রামমোহন একা চেষ্টা করেছিলেন তাঁর সরস্বতীকে বাঁচাতে। পারেননি। তাঁকে লেঠেল দিয়ে মেরে জ্ঞানহীন দেহটাকে ফেলে চলে গিয়েছিল সরস্বতী-দাহ শেষ করে সতীদাহে বিশ্বাসী গোঁড়া হিন্দুরা!
পরের দিন ভোর। সবে সূর্য উঠছে, জ্ঞান ফিরেছে রামমোহনের। তিনি জানেন, সরস্বতী আর নেই। তাঁকে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে! সূর্য প্রণাম করে রামমোহন বললেন, ‘বউঠান, তুমি যেখানেই থাকো দেখতে পাবে অন্ধকার ভারতে সূর্য উঠবেই। সতীদাহ আমি বন্ধ করবই।’
৪২.
আজ ২৩ মে, তাঁর জন্মদিন। আজ সকালে উঠেই ঠাকুর ঘরে গিয়ে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহে প্রণাম করতে হবে। তারপর শালগ্রাম শিলাকে প্রণাম। শালগ্রাম শিলা যে কোনও পাথরের নুড়ি হতে পারে না। শালগ্রাম শিলার জন্ম হয় গণ্ডকী নদীর তীরে। গণ্ডকী তার গর্ভে ধারণ করে এই শিলাকে। তারপর তার মধ্যে যখন পূর্ণভাবে ফুটে ওঠে ভগবান বিষ্ণুর প্রতীকী রূপ, নদী সেই বিরল শালগ্রামকে তখন ভাসিয়ে এনে রেখে যায় তীরে! তারপর সেই শিলাকে কোনও ভক্ত ঠিক চিনতে পেরে নিয়ে যায় নিজ বাসগৃহে, তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করে জীবন্ত ঈশ্বর রূপে পুজো করার জন্য।
আজ তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনের পালনীয় সমস্ত প্রণাম সকালবেলাতেই সেরে, বাবা-মাকে প্রণাম করার পরেই সে বলল, তাঁদের মুখের ওপর, ‘এই বছর থেকে আমার জন্মদিন পালন আর হবে না। আমার জন্মদিনের বিশেষ কোনও অর্থ নেই আমার কাছে।’
‘আমার হাতের পায়েস তুই খাবি না? এ আবার তোর কী খেয়াল?’ চিৎকার করে ওঠেন মা তারিণী।
‘জন্মদিন হতে বাধা কোথায়?’ হুংকার দিয়ে জানতে চান বাবা রামকান্ত।
‘বাধা একটাই। আমি কেউ না। কিছু না। যদি দেশের মানুষ আমাকে ভালোবেসে কোনওদিন আমার জন্মদিন করে, তো হবে আমার জন্মদিনের উৎসব। তাছাড়া আজ আমি পাটনা যাব।’
‘পাটনা?’ বাবা-মা দু’জনেই আঁতকে ওঠেন!
আজ সকালে একটা উদ্ভট কাণ্ড ঘটেছে। রোজ সকালে যেমন আমাদের কাঠের সিঁড়ির একটা ধাপে বসে, অন্য ধাপটাকে টেবিল বানিয়ে লেখাপড়া করি আজও করছিলাম। আজ গণিতের কিছু নতুন ধরনের ইক্যুয়েশন সলভ করার চেষ্টা করছিলাম, সিঁড়ি উঠল কেঁপে। ভাবলুম হয়তো ভূমিকম্প হচ্ছে। কিন্তু স্পষ্ট শুনতে পেলাম, সিঁড়ির সেই ধাপের কথা যেটা আমার টেবিল। বলল, ‘ইউক্লিডের নাম শুনেছ?’ বললুম, শুনেছি গ্রিক mathematician। আর বললুম, উনি জিওমেট্রি লিখেছেন।
‘সেটা কী জানো?’ বলল আমার সিঁড়িটেবিল। আমি তো চুপ। সিঁড়িটেবিল পরিষ্কার ইংরেজিতে বলল, “Euclid’s great work is called Elements of Geometry. The book deals with that branch of mathematics concerned with the properties and relations of points, lines surfaces and solids.”
‘বুঝলে কিছু?’ প্রশ্ন করল সিঁড়িটেবিল। বললুম, না। তবে বুঝেছি একেবারে নতুন অঙ্ক। আমি শিখতে চাই।
সিঁড়িটেবিল বলল, ‘এখানে হবে না। কেউ জানে না। পাটনায় যাও। ওখানে মৌলবিরা পড়াচ্ছেন ইউক্লিডের জিওমেট্রি। মিশর থেকে শিখে এসেছেন। এঁরা মহাপণ্ডিত গণিতবিদ। মুসলমান মৌলবিদের কাছে পড়ে থাকো ইউক্লিডকে জানতে।’ সুতরাং, আমি আজ রাতেই পাটনার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ব।
‘রামমোহন!’ তাঁদের ১২ বছরের বদ্ধ উন্মাদ, জেদি, অবিশ্বাস্য মেধাবী পুত্রের উদ্দেশে চিৎকার করে ওঠেন রামকান্ত ও তারিণী। রামকান্ত বলেন, ‘রামমোহন, জানিস পাটনা কত দূর? কতদিন লাগবে যেতে? যাবি কীসে?’ রামমোহন উত্তরে বলে, হেঁটে যাব, নৌকোতে যাব, সাঁতরে যাব, গরুর গাড়িতে যাব। মাসখানেক লাগতে পারে তার বেশি নয়। কিন্তু জিওমেট্রির জন্য এই কষ্টটুকু আমাকে করতেই হবে।
‘তুই যাবি না। বৈষ্ণব বাড়ির ছেলে হয়ে তুই বিধর্মীদের গুরু করবি, তাদের কাছে লেখাপড়া করে ম্লেচ্ছ হবি? আমাদের তোর জন্য একঘরে হতে হবে, আমাদের ধোপা-নাপিত বন্ধ হবে, পুজোর পুরোহিত পাব না, হিন্দুরা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না, তুই আমাদের অত বড় সর্বনাশ করিসনি বাবা। আর যদি আমাদের কথা না-ই ভাবিস, তোর দু’-দুটো বউ, উমা ও শ্রীমতির কথা কথা ভেবে এমন বিপদ ডেকে আনিসনি। একটা না হয় বিয়ের পরেই মরে বেঁচেছে। উমা আর শ্রীমতির দায়িত্ব কে নেবে?’
মা, আমি কি ন’-বছর বয়েসে বলেছিলুম আমার তিন-তিনটে বিয়ে না দিলে আমি বাঁচব না? তোমরা বিয়ে দিয়েছিলে। দায়িত্ব তোমাদের। আজ আমার ১২ বছরের জন্মদিন, ১৭৮৪-র ২৩ মে, বিকেলে পাটনা যাত্রা করছি। ইউক্লিডের গণিতদর্শন আর অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্স আমাকে আরবি ভাষায় পড়তেই হবে। আমি মহাপণ্ডিত হরিহরানন্দ তীর্থস্বামীর কাছে সংস্কৃত শিখেছি। এবার মুসলমান সংস্কৃতির কেন্দ্র পাটনায় যাচ্ছি মৌলবিদের কাছে আরবি ভাষা শিখে, সেই ভাষায় অ্যারিস্টটল এবং ইউক্লিড-চর্চা করব বলে।
এই কথা বলে কিছুক্ষণের মধ্যে পাটনার পথে পা বাড়াল রামমোহন রায়। ফিরল প্রায় তিন বছর পরে।
রামমোহন ক্রমশ ১৭ বছরের তরুণ তুর্কি। অলৌকিক প্রতিভায় দীপ্যমান। ফিরে আসার ক’দিন পরেই সেই সিঁড়িটেবিলের ডাক শুনতে পেল সে। শুনশান দুপুরবেলা বসল সেই ধাপে যেখানে সে বসত ছেলেবেলায়। আর ঠিক ওপরের ধাপটি হয়ে উঠত তাঁর টেবিল। সেই টেবিল তাঁকে বলল, ‘তোমার প্রথম বইটা তুমি লেখ আমার বুকের ওপর। আমার এই ইচ্ছে তুমি পূরণ কর। তুমি যা চাইছ, আমি দেব তোমাকে।’
আমি কী চাই তা তুমি জানো, আমার ছেলেবেলার সিঁড়িটেবিল?
‘জানি বইকি! তুমি চাও অমরত্ব রামমোহন। আমার বুকের ওপর লেখা তোমার প্রথম বই তোমাকে দেবে সেই অমরত্ব।’
রামমোহন উত্তরে বলেন, ভুল জানো তুমি। আমি চাই আমার ভারতবর্ষ বেরিয়ে আসুক ধর্মান্ধতার অন্ধকার থেকে। মুক্তি পাক কুসংস্কার থেকে। সিঁড়িটেবিল তোমার বুকের ওপরেই শুরু করলাম আমার প্রথম বইয়ের পাণ্ডুলিপি:
‘ঈশ, কেন, কঠ, মুণ্ডক এবং মাণ্ডূক্য– এই পাঁচখানি উপনিষদ আমি গভীরভাবে অধ্যয়ন করিয়াছি। এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি যে, ব্রহ্মকে জানাই শ্রেষ্ঠ বিদ্যা। জগতের জন্ম, স্থিতি এবং লয় যাহা হইতে উৎসারিত তাহাই ব্রহ্ম। আমি যে ব্রহ্মকে জানিয়াছি তিনি শব্দহীন, স্পর্শহীন, রসহীন, গন্ধহীন, রূপহীন, নিত্য সত্তা। তিনি নিজে অদৃষ্ট। কিন্তু তিনি নিরন্তর দ্রষ্টা। তিনি নির্বিকার, নিরাকার, নির্গুণ। তিনিই সকলের আত্মা। তিনি প্রমাণের অবিষয়। ওম তৎ সৎ।’
জন্ম হল ব্রাহ্মধর্মের। সম্ভব হত কি কোনও রবীন্দ্রনাথ, রামমোহন রায়ের প্রভাব ছাড়া?
১৮১১ সাল। রামমোহন ৩৯। মারা গেলেন তাঁর দাদা জগমোহন। বিধবা হলেন সুন্দরী যুবতী সরস্বতী। রামমোহন আর সরস্বতীর মধুর সম্পর্ক। হিন্দু সমাজপতিদের কী মহানন্দ! রামমোহনের সামনে দাদার চিতায় পুড়িয়ে মারা হবে রামমোহনের সরস্বতীকে। আসুক রামমোহন। দেখি তার কত শক্তি! কোন হিন্দু দাঁড়াবে ওই নাস্তিকের পাশে?
রামমোহন একা চেষ্টা করেছিলেন তাঁর সরস্বতীকে বাঁচাতে। পারেননি। তাঁকে লেঠেল দিয়ে মেরে জ্ঞানহীন দেহটাকে ফেলে চলে গিয়েছিল সরস্বতী-দাহ শেষ করে সতীদাহে বিশ্বাসী গোঁড়া হিন্দুরা!
পরের দিন ভোর। সবে সূর্য উঠছে, জ্ঞান ফিরেছে রামমোহনের। তিনি জানেন, সরস্বতী আর নেই। তাঁকে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে! সূর্য প্রণাম করে রামমোহন বললেন, ‘বউঠান, তুমি যেখানেই থাকো দেখতে পাবে অন্ধকার ভারতে সূর্য উঠবেই। সতীদাহ আমি বন্ধ করবই।’
রামমোহন বসলেন তাঁর সেই সিঁড়িটেবিলে। কাগজ পেতে লিখলেন ইংরেজিতে ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশে কেন ভারতে সতীদাহ বন্ধ করতেই হবে আইনসম্মতভাবে! বাকিটুকু ইতিহাস। আমরা যেন ভুলে না যাই। এই বছর রামমোহন রায়ের ২৫৩-তম জন্মদিন ছিল ২৩ মে। ধারে-কাছে এমন বাঙালি কি আর চোখে পড়বে? কোনও দিন?
…………………….. পড়ুন কাঠখোদাই-এর অন্যান্য পর্ব ……………………
পর্ব ৪১: বানু মুশতাকের টেবিল ল্যাম্পটির আলো পড়েছে মুসলমান মেয়েদের একাকিত্বের হৃদয়ে
পর্ব ৪০: গোয়েটের ভালোবাসার চিঠিই বাড়িয়ে দিয়েছিল ইউরোপের সুইসাইড প্রবণতা
পর্ব ৩৯: লেখার টেবিল বাঙালির লাজ ভেঙে পর্নোগ্রাফিও লিখিয়েছে
পর্ব ৩৮: বঙ্গীয় সমাজে বোভেয়ার ‘সেকেন্ড সেক্স’-এর ভাবনার বিচ্ছুরণ কতটুকু?
পর্ব ৩৭: ভক্তদের স্তাবকতাই পাশ্চাত্যে রবীন্দ্র-কীর্তি স্থায়ী হতে দেয়নি, মনে করতেন নীরদচন্দ্র চৌধুরী
পর্ব ৩৬: একাকিত্বের নিঃসঙ্গ জলসাঘরে মারিও ভার্গাস লোসা যেন ছবি বিশ্বাস!
পর্ব ৩৫: জীবনের বাইশ গজে যে নারী শচীনের পরম প্রাপ্তি
পর্ব ৩৪: যা যা লেখোনি আত্মজীবনীতেও, এইবার লেখো, রাস্কিন বন্ডকে বলেছিল লেখার টেবিল
পর্ব ৩৩: ফিওনার সেই লেখার টেবিল মুছে দিয়েছিল মেয়েদের যৌনতা উপভোগের লজ্জারেখা
পর্ব ৩২: বাঙালি নয়, আন্তর্জাতিক বাঙালির সংজ্ঞায় স্পিভাক এসে পড়বেনই
পর্ব ৩১: প্রতিভাপাগল একটি বই, যাকে দিনলিপি বলে সামান্য করব না
পর্ব ৩০: পতিতালয়ের সেই লেখার টেবিল জাগিয়ে তুলেছিল ইসাবেলের হৃদয়-চেতনা
পর্ব ২৯: পাথরে প্রাণ আনে যে টেবিলের স্পর্শ
পর্ব ২৮: নিজের টেবিলকে কটাক্ষ করি, কেন অ্যানে মাইকেলসের মতো লিখতে পারি না?
পর্ব ২৭: নারীর রাগ-মোচনের কৌশল জানে মিলান কুন্দেরার লেখার টেবিল!
পর্ব ২৬: ভালোবাসা প্রকাশের সমস্ত শব্দ পেরিয়ে গিয়েছিল এলিয়টের লেখার টেবিল
পর্ব ২৫: যে টেবিলে জন্ম নেয় নগ্নতা আর যৌনতার নতুন আলো
পর্ব ২৪: প্রেমের কবিতার ভূত জন ডানকে ধরেছিল তাঁর উন্মাদ টেবিলে, মোমবাতির আলোয়
পর্ব ২৩: যে টেবিল আসলে বৈদগ্ধ আর অশ্লীলতার আব্রুহীন আঁতুড়ঘর!
