টোকিও-অলিম্পিক কঠিন অলিম্পিক বছরগুলির একটি। যেখানে ২০১৬-র রিও-অলিম্পিকে রেকর্ড সংখ্যক কন্ডোম বিতরিত হয়েছিল বিনামূল্যে (প্রায় সাড়ে চার লাখ, তার মধ্যে মহিলা-কন্ডোম এক লাখের কাছাকাছি), সেখানে টোকিও-অলিম্পিকের খরা-সদৃশ আবহ অবশ্যই দমবন্ধকর ছিল। কিন্তু রোগ বা মৃত্যুর থেকে সাময়িক দূরত্ব অনেক বেশি শ্রেয় ছিল সে-সময়। তবে প্যারিস-অলিম্পিকে দূরত্বের কোনও বালাই অবশ্যই থাকছে না। উঠে গিয়েছে শারীরিক নৈকট্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা। যদিও প্রথা অনুযায়ী অলিম্পিক-ভিলেজে মদ্যপানের কোনও ব্যবস্থা থাকছে না এবং এলজিবিটিকিউএআই+ খেলোয়াড়দের সঙ্গী-খোঁজার-অ্যাপ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে (কারণ অন্তরালবর্তী বহু খেলোয়াড়ের নিজের দেশে সামাজিক হেনস্তা-হিংসার ভয় থাকে) কিন্তু ভিলেজে যৌনতায় কোনও বাধা নেই।
ভারতে এখনও মানুষ ‘কন্ডোম’ শব্দটি শুনলে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। অথচ এই ভারতেই একেবারে সরকারি উদ্যোগে, ভরতুকি দিয়ে চালু হয়েছিল স্বল্প মূল্যের কন্ডোম। সেটা ১৯৬৮ সালে। এবং তা ছিল মূলত জনসংখ্যা-নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে। কংগ্রেস দলের দক্ষিণ ভারতীয় একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন কে. কামরাজ। তাই সেই স্বল্পমূল্যের কন্ডোমের নাম প্রস্তাবিত ‘কামরাজ’ না রেখে ঠিক হয় ‘নিরোধ’ দেওয়া হবে। তবে শুধু জনসংখ্যা-নিয়ন্ত্রণ নয়, যৌনতা-বাহিত রোগ প্রতিরোধেও এ-দেশে ‘নিরোধ’ খুবই কাজে দিয়েছে। বহু ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এমনকী, বিনামূল্যেও এই ‘নিরোধ’ বিতরণ করেছে। যৌনকর্মী, যৌনসংখ্যালঘু মানুষ– যৌনতার ক্ষেত্রে সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলিকে সাহায্য করার জন্য সরকার এই বিলিবণ্টন বহু সময় করেছে এবং এখনও করে থাকে। তাও কন্ডোমের সঙ্গে ভারতবাসীর এখনও চাপাহাসির সম্পর্ক। এই কিছুদিন আগে অবধি সরকার বিজ্ঞাপন দিত যেখানে একজন শ্রমিক তার সমস্ত লজ্জা কাটিয়ে শুধুমাত্র ‘কন্ডোম’ শব্দটি যে উচ্চারণ করছে, তাতে তাকে সবাই বাহবা দিচ্ছে! কিন্তু সাম্প্রতিক প্যারিস-অলিম্পিকের একটি খবরে আবার মানুষ কানাঘুষো শুরু করেছে। অলিম্পিকের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা জিনিসও এবার ‘ফিরেছে’, তা হল কন্ডোম। অলিম্পিক আর কন্ডোম? সত্যিই তাই।
অলিম্পিক আর কন্ডোমের সম্পর্ক বহু বছরের। ১৯৮৮-তে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত সিউল-অলিম্পিক থেকে প্রথম অংশগ্রহণকারীদের জন্য কর্তৃপক্ষ কন্ডোম বিলি শুরু করে। সে-বছর মাত্র সাড়ে আট হাজার কন্ডোম বিতরিত হয়েছিল। সেটা এইচআইভি-এডস মহামারীর ভয়াবহ সময়। সুরক্ষিত যৌনতার জন্য তাই প্রতি অংশগ্রহণকারীদের কন্ডোম বিতরণ করা হত বিনামূল্যে। ২০০০ সালের অলিম্পিকে প্রথমে ৭০ হাজার কন্ডোম বিলি হলেও পরে আরও ২০ হাজার কন্ডোম ফরমায়েশ করা হয়।
……………………………………………………………………………
যৌনতার সঙ্গে খেলাধুলার কোনও বিরোধ নেই। তবে সুরক্ষিত যৌনতাই কাঙ্ক্ষিত আর সে-জন্যই কন্ডোমের বিতরণ। কোভিড-১৯ অতিমারীর জন্য ২০২১-এ অনুষ্ঠিত ‘টোকিও-অলিম্পিক ২০২০’-তে যৌনতা কেন শারীরিক যে-কোনও নৈকট্যেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। একেক জনকে একে অপরের থেকে কমপক্ষে সাড়ে ছ’-ফুটের দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছিল। সে-বছর যে কন্ডোম বিলি হয়নি, তা নয়। নয় নয় করে দেড় লক্ষ কন্ডোম বিতরণ হয়েছিল। তবে শারীরিক দূরত্বই ছিল কাম্য।
