Robbar

শীতকালেই প্রথম বইয়ের জন্য কবিতালেখা, শীতকালেই সরে আসা কবিতা প্রকাশ থেকে

Published by: Robbar Digital
  • Posted:December 26, 2025 3:57 pm
  • Updated:December 26, 2025 8:21 pm  
On joy goswamis' first poetry book

জয় গোস্বামীর প্রথম বই বেরচ্ছে, তার প্রকাশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন একই সময়ের আরও দু’জন কবি, এ-ঘটনা যেমন ইতিহাসগতভাবে আমাদের শিহরিত করে, তেমনই আমাদের মনে জেগে উঠতে চায় চাঁদের অন্য পিঠের আলো। কারণ, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দীর্ঘদিন জয় গোস্বামীর কবিতাগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতি-সূত্রে খেয়াল করেছি, কবিতার বই তৈরির ক্ষেত্রে জয় নিরন্তর ও দীর্ঘ সংশোধনের পক্ষপাতী। যেমন, যখন ‘একান্নবর্তী’ (২০১২) প্রকাশিত হচ্ছে, তখন জয় পৌঁছে গেছেন ‘প্রায় শস্য’ (২০১৫) ছাড়িয়ে গরাদ গরাদ’-এর (২০১৫) কবিতায়। এই কয়েক বছরের মধ্য-সময়ে কী করছেন জয়? ফিরে-ফিরে পড়েছেন কবিতাগুলিকে। মনের অভীষ্ট চিন্তাপথ অনুযায়ী সংশোধন করেছেন।

অভিরূপ মুখোপাধ্যায়

২০২৩ সালের শেষে জয় গোস্বামী জানিয়েছিলেন, নতুন কোনও লেখা তিনি আর প্রকাশ করবেন না। এখন থেকে তিনি লিখে চলবেন, নিভৃতে। মুদ্রণজগৎ থেকে দূরে তাঁর সেই নির্জনবাস এখনও জারি রয়েছে।

কাব্যগ্রন্থ ও কবিতাপুস্তিকা মিলিয়ে জয় গোস্বামীর কবিতাগ্রন্থের সংখ্যা ৬৪। কোনও পাঠক যদি ধারাবাহিকভাবে তাঁকে পড়তে-পড়তে আসেন, সহজেই বুঝতে পারবেন, কত কম সময়ের ব্যবধানে বিপুল ও বিচিত্রভাবে ক্রমান্বয়ে পালটে গিয়েছে তাঁর লেখা। বিচ্ছেদ কিংবা যুদ্ধ, প্রেম ও কাম, চিৎকার অথবা মেনে নেওয়া– বেঁচে থাকার সব ক’টি সম্ভাব্য উপায়ই তাঁর কবিতার একেকটি গতিপথ। আর, সেইসব গতিপথের পাশে ৫২ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে কবিতার কত বিচিত্র সব আঙ্গিক, ভাষার জাদু এবং ছন্দের নাচ!

জয় গোস্বামীর এই বিরাট কাব্য-ভূখণ্ডের প্রবেশক দরজাটি আমাদের সামনে খুলে ধরে কে? তাঁর প্রথম বই ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’-র প্রথম কবিতার এই লাইন– ‘সমস্ত ক্ষুধার নীচে বালি আর সোরা আর গন্ধকের গৃহ’। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে বইটি প্রকাশিত হয়। ছাপা হয় কৃষ্ণনগরের একটি প্রেসে। ‘ভাইরাস’ পত্রিকার পক্ষ থেকে বইটির প্রকাশ করেছিলেন কবি দেবদাস আচার্য। পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল: ১২। দাম: ১ টাকা। বইটির রচনাকাল: ডিসেম্বর ১৯৭৬। কৃষ্ণনগরের জর্জ কোর্ট মোড়ে, শীতের সন্ধেয় ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’-র প্রথম ক্রেতা ছিলেন সুধীর চক্রবর্তী। জয় গোস্বামীর স্মৃতিতথ্য জানায়:

“আমার প্রথম প্রকাশক হলেন দেবদাস আচার্য। তাঁর কাছে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সুবোধ সরকার। ওঁরা দু-জনেই কৃষ্ণনগরে থাকতেন। দেবদাস আচার্য আমাকে নিয়ে গেলেন ‘বঙ্গরত্ন মেশিন প্রেস’-এ। জানা গেল ছাপতে কত লাগবে। মোট ১৪৫ টাকা লেগেছিল। মা দিল টাকাটা। বলল: ‘ভাইকে তো একটা সাইকেল কিনে দিতে হল, তুমি না হয় বই-ই ছাপাও। তুমি তো আর সাইকেল চড়তে শিখলে না!’…”

দেবদাস সম্পাদিত ‘ভাইরাস’ পত্রিকার লোগো

জয় গোস্বামীর প্রথম বই বেরচ্ছে, তার প্রকাশের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন একই সময়ের আরও দু’জন কবি, এ-ঘটনা যেমন ইতিহাসগতভাবে আমাদের শিহরিত করে, তেমনই আমাদের মনে জেগে উঠতে চায় চাঁদের অন্য পিঠের আলো। কারণ, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দীর্ঘদিন জয় গোস্বামীর কবিতাগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতি-সূত্রে খেয়াল করেছি, কবিতার বই তৈরির ক্ষেত্রে জয় নিরন্তর ও দীর্ঘ সংশোধনের পক্ষপাতী। যেমন, যখন ‘একান্নবর্তী’ (২০১২) প্রকাশিত হচ্ছে, তখন জয় পৌঁছে গিয়েছেন ‘প্রায় শস্য’ (২০১৫) ছাড়িয়ে ‘গরাদ, গরাদ’-এর (২০১৫) কবিতায়। এই কয়েক বছরের মধ্য-সময়ে কী করছেন জয়? ফিরে-ফিরে পড়েছেন কবিতাগুলিকে। মনের অভীষ্ট চিন্তাপথ অনুযায়ী সংশোধন করেছেন।

অর্থাৎ, এ-কথাটিও মনে রাখার মতো যে, নতুন বইয়ের কবিতায় যে জয়কে আমরা দেখতে পাই, সে-বইয়ে উপস্থিত জয় গোস্বামীর কবিতামন বেশ কিছু বছর আগেকার। তাঁর সাম্প্রতিক কবিতার বইটি যখন কেউ পড়তে শুরু করছে, ততদিনে জয় গোস্বামীর কবিতা কিন্তু এগিয়ে গিয়েছে আরও বহু দূর।

যদিও, প্রথম বইয়ের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। ১৯৭৬-এর ডিসেম্বর মাসে, মোট ১৪ দিনে জয় গোস্বামী একটি ধারায় লিখেছিলেন ১৭-টি কবিতা। তার মধ্যে আকারে একটি বড় লেখা, বাকি ১৬-টি কবিতাই সনেট। ঠিক পরের মাসেই, ১৯৭৭-এর জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-র ‘রবিবাসরীয়’-র পাতায় প্রকাশিত জয় গোস্বামীর ‘আমার প্রথম বই’ নামক লেখায় ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’-র জন্ম-মুহূর্ত সম্পর্কে জানা যায় এই তথ্য:

“…৩১ ডিসেম্বর সন্ধেবেলা চন্দনকে পড়ে শোনালাম কবিতাগুলো। … আমি তখন তার সঙ্গী। চন্দন লেখাগুলো শুনে বলল: ‘এই আটটা লেখা এক সঙ্গে কোথাও দেওয়া ভাল।’ বলল: ‘ছোট্ট একটা বই হলে বেশ হয়। বীরেনবাবু যেমন বার করেন, পাতিরামে পাওয়া যায়।’ বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোট্ট-ছোট্ট পুস্তিকা আমরা স্টল থেকে কিনতাম। প্রথম বই বার করার অনুপ্রেরণা বা পরিকল্পনা যা-ই বলা যাক, চন্দনের কাছেই পাই।”

এ তো গেল পাণ্ডুলিপি তৈরির কথা। ফিরে আসতে চাইব, ‘সমস্ত ক্ষুধার নীচে বালি আর সোরা আর গন্ধকের গৃহ’ লাইনটির কাছে। কীভাবে জয় গোস্বামীর কাছে এসেছিল এ-বইয়ের কবিতা? পূর্বে উল্লেখিত ‘আমার প্রথম বই’ শীর্ষক রচনায় জয় জানাছেন:

“সেটা ১৯৭৭ সাল। জানুয়ারির ১৪ তারিখে বেরলো আমার প্রথম বই। বইতে প্রকাশ-তারিখ হিসেবে যদিও ছাপা ছিল ১ জানুয়ারি।… মাঝেমাঝে বাড়ি থেকে তিন মিনিট দূরে মহকুমা লাইব্রেরির রিডিং রুমে গিয়ে বই পড়ি। রিডিং রুম ফাঁকা। আমি ছাড়া দ্বিতীয় পাঠক নেই। উত্তম দাশের ‘বাংলা সাহিত্যে সনেট’ বইটি পড়ে ঠিক করলাম আমিও সনেট লিখব। নিয়মকানুন শেখার চেষ্টা করলাম। এই সঙ্গে দীপ্তি ত্রিপাঠীর একটা বই-ও পড়েছি। হ্যাঁ, যে-বইটা বিখ্যাত সেটাই। মাইকেল বা শক্তির চতুর্দশপদী পড়ে নয়, ইচ্ছেটা হল প্রবন্ধের বই পড়ে। একা-একলা রিডিং রুমে বসেই প্রথম লেখাটা মনে হানা দিতে লাগল। প্রথম লাইনটা এল: ‘সম্পূর্ণ ক্ষুধার নীচে বালি আর সোরা আর গন্ধকের গৃহ…’। কী করব, কিছুই খেতে পারছি না তো তখন! খেলেই বমি। সঙ্গে ওই যে মাথা-ঘোরা আর জ্বর। এদিকে খাওয়া নিয়ে মায়ের বকাবকি। প্রথম স্তবকের চার লাইন, তারপর দ্বিতীয় স্তবকের চার লাইন, এই আট লাইন পুরোপুরি মনে-মনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর, শেষ ছ-লাইনের জন্য বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে-হাঁটতে ছ-লাইন। বাড়ি গিয়ে কাগজ-কলমে বসে কাটাকুটি করে গুছোতে লাগলাম সবটা। সেই শুরু। তার পরের কয়েকদিন ধরে ব্যাপারটা চলল।”

এ-কথা ঠিক, পাণ্ডুলিপি তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম বইয়ের সঙ্গে তাঁর আজীবনের কবিতাগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি নির্মাণের কিছু বৈসাদৃশ্য আছে। তেমনই প্রথম থেকেই তাঁর কবিতার মধ্যে রয়েছে তাঁর আজীবনের লেখার বহু সাদৃশ্যবীজ। তার মধ্যে প্রধান হল, আত্মপ্রস্তুতি! জয় স্বীকার করছেন: “উত্তম দাশের ‘বাংলা সাহিত্যে সনেট’ বইটি পড়ে ঠিক করলাম আমিও সনেট লিখব। নিয়মকানুন শেখার চেষ্টা করলাম। এই সঙ্গে দীপ্তি ত্রিপাঠীর একটা বই-ও পড়েছি। হ্যাঁ, যে-বইটা বিখ্যাত সেটাই।” বলছেন এ-কথাও: “মাইকেল বা শক্তির চতুর্দশপদী পড়ে নয়, ইচ্ছেটা (সনেট লেখার) হল প্রবন্ধের বই পড়ে।”

 

আঙ্গিক কেন প্রয়োজন? এ-সম্পর্কে একাধিক সাক্ষাৎকারে জয় বলেছেন, মনের অভিজ্ঞতার চাঞ্চল্যময় গতিকে চতুর্দিকে ছিটকে পড়তে দেয় না ফর্ম। অতি শব্দ ব্যবহারে বাধা দেয়। তাঁর মতে, সনেট, ব্যালাড, সেসটিনা, ওড প্রভৃতি কবিতার যাবতীয় আঙ্গিকের বয়স কবিতা-লেখকের আয়ুর থেকে অনেক বড়। ফলে, তাদের ধারণ-ক্ষমতাও বেশি।

জয় কী করলেন? সনেটের আঙ্গিকের মধ্যে ঢেলে দিলেন অবচেতনের স্রোত। যেমন, ‘প্লুতস্বর’ নামক কবিতায় জয় গোস্বামী লিখছেন: ‘গেল শনিবার/ ওরাও তো নেমেছিল স্নানে আর হীনযানে বিশ্বস্ত ছিল না জল’। ‘শীত ঘুম’ কবিতায় রয়েছে: ‘প্রথমে আক্রান্ত, পরে, নীল, শেষে স্তব্ধ, সৌত্রান্তিক’। বইয়ের প্রথম কবিতা ‘জতুগৃহ’-এর দ্বাদশ লাইনে লিখছেন: ‘এখন বালি সরিয়ে বসুধা/ অর্ধখান করতেই জলরাশি, ঝকঝকে চোয়াল, ব্যারাকুডা…’। এই লাইনগুলি আরও একটু নিচু স্বরে জানিয়ে দিতে চায়, শুধু অবচেতন নয়, প্রত্যক্ষ জীবন অভিজ্ঞতার বাইরে, জগৎ-অভিজ্ঞতাকেই তখন জয় গোস্বামী নিজের কবিতায় গ্রহণ করতে চাইছিলেন। ‘হীনযান’ কিংবা ‘সৌত্রান্তিক’ শব্দগুলির ভেতর বৌদ্ধ হীনযান দর্শন যেভাবে ধরে আছে, তেমনই ‘ব্যারাকুডা’ নামের প্রসঙ্গ-মাধ্যমে জয় নিয়ে আসছেন নিজের জেমস বন্ড পড়ার অভিজ্ঞতাকে। ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’-র পরবর্তী দু’টি কাব্যগ্রন্থ, অর্থাৎ ‘প্রত্নজীব’ ও ‘আলেয়া হ্রদ’-এও একই রচনা-প্রক্রিয়া ভিন্ন-ভিন্ন রূপে, নানা ধরনের আঙ্গিকের মধ্যে দিয়ে দেখতে পাওয়া যায়।

