Robbar

রোহিত-বিরাট, আপনি আচরি ধর্ম, শেখাও জুনিয়রদের

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 4, 2024 5:29 pm
  • Updated:November 4, 2024 5:29 pm  

দেশের মাঠে স্পিনে অপ্রতিরোধ্য ভারত। এটাই তো চিরকালীন বিশ্বাস। এখন পাঁকে পড়া হাতিকে ব্যাঙে লাথি মেরে চলে যাচ্ছে। শুধু বিরাট-রোহিত নন, মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা দলই। একা কুম্ভ ঋষভ পন্থ। শুভমান, যশস্বী, সরফরাজরা কয়েকটা ভালো ইনিংস খেলেও ক্ষণিকের অতিথি। ধারাবাহিকতার অনেক কিছুই শেখা বাকি। আমরা অল্পে খুশি নই। আমরা দেখতে চাই, আপনারা পরিমিত দুঃসাহসী। নিয়মিত হয়ে উঠতে হবে। বিচ্ছিন্ন পারফরম্যান্স কিন্তু কটাক্ষ থেকে রেহাই দেবে না।

অর্পণ দাস

‘এরকম ম্যাচ হতেই পারে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও তো প্রথম টেস্টে হেরেছিলাম। তারপর চার-চারটে টেস্ট জিতেছি। এই জায়গা থেকে কীভাবে ফিরতে হবে জানি।’

‘মাত্র তো দুটো টেস্টে হেরেছি। এখনই এত আলোচনার কী আছে? ১২ বছরে একটা সিরিজ হারতেই পারি।’

‘আগেও এরকম আক্রমণাত্মক খেলেই সাফল্য পেয়েছি। সবকিছু ঠিকঠাক চললে এই প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হতে হত না। তবে হ্যাঁ, ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছি।’

উপরের তিনটে উদ্ধৃতির বক্তা একজনই। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিধ্বস্ত রোহিত শর্মা

প্রতিটা মন্তব্যের মধ্যে একটা করে সপ্তাহের ফারাক। আর তফাত বেড়েছে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের লজ্জার রেকর্ডের। বেঙ্গালুরুতে ৪৬ অল আউট, দেশের মাটিতে সর্বনিম্ন স্কোর। পুনেতে নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথমবার সিরিজ হার। দেশে ১২ বছর পর। অবশেষে মুম্বইয়ে এসে চুনকাম। বিশ্বকাপ জয়ের মাঠেই যাকে বলে– ধবলধোলাই!

এবার লক্ষ্য করুন, রোহিতের তিনটি মন্তব্যের অদ্ভুতদর্শন গ্রাফের দিকে। প্রত্যাবর্তনের আত্মবিশ্বাস থেকে আচমকা ‘তো কী হয়েছে’-র উচ্চমার্গের কলার তোলা দর্শন। শেষে এসে, ‘হ্যাঁ, মানে হেরেছি। কিন্তু ভুল করিনি।’ ভুল যে বিস্তর হয়েছে, সেটার জন্য সকাল সাড়ে ন’টা থেকে টিভি-মোবাইলে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা শোনার দরকার নেই। তাতেও যদি কেউ বুঝতে না পারেন, তার জন্য খোদ ভারত অধিনায়ক আছেন। তিনি এসে প্রায় রোজই জানিয়ে যাবেন, আজ পিচ বুঝতে পারিনি, আজ আরও একজন স্পিনার দরকার ছিল, আজ ব্যাটাররা ভুল শট খেলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রথম প্রথম ব্যাপারটা শুনতে বেশ ভালোই লাগে। চেনা ‘টাপোরি’ স্টাইলে হালকাচ্ছলে যুক্তি দিয়ে যান রোহিত। যেন দিনদুনিয়ায় কোনও সমস্যাই নেই। কাল সকালে ঘুম থেকে উঠলেই আজাজ-স্যান্টনারের বল ঘুরবে না কিংবা ভারত টপঅর্ডারের সবাই ডবল সেঞ্চুরি হাঁকাবে। কিন্তু যুক্তি যে ক্রমশ অজুহাত হয়ে উঠছে না, তার কি গ্যারান্টি?

Image
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ব্যর্থ রোহিত

যখন দেখবেন পিচে বনবন করে বল ঘুরছে, তখন ধৈর্য ধরাই তো দস্তুর। সেখানে দলের সেরা ওপেনার অকারণে পুল শট চালাচ্ছেন! বা কোনও উঠতি তারকা ঠিক করেই রেখেছেন, আমি শুধু সুইপ-ই খেলব! কেউ-বা ডিফেন্স বলে ক্রিকেট অভিধানে একটা শব্দ হয় বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে গোটা দৃষ্টিভঙ্গিটাই বড্ড ঢিলেঢালা, আলুথালু। আরে ভাই, জিতে তো যাবই, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশপের ফাইনালেও চলে যাব। ওসব হাতের ময়লা। বাংলাদেশকে উড়িয়েছি, নিউজিল্যান্ডের জন্য আবার বাড়তি খাটতে যাব কেন? সবকিছু হাতের মোয়া হয়ে গেলে এটাই হয়। তার মধ্যে অধিনায়ক যদি খোদ প্রতি ম্যাচ শেষে নতুন নতুন যুক্তি নিয়ে উপস্থিত হন, তবে তো সোনায় সোহাগা।

তাও যদি মুখের ফুলঝুরি ব্যাটেও দেখানো যেত। কিন্তু ৬ ইনিংসে হিটম্যানের রান মাত্র ৯১। অর্থাৎ, সে পথও বন্ধ। মজার বিষয়, গড় কম হলেও রোহিত শর্মার স্ট্রাইক রেট ১০০-র আশপাশে। অর্থাৎ, হিটম্যান নামছেন, টি-টোয়েন্টির ভঙ্গিতে চালাচ্ছেন। ৩০ রানের মধ্যে উইকেট খুইয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন। ও, স্ট্রাইক রেটের প্রসঙ্গে মনে পড়ল বিরাট কোহলির কথা। সিরিজে তাঁর রান স্রেফ ৯৩। সতীর্থের থেকে এগিয়ে আছেন মাত্র ২ রানে। পুনে টেস্টে চাপের মুখে ৭০ রান। বাকি পরিসংখ্যান ‘বিরাট’ ভয়াবহ।

Is It Finis For Kohli, Rohit? - Rediff.com

গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকেই ব্যাটে রান নেই ‘কিং কোহলি’-র, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের ইনিংসটা বাদ দিলে। টেস্টে শেষে সেঞ্চুরি এসেছে প্রায় বছর খানেক আগে। এই কোহলি একেবারেই অচেনা। অফফর্ম আসতেই পারে, কিন্তু যে ভঙ্গিতে আউট হচ্ছেন, তাতে আদৌ ২২ গজে মানসিক ভাবে কতটা প্রস্তুত, কতটা ফোকাসড– সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উঠবেও। কখনও বা তাড়াহুড়ো করে রান আউট হচ্ছেন। কখনও আবার বলের লাইন-লেংথের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারছেন না। ফর্ম, ফর্ম, টেস্টে ক্রিকেটে আপনার মন আছে তো কোহলি?

…………………………………………..

সামনে বর্ডার গাভাসকর ট্রফি। আপাতত দোষ কারও নয় গো মা! বিরাট-রোহিত, আপনারা ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছেন, অনেক নজির তৈরি করেছেন। টুর্নামেন্ট জিতিয়েছেন, আনন্দ দিয়েছেন। এটাও ঠিক যে, কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে পৌঁছেছেন। অবসরের কথা উচ্চারণ করার দুঃসাহস দেখাতে চাই না। কিন্তু কেন বিসিসিআইয়ের চোখরাঙানির অপেক্ষা করবেন? শুধু সাধারণ সমর্থক হিসেবে অনুরোধ, যাওয়ার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যান।

…………………………………………..

Image
বিরাট ব্যর্থতা চলছেই কোহলির

স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার চেনা বাঘনখ তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে। অতীতে বিরাটের ব্যাট সেসবের জবাব দিয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিকতা? সে যে হারানিধি!  ফলে চাপ বাড়ছে প্রতি মুহূর্তে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের এই ধরনের চাপ নিয়েই খেলতে হয়, এ কোনও নতুন কথা নয়। আর এখন তো নেতৃত্বের বাড়তি দায়িত্বও নেই। অনেক খোলামনে খেলা উচিত। ভবিষ্যতের তারকাদের দেখিয়ে দেওয়া উচিত, চাপের মুখে কীভাবে খেলতে হয়। সেখানে ঢিলেমি যেন আরও বাড়ছে। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলব না, অমুক টুর্নামেন্টে নামব না। এইসব ‘আবদার’ যেন ক্রমশ দেশের ক্রিকেটের জন্য অত্যাচারে পরিণত হচ্ছে। তাই যে মাঠে মাস কয়েক আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সেলিব্রেশনে সদলবলে নাচা-গানা করেছিলেন, সেখানে কোনও এক আজাজ প্যাটেল এসে তুর্কিনাচন নাচিয়ে দিয়ে যান।

Shubman Gill Goes Past Cheteshwar Pujara In Elite India Batters List Topped By Rohit Sharma And Virat Kohli | Cricket News
ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট শুভমানদের ব্যাটে

অথচ দেশের মাঠে স্পিনে অপ্রতিরোধ্য ভারত। এটাই তো চিরকালীন বিশ্বাস। এখন পাঁকে পড়া হাতিকে ব্যাঙে লাথি মেরে চলে যাচ্ছে। শুধু বিরাট-রোহিত নন, মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা দলই। একা কুম্ভ ঋষভ পন্থ। শুভমান, যশস্বী, সরফরাজরা কয়েকটা ভালো ইনিংস খেলেও ক্ষণিকের অতিথি। ধারাবাহিকতার অনেক কিছুই শেখা বাকি। আমরা অল্পে খুশি নই। আমরা দেখতে চাই, আপনারা পরিমিত দুঃসাহসী। নিয়মিত হয়ে উঠতে হবে। বিচ্ছিন্ন পারফরম্যান্স কিন্তু কটাক্ষ থেকে রেহাই দেবে না। প্রয়োজনে নেটদুনিয়ায় ঘুরে-ফিরে দেখুন পূর্বসূরিদের ইনিংস। শচীন তেণ্ডুলকর নামের এক ব্যক্তি কীভাবে শেন ওয়ার্নের বিরুদ্ধে ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা নিয়ে খেলতেন। ১৬ বছর বয়সে নেমে যান আক্রম-ইমরানদের সামনে। আগ্রাসন শিখতে পারেন ইন্দিরানগরের এক ‘গুন্ডার’ থেকেও। আখতারের আগুনে গতির বল কীভাবে ব্যাটের মাঝখানে লেগে পায়ের কাছে নিঃশব্দে নির্বিষ হয়ে ঝড়ে পড়ত।

…………………………………………………

আরও পড়ুন অর্পণ দাস-এর লেখা: বিদায়বেলায় তোমার পাশে ‘কিতনে আদমি থে গব্বর?’

…………………………………………………

সেই ভদ্রলোকের থেকে অনেক কিছু যে আপনাকেও শিখতে হবে কোচ গম্ভীর। না-হলে যে তুলনা চলতে থাকবে দ্রাবিড়ের সঙ্গে। বছরে দু’মাস সান্ধ্যকালীন বিনোদনের আইপিএল থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার চাপ নিশ্চয়ই আপনিও টের পাচ্ছেন? বোলাররা পারফর্ম করবেন, আর বাকিরা ‘খামোশ’ থাকবেন, এটার উত্তর খোঁজার দায়িত্ব অধিনায়কের সঙ্গে আপনারও। পথ চেনার কাজ সিনিয়রদেরও।

Gautam Gambhir in firing line: India head coach suffers second shock series defeat inside 3 months with painful NZ loss | Crickit
রোহিত-গম্ভীর জুটি

সামনে বর্ডার গাভাসকর ট্রফি। আপাতত দোষ কারও নয় গো মা! বিরাট-রোহিত, আপনারা ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছেন, অনেক নজির তৈরি করেছেন। টুর্নামেন্ট জিতিয়েছেন, আনন্দ দিয়েছেন। এটাও ঠিক যে, কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে পৌঁছেছেন। অবসরের কথা উচ্চারণ করার দুঃসাহস দেখাতে চাই না। কিন্তু কেন বিসিসিআইয়ের চোখরাঙানির অপেক্ষা করবেন? শুধু সাধারণ সমর্থক হিসেবে অনুরোধ, যাওয়ার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যান। যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বলতে পারে, এঁরা ফর্মের পরোয়া করে না। এঁদের দেখে আবারও বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়, শেষ বলে কিছু নেই। পড়ন্তবেলাতেও মাটি কামড়ে বলে যান, দেখো হে, ক্রিকেটটা এভাবে খেলতে হয়। শেখো, ধৈর্য কাকে বলে? দিনের পর দিন যেভাবে অনুপ্রাণিত করে এসেছেন, আজ আচমকা যেন তাতে ঘাটতি না পড়ে। প্রিয় রোহিত-বিরাট, আপনি আচরি ধর্ম, শিখাও জুনিয়রদের।

………………………………………………….

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

………………………………………………….