আমাদের এক বন্ধু ছিল শানু ব্যানার্জি। তাঁর সঙ্গে প্রতুলদার খুবই সখ্য ছিল। প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রথম অনুষ্ঠান করায় শানুরাই, ওদের সংগঠন ‘সমলয়’। অনুষ্ঠানটি ছিল গোর্কি সদনে। সেখানে লোকে অবাক হয়ে গিয়েছিল প্রতুলদার গান শুনে। প্রতুলদা কোনও ইন্সট্রুমেন্ট চাননি। চেয়েছিলেন একটা মাত্র টেবিল। সেই টেবিল বাজিয়ে, খালি গলায় গান গেয়েছিলেন। ইন্টারল্যুড, হারমনি– সবই খালি গলায়! দর্শকদের মাত করে দিয়েছিলেন। বাকিটা ইতিহাস। বেশ কয়েক দশক কেটে গেল প্রতুলদার গানের। প্রচুর শ্রোতাও পেলেন। উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন তাঁর শ্রোতাদের।
আজ অমর একুশে। আন্তর্জাতিক ভাষাদিবস। কিন্তু প্রতুলদা নেই। মাত্র ক’দিন আগে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কী গভীর দুঃখ ও বেদনা নিয়ে এ বছরের ‘একুশ’ হাজির হয়েছে। ‘আমি বাংলায় গান গাই’ এমনই একটি গান, যা বাঙালির মন, ভাষা, ঐতিহ্যর সঙ্গে এমনভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে, সেটার তুলনা করা যায় রবীন্দ্রনাথ কিংবা দ্বিজেন্দ্রলালের বাঙালির জন্য গানে। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এই গান। যেমন, আবদুল গফ্ফর চৌধুরী ভাইয়ের লেখা, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।’
প্রতুলদার সঙ্গে আমার আলাপ সত্তরের শেষে, কিংবা আশির একেবারে গোড়ায়। তার আগে দীর্ঘদিন উনি গান-কবিতার মধ্যেই ডুবে ছিলেন। উত্তাল সময় ছিল, নকশাল আমল, তখন অত্যাচার চলছে ভয়াবহ। জীবনের গান, বিপ্লবের গান নিয়ে তখন হাজির হয়েছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। নিজের গানকে কখনও সংজ্ঞায়িত করেননি ‘জীবনমুখী’ বলে। তা একেবারেই একক প্রতুলসংগীত।
আমাদের এক বন্ধু ছিল শানু ব্যানার্জি। তাঁর সঙ্গে প্রতুলদার খুবই সখ্য ছিল। প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রথম অনুষ্ঠান করায় শানুরাই, ওদের সংগঠন ‘সমলয়’। অনুষ্ঠানটি ছিল গোর্কি সদনে। সেখানে লোকে অবাক হয়ে গিয়েছিল প্রতুলদার গান শুনে। প্রতুলদা কোনও ইন্সট্রুমেন্ট চাননি। চেয়েছিলেন একটা মাত্র টেবিল। সেই টেবিল বাজিয়ে, খালি গলায় গান গেয়েছিলেন। ইন্টারল্যুড, হারমনি– সবই খালি গলায়! দর্শকদের মাত করে দিয়েছিলেন। বাকিটা ইতিহাস। বেশ কয়েক দশক কেটে গেল প্রতুলদার গানের। প্রচুর শ্রোতাও পেলেন। উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন তাঁর শ্রোতাদের।
প্রতুলদা আমার কাছে এমন একজন মানুষ, যাঁকে দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। এক ধরনের মানুষ রয়েছেন, যাঁদের হাসিতে ঝরে পড়ে শিশুর সারল্য। প্রতুলদার ছিল ওই হাসি। সংবেদনশীল, সদর্থক চিন্তার মানুষ যে, দেখলেই বোঝা যেত।
আক্ষেপ হচ্ছে যে, আজ, অমর একুশের দিন প্রতুলদার গান শুনতে পাবো না। হয়তো মাইকে বাজবে। কিন্তু স্টেজে দাঁড়িয়ে ওই গান, আর শোনা হবে না।
ক’দিন আগে আমাকে একজন একটা ভিডিও ফরওয়ার্ড করে। অসুস্থ প্রতুল মুখোপাধ্যায় তখন হাসপাতালের বেডে। তিনি গান গাইছিলেন। শুনে একবারও মনে হচ্ছিল না যে, তিনি অসুস্থ।
একজন অসামান্য বাঙালি শিল্পী আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কিন্তু তাঁর গান দীর্ঘজীবী হবে। যেরকম হয়েছে আমাদের গফফ্র ভাইয়ের গান।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved