লেখার টেবিলটা দস্তয়েভস্কিকে জানাচ্ছে, এই জীবনদর্শনে প্রকৃতির কোনও স্থান নেই। প্রকৃতিকে যেন নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। কেননা, প্রকৃতি থাকলেই পাপ থাকবে। অপরাধ থাকবে। প্রকৃতি মরেছে। অতএব পাপ, অপরাধ এসবও মরেছে। মানুষের অন্যায়ের জন্যে মানুষ আর দায়ী নয়। দায়ী অবস্থার চাপ। মানুষ তো নীতিনিষ্ঠ। সে ইচ্ছাকৃত অপরাধ, পাপ করে না। সেই নীতিভ্রষ্ট হয় অবস্থার চাপে।
১৯.
ইদানীং যতবার তিনি বসছেন তাঁর লেখার ডেস্কে, একটি ভাবনা তাঁকে যেন গিলে খাচ্ছে। কিছুতেই দস্তয়েভস্কি বেরতে পাচ্ছেন না ভাবনাটা থেকে। প্রতিভা এবং অপরাধ, এরা যেন অঙ্গাঙ্গি। এই ভয়ঙ্কর ধারণাটা তাঁর লেখার ডেস্কটা ক্রমাগত তাঁর কানে কানে বলে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়। তাঁর ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে তাঁর লেখার টেবিল– এই প্রবল বিতর্কিত এবং বিপজ্জনক বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য, এমনও মনে হচ্ছে দস্তয়েভস্কির। যিনি যেখানেই থাকুন, বাড়িতে, বাড়ির বাইরে, মদ বা জুয়ার আড্ডায়, তুষারে ঢেকে যাওয়া নিঃসঙ্গ রাস্তায় কিংবা কোনও মাতাল সঙ্গিনীর উষ্ণতায়, টেবিলটা তাঁকে দিচ্ছে না মুহূর্তের স্বস্তি। তাঁর হৃদয়ে জানাচ্ছে নিরন্তর ডাক। তিনি ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন লেখার টেবিলটার সামনে। আর অমনি তাঁকে পাকড়ে ধরছে এই ভাবনা: দস্তয়েভস্কি, তুমি কি তোমার চারপাশে সবাই যা লেখালিখি করছে, যে জীবনদর্শন তারা অবলীলায় তাদের লেখার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে, বেশ ভালো করে সেসব তুমি পড়ে দেখেছ তো? তোমার কী মনে হয় না, ওরা ক্রমাগত প্রচার করে চলেছে, আমাদের তেমন কিছু করার নেই, সবই ভাগ্যের হাত, আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটছে, সবকিছুর জন্যে দায়ী নিয়তি। সত্যি বলতে, মানুষের তেমন কিছু করার নেই, করবার ক্ষমতাও নেই। তবে, গ্রিকদের মতো ওরা ‘নিয়তি’ শব্দটা ব্যবহার করছে না। ওরা নিয়তির বদলে ব্যবহার করছে ‘অবস্থার চাপ’–আমরা সবাই পারিপার্শ্বিকতার শিকার, যা কিছু ঘটাচ্ছি আমরা, তা আমরা ঘটাতে বাধ্য হচ্ছি অবস্থার চাপে। এই হল মনুষ্য জন্ম। এই ভাবনাটাকে তোমার চারপাশে যারা লেখালিখি করছে, জীবনদার্শনিক হয়ে তাদের ভাবনার প্রচার করছে, তারা এই প্রচারটাকে কেন্দ্রে রেখেছে যে, মানুষ নিজে থেকে কিছু করছে না।
এইসব বার্তা লেখার টেবিলটা ক্রমাগত দিয়ে চলেছে দস্তয়েভস্কিকে। কিন্তু এখানেই থামছে না টেবিল। আরও মারাত্মক ভাবনায় দস্তয়েভস্কিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর লেখার ডেস্ক।
লেখার টেবিলটা তাঁকে জানাচ্ছে, এই জীবনদর্শনে প্রকৃতির কোনও স্থান নেই। প্রকৃতিকে যেন নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। কেননা, প্রকৃতি থাকলেই পাপ থাকবে। অপরাধ থাকবে। প্রকৃতি মরেছে। অতএব পাপ, অপরাধ এসবও মরেছে। মানুষের অন্যায়ের জন্যে মানুষ আর দায়ী নয়। দায়ী অবস্থার চাপ। মানুষ তো নীতিনিষ্ঠ। সে ইচ্ছাকৃত অপরাধ, পাপ করে না। সেই নীতিভ্রষ্ট হয় অবস্থার চাপে।
