৪ জুনের পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে রয় মেদ্ভিয়েদেভ্ মন্তব্য করেন: ‘এক বছর আগে দেশবাসী ভুল করেছিল।’ তাঁর বক্তব্য, বরিস ইয়েল্ৎসিন যদি সেই সময় সামাজিক জনপ্রিয় কৌশল না খাটাতেন তাহলে হয়তো ওই পরিমাণ ভোট তিনি পেতেন না। জনসাধারণের আর্থিক অবস্থার অবনতি না ঘটিয়ে রাশিয়াকে সংকট থেকে বের করে আনার, তার পুনরুজ্জীবন ঘটানোর কর্মসূচি তাঁর আছে– এই আশ্বাস এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন। দ্রব্যমূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায়, তার জন্য জান কবুলও করেছিলেন। বরিস ইয়েল্ৎসিনের মতো কূটকৌশলীদের মতিগতি বোঝা সাধারণ লোকের কেন, রয় মেদ্ভিয়েদেভের মতো বুদ্ধিজীবী তাত্ত্বিকদেরও বোঝা সম্ভব নয়। এখানেই তো সমস্যা।
৪৯.
এক বছরের খতিয়ান। সোভিয়েত-মুক্ত রাশিয়াকে কে রক্ষা করবে?
মস্কো, ১৫ জুন, ১৯৯২
গত বছর মে মাসের শেষে সোভিয়েত-মুক্ত রাশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছিল। সরাসরি প্রতিযোগিতার পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে রাশিয়ার হোয়াইট হাউসের কর্তা হলেন বরিস ইয়েল্ৎসিন।
ভোট তিনি পেয়েছিলেন শতকরা ৪২ ভাগ। অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করে জনসাধারণের প্রতীকরূপে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট, যখন তার জনপ্রিয়তা ইতিমধ্যে নেমে গেছে ৩২ শতাংশেরও নিচে, যখন তাঁর সংস্কারনীতির ফলে ১৯৮০ সালের তুলনায় তাপ ও বিদ্যুৎশক্তির উৎপাদন ৫ ভাগ কমে গেছে, শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক আচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যখন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে আবার কি নতুন করে শুরু করতে হবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বৈদ্যুতীকরণ পরিকল্পনা?
……………………………………………………
কলকারখানা দেউলিয়া হয়ে গেলে তাকে সরকার থেকে না বাঁচিয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করার বিল, বেসরকারিকরণের ওপর মন্ত্রীসভা প্রস্তাবিত নূতন কর্মসূচি, পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের আরও মূল্যবৃদ্ধির সরকারি প্রস্তাব সুপ্রিম সোভিয়েতে একের পর এক বাতিল হয়ে গেলে, পার্লামেন্টের অধিবেশনের কাছে প্রেসিডেন্টকে উপস্থিত হয়ে তাঁর কার্যকলাপের কৈফিয়ত দাবি করা হলে প্রেসিডেন্ট খোলাখুলি জেহাদ ঘোষণা করে বসলেন পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে। ২৭ মে, ‘কম্সোমোল্স্কায়া প্রাভ্দা’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি বলেন: ‘কংগ্রেস ও সুপ্রিম সোভিয়েত বর্তমানে যে-অবস্থায় আছে তাতে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রচার মাধ্যমের সামনে এই কথা আজ আমি প্রথম বলছি।
…………………………………………………..
৪ জুনের পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে রয় মেদ্ভিয়েদেভ্ মন্তব্য করেন: ‘এক বছর আগে দেশবাসী ভুল করেছিল।’ তাঁর বক্তব্য, বরিস ইয়েল্ৎসিন যদি সেই সময় সামাজিক জনপ্রিয় কৌশল না খাটাতেন তাহলে হয়তো ওই পরিমাণ ভোট তিনি পেতেন না। জনসাধারণের আর্থিক অবস্থার অবনতি না ঘটিয়ে রাশিয়াকে সংকট থেকে বের করে আনার, তার পুনরুজ্জীবন ঘটানোর কর্মসূচি তাঁর আছে– এই আশ্বাস এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন। দ্রব্যমূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায়, তার জন্য জান কবুলও করেছিলেন। বরিস ইয়েল্ৎসিনের মতো কূটকৌশলীদের মতিগতি বোঝা সাধারণ লোকের কেন, রয় মেদ্ভিয়েদেভের মতো বুদ্ধিজীবী তাত্ত্বিকদেরও বোঝা সম্ভব নয়। এখানেই তো সমস্যা। শুধু তা-ই নয়, বুদ্ধিজীবীরাই বোধহয় বেশি তাড়াতাড়ি এদের ফাঁদে পড়ে যান এবং তাঁরাই সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করে তাদের বিপথে পরিচালনা করেন– এটাই বোধহয় সাধারণ নিয়ম। রুশিদের মধ্যেও তাই একটা কথা প্রচলিত আছে বাংলা প্রবচনে যা দাঁড়ায়– ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি।’
বরিস ইয়েল্ৎসিন শুরু করেছিলেন সার্বভৌমত্বের ঘোষণা দিয়ে, তারপর অর্থনৈতিক সংস্কারের নাম করে কৌশলে দেশের টিকি বাঁধা হল আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদের পঞ্চম কংগ্রেসে তিনি প্রার্থনা করলেন অতিরিক্ত ক্ষমতা। এরপর থেকে একে একে ক্ষমতা দখলের ইতিহাস। রাশিয়ার গণপ্রতিনিধিদের কংগ্রেসে তিনি নিয়ে এলেন প্রেসিডেন্ট-শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তনের আইডিয়া।
কলকারখানা দেউলিয়া হয়ে গেলে তাকে সরকার থেকে না বাঁচিয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করার বিল, বেসরকারিকরণের ওপর মন্ত্রীসভা প্রস্তাবিত নূতন কর্মসূচি, পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের আরও মূল্যবৃদ্ধির সরকারি প্রস্তাব সুপ্রিম সোভিয়েতে একের পর এক বাতিল হয়ে গেলে, পার্লামেন্টের অধিবেশনের কাছে প্রেসিডেন্টকে উপস্থিত হয়ে তাঁর কার্যকলাপের কৈফিয়ত দাবি করা হলে প্রেসিডেন্ট খোলাখুলি জেহাদ ঘোষণা করে বসলেন পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে। ২৭ মে, ‘কম্সোমোল্স্কায়া প্রাভ্দা’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি বলেন: ‘কংগ্রেস ও সুপ্রিম সোভিয়েত বর্তমানে যে-অবস্থায় আছে তাতে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রচার মাধ্যমের সামনে এই কথা আজ আমি প্রথম বলছি। কংগ্রেস ও সুপ্রিম সোভিয়েত যে যত নষ্টের গোড়া এই কথাটি সাধারণের মধ্যে এর আগেই অবশ্য তিনি কয়েকবার নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গণভোটের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে তাঁর উসকানিতে। এখন তাঁর অভিযোগ পার্লামেন্টের সংস্কারনীতি বিরোধিতার ফলে বিদেশি লগ্নি সম্ভব হচ্ছে না, পশ্চিমও এখন Second front খুলছে না, দেরি করছে রাশিয়াকে সাহায্য দিতে।
‘ইজ্ভেস্তিয়া’ পত্রিকায় ১১ জুন প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট Chauvinism ও ধর্মবিশ্বাসে সুড়সুড়ি দিয়ে দেশে নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রয়াস করেন।
এই কিছুদিন আগেও যিনি নিজেকে নাস্তিক বলতেন, ধর্মের ব্যাপারে তিনি আজ শোনালেন এক নতুন কথা।
মাসে একবার করে তিনি গির্জার উপাসনায় উপস্থিত থাকেন। এর অর্থ কী? অন্তরের কোনও তাগিদ? গভীর ধর্মবোধ? নাকি গির্জার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন? উত্তর: বলা কঠিন। কৃষক পরিবারে জন্ম, পিতৃপুরুষেরা সকলেই ছিলেন ধর্মবিশ্বাসী। মাটির প্রতি টান, ধর্মবিশ্বাস– এসব বোধহয় মিশে আছে তাঁর রক্তে।
আবার একই নিশ্বাসে তিনি বলেন: ‘অবশ্য কমিউনিস্ট যখন ছিলাম তখন আন্তরিকভাবে নিরীশ্বরবাদী ছিলাম।’ এখন নাকি প্রকাশ পাচ্ছে অন্য বিশ্ববোধ, যা সম্ভবত মানসিক অবস্থার সঙ্গে, সমাজের অবস্থার সঙ্গে যুক্ত। ধর্মকে সহায়তাদানেরও ব্যাপার আছে বইকি! ‘এই রবিবার ট্রিনিটি দিন– আমি গির্জায় যাচ্ছি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোনও দরকার নেই। গির্জায় আমি যাই চিত্তশুদ্ধি করতে। উপাসনা মন্দির একমাত্র জায়গা, যেখানে গিয়ে ভাবতে হয় না দুনিয়ার কোথায় কী হচ্ছে, জাগতিক ভাবনাচিন্তা থেকে সেখানে আমি মুক্তি পাই। অবস্থাটা বুঝিয়ে বলা কঠিন, কিন্তু আমার কাছে শুধু ব্যক্তিগত ও মানসিক কারণে নয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিতেও একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে। ধর্মবিশ্বাসী লোকদের আমরা সহায়তা করি, ধর্মের বিকাশে সাহায্য করি। গির্জা, মসজিদ, মঠ ও সিনাগগ নির্মাণ ও সংস্কারের কর্মসূচি আমাদের আছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাত্রার প্রাক্কালে ১৪ জুন মস্কোর উপকণ্ঠস্থ বিখ্যাত ধর্মপীঠ ‘সেগেইয়েভ্ পসাদ’-এ (সোভিয়েত আমলে ‘জাগোর্স্ক’ নামে পরিচিত) ট্রিনিটি দিবসে প্রেসিডেন্ট সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন উপাসনাসভায়। গির্জার ব্যালকনি থেকে সমবেত জনমণ্ডলীর উদ্দেশ্যে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। ঐহিক প্রসঙ্গ তথা রাজনীতি অর্থনীতি সেখানে একেবারে তুচ্ছ ছিল না। সবই জানা কথা, তবে লোকে তাঁর মুখ থেকে আরেক বার শুনতে চায়। তিনি বললেন, ‘আজ এই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য ঈশ্বরের ওপর আমাদের ভরসা রাখা দরকার।’ রাশিয়ার প্রধান ধর্মাচার্য তাঁর শুভেচ্ছা জানালেন আসন্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-যাত্রা উপলক্ষে। দেশবাসীর জন্য প্রেসিডেন্ট কী বাণী রেখে গেলেন? ইজ্ভেস্তিয়ার সেই সাক্ষাৎকারে যা বলেছিলেন– ‘বিশ্বাস, আশা ও সহিষ্ণুতা রাশিয়াকে রক্ষা করবে।’
সোভিয়েত-পূর্ব অতীতে ফেরার পালা
চুয়াত্তর বছরের সোভিয়েত ঐতিহ্য ভেঙে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য। এর সূচনা হয় গত বছরের আগস্ট মাসের পর বিভিন্ন শহর ও রাস্তাঘাটের নামবদল করে, সোভিয়েত আমলে স্থাপিত বিভিন্ন মূর্তি-টুর্তি সরিয়ে– ঠিক যেমনটি ঘটেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের প্রথম যুগে। সে-সময় অনেক সোভিয়েত নেতার জীবদ্দশাতেই তাঁদের নামে একের পর এক নগর, পল্লি ও পথঘাটের নামকরণ শুরু হয়, পুরনো নাম বাতিল করে দিয়ে। মস্কোয় এখন সোভিয়েত ঐতিহ্যের যেটুকু কোনওমতে টিকে আছে, তা প্রধানত লেনিনের নামের সঙ্গে জড়িত– লেনিন মিউজিয়াম, লেনিন স্মৃতিসৌধ, অক্টোবর স্কোয়ারে লেনিনের স্মৃতিমূর্তি, লেনিন সরণি আর পাতাল রেলের লেনিন লাইব্রেরি স্টেশন– যদিও লেনিন লাইব্রেরির নাম পাল্টে গেছে– ফিরে এসেছে তার পুরনো পরিচয়ে। এখন তা রাষ্ট্রীয় গ্রন্থাগার নামে পরিচিত। উঠে গেছে কতকগুলি সোভিয়েত সামাজিক সংস্থা– পাওনিয়র ও ইয়ং কমিউনিস্ট লিগ। পাওনিয়রের স্থান শূন্য থাকছে না– প্রায় একযুগ আগেকার ছিন্ন যোগসূত্র আবার জোড়া লাগছে– গড়ে উঠছে স্কাউট ও গাইডসংস্থা। স্কুলের ছেলেমেয়েদের এককালে পাওনিয়র ভবনগুলিতে এখন অনুষ্ঠিত হয় নানা ধরনের শো। কিছুদিন আগে দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হল শহরের এক পাওনিয়র ভবনে স্কুলের ছেলেমেয়েদের একটি ‘বল’ নাচের অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে বালিকাদের গাত্রবস্ত্রের স্বল্পতা দেখে অনেকে মন্তব্য করেছিলেন, পাওনিয়রের টাই ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা বোধহয় আরও অনেক কিছু ছাড়ল। যুবভবনগুলিতে বিভিন্ন স্পনসরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় সুন্দরী প্রতিযোগিতা। কেন্দ্রীয় যুবভবনে প্রতি রবিবার ধর্মোপদেশ প্রচার করছেন মার্কিন ফাদাররা। বিনামূল্যে বাইবেল বিতরণ হচ্ছে। বেতারে, দূরদর্শনে এককালে কিছু কিছু রুশি লোকগীতি ও নৃত্যের অনুষ্ঠান দেখা ও শোনা যেত– এখন তার স্থান নিয়েছে ভিনদেশি আধুনিক নৃত্যগীত। না, এসব ক্ষেত্রে প্রাচীন ঐতিহ্য ফিরে আসেনি– শূন্যস্থান পূরণ করছে ভিনদেশি সংস্কৃতি– যদিও ইজ্ভেস্তিয়া পত্রিকায় সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে দেশের প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন করেন: ‘কার ঐতিহ্য বেশি সমৃদ্ধ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, যার ইতিহাস ন্যূনাধিক দুশো বছরের, নাকি রাশিয়ার– যার ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্পসাধনা হাজার বছরের পুরনো?
সোভিয়েত আমলে সামাজিক কার্যকলাপের মধ্যে একটি ছিল শ্রমদান দিবস– বিভিন্ন উৎসবের ঠিক আগের কোনও শনিবারে লোকে দল বেঁধে পাড়ার জঙ্গল আর রাস্তাঘাট সাফ করত, নিজেরাই সংগঠন করত। ফসল তোলার সময় যৌথ খামারিদের সাহায্য করার জন্য লোকজন পাঠানা হত সরকারি অফিস কাছারি থেকে, যেত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও। বিনা পারিশ্রমিকে কাজ অনেক ক্ষেত্রে স্বেচ্ছামূলক বলে পরিচিত হলেও আসলে হয়তো ছিল বাধ্যতামূলক। আজকের দিনে মানুষ মানুষে যখন বাণিজ্যিক লেনদেনের সম্পর্ক স্থাপিত হতে যাচ্ছে তখন ওই ব্যবস্থা একেবারেই অচল ও অর্থহীন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইদানীং শহরের যত্রতত্র বিকিকিনির হাট বসানোর সুযোগদানের ফলে রাস্তাঘাটে আবর্জনা স্তূপীকৃত হয়ে যাওয়ায় এবং পরন্তু কর্মীর অভাবে, গত এপ্রিল মাসে পুরসভা নাগরিকদের কাছে দু’-সপ্তাহের জঙ্গল হটাও অভিযানের আহ্বান জানিয়েছিল। তাতে কোনও ফল হয়নি।
সোভিয়েত আমলে আরও একটি সামাজিক কাজ দেখেছি স্কুলের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুরনো কাগজ আর লোহালক্কর জোগাড় করে স্কুলে জমা দেওয়া। উৎসাহের কমতি দেখেনি। পরে সেগুলি যথাস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হত যথাযথ প্রসেসিং করে কাজে লাগানোর জন্য। শেষ সংগ্রহ করতে দেখেছি ১৯৮৯ সালে। আমাদের বাড়ির পাশের স্কুলের প্রিন্সিপালের নির্দেশে ছেলেমেয়েরা বরাবরের মতো উৎসাহ নিয়ে জোগাড়ও করেছিল পুরনো কাগজ, কিন্তু অভিভাবকদের প্রবল আপত্তিতে আর জমা পড়ল না যথাস্থানে– শুধু তাই নয়, ওই কাগজ পুড়িয়ে বহ্ন্যুসব হল, বাড়ির জানালা থেকে দেখলাম। অভিভাবকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য– পেরেস্ত্রৈকার আমলে ওইসব পাওনিয়রসুলভ কমিউনিস্টি অনাসৃষ্টি বরদাস্ত করা হবে না। অথচ আজ তিন বছরের মধ্যে সেগুলি সংগ্রহের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা গড়ে না ওঠার ফল হয়েছে মারাত্মক। কিন্তু সামাজিক অনেক ঐতিহ্যই ফিরে আসছে– আরও অনেক পুরনো ঐতিহ্য– বাজার-অর্থনীতির স্বাভাবিক পথ ধরে। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির চাপে পড়ে দেশের জনসাধারণের যখন নাভিশ্বাস উঠছে, তখন সরকারপক্ষের অর্থনীতিবিদরা বলছেন তাঁদের অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনার মধ্যে গরিবগুর্বোদের দেখভালের দিকটাও দেখা হয়েছে। কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়– গরিবদের স্বার্থরক্ষার এমন সমস্ত সামাজিক পরিকল্পনা রাশিয়ার সরকারের এবং অন্যান্য সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী মহলের আছে যা এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত অকল্পনীয় ছিল– ভবঘুরেদের জন্য রাতের আশ্রয়, ধর্মশালা, লঙ্গরখানা, সেকেন্ড হ্যান্ড জামা-কাপড়-জুতো কেনা-বেচার দোকান। আবার জমে উঠছে বন্ধকের কারবার। একমাত্র মস্কো শহরেই বিনামূল্যে আহার পরিবেশনের ক্যান্টিন খুলেছে ১৩০টি। অধিকাংশই বেসরকারি, বিশেষত বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার উদ্যোগে। মস্কোর পুরশাসন সংস্থার নির্দেশে নির্দিষ্ট বাসস্থানহীন নাগরিকদের জন্য কয়েকটি রাত্রিবাস খোলা হচ্ছে জুলাইয়ের মধ্যে।
……………………………….
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………….
রাশিয়ায় আবার ফিরে আসছে বণিকসমাজ, তার কসাক ঐতিহ্য, স্টক এক্সচেঞ্জ, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ আর বিজনেস হাউস। এককালে যা যা ছিল সেসবই ফিরে আসছে একে একে।
…পড়ুন রুশকথা-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৪৮। বর্ষশেষে মানুষ পেল দারিদ্র, এখন লোকে ধার-দেনা করে চা-কফি খাওয়া শুরু করেছে
পর্ব ৪৭। মুক্ত দিনে ব্যালের দেশ রাশিয়ায় ‘আধুনিক ব্যালে’ শেখাতে আসছে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রুপ
পর্ব ৪৬। অক্টোবর বিপ্লবের উচ্ছ্বাস কোনও দেশে কমলে, অন্য দেশে বাড়তে থাকে
পর্ব ৪৫। ‘অক্টোবর বিপ্লব দিবস’ আর পালিত হবে না, পালিত হবে বড়দিন– চোখের সামনে বদলে যাচ্ছিল সোভিয়েত
পর্ব ৪৪। রাজনীতিতে অদূরদর্শিতার ফল যে কত সুদূরপ্রসারী, তার প্রমাণ আফগানিস্তান
পর্ব ৪৩। জানলা দিয়ে পূর্ব জার্মানি দেখতে দেখতে গর্বাচ্যোভ বলেছিলেন, তাহলে এখানেই শেষ!
পর্ব ৪২। পেরেস্ত্রৈকা শুরু হলে বুঝেছিলাম ‘প্রগতি’ ‘রাদুগা’– এসব কিছুই থাকবে না
পর্ব ৪১। কল্পনা যোশীর তুলনায় ইলা মিত্রকে অনেক বেশি মাটির কাছাকাছি বলে মনে হয়েছে
পর্ব ৪০। বেসরকারিকরণের শুরু দিকে রাস্তাঘাটে ছিনতাই বেড়ে গেছিল, কারণ সব লেনদেন নগদে হত
পর্ব ৩৯। হাওয়া বদলের আঁচ অনেকেই আগে টের পেয়েছিল, বদলে ফেলেছিল জীবনযাত্রা
পর্ব ৩৮। শুধু বিদেশে থাকার জন্য উচ্চশিক্ষা লাভ করেও ছোটখাটো কাজ করে কাটিয়ে দিয়েছেন বহু ভারতীয়
পর্ব ৩৭। একটা বিদেশি সাবানের বিনিময়েও নাকি মস্কোয় নারীসঙ্গ উপভোগ করা যায়– এমনটা প্রচার করেছে ভারতীয়রা
পর্ব ৩৬। মস্কোর ঠান্ডায় লঙ্কা গাছ দেখে পি.সি. সরকার বলেছিলেন, ‘এর চেয়ে বড় ম্যাজিক হয় নাকি?’
