Robbar

নটীর পূজায় গৌরী ভঞ্জের নৃত্যে মুগ্ধ অবনীন্দ্রনাথ বকশিস দিয়েছিলেন পরনের জোব্বা

Published by: Robbar Digital
  • Posted:March 4, 2025 7:49 pm
  • Updated:March 5, 2025 12:00 pm  

নটীর পূজায় গৌরীর নাচের কথা যদি স্মরণ করি, তবে তা ছিল একেবারে ঐতিহাসিক। সে-সময় মেয়েরা নাটক কি নাচ দেখতে যেত সামনে আব্রু বা চিক ফেলে। সেই সময় একজন মেয়ে স্টেজে নৃত্য পরিবেশন করছে– এ এক আশ্চর্য ঘটনা। সে-সব দিনে বাইজিদের জন্য ছিল ঘরের বাইরে বা মঞ্চে অভিনয়ের আয়োজন, আর দেবদাসীদের নৃত্যের জায়গা ছিল মন্দিরের আঙিনা। ফলে ভদ্রঘরের মেয়ের স্টেজে অভিনয় যে কী সামাজিক অভিধা তৈরি করবে তা বোঝাই যায়। সেখানে গৌরী একের পর এক নাটকে অভিনয় করেছেন, নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন।

ছবিঋণ: রবীন্দ্রভবন ফটো আর্কাইভ, শান্তিনিকেতন

অহনা বিশ্বাস

৩.

শান্তিনিকেতনের মণ্ডনশিল্প আলপনাকে যে-দুই আশ্রমকন্যা শিল্পের পর্যায়ে উত্তীর্ণ করেছিলেন– তাঁরা হলেন নন্দলাল বসু ও সুধীরা দেবীর কন্যাদ্বয় গৌরী ও যমুনা। শৈশব থেকে তাঁরা আশ্রম-বিদ্যালয়ের সন্তান, সেখানেই তাঁদের বেড়ে ওঠা। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ চাইতেন, যার সম্ভাবনা ও আগ্রহ যেদিকে, সে সেই বিষয়েই চর্চা করুক। রবীন্দ্রনাথের নির্দেশেই গৌরী ছবি আঁকা, নাচ, গান শিখতে শুরু করেন।

সে-সময় রবীন্দ্রনাথের নজর সকল ছাত্রছাত্রীর ওপরই ছিল। শৈশবে গৌরীর যে লেখাপড়া হতে পারে, তা কারওরই বিশ্বাস ছিল না। যে যাতে ভালো, তাকে তাতে এগোতে দেওয়াই ছিল আশ্রমবিদ্যালয়ের শিক্ষার ধরন। সে কারণেই কলাভবনে ভর্তি হতে হল গৌরীকে।

গৌরী ভঞ্জ

নন্দলাল বসু যখন তাঁর বিখ্যাত ছবি ‘গৌরী’ আঁকছেন, সেই সময় তাঁর কন্যাসন্তান গৌরীর জন্ম। আর কলাভবনে নন্দলালের প্রথম ব্যাচের ছাত্রীও তাঁর এই মেয়ে গৌরী। ঘরে-বাইরে বাবার কাছে কাজ শেখা চলেছিল গৌরীর। অনেক শিক্ষক শান্তিনিকেতনে থাকলেও নন্দলাল বসুই একমাত্র ‘মাস্টারমশাই’ আখ্যা পান। গৌরীর কাছে মাস্টারমশাই নন্দলাল ছিলেন দেবতা।

ছোট থেকে রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য পেয়েছেন গৌরী। শান্তিনিকেতনে বাঁধাধরা ক্লাস ছিল না, যে কেউ যে কোনও বয়সের মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করতে পারত। ফলে কখন যে ছাত্রছাত্রীরা সমৃদ্ধ হয়ে উঠত, তা তারা টেরই পেত না। শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের সামনে বসেই তাঁদের শ্রেষ্ঠতম শিল্পগুলি নির্মাণ করছেন। স্টেজ সাজাচ্ছেন বিশিষ্ট শিল্পীরা, অথবা দিনের পর দিন ফ্রেস্কো নির্মাণ করছেন তাঁরা। সে-সব দেখতে দেখতেই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাগ্রহণ। এভাবেই যখন ‘চীন ভবন’ প্রতিষ্ঠা হল তখন সেখানে নন্দলাল বসুর নেতৃত্বে অজন্তার অনুকরণে চিত্র আঁকা হল। তখন মাস্টারমশাইকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন প্রভাস সেন আর সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আশ্রমকন্যা গৌরীও।

চীন ভবনের গায়ে অজন্তার অনুকরণে চিত্রকলা

গৌরীর ছোট বোন যমুনাও ছবি আঁকতেন। কিছুদিন স্কুলের পড়া চালিয়েই তিনি কলাভবনে শিল্পের শিক্ষা নিতে শুরু করেন। সে সময়ের কলাভবনে তাঁরা পেইন্টিং, মডেলিং, টেরাকোটা, ফ্রেস্কোর কাজ, নানা রকমের হাতের কাজ, আলপনা, সেলাই– সবই শিখতেন। ওই সময় আশ্রমের সকল ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে চারপাশের গ্রামে গিয়ে মন্দির-মসজিদের কারুকার্য ও নানা শিল্পসামগ্রী দেখানো হত। যে কোনও গাছ, ফুল, পাতা, মাছ, পশু, পাখি স্টাডি করানো হত। এসবের থেকেই শিক্ষা লাভ করতেন গৌরী-যমুনার মতো আশ্রমকন্যারা। সে-সব ফুটে উঠত আলপনায়, বাটিকের ডিজাইনে, বিভিন্নরূপ আঙ্গিকে। এইসব স্টাডি ভেঙে ছক বের করে নানা আলংকারিক নকশায় তাঁরা তা প্রতিফলিত করতেন।

যমুনা সেন

 

পিয়ারসেন মেমোরিয়াল হাসপাতালের বারান্দায় সমবেত ফ্রেস্কো করেছিলেন যমুনা। ফ্রেস্কোর প্রাথমিক ছবি ফ্রি আঁকতে হয়েছিল। শুধু তাই নয় আশ্রমের কোনও একটা অঞ্চলের, কোনও খণ্ডদৃশ্যকে আঁকতে হবে বলা হয়েছিল। যমুনা এঁকেছিলেন মন্দিরের পাশের কাঁঠাল গাছের চিত্র। বহুদিন ধরে স্টাডি করে, তার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ডিটেইল-সহ আলো আঁধারের সব খেলা যমুনা ধরেছিলেন সেই ফ্রেস্কোতে। পাঠভবনের শিশু বিভাগের দেওয়ালেও মাস্টারপিসের কপি করেছেন যমুনারা। খাটের ওপর খাট উঁচু করে করে সেই কাজ করা। গীতা, চিত্রনিভা, সাবিত্রী, নবনীতা সবাই মিলে আনন্দ করে ফ্রেস্কোর কাজ করার মজা বোধ হয় পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনে আর বিশেষ দেখা যায়নি। বর্তমানে ঘরের ওপর ঘর উঠে যায়। বাইরের রাজমিস্ত্রি কাজ করে চলে যায়। ভেতরে ছাত্রছাত্রীদের সমবেত সৃষ্টিকাজ সেখানে আর থাকে না। সে-সময় আশ্রম বিদ্যালয়ে বাইরের শ্রী আর ভেতরের সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। আশ্রমকন্যারা কলাভবনে যে-জায়গায় কাজ করতে বসতেন সেই জায়গাটায় তাঁরা নিজেরাই ফুল দিয়ে, আলপনা দিয়ে সাজিয়ে নিতেন।

গৌরী ভঞ্জের নেতৃত্বে আলপনা

রবীন্দ্রনাথ আশ্রমের পুত্রকন্যাদের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে নানা ধরনের ছবির বই, নানা শিল্পকর্মের বই সংগ্রহ করে আনতেন। গৌরী সেই বই দেখে নিজে নিজেই ম্যাক্রমের কাজ শেখেন। প্রথমে বেল্ট বানানো হত। পরে তিনি শখ করে তার সঙ্গে নিজস্বতা মিশিয়ে ম্যাক্রমের গয়না বানান। এইভাবে হাঙ্গেরি, জাপান তাঁর শিল্পকর্মের সঙ্গে মিশে যায়। বাকি জীবন তিনি বহুজনকে এই ম্যাক্রমের গয়না বানানো শিখিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সেও প্রতি বুধবার ছুটির দিনে তিনি ঘণ্টাখানেক করে ম্যাক্রমের গয়না গড়া শেখাতেন।

এভাবেই শান্তিনিকেতনকেন্দ্রিক কারু ও চারুশিল্পের ধারণাটি শান্তিনিকেতনের গণ্ডির বাইরে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে বহু মানুষের জীবিকার অঙ্গ হয়েছে এই ম্যাক্রম। আমাদের অল্প বয়সে ম্যাক্রমের জনপ্রিয়তা এমনই ছিল যে, বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেকেই ম্যাক্রমের গয়না পরে যেতেন।

গৌরী ভঞ্জের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা

রবীন্দ্রনাথ যেমন আশ্রম-বিদ্যালয়ের জন্য অনেক শিল্পশিক্ষার বই নিয়ে আসতেন, তেমনই বিভিন্ন দেশ থেকে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে বহু অতিথির আনাগোনা লেগেই থাকত শান্তিনিকেতনে। গৌরী-যমুনার মতো আশ্রমকন্যারা এঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন সেলাই, বিভিন্ন হাতের কাজ শিখে নিতেন। পরে তাঁরা শেখাতেন অন্য ছাত্রছাত্রীদের। এভাবেই শান্তিনিকেতনের সেলাইয়ের একটি নিজস্ব ধারা তৈরি হয়– যাকে আলাদা করে ঢাকার বা রাজস্থানী কাজ বলা যায় না।

গৌরী ভঞ্জ যমুনা সেন

গৌরী ও যমুনা– দুই আশ্রমকন্যা চিরদিন শান্তিনিকেতনে থেকেছেন। তাঁরা যেমন শান্তিনিকেতন থেকে নিয়েছেন, তেমনই তাঁদের সবটুকু শিক্ষা পরবর্তী শিক্ষার্থীদের উজাড় করে দিয়েছেন। গৌরী চিরকাল ফুলের গয়না বানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের শিখিয়ে গেছেন। তাঁরা দুই বোনই ছিলেন কলাভবনের শিক্ষিকা। পরবর্তীকালে নন্দলালের সঙ্গে গৌরী, যমুনা, নিবেদিতা, বাণী হাত লাগিয়েছেন সংবিধান অলংকরণের কাজে।

আশ্রমের এই শিক্ষার ঝুলি শুধু কলাভবনেই আটকে থাকেনি। শিল্পশিক্ষার্থী ও শিল্পীদের উপার্জনের জন্য এবং ঘরে ঘরেই সুরুচি প্রবর্তনের জন্য নন্দলাল ১৯৩০ সালে কারুসংঘের পরিকল্পনা করেন। সেখানে বিভিন্ন শিল্পকর্মের অর্ডার নিয়ে এসে আশ্রমকন্যারা কিছু কিছু রোজগার করতেন। সে বড় আনন্দের আয়োজন। এই কারুসংঘের শীর্ষে একসময় আশ্রমবালিকা যমুনা সেনও ছিলেন। কারুসংঘের কাজের মধ্যে দিয়ে শান্তিনিকেতনের শিল্প, সংস্কৃতি, সুরুচি একটি প্রাণ থেকে অন্য প্রাণে ছড়িয়ে দেওয়ার আয়োজন চলেছিল। কারুসংঘের কাজ দেশ থেকে বিদেশে ছড়িয়ে গিয়েছিল।

যমুনা সেন

ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষজন, ইংরেজের অধীনে চাকরি করা চাকুরিজীবীরা যেভাবে ইউরোপ থেকে আমদানি করা সংস্কৃতিকে মাথায় করে রাখছিল, তার অনুকরণেই জামাকাপড় পরছিল, আসবাবপত্র বানিয়ে নিজেদের ঘর সাজাচ্ছিল, ইমারত বানাচ্ছিল, তার বিপরীতে শান্তিনিকেতন দেশীয় শিল্পসংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এক নতুন ধরনের পোশাকের নকশা, নতুন আঙ্গিকে গৃহসজ্জার এমন সৌন্দর্যময় উপকরণ নিয়ে এল যে, তা এক নতুন ধরনের নীরব সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্ম দিল। স্বদেশি আন্দোলনের পাশাপাশি এই বিষয়টি গুরুত্ব বিশেষভাবে কোথাও আলোচিত হয়নি ঠিকই, কিন্তু এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

No photo description available.
শিল্পী: যমুনা সেন

আগেই বলেছি, আশ্রমের শিক্ষা একটি বিশেষ বিষয়ে আবদ্ধ থাকত না। একইসঙ্গে তাঁরা তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারতেন। গৌরী ও যমুনা দুই বোনই ছিলেন বাল্যাবধি নৃত্যে অনুরাগী।

রবীন্দ্রনাথ সমসাময়িক প্রথা ভেঙে শান্তিনিকেতনে আশ্রমের পুত্রকন্যাদের জন্য নাচ শেখানোর ব্যবস্থা করলেন। ব্যালে, ক্যান্ডি, জাপানি ও মণিপুরী নাচ দেখে রবীন্দ্রনাথ খুবই উৎসাহিত বোধ করেছিলেন। ত্রিপুরার মহারাজার সাহায্যে বুদ্ধমন্ত্র সিংকে নাচ শেখানোর জন্য শান্তিনিকেতনে নিয়ে এসেছিলেন। এ-ছাড়া মণিপুরী নৃত্যগুরু নবকুমার ও তার ভাই বৈকুণ্ঠনাথ সিংহ সেখানে হাজির ছিলেন। এঁদের কাছেই নাচ শেখেন গৌরী, যমুনা, শ্রীমতি, নন্দিতা, অমিতা প্রমুখ আশ্রমকন্যারা। রবীন্দ্রনাথ তো শুধু নৃত্যপটিয়সী তৈরি করতে চাননি। সমস্ত কলাবিদ্যা শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনকে উন্নত শান্তিময় করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি।

Of Spaces of their Own: Women Artists in 20th Century India — Akar Prakar
শিল্পী: গৌরী ভঞ্জ

নটীর পূজায় গৌরীর নাচের কথা যদি স্মরণ করি, তবে তা ছিল একেবারে ঐতিহাসিক। সে-সময় মেয়েরা নাটক কি নাচ দেখতে যেত সামনে আব্রু বা চিক ফেলে। সেই সময় একজন মেয়ে স্টেজে নৃত্য পরিবেশন করছে– এ এক আশ্চর্য ঘটনা। সে-সব দিনে বাইজিদের জন্য ছিল ঘরের বাইরে বা মঞ্চে অভিনয়ের আয়োজন, আর দেবদাসীদের নৃত্যের জায়গা ছিল মন্দিরের আঙিনা। ফলে ভদ্রঘরের মেয়ের স্টেজে অভিনয় যে কী সামাজিক অভিধা তৈরি করবে, তা বোঝাই যায়। সেখানে গৌরী একের পর এক নাটকে অভিনয় করেছেন, নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন।

Jamuna Sen - Wikipedia
যমুনা সেন

১৯২৭ সালে ভারতের অশান্ত পরিবেশে গুরুদেব লিখলেন ‘নটীর পূজা’। কলকাতার স্টেজে তা অভিনয় হল। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বসে থাকলেন মঞ্চে। গৌরীর বাবা আপত্তি করলেন না। মা বললেন, রবীন্দ্রনাথের আশ্রয়ে তাঁরা আছেন। তিনি যা ভালো বুঝবেন তাই হবে। সেদিন জোড়াসাঁকোর বিচিত্রা ভবনে লোক ধরেনি, ঠাকুরদালানেও লোক বসেছে আর মঞ্চে নাটক অভিনয় হয়েছে।

গুরুদেব গৌরীকে বলেছিলেন অ্যাক্টিং-এর সময় সামনে কে বা কারা আছে, তার দিকে না তাকাতে। শান্তিনিকেতনের ছাত্রী ক্ষমা ঘোষের লেখা থেকে জানতে পারি, সেদিন অবনীন্দ্রনাথ তাঁর জোব্বাটা পরিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘এই নে তোর নাচের বকশিশ।’ আর নন্দলালকে বলেছিলেন, ‘এই মেয়ে আগুন স্পর্শ করেছে। একে সাবধানে রেখো।’

নটীর পূজা

যমুনা অভিনয় করেছেন রবীন্দ্রনাথের প্রায় সব নৃত্যনাট্যেই। যমুনার নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় দেখে অমৃতা সেন স্মৃতিচারণ করেছেন, ‘যমুনার নাচ যারা দেখেছেন তারা কেউ তা ভুলতে পারেননি।’

সে-সময় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্বে সবাই একসঙ্গে রিহার্সালে আসতেন। যাঁরা অংশগ্রহণ করবেন, যাঁরা করবেন না সবাই রিহার্সালে হাজির থাকতেন। দেখতে দেখতে নাটকের গান ও কথা সবার মুখস্থ হয়ে যেত। ফলে কেউ অসুস্থ হলে অনায়াসেই অন্য কেউ সেখানে উপস্থিত হয়ে যেতেন। গুরুদেব মহড়া দিতে দিতে নাটকের পরিবর্তনও করতেন, সেইসব পরিবর্তনের সাক্ষী থাকাও এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।

যমুনা সেন, নিবেদিতা বসু ও নন্দিতা দেবী

আশ্রমকন্যারা অভিনয় করতে বাংলার বাইরে বহু জায়গায় যেতেন। শান্তিনিকেতন এবং কলকাতায় অভিনয় তো হতই। ১৯৩৩ সালে যমুনা প্রথম লখনউয়ে অভিনয় করতে যান। অমিতা, নিবেদিতা, মমতা, নন্দিতা, ইন্দুবালা মিলে আশ্রমকন্যাদের দল গেছে সিংহল, ওয়ালটেয়ার, এলাহাবাদ, পাটনা, লাহোর, দিল্লি, মীরাট– আরও কতসব জায়গায়।

শুধু কি নাচ! রবীন্দ্রনাথ আশ্রমের বালকবালিকাদের ব্যবহারের রীতিনীতিও শেখাতেন। যাওয়ার আগে গুরুদেব সকলকে ডেকে ভালো করে বুঝিয়ে দিতেন– কোথায় যাওয়া হচ্ছে, সেখানে তাদের চলাফেরা, আচার-ব্যবহার কেমন হবে। এই শিক্ষাও গৌরী ও যমুনার মতো আশ্রমকন্যাদের কম পাওনা নয়।

আশ্রমকন্যা-র অন্যান্য পর্ব …

পর্ব ২: শান্তিনিকেতনের আলপনা বঙ্গসংস্কৃতিতে চিরস্থায়ী যে ক’জন আশ্রমকন্যার দরুন, তাঁদের প্রথমেই থাকবেন সুকুমারী দেবী

পর্ব ১: সৌন্দর্য, সুরুচি এবং আনন্দ একমাত্র অর্থের ওপর নির্ভরশীল নয়, প্রমাণ করেছিলেন আশ্রমকন্যা সুধীরা দেবী