এই যারা প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে মানুষের যাত্রাটাকে ভাবছে, তারা কিন্তু মানুষের যাত্রা থেকে অতীতকে বাদ দিচ্ছে, এই ভাবনাটাও দস্তয়েভস্কির মধ্যে কুরে কুরে খাওয়া উঁইপোকার মতো তাঁর কাঠের টেবিলটাই ঢুকিয়ে দিয়েছে। কেন মানুষের যাত্রা থেকে তার অতীতটাকে ওরা বাদ দিচ্ছে, যারা গ্রাস করছে ক্ষমতা থেকে লেখালিখি, জীবনদর্শন থেকে রাজনীতি, সব? এই প্রশ্ন টেবিলটাকে কতভাবে কতবার জিজ্ঞেস করেছে দস্তয়েভস্কি। আর প্রতিবার পেয়েছে একই উত্তর। কোনও ধানাইপানাই, কোনও অস্পষ্টতা নেই যে উত্তরে।
এই টেবিলে বসেই দস্তয়েভস্কি একদিন তরতর করে লিখে ফেলেন: ‘ওরা বিশ্বাস করে না মানুষের অতি ধীর, দীর্ঘসূত্রী, বহু রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া, যুগযুগান্তরের বিবর্তনে। তাহলে ওরা কীসে বিশ্বাস করে? ওরা প্রত্যয়ী এমন এক সামাজিক রীতি ও কাঠামোতে যা গণিতের মতো মুহূর্তে পৌঁছতে পারে নিশ্চিত ফলে। এই গাণিতিক ফল, ওরা বিশ্বাস করে, সমগ্র মানবসভ্যতা ও মানবমনের পরিবর্তন ঘটাবে, যেমন পরশ পাথর কোনও ধাতুকে পরিবর্তন করায় সোনায়। তেমনই ওদের গাণিতিক পথ মানুষকে, করবে মুহূর্তে সদাচারী এবং সমাজকে অপরাধমুক্ত।’ হয়তো টেবিলটারই পরামর্শে যে কথাটিকে সাংকেতিক আড়ালে রাখলেন দস্তয়েভস্কি, তা হল ক্ষমতার আসন থেকে ওরাই ঠিক করবে স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক, সদাচার-কদাচারের, ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা। এবং ওদের মতে যারা ভাল মানুষ, তারাই বাঁচবে। অর্থাৎ, তাদেরই বাঁচতে দেওয়া হবে। এবং এইভাবেই তৈরি হবে নতুন সমাজ, যে-সমাজে মানুষের বিবর্তন এবং ইতিহাস বলে কিছু থাকবে না। ওরা অতীতকে লুপ্ত করে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখবে– যাকে বলে বাঁচার মতো বাঁচা!
এই লেখার টেবিলে রাখা কাগজের বুকে দস্তয়েভস্কি একদিন লিখে ফেললেন তাঁর ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ উপন্যাসের সেই অমোঘ লাইন: ‘That is why they have such an instinctive dislike of history’. লেখার পর অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকেন দস্তয়েভস্কি বাক্যটির দিকে। কে লিখল? তিনি? না টেবিলটা? এই প্রশ্নটাকে আর খুঁড়তে চান না তিনি। বরং পরের লাইনগুলো লিখে ফেলেন। যেন টেবিলটা তাঁকে ঘাড় ধরে লিখিয়ে নেয়: ইতিহাসকে ওরা সত্যিই মন থেকে ঘৃণা করে। ইতিহাস সমাজ ও সভ্যতা এবং রাজনীতির পক্ষে বিপজ্জনক। সুতরাং মানুষের মঙ্গলের জন্য ইতিহাসকে ত্যাগ করতেই হবে। টেবিলটা দস্তয়েভস্কির মনের মধ্যে খোদাই করে দেয় এই ভয়ঙ্কর বাক্য: ‘History is nothing but a catalogue of outrage and follies.’ সত্যিই ইতিহাস মানুষের নারকীয় তাণ্ডব ও নির্বুদ্ধিতার তালিকা? এছাড়া আর কোনও পরিচয় নেই ইতিহাসের? ইতিহাসের একমাত্র পরিচয় না কি, ইতিহাস হল মানুষের বোকামির আবর্জনা!
বাক্যগুলির দিকে তাকিয়ে কাঁপতে থাকে দস্তয়েভস্কির হাত। দস্তয়েভস্কির সমস্ত ভিতরটা চিৎকার করে ওঠে, টেবিলটা তাঁর লেখাকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে! তিনি যা লিখতে চান, এবং তিনি তাই লেখেন। টেবিলটা কিন্তু বাধা দেয় না। বরং, মনে হয় দস্তয়েভস্কির, টেবিলটাই তাকে জুগিয়ে যাচ্ছে শব্দ! দস্তয়েভস্কি লিখতে থাকেন:
সমাজের জ্যান্ত চেহারাটা ওরা এই কারণেই তো ভয় পায়। ওরা ওদের ধারে কাছে চায় না কোনও জীবন্ত মানুষ। ওরা ভালো মানুষ মরা মানুষ। যাদের মনে কোনও প্রশ্ন নেই। কোনও সংশয় নেই। যাদের ভাষাহীন কণ্ঠে কোনও প্রতিবাদ নেই। জীবন্ত মানুষ তো নিজের পথে, নিজের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের দ্বারা চালিত হয়ে, নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। বশ্য হতে চায় না ওদের গণিতের, সুসংগঠিত কর্মপ্রক্রিয়ার এবং পার্টির আদর্শের। টেবিলের বুক থেকে উঠে আসে এই অসামান্য বাক্য: ‘They don’t want the living soul! The living soul demands to live. The living soul is obedient to the laws of mechanics. The living soul is suspicious. The living soul is reactionary.’
টেবিলটা এবারে যে একেবারে উল্টো কথা বলছে! যে কথা এতক্ষণ বলতে চাইছিলেন দস্তয়েভস্কি। এবার একেবারে মনের কথা বেরিয়ে এল ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’-এর পাতায়:
যারা গড়তে চলেছে নব সভ্যতা, নয়া সমাজ, নতুন রাজনীতি, ওদের অন্তরাত্মার রূপ এবার জেনে নাও আমার কাছে। ওরা পছন্দ করে রবারের তৈরি আত্মা। তবে রবারের যদি মড়ার চামড়ার খুশবু থাকে, ওদের ভালোই লাগে। জ্যান্ত আত্মার বদগন্ধ ওরা কোনওভাবেই সহ্য করতে পারে না। ওরা এই কথাটা নিত্য নতুন ভাষায় প্রচার করছে দিনরাত যে, জ্যান্ত মানুষ, জ্যান্ত মন সমাজ-সংসারের জন্য খুবই বিপজ্জনক। ওরা মরা মানুষ ও মরা মনের সুগন্ধে দেশটা ভরে দিতে চায়। শুধুমাত্র ভালো মানুষের আশ্রয় হয়ে দেশটা যেন নিরাপদে, শান্তিতে থাকে। প্রশ্ন হল, ভালো মানুষ করা? যাদের নিজেদের মনের কোনও নিজস্ব গন্ধ নেই। ভাষা নেই। নেই কোনও দর্শন। যাদের নেই কোনও জিজ্ঞাসা। কোনও সন্দেহ। কোনও সন্ধান। কোনও স্বপ্ন। যারা চায় বশ্যতার শান্তি। যাদের আরাম ও আশ্রয় রূপান্তরিত হয়েছে ইটের তৈরি দেওয়াল, ছাদ, ঘর, বারান্দায়। সেই মানুষরাই সমাজ-সংসারের পক্ষে বেশ মানানসই ভালোমানুষ– যারা আস্তাবল, খোঁয়াড়, খাঁচায় থাকতে ভালোবাসে। ওরা চায়, আমাদের এই সমাজব্যবস্থা হোক একটা নিশ্ছিদ্র ব্যূহের মতো, যেখানে নিরাপদে থাকবে মৃত মানুষদের যূথবদ্ধ জিজ্ঞাসাহীন প্রতিবাদশূন্য জীবন।