এখানে প্রাসঙ্গিক, ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’-র আগে ও পরেও বহু সনেট লিখেছেন জয় গোস্বামী। যেমন, অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্যের ‘কবি ও কবিতা’ পত্রিকায় একসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর একাধিক সনেট। সেগুলির একটিও তাঁর কোনও কাব্যগ্রন্থে জয় নেননি। একেই বলে, কবির অন্তর্গত আত্মসম্পাদনার মন! একইসঙ্গে, নানা ধরনের ফর্মে লিখলেও কোনওদিন, সেসব ফর্মের পরিচয়নামও কবিতায় উল্লেখ করেনি জয় গোস্বামী।

শুধু ব্যতিক্রম, প্রথম বইটি। এখানেই জরুরি হয়ে পড়ে ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘নতুন কবিসম্মেলন’ পত্রিকায় জয় গোস্বামীর একটি সাক্ষাৎকারের স্বীকারোক্তি:

“এই বইটি সম্পর্কে আমার মনের মধ্যে একটা চিরস্থায়ী দ্বিধা আছে। সেই দ্বিধা হচ্ছে এর নামকরণ নিয়ে। আমি বইটির নামের মধ্যে ‘সনেট’ শব্দটা যোগ করেছিলাম কেন? এ-কথা ভেবে পরবর্তীকালে আমার অনুতাপ হয়েছে। আমার উচিত ছিল যে ‘সনেটগুচ্ছ’ কথাটা বইয়ের শিরোনামে না দেওয়া। ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’ নামটা যখনই শুনি আমার কেমন মনে হয় যে আমি যেন ঘোষণা করে বলতে চেয়েছি দ্যাখো, আমি কিন্তু সনেট লিখতে পারি। সারাজীবন আমার সঙ্গী হয়ে থাকবে এই অনুশোচনা যে আমি এই ঘোষণাটা করেছিলাম।”

কবিতা ও ব্যক্তিগত জীবনে নিজের ভুল নিজেরই লেখায় বারবার স্বীকার করে নেওয়া, সংশোধনের পথে হাঁটা, প্রতিষ্ঠা ও পাঠকব্যাপ্তির চূড়ায় থেকেও যখন কেউ তা অবলীলায় করতে পারেন, বুঝতে পারি, মুদ্রণ জগৎ থেকে অবসর নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর মতো কবির কাছে সকালের রোদ্দুর ওঠার মতো এক অনায়াস ঘটনা মাত্র!

প্রসঙ্গত জানাই, ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’-কে আরেকটি কারণেও আমার গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। এ-বইয়ের কবিতায় এমন কিছু প্রকরণ-চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় যা জয় গোস্বামীর সারা জীবনের লেখায় আরও সুগঠিত ও বিস্তৃতরূপে বারবার ঘুরে-ফিরে এসেছে। যেমন, ‘জতুগৃহ’, ‘শ্মশ্রুময়’, ‘অপস্বপ্ন’, ‘জন্মপত্র’, ‘ক্রীসমাস’– এইসব কবিতার বিভিন্ন অংশে ঢুকে পড়া বন্ধনী-চিহ্নের ভেতর কবিতা-কথকের কথা, কবিতার সামঞ্জস্যসূত্রে টুকরো-টুকরো সংলাপ, যা পড়বার সময় এক আবেশময় নাটকীয়তার ঘোর তৈরি করে দেয়। কবিতায় এই প্রয়োগের সর্বোচ্চ বিস্ফোরণ দেখতে পাওয়া যায় ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’-র ২৫ বছর পরে প্রকাশিত জয় গোস্বামীর ‘হরিণের জন্য একক’ কাব্যগ্রন্থের নানা অংশে। যেখানে সিনেমা-সংগীত, জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন, বৈষ্ণব লোকগান, নাটকের সংলাপ, ফুটবলের রিলে করার পদ্ধতি– সব মিলেমিশে একটিই কবিতাস্বর হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এক ক্রিসমাসে, ১৯৭৬-এর ডিসেম্বরে, জয় গোস্বামী তাঁর প্রথম বইয়ের কবিতাগুলি লিখতে শুরু করেছিলেন। প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, আরেক ক্রিসমাসে পৌঁছে জয় গোস্বামী ‘কবিতা প্রকাশের ৫০ বছরে’ নামক পুস্তিকায় লিখিতভাবে জানান, তিনি তাঁর নতুন লেখা আর প্রকাশ করবেন না। একেই হয়তো বলে কবির জীবনের নিয়তি-চক্র! সেই কাব্যনিয়তির প্রথম পাঠ আটটি কবিতায় ধারণ করে আছে ‘ক্রীসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’।

……………………..

রোববার.ইন-এ পড়ুন অভিরূপ মুখোপাধ্যায়-এর অন্যান্য লেখা

……………………..