রাহুলের মতো প্রেমিক আমি খুব কমই দেখেছি। শব্দে-অক্ষরে-ধ্বনিতে মজে থাকতে দেখতাম সারাক্ষণ। আমাদের সখ্য ছিল প্রশ্নাতীত। বহু কর্মশালায় একসঙ্গে কাটিয়েছি– কবিতা ও ছবি নিয়ে। অনেক নেশাতুর রাত কাটিয়েছি একসময় চৈতালি আমি ও রাহুল। ত্রয়ী ছিলাম। পরে আমি, রাহুল ও অরুণাভ নতুন ‘ত্রয়ী’ হই। পার্বতী মুখুজ্জের সান্ধ্য আড্ডায়, উৎপলকুমার বসুর আড্ডায়, ডা. ভূমেন গুহর আড্ডায়, রণজিৎ দাশের আড্ডায়– আমি ও রাহুল জুড়ে যেতাম। সে বড় মধুর সময় ছিল।
রাহুল পুরকায়স্থ। আমি ও রাহুল। আমাদের ভিতর কার নিজস্ব অমৃত ও বিষ, বৈশাখ ও শ্রাবণ, কোলাহল ও নির্জনতা, আর গোপন রইল না, একটি সংকলনে– ‘হে তরঙ্গ লাফাও’। কবিতা ও ছবির কোলাজ। বহু বছর আগে, একটা নেশাতুর রাতে আমি রাহুলকে নানা কাজ দেখাচ্ছিলাম। দেখাতে দেখাতে একটা কোলাজের খাতা বেরিয়ে এল, যাতে ৩৫-৩৬টি কাজ ছিল। রাহুল চাইল সেই খাতা। আমি এককথায় দিয়ে দিলাম ওকে। ও, পরে শুনেছি সারারাত একটা ঘোরের মধ্যে লিখে যায় প্রতিটা কবিতা। ‘স্পর্শে বুঝি একাকী মুখর/ক্ষতলোহু কম্পমান/ক্ষতরিপু অগ্নি ও আগুন/কল্পমুখ লক্ষ্যে অনি /কল্পমুখ গায়/মৃত্যুদিন জন্মদিন/জন্ম ভেসে যায়।’ অথবা ‘আমাকে চেনো না রাত্রি!/ চেনো না আমার গতিপথ!/যতদূর বহে বায়ু,কল্পনার শ্বাস/ আমি স্বপ্ন ক্রীতদাস।’
রাহুল যে অর্থে কবি, আমি হয়তো সেই অর্থে শিল্পী। কবিতা ছবিতে, ছবিতে কবিতা। আমাদের কবিতা পাঠে অনেক বিপথে ভ্রমণ থাকে, তেমন ছবিতে ভ্রম। বিভ্রান্তি। আমরা নানা বিষয়ে কথা বলতাম। প্রেম, ভালোবাসা, যৌনতা।
রাহুলের মতো প্রেমিক আমি খুব কমই দেখেছি। শব্দে-অক্ষরে-ধ্বনিতে মজে থাকতে দেখতাম সারাক্ষণ। আমাদের সখ্য ছিল প্রশ্নাতীত। বহু কর্মশালায় একসঙ্গে কাটিয়েছি– কবিতা ও ছবি নিয়ে। অনেক নেশাতুর রাত কাটিয়েছি একসময় চৈতালি আমি ও রাহুল। ত্রয়ী ছিলাম। পরে আমি, রাহুল ও অরুণাভ নতুন ‘ত্রয়ী’ হই। পার্বতী মুখুজ্জের সান্ধ্য আড্ডায়, উৎপলকুমার বসুর আড্ডায়, ডা. ভূমেন গুহর আড্ডায়, রণজিৎ দাশের আড্ডায়– আমি ও রাহুল জুড়ে যেতাম। সে বড় মধুর সময় ছিল।
২০০৯ সালে আমি একটা ঘটনা ঘটাই– ‘অক্ষর কখনও ঘুমায় না’। ১৫ জন কবি কবিতা লেখেন আমার ১৫ টা ছবি ঘিরে। কবি শঙ্খ ঘোষ, উৎপলকুমার বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়– এমন অনেকে ছিলেন, তার পাশে রাহুল। রাহুলের দেওয়ালে আমার একটা বড় ছবিও আছে। ও আমার ছবির সঙ্গে সহবাস করতে ভালোবাসত। ওর চলে যাওয়াটা আমার কাছে বড্ড বেদনার। প্রায় একদিক শূন্য হয়ে যাওয়া।
ভালো থেকো রাহুল। এমন সখ্য আর ফিরে পাব না এ জীবনে।