Robbar

নশো মাস্ট গো অন!

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 7, 2024 3:19 pm
  • Updated:September 7, 2024 6:55 pm  

বিষ্যুদ-রাতে একটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দরকার ছিল। দরকার ছিল তাঁর ৯০০ গোলের রেকর্ডের ভূমিষ্ঠ হওয়া। যতই তিনি পূর্বের মতো চিতা-ক্ষিপ্র আর না থাকুন, যতই কমে আসুক ফুটবলের সঙ্গে তাঁর পদযুগলের সখ্য। ক্রোট ডিফেন্ডারকে কাঁধে নিয়ে বলের সংযোগস্থলে তাঁর পায়ের পৌঁছে যাওয়া (ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে যেভাবে গত রাতে গোল করে ৯০০-এর রাজ-শৃঙ্গে শাসন কায়েম করেছেন তিনি) কালেভদ্রে দেখা যায় এখন। কিন্তু ফুটবলীয় চাহিদার ঊর্ধ্বে উঠে মনুষ্য প্রয়োজনের সময় সে আকাশগঙ্গা এখনও সৃষ্টি হয়! কী করা যাবে, খেলার মাঠ, খেলা, খেলোয়াড় যে এখনও শান্তির সর্বোত্তম ছায়া। পিতৃশোক পর্যন্ত যা ভুলিয়ে দেয়!

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

নিপীড়িত গাজার অভাগা শিশুরা কি স্বর্গ খুঁজে পেয়েছিল বৃহস্পতি-রাতে? যুদ্ধে স্থির, ভ্লাদিমির, কি ভুল করে ভেবে ফেলেছিলেন, দিই জেলেনেস্কিকে একখানা উপহার, দিই দুটো শান্তির পায়রা, কামানের মুখ বন্ধ করে? বাংলাদেশের একাংশও কি তার অধুনা উগ্র ভারত-বিদ্বেষ সাময়িক বন্ধ রেখেছিল তখন? বহু, বহু নির্ঘুম রাত পর, এক পলকের জন্য চোখ লেগে গিয়েছিল কন্যাশোকে ক্লিষ্ট ভিক্টোরিয়ার রাতজাগা পরীর?

গত পরশু সময় কত তখন? ঠিক ক’টা বাজে? ভারতীয় ঘড়ি অনুপাতে রাত একটা, সওয়া একটা। কাগজের অফিসের ডাল-ভাত দিনের নিত্যকর্মের নিশিলগ্ন চলছে। আচম্বিত টিভি ধারাভাষ্যকারের চিল চিৎকার শুনে, মুখ তুলে চেয়ে দেখি, কে যেন এক দৌড়োচ্ছেন। গোল করে। গোল পোস্টকে পিছনে ফেলে। কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে। উড়োজাহাজের মতো দু’হাত দিগন্তের দু’দিকে বিস্তৃত করে। মানুষটাকে এখন বেশ লাগছে। দিব্য মানুষ-মানুষ। অপার ঔদ্ধত্যের রাজবেশ যাঁর গায়ে নেই। যা দেখে আজন্ম কাল ধরে অহরহ গাত্রদাহ হয়েছে তাঁর সমালোচকদের। পরিষ্কার যে দেখছি, দৌড়তে দৌড়তে মাঠ নামক সবুজ দেবালয়ে অর্ধেক শুয়ে পড়ল লোকটা। দু’হাত দিয়ে ঢেকে ফেলল মুখ-চোখ। ভুলে গেল, স্রেফ ভুলে গেল, ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ন্যায় সেই বজ্র-লাফ দিতে। বরং তাঁর চোখ ছলছল, চোখে জল।

Ronaldo becomes 1st player to reach 900 career goals; check all top scorers: Cristiano Ronaldo 900 goals | Football News - Business Standard
রেকর্ডধারী রোনাল্ডো

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর চোখে জল!
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নাইন হান্ড্রেড!

সে রাতে বাড়ি ফেরার সময় ভাবছিলাম, প্রেক্ষাপট অনুপাতে এ জিনিস এখন বড় দরকার ছিল। গুরুত্ব বিচারে যা হয়তো কিছুই না, হয়তো মূহূর্তের বিচ্যুতি, তবু। দিন শেষে বিচ্যুতি তো! কী এক অশান্ত সময় চলছে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে! ইজরায়েলি হানায় প্রাণ হারাচ্ছেন গাজার শত শত। শিশু। বুড়ো। নারী। নর। কলকাতায় নৃশংস নির্যাতনে নিহত তিলোত্তমার বিচার চেয়ে প্রায় প্রতিদিন পথে নামছেন দ্রোহী মানুষেরা। নিরন্তর রুশ হানায়‌ ক্লান্ত ইউক্রেনও আর নির্মল আকাশ দেখতে পায় না এখন। বোমারু বিমানের একগুঁয়ে আনাগোনায় হারিয়ে গিয়েছে তার স্বস্তির নীল। শান্তির দেশ, বঙ্গবন্ধুর দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের দখল নিচ্ছে আজ মৌলবাদ। একদল সৃষ্টি করছে ভয়ঙ্কর ভারত-ঘৃণা। গতকাল ফেসবুকেই দেখলাম, পদ্মাপারের কে একজন লিখেছে, ওপার বাংলার সবচেয়ে বড় রাজাকারের নাম নাকি রবীন্দ্রনাথ! ভাবতে পারেন, রবীন্দ্রনাথ! রবি ঠাকুরকে পর্যন্ত এ নরাধম ধর্মোন্মাদরা ছাড়তে রাজি নয়! তাঁর অপরাধ, সে দেশের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছিলেন!

Cristiano Ronaldo Becomes First Men's Player to Score 900 Career Goals - News18
সতীর্থের শুভেচ্ছা, আবেগমথিত সিআর

তাই আবার লিখছি, বিষ্যুদ-রাতে একটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দরকার ছিল। দরকার ছিল তাঁর ন’শো গোলের রেকর্ডের ভূমিষ্ঠ হওয়া। যতই তিনি পূর্বের মতো চিতা-ক্ষিপ্র আর না থাকুন, যতই কমে আসুক ফুটবলের সঙ্গে তাঁর পদযুগলের সখ্যতা। ক্রোট ডিফেন্ডারকে কাঁধে নিয়ে বলের সংযোগস্থলে তাঁর পায়ের পৌঁছে যাওয়া (ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে যে ভাবে গত রাতে গোল করে ন’শোর রাজ-শৃঙ্গে শাসন কায়েম করেছেন তিনি) কালেভদ্রে দেখা যায় এখন। কিন্তু ফুটবলীয় চাহিদার ঊর্ধ্বে উঠে মনুষ্য প্রয়োজনের সময় সে আকাশগঙ্গা আজও জেগে ওঠে! কী করা যাবে, খেলার মাঠ, খেলা, খেলোয়াড় যে এখনও শান্তির সর্বোত্তম ছায়া। পিতৃশোক পর্যন্ত যা ভুলিয়ে দেয়! আর ভুবনজোড়া মানবজাতির শোকের সময়, ক্রোধের সময়, প্রতিবাদের সময়, প্রলেপ দিতে খেলার মহামানবরা ময়দানে নামবেন না তো নামবেন কারা? এ জিনিস ভিনিসিয়াস জুনিয়র কিংবা লওটারো মার্টিনেজ দিয়ে হবে না। কিলিয়ান এমবাপে দিয়েও হবে না। এসব ক্ষেত্রে যে দরকার পড়ে আদি পুরুষদের। দরকার পড়ে লিওনেল মেসির, দরকার পড়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। ব্যালন ডি’অর তালিকায় তাঁরা থাকলেন না বাদ পড়লেন, তাতে কিস্যু আসে-যায় না।

রেকর্ডের নতুন শৃঙ্গে রোনাল্ডো

পরশু রাত যেমন সিআর নামের এক স্বর্গদূতের ছিল। এক লহমার জন্য হলেও সমস্ত বিদ্বেষ-ক্রোধ-প্রতিহিংসা-হাহাকারকে ভুলিয়ে দিয়েছিল যাঁর স্বর্গীয় ন’শো গোলের পারিজাত। ওই ছলছল কান্নার আবেগ, স্বভাবসিদ্ধ ‘সিউউউ’ ভুলে যাওয়া, মুখ ঢেকে বসে পড়া, সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ-বিম্বিষার দাবানলের উদ্দেশ্যে খুলে দিয়েছিল নদীমুখের অর্গল। যা কখনও রাইন। কখনও কঙ্গো। শুধু সর্বত্র সিআর-স্বরলিপি! সে রাতে ঘুমানোর আগে দেখছিলাম, রীতিমতো প্লাবন নেমেছে সোশাল মিডিয়ার দেওয়াল ধরে। কেউ ক্ষ্যাপাটের মতো ‘রোনাল্ডো… রোনাল্ডো’ লিখে যাচ্ছেন। কেউ আবার দ্রুত তর্জমায় ব্যস্ত তাঁর রেকর্ড পরবর্তী বক্তব্যের। কেউ আবার তীব্র হাঁকডাকে চোখ রাঙাচ্ছেন ফুটবল সম্রাট পেলের হাজার গোলের রেকর্ডকে। বুঝলেন মশাই, ন’শো কিন্তু হয়ে গেল। আর ১০০ এক বাকি!

…………………………………………

আরও পড়ুন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়-এর লেখা: অবিনশ্বর হয়ে থেকে যাবে ফুটবলের প্রতি ‘ওল্ড ম্যান’-এর প্রেম

…………………………………………

বেলাগাম আবেগের সে উন্মাদ ফল্গু নদী দেখছিলাম, আর ভয় হচ্ছিল। মন বলছিল, শুধরে যাও পৃথিবী। বন্ধ করো যুদ্ধ। বন্ধ করো ধর্মীয় উৎপাত। বন্ধ করো নির্যাতন। বন্ধ করো নারীর সম্মানহানি। শেষ করো নিপীড়ন। দাও ফিরিয়ে তাকে প্রাপ্য বিচার। আর বিশেষ কিন্তু সময় নেই পৃথিবী, আর মাত্র দু’-তিন বছর। দু’-তিন বছর পর তোমার ক্ষতে প্রলেপ দিতে আর থাকবে না এঁরা দু’জন। চেয়েও তুমি আর পাবে না এঁদের ফুটবলের হারানো সুর। কালের নিয়মে তুমি আবার অশান্ত হলে কেউ তোমায় আর ফিরিয়ে দেবে না শৈশবের বিকেল, কেউ তখন আর নতুন করে ছোটাবে না মহীনের ঘোড়াগুলি।

ভেবে দেখেছো কি, তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে/ তারও দূরে/ লিও আর রন যায় ক্রমে সরে সরে!

…………………………………………

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার.ইন

…………………………………………