পর্ব ২২: মহাবিশ্বের রহস্য নেমে এসেছিল যে টেবিলে
পর্ব ২১: গাছ আমাদের পূর্বপুরুষ, লেখার টেবিল বলেছিল হোসে সারামাগোকে
পর্ব ২০: টেবিলের কথায় নিজের ‘হত্যার মঞ্চে’ ফিরেছিলেন সলমন রুশদি
পর্ব ১৯: প্রতিভা প্রশ্রয় দেয় অপরাধকে, দস্তয়েভস্কিকে শেখায় তাঁর লেখার টেবিল
পর্ব ১৮: বিবেকানন্দের মনের কথা বুঝতে পারে যে টেবিল
পর্ব ১৭: ‘গীতাঞ্জলি’ হয়ে উঠুক উভপ্রার্থনা ও উভকামনার গান, অঁদ্রে জিদকে বলেছিল তাঁর টেবিল
পর্ব ১৬: যে লেখার টেবিল ম্যাকিয়াভেলিকে নিয়ে গেছে শয়তানির অতল গভীরে
পর্ব ১৫: যে অপরাধবোধ লেখার টেবিলে টেনে এনেছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে
পর্ব ১৪: লেখার টেবিল গিলে নিচ্ছে ভার্জিনিয়া উলফের লেখা ও ভাবনা, বাঁচার একমাত্র উপায় আত্মহত্যা
পর্ব ১৩: হ্যামনেট ‘হ্যামলেট’ হয়ে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল, জানে সেই লেখার টেবিল
পর্ব ১২: রবীন্দ্রনাথের লেখার টেবিল চিনতে চায় না তাঁর আঁকার টেবিলকে
পর্ব ১১: আর কোনও কাঠের টেবিলের গায়ে ফুটে উঠেছে কি এমন মৃত্যুর ছবি?
পর্ব ১০: অন্ধ বিনোদবিহারীর জীবনে টেবিলের দান অন্ধকারের নতুন রূপ ও বন্ধুত্ব
পর্ব ৯: বুড়ো টেবিল কিয়ের্কেগার্দকে দিয়েছিল নারীর মন জয়ের চাবিকাঠি
পর্ব ৮: অন্ধকারই হয়ে উঠলো মিল্টনের লেখার টেবিল
পর্ব ৭: কুন্দেরার টেবিলে বসে কুন্দেরাকে চিঠি
পর্ব ৬: মানব-মানবীর যৌন সম্পর্কের দাগ লেগে রয়েছে কুন্দেরার লেখার টেবিলে
পর্ব ৫: বিয়ের ও আত্মহত্যার চিঠি– রবীন্দ্রনাথকে যা দান করেছিল লেখার টেবিল
পর্ব ৪: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের টেবিল আর তারাপদ রায়ের খাট, দুই-ই ছিল থইথই বইভরা
পর্ব ৩: টেবিলের গায়ে খোদাই-করা এক মৃত্যুহীন প্রেমের কবিতা
পর্ব ২: লেখার টেবিল ভয় দেখিয়েছিল টি এস এলিয়টকে
পর্ব ১: একটি দুর্গ ও অনেক দিনের পুরনো নির্জন এক টেবিল
বিশ শতকের বাংলা পত্রিকার ইতিহাসে ‘প্রবাসী’ এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আর এই পত্রিকাটিকে কেন্দ্র করে বাংলা প্রকাশনার একটা মানদণ্ডও তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু দণ্ড মিললেও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মতো দণ্ডধারী মেলা খুবই কঠিন ছিল। কথাটা সে-যুগের মতো এ-যুগেও সত্যি।
আমরা এক সময় গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায়, অংশুমান রায়ের সুরে ও কণ্ঠে ‘শোনো, একটি মুজিবরের থেকে/ লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি/ আকাশে বাতাসে ওঠে রণি/ বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ’ গান শুনে রোমাঞ্চিত হয়েছি– তাই বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে আমি খুবই মুষড়ে পড়েছিলাম।