……………………………………………………………………………
খেলাধুলা সংক্রান্ত ব্যাপারে একসময় ধারণা করা হত যৌনতা বোধহয় শক্তিক্ষয় করে। পরবর্তী কালে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বরং উল্টো নিদান দেন। যৌনতার মধ্যে দিয়ে খেলোয়াড়রা অনেক সময় উদ্বেগ-মুক্ত হয়। শরীরে শিথিলতা আসে যাতে পরের দিনের খেলায় তারা হালকা বোধ করে। সুতরাং, যৌনতার সঙ্গে খেলাধুলার কোনও বিরোধ নেই। তবে সুরক্ষিত যৌনতাই কাঙ্ক্ষিত আর সে-জন্যই কন্ডোমের বিতরণ। কোভিড-১৯ অতিমারীর জন্য ২০২১-এ অনুষ্ঠিত ‘টোকিও-অলিম্পিক ২০২০’-তে যৌনতা কেন শারীরিক যে-কোনও নৈকট্যেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। একেক জনকে একে অপরের থেকে কমপক্ষে সাড়ে ছ’-ফুটের দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছিল। সে-বছর যে কন্ডোম বিলি হয়নি, তা নয়। নয় নয় করে দেড় লক্ষ কন্ডোম বিতরণ হয়েছিল। তবে শারীরিক দূরত্বই ছিল কাম্য। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, যদিও অলিম্পিক-ভিলেজে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে তবু খেলোয়াড়রা যখন নিজেদের দেশে ফিরে যাবে তখন তারা এগুলো ব্যবহার করতে পারে। এতে সুরক্ষিত যৌনতার সচেতনতাও বজায় থাকবে।
টোকিও-অলিম্পিক কঠিন অলিম্পিক বছরগুলির একটি। যেখানে ২০১৬-র রিও-অলিম্পিকে রেকর্ড সংখ্যক কন্ডোম বিতরিত হয়েছিল বিনামূল্যে (প্রায় সাড়ে চার লাখ, তার মধ্যে মহিলা-কন্ডোম এক লাখের কাছাকাছি), সেখানে টোকিও-অলিম্পিকের খরা-সদৃশ আবহ অবশ্যই দমবন্ধকর ছিল। কিন্তু রোগ বা মৃত্যুর থেকে সাময়িক দূরত্ব অনেক বেশি শ্রেয় ছিল সে-সময়। তবে প্যারিস-অলিম্পিকে দূরত্বের কোনও বালাই অবশ্যই থাকছে না। উঠে গিয়েছে শারীরিক নৈকট্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা। যদিও প্রথা অনুযায়ী অলিম্পিক-ভিলেজে মদ্যপানের কোনও ব্যবস্থা থাকছে না এবং এলজিবিটিকিউএআই+ খেলোয়াড়দের সঙ্গী-খোঁজার-অ্যাপ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে (কারণ অন্তরালবর্তী বহু খেলোয়াড়ের নিজের দেশে সামাজিক হেনস্তা-হিংসার ভয় থাকে) কিন্তু ভিলেজে যৌনতায় কোনও বাধা নেই। অলিম্পিক এই বহু বহু বছর টিকে থাকার সব পরীক্ষায় পাশ করেছে তার প্রগতিশীলতার জন্য। এখন টিভিতে অলিম্পিক দেখার ঝোঁক কমেছে। কর্তৃপক্ষকে নতুন নতুন পথ খুঁজতে হচ্ছে এই খেলার আসরকে নব প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করতে। কিন্তু লিঙ্গ ও যৌনতার প্রশ্নে অলিম্পিক যে যথেষ্ট আধুনিক, এ-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিনামূল্যে কন্ডোম বিতরণ করার মধ্য দিয়ে অলিম্পিক আসলে বোঝাতে চাইছে আহার-নিদ্রা-ক্রীড়ার পাশাপাশি পৃথিবীর মানুষ যৌনতারও।
এ দেশে প্রসূতিসদন থেকে নবজাত শিশু ও প্রসূতিকে ছেড়ে দেওয়ার পরও স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেশ কয়েক মাস ধরে নিয়মিত একজন চিকিৎসক বাড়িতে এসে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যান। এটা ছিল এখানকার জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অঙ্গ।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved