Robbar

মূর্তি দিয়েই লর্ড বেন্টিঙ্ককে প্রতিষ্ঠা করা হল সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদকারী হিসেবে

Published by: Robbar Digital
  • Posted:January 26, 2025 3:00 pm
  • Updated:January 26, 2025 3:00 pm  

১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় দু’খণ্ডে ‘বাংলায় ভ্রমণ’, মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বই। কলকাতায় বসে মানুষ যেমন একদিকে ঘরে বসে বসেই জানতে পারে কালিদাস ও মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় বাংলার সাধারণ পরিচয় কী লেখা হয়েছিল, আবার একইসঙ্গে মানুষ জানতে পারল স্টেশন ধরে ধরে সেইসব জায়গার বিস্তারিত পরিচয়। আর এই সুযোগেই ইংরেজ নিজের ভাবমূর্তি প্রচার করল লোকের ঘরে ঘরে। এই বইতেই সেদিন লর্ড বেন্টিঙ্ককে প্রতিষ্ঠা করা হল সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদকারী হিসেবে। প্রথম খণ্ডের ‘বাংলার রাজধানী কলিকাতা’ পর্বে কাউন্সিল ভবনের উত্তরদিকের প্রাঙ্গণে বেন্টিঙ্কের ব্রোঞ্জ মূর্তি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

দেবদত্ত গুপ্ত

৯.

নেটিভের দরবারে নিজেকে উচ্চে তুলে ধরার প্রবণতাকে হাজারও উপায়ে জারি রাখার কাজে ইংরেজ নানা উপায় বের করেছিল। কোনও স্থাপত্যের স্তম্ভ শীর্ষ থেকে শুরু করে জলের কল– এমন কিছু নেই যেখানে উচ্চারিত হয়নি তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রবণতা। এর জন্য শিল্পী নিয়োগ করা থেকে শুরু করে অনেক মানুষকে এক জায়গায় হাজির করেছে ইংরেজ। দরকারে গুণী মানুষের কদর করেছে। এরকম একটি প্রকল্প হল ‘পূর্ব্ববঙ্গ রেলপথ’ দপ্তরের প্রচার বিভাগের একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ। বইটির নাম ‘বাংলায় ভ্রমণ’।

মোট দু’টি খণ্ডে প্রকাশিত এই বইয়ের পাতায় পাতায় সম্পাদক অমিয় বসু সংকলিত করেছেন পূর্ববঙ্গের বিস্তৃত পরিচয়। এখানে রয়েছে বাংলার মানচিত্র, কলকাতার মানচিত্র, পূর্ববঙ্গের রেলপথের মানচিত্র। পাতায় পাতায় যে যে জায়গার বা স্টেশনের ওপর দিয়ে রেলগাড়ি যাবে বইতে দেওয়া আছে, সে জায়গার উপযুক্ত দলিল সম্বলিত পরিচয়। প্রথম এবং দ্বিতীয় খণ্ড একই সঙ্গে প্রকাশ পায় ১৯৪০ সালে।

মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় বই। কলকাতায় বসে মানুষ যেমন একদিকে ঘরে বসে বসেই জানতে পারে কালিদাস ও মেগাস্থিনিসের বর্ণনায় বাংলার সাধারণ পরিচয় কী লেখা হয়েছিল, আবার একইসঙ্গে মানুষ জানতে পারল স্টেশন ধরে ধরে সেইসব জায়গার বিস্তারিত পরিচয়। আর এই সুযোগেই ইংরেজ নিজের ভাবমূর্তি প্রচার করল লোকের ঘরে ঘরে। এই বইতেই সেদিন লর্ড বেন্টিঙ্ককে প্রতিষ্ঠা করা হল সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদকারী হিসেবে। প্রথম খণ্ডের ‘বাংলার রাজধানী কলিকাতা’ পর্বে কাউন্সিল ভবনের উত্তরদিকের প্রাঙ্গণে বেন্টিঙ্কের ব্রোঞ্জ মূর্তি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে লেখা হল, ‘কাউন্সিল ভবনে বাংলার আইন সভার অধিবেশন হয়। ইহার উত্তর দিকের প্রাঙ্গণে সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদকারী লর্ড বেন্টিকের ব্রোঞ্জ মূর্তি আছে। ইহার শিল্পীর নাম ওয়েস্টম্যাকট্‌। এই মূর্তির পাদপীঠে উত্তর ভারতের সতীদাহের একটি সুন্দর চিত্র ব্রোঞ্জে উৎকীর্ণ আছে। সদ্য বিধবার চিতায় প্রবেশের জন্যে প্রস্তুত হওয়া, তাহার কলে একটি শিশুর ঝাঁপাইয়া পড়িবার জন্য ব্যস্ততা, অপরটির আতঙ্কে একটি আত্মীয়কে জড়াইয়া ধরা, পুঁথিহস্তে পুরোহিতের বিমর্ষ ও চিন্তামগ্ন মুখভাব– ইহার প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি শিল্পী গভীর সহানুভূতির সহিত ফুটাইয়া তুলিয়াছেন।’

Lord William Cavendish Bentinck (1774-1839)” by Richard Westmacott, Calcutta, India

এমন বর্ণনা স্পষ্ট করে যে যে মূর্তি কলকাতায় বসেছিল, তা নিয়ে রেল দপ্তরেরও সুচিন্তিত মতামত রয়েছে। তাঁরা বলতে চেয়েছিলেন এমন মূর্তি ‘কলিকাতা’য় দেখার মতো দ্রষ্টব্য। যদি তা না হত, তাহলে বিশেষ উল্লেখের মাধ্যমে এভাবে মূর্তির বিশদ পরিচয় দেওয়া হত না নিশ্চয়ই। এই সমস্ত উদ্যোগ বুঝিয়ে দেয় নেটিভের মনের আয়নায় গভীরভাবে নিজের নাম লিপিবদ্ধ করার লক্ষে এগিয়েছিল ইংরেজ।

…. ভাবমূর্তি-র অন্যান্য পর্ব ….

পর্ব ৮। কলকাতায় ইংরেজ স্থাপত্যের অভিনব জলের ফোয়ারা, কিন্তু সিংহের আদল কেন?

পর্ব ৭। আরেকটু হলেই নিলামে উঠতেন ভাইসরয় মেয়োর মূর্তি!

পর্ব ৬। হাইকোর্টের থামের নকশায় প্রতিফলিত ইংরেজের ভাবমূর্তি

পর্ব ৫। ইংরেজ ভাবনার জীর্ণ স্মৃতি নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংয়ের রোমান ‘মিনার্ভা’

পর্ব ৪। ত্রিবেণী টোলের পণ্ডিত উজ্জ্বল করলেন হেস্টিংসের ভাবমূর্তি

পর্ব ৩। বঙ্গভঙ্গের ছায়া মুছতে অঙ্গমূর্তির পরিকল্পনা করেছিলেন লর্ড কার্জন

পর্ব ২। হেস্টিংসের মূর্তি আসলে অত্যাচারীরই নতুন ভাবমূর্তি

পর্ব ১। শাসককে দেবতা বানানোর অভিপ্রায়েই কলকাতায় পথে-প্রান্তরে ইংরেজরা বসিয়েছিল মূর্তি