Robbar

মিছিলে তোমার সঙ্গে দেখা হবে বলে…

Published by: Robbar Digital
  • Posted:August 19, 2024 8:55 pm
  • Updated:August 22, 2024 3:55 pm  

প্রিয় জীবনানন্দ,

দীর্ঘদিন কাবু হয়ে বসেছিলাম কালো অন্ধকারে। হাতে-পায়ে বোধহয়, গজিয়ে গিয়েছিল শিকড়বাকড়। গলার স্বর আমি তুলে রেখেছিলাম আলমারিতে। বহু যত্নে। কেমন আছে তা, জানি না। অপেক্ষায় ছিলাম। হাজার বছর? না কি তার চেয়েও বেশি? ক্যালেন্ডারে সাল-তারিখ থাকে, পুজো-ইদ থাকে, কে কার জন্য অপেক্ষা করছে– লেখা থাকে না কখনও।

কীসের জন্য অপেক্ষা, তা আজ টের পেয়ে গেছি। ভাবলে তোমার জন্য? না, রাতের জন্য আর রাস্তার জন্য। যে রাস্তা ধরে তুমি হাজার বছর পথ হেঁটে এসেছ এইখানে– এইবার সেই রাস্তা, কিংবা অন্য কোনও রাস্তা ধরে আমি ঠিকই পৌঁছে যাব তোমার কাছে। অনেক দিন হল স্থির, স্থবির হয়ে বসে রয়েছি শুধু। অন্ধকারে মুখোমুখি বসে থাকা আর দু’-দণ্ড শান্তি দেওয়া– এটা আমার পরিচয় নয়। আমার প্রেমবোধ আজ আর শুধু ওই মুহূর্তটুকুতে দাঁড়িয়ে নেই।

এক বছর আগের চিঠিতে, তুমি লিখেছিলে রোববার.ইন পড়ার কথা। গত এক বছর দরকারে-অদরকারে সেখানে গিয়েছি। তোমার সেমিকোলন ব্যবহার নিয়েও সেখানে কথাবার্তা হয়েছে, তুমি দেখেছ নিশ্চয়ই। তোমার ১২৫তম জন্মবার্ষিকী এ-বছর, তোমাকে আরেকটু খতিয়ে দেখবে না ওরা? যে অন্ধকারের কথা, যে বিপন্নতার কথা, বিমূঢ় বিস্ময়ের কথা– আজীবন লিখে গিয়েছ, সে কথা এই উত্তর-আধুনিক অন্ধকারে আরেকবার ছুঁয়ে দেখা উচিত।

হাঁটছি জীবনানন্দ। এই হাতচিঠি নিয়ে। আলমারিতে তুলে রাখা গলার স্বর ফিরিয়ে নিয়েছি গলায়। স্লোগান দিচ্ছি। হাত-পায়ের শিকড় কেটে চলচ্ছক্তি পেয়েছি আবার। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে আমি, নিতান্তই একজন, অপূর্ব ‘আমরা’ হয়ে উঠছি। মিছিলে, তোমার সঙ্গে দেখা হবে না? যদি হয়, সে-রাস্তায়, অনন্ত মিছিলের মধ্যে দাঁড়িয়ে, তোমার হাতে তুলে দেব এই হাতচিঠি।

নয়তো কখনও দেব না।

ইতি, বনলতা সেন