এই পর্যন্ত লিখে থামেন দস্তয়েভস্কি। টেবিলটার মধ্যে তিনি যেন স্পষ্ট শুনতে পান হৃদ্পিণ্ডের শব্দ। টেবিলটার গায়ে হাত রাখেন তিনি। অনুভব করেন জীবনের উত্তাপ। এবং জীবনের সেই উত্তাপ থেকে ঝরে পড়ে অসহনীয় শীতল কিছু শব্দ:
জীবন মানেই উত্তাপ। আর সেই সঙ্গে বেঁচে থাকার অন্তহীন সমস্যা। সুতরাং, কী লাভ বেঁচে থেকে? মরে যাওয়াই তো ভালো। মরে যাওয়া মানে ভাবনাহীন বেঁচে থাকা। ভাবনাহীন বাঁচা বলে কিছু হয়? অবশ্যই হয়। বারবার ওরা তো আমাদের সেই কথাটাই বলছে। সার কথাটা হল, এই যে জীবন জীবন করে হেদিয়ে মরছ, ভেবে দেখ, সমস্ত জীবনটার পুরো মালমশলা মাত্র দু’-পাতার মধ্যে ধরে যাবে। কোনও ঝামেলাই থাকবে না।
এইবার এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটল। টেবিলটা যেন সজোরে লাথি মারল দস্তয়েভস্কির তলপেটে। আর টেবিলটার অন্তর থেকে বেরিয়ে এল একটা আস্ত শয়তান। দস্তয়েভস্কির মনে হল, এই শয়তানই আমার প্রতিভার আত্মা। তাঁর লেখার টেবিল আর শয়তান মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল, তাঁর লাভাস্রোতের মতো ভাষায় ও ভাবনায়:
তাহলে কি আমাদের সমাজে, সভ্যতায়, সংস্কৃতিতে, রাজনীতিতে, সাহিত্যে , দর্শনে শুধুই মরা মানুষের জায়গা? স্থান নেই জীবন্ত মানুষের? কী লাভ ভাবনাহীন অস্তিত্বের বিবর্ণ সুখকে জীবনের পরম প্রাপ্তি বলে মেনে নিয়ে? তাছাড়া এমন তো হতে পারে না, মরা মানুষদের এই যূথবদ্ধ খামারে এমন মানুষ তো আসবেই, যারা অন্য রকম, ভিন্ন ভাবনার পথে যেতে সাহস দেখাবে, না গিয়ে পারবে না! যাদের দর্শন, ভাবনা, আবিষ্কার আনবেই আনবে পরিবর্তনের বিপ্লব! প্রতিভার জন্ম কেউ আটকাতে পারবে না।
এইবার দস্তয়েভস্কির মধ্যে টেবিল তার শয়তানটা মিশে গিয়ে ভাবনা ও ভাষার যে তাণ্ডব বাঁধিয়েছে, তা কি সোচ্চারভাবে প্রকাশ করবেন ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’-এর লেখক? না কি প্রতিভার বিস্ফোরণের টুঁটি টিপে তাকে হত্যা করবেন? সম্ভব? তাঁর ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ উপন্যাসে দস্তয়েভস্কি মেনে নিলেন লেখার টেবিলের পরামর্শ! কথা বলতে দিলেন প্রবল প্রলয়ে প্রতিভার শয়তানকে:
যারা সামান্য পরিমাণেও তাদের জীবনের একঘেয়ে আচার-আচরণ, প্রচলিত ধারা থেকে এতটুকু বিক্ষিপ্ত হতে পেরেছেন, তাঁরা জানবেন ভিন্নতার কারণে তাঁরা সম্ভাব্য অপরাধীও। অপরাধের প্রবণতা তাদের মধ্যে থাকবেই। প্রতিভাবানদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা স্বাভাবিক। কারণ, তাদের স্বভাবে অপরাধের প্রবণতা আছে বলে তা তারা জীবনের পরিচিত বর্ণহীন গৎ থেকে বেরতে পারল।
‘Even those who deviate only marginally from the common root are bound by their very nature to be criminal, to a greater or lesser degree, of course.’
কী দুর্বার সাহসে কত বছর আগে লিখেছিলেন এই ভাবনা ও ভাষা দস্তয়েভস্কি! কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি। ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’-এই লিখলেন:
প্রতিভার অবদান শুধু নতুন কথা, নতুন ভাবনা নয়। প্রতিভা ছাড়া অপরাধের জন্মও সম্ভব নয়। যারাই প্রতিভাধর অসামান্য মানুষ, যাদেরই আছে জিজ্ঞাসা, সংশয়, সন্ধান, বেপরোয়া তাড়না নতুন পথে যাওয়ার, ‘they all break law, they are all destroyers.’ তারাই ভাঙে আইন। তারাই করে নাশ।
…………………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………….
পরের বাক্যটি লেখার আগে টেবিলের ওপর মাথা রেখে অনেকক্ষণ চুপ করে পড়ে রইলেন দস্তয়েভস্কি। তারপর আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। টেবিলের অন্তর থেকে শয়তানটা বেরিয়ে এসে আগুনের চাবুক মারল দস্তয়েভস্কির পিঠে। লিখলেন তিনি কালজয়ী এই দুর্নিবার ভাবনা:
‘If such a person finds it necessary to step over a dead body, over a pool of blood, then he is able within his own conscience to give himself permission to do so. It’s in this sense alone that I speak of their right to crime.’
এমনকী প্রতিভাবান মানুষ যদি খুনও করে, তাহলে তার গভীর বিশ্বাসে, তার বিবেকে কোথাও একটি গহন সমর্থনও আছে সেই খুনের। একমাত্র এই কারণেই বিশ্বাস করি আমি প্রতিভাবান মানুষের অপরাধের অধিকারে।
…………………….. পড়ুন কাঠখোদাই-এর অন্যান্য পর্ব ……………………
পর্ব ১৮: বিবেকানন্দের মনের কথা বুঝতে পারে যে টেবিল
পর্ব ১৭: ‘গীতাঞ্জলি’ হয়ে উঠুক উভপ্রার্থনা ও উভকামনার গান, অঁদ্রে জিদকে বলেছিল তাঁর টেবিল
পর্ব ১৬: যে লেখার টেবিল ম্যাকিয়াভেলিকে নিয়ে গেছে শয়তানির অতল গভীরে
পর্ব ১৫: যে অপরাধবোধ লেখার টেবিলে টেনে এনেছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে
পর্ব ১৪: লেখার টেবিল গিলে নিচ্ছে ভার্জিনিয়া উলফের লেখা ও ভাবনা, বাঁচার একমাত্র উপায় আত্মহত্যা
পর্ব ১৩: হ্যামনেট ‘হ্যামলেট’ হয়ে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল, জানে সেই লেখার টেবিল
পর্ব ১২: রবীন্দ্রনাথের লেখার টেবিল চিনতে চায় না তাঁর আঁকার টেবিলকে
পর্ব ১১: আর কোনও কাঠের টেবিলের গায়ে ফুটে উঠেছে কি এমন মৃত্যুর ছবি?
পর্ব ১০: অন্ধ বিনোদবিহারীর জীবনে টেবিলের দান অন্ধকারের নতুন রূপ ও বন্ধুত্ব
পর্ব ৯: বুড়ো টেবিল কিয়ের্কেগার্দকে দিয়েছিল নারীর মন জয়ের চাবিকাঠি
পর্ব ৮: অন্ধকারই হয়ে উঠলো মিল্টনের লেখার টেবিল
পর্ব ৭: কুন্দেরার টেবিলে বসে কুন্দেরাকে চিঠি
পর্ব ৬: মানব-মানবীর যৌন সম্পর্কের দাগ লেগে রয়েছে কুন্দেরার লেখার টেবিলে
পর্ব ৫: বিয়ের ও আত্মহত্যার চিঠি– রবীন্দ্রনাথকে যা দান করেছিল লেখার টেবিল
পর্ব ৪: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের টেবিল আর তারাপদ রায়ের খাট, দুই-ই ছিল থইথই বইভরা
পর্ব ৩: টেবিলের গায়ে খোদাই-করা এক মৃত্যুহীন প্রেমের কবিতা
পর্ব ২: লেখার টেবিল ভয় দেখিয়েছিল টি এস এলিয়টকে
পর্ব ১: একটি দুর্গ ও অনেক দিনের পুরনো নির্জন এক টেবিল