মানবজীবনের জীবনের তত্ত্ব নিয়ে যাঁরা দীর্ঘকাল চর্চা করেছেন, তাঁরা মানুষকে বোঝাতে গিয়ে রথের উপমা টেনেছেন। কঠোপনিষদে আমাদের দেহকে রথের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে রথের অন্যান্য অংশের তুলনাও এসে যায়। যেমন, বুদ্ধির তুলনা করা হয়েছে সারথির সঙ্গে। সারথিই এই রথকে চালনা করে। যেভাবে দেহকে পরিচালনা করে বুদ্ধি। ইন্দ্রিয়গুলি হচ্ছে অশ্ব– রথের বাহক। মন এই অসংযত ইন্দ্রিয়গুলোকে সংযত করে চালনা করে।
মানুষের ভেতর অনন্ত শক্তি আছে। কোনও কোনও কাজ সেই শক্তি বিকাশের সহায়ক। এই শক্তি সে অর্থে ‘বল’ নয়। একালের পেশিবহুলতার চর্চা নয়। এককোপে মোটা গাছের গুঁড়ি কেটে ফেলা নয়। এই শক্তি মানসিক। যা শরীরের পাশে দোসর হয়ে দাঁড়ায়। সুখপ্রদ কর্মকে আমরা ‘পুণ্য’ বলি। আর এর বিপরীতে যে কর্ম দুঃখপ্রদায়ী– তাকে ‘পাপ’ বলি। ভেতরের শক্তিকে সংহত ও একাগ্র করতে পারলে জীবনযুদ্ধে সফল হওয়া যায়। মানবজীবনের উন্নতি ও অভ্যুদয় হয়।
গত সপ্তাহে, বহির্জগতের এবং অন্তর্জগতের কথা এসেছিল। এই আত্মশক্তি অন্তর্জগতের, যা বহির্জগতে কর্মপ্রেরণা তৈরি করে। তৈরি করে জীবনের সুস্থির মানদণ্ড। মানুষকে জুড়ে রাখে নিজের কর্মধারার সঙ্গে, বিচ্যুত হতে দেয় না। এবং, জোগায় আত্মবিশ্বাস। ফলে আত্মবিকাশের পথটিও সুগম হয়।
এ প্রসঙ্গে মানুষ কী, তা একটু দেখে নেওয়া যাক। মানবজীবনের তত্ত্ব নিয়ে যাঁরা দীর্ঘকাল চর্চা করেছেন, তাঁরা মানুষকে বোঝাতে গিয়ে রথের উপমা টেনেছেন। কঠোপনিষদে আমাদের দেহকে রথের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে রথের অন্যান্য অংশের তুলনাও এসে যায়। যেমন, বুদ্ধির তুলনা করা হয়েছে সারথির সঙ্গে। সারথিই এই রথকে চালনা করে। যেভাবে দেহকে পরিচালনা করে বুদ্ধি। ইন্দ্রিয়গুলি হচ্ছে অশ্ব– রথের বাহক। মন এই অসংযত ইন্দ্রিয়গুলোকে সংযত করে চালনা করে। তাই মনকে লাগামের সঙ্গে তুলনা করা হয়। ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয়গুলিকে রাস্তার সঙ্গে তুলনা করা হয়। মানুষ নামক রথের ভিতর একটি ‘হুঁশ’ অবস্থান করছে, সে রথী আত্মা। রথের ঘোড়াগুলি যদি সারথির বশ না হয়, তাহলে রথী যেমন গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে না; তেমনই ইন্দ্রিয়গুলি বেলাগাম হলে মনুষ্য জীবনের পরিণাম ভাল হয় না, বাইরে-ভেতরে কোথাওই নয়। বুদ্ধি সরাসরি নয়, মনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়ের ওপরে তার প্রভাব রাখে। বুদ্ধির হাতে মনরূপ লাগাম যদি শক্ত হাতে ধরা থাকে, তাহলে ইন্দ্রিয়গুলিও বশে থাকে।
তাই মানবরথকে ঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন আচার—’আচারঃ প্রথমো ধর্মঃ’। সেই সমস্ত আচার যা কিনা ব্যক্তি ও সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক। এমন কিছু ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া এবং এমন কিছু ব্যবহার না করা যাতে মানুষকে অমঙ্গলের সম্মুখীন হতে না হয়। মানবজীবনকে, তার দেহ মনের ক্রিয়াকে নিজের ও সমাজের মঙ্গলের উপযোগী করে তোলাই ‘ধর্ম’।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved