লিও-র পিঠে। ৩-২-এর পর রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে ছুটে এলেন, পাশে গোটা টিম, তারপর আবার ৩-৩। জার্সিতে মুখ ঢাকলেন মানুষটা। এত দূরে এসেও হেরে যাবে লিও! হতেই পারে না। ফাইনালে তাঁর নিজের গোল আছে। টাইব্রেকার আছে। জালের সামনে এমি। হতে পারে না। জেতা ছাড়া আর কোনও ডেস্টিনি থাকতে পারে না। অন্যদিকে কিলিয়ানের তিন নম্বরের পর শরীর ঝুঁকিয়ে অবিশ্বাসী হাসছেন লিও। এবারও কি হল না, আর কি হবেই না কখনও! কোলো মুয়ানির শটে এমির ওই সেভ। কৃতজ্ঞতা, কৃতজ্ঞতা। টাইব্রেকার। নীল-সাদার নিখুঁত চার চারটে জোরালো চোয়াল, চোখ, গোড়ালি, হাঁটু, বুক, গোটা শরীরের এক-একটা অংশ। এবং ক্রমশ ভুল করতে থাকা ফ্রান্স। শেষ বাঁশিতে কান্না। বুকে হাত রেখে ক্রস, আবার বুকে হাত, তারপর দু’হাত জড়ো করে প্রণাম। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার ওই সিগনেচার সেলিব্রেশন যেন দুজনের সম্পর্কের সংজ্ঞা। অনেকটা চাপহীন ’২৪-এর ১৫ জুলাইয়ের কোপা ফাইনাল কিছুটা কালো করে দিল লিও’র চোট। ৬৫ মিনিটে কাঁদতে কাঁদতে উঠে যাওয়ার আগে আর্মব্যান্ড পরিয়ে দিলেন ডি মারিয়াকে, সেই ডি মারিয়াও ১১৭ মিনিটে উঠে গেলেন। অবশ্য ততক্ষণে, ম্যাচের ১১২ মিনিটে, লাউতেরো কলম্বিয়ান জাল ছিঁড়ে দিয়েছে। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে উঠে এসেছেন মেসি। সেলিব্রেশনে ট্রফি হাতে এগিয়ে দিয়েছেন অবসরের চৌকাঠে থাকা ডি মারিয়া, সবচেয়ে সিনিয়র ওটামেন্ডিকে। কেন লিও, কেন সবার চেয়ে এগিয়ে লিও মেসি– অ্যাঞ্জেল জানতেন, গোটা পৃথিবী ক্রমশ বিশ্বাস করল। কিছুই না জোটা এতগুলো বছরের পর মাত্র দু’বছরের ভেতর একটা ওয়ার্ল্ড কাপ, দুটো কোপা এবং একটা ফিনিলিসিমা। অবিশ্বাস্য, অবিশ্বাস্য। ’২৪-এর সেপ্টেম্বরে এস্তাদিও মনুমেন্টাল মাঠ, রিভার প্লেটের হোম গ্রাউন্ডে ওই ৩-০-তে উড়িয়ে দেওয়া চিলি ম্যাচ এবং স্ট্যান্ডিং ওভেশন। আলো ছড়াচ্ছেন ম্যাকালিস্টার, আলভারেজ, ডিবালা-রা। পাকাপাকি খেলা ছাড়ার পরেও সেই ম্যাচে স্পেশাল ট্রিবিউটে অ্যাঞ্জেলের সঙ্গে দলের সবাই পরলেন ১১ নম্বর। লিও? লিও কোথায়? চোটেও আটকানো যায়নি। নিজে না খেলেও দূর থেকে ট্রিবিউট দিলেন বন্ধুকে। ম্যাচ শেষে গ্যালারির দিকে আঙুল দেখিয়ে অ্যাঞ্জেল বললেন– ‘নাও, আই উইল বি জাস্ট অ্যানাদার ফ্যান, চিয়ারিং দ্য টিম, ফ্রম আপ দেয়ার…’

বিশ্বকাপ হাতে লিও মেসি এবং অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া

২০২৬। দ্য আমেরিকান ড্রিম। চারটে তারার মিটিমিটি স্বপ্ন। যেখানে লিও মেসির পাশে টিংটিঙে রোগা লোকটা নেই! বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। ইচ্ছেও হয়। কারণ, ইচ্ছের যে শেষটুকু নেই। ইচ্ছে অবিনশ্বর। ইচ্ছে রোজারিওয় নিজের ঘরের টেলিভিশন থেকে ৩৯ পেরনো বন্ধুর দিকে তাকানো চোখ, আমৃত্যু মুগ্ধতা–

‘লিও বাকি সব মানুষের মতো দুদিকেই দেখে, আবার পাখির মতো ওপর থেকেও দেখে। আমি আজ অবধি বুঝতে উঠে পারলাম না, এটা কী করে সম্ভব…!’

………….. পড়ুন জুটি কলামের অন্যান্য পর্ব ……………

পর্ব ২ : অমরত্বের জাল কাঁপানো এক চিরকালের বন্ধুত্ব

পর্ব ১ : পাশে থাকা, পাসে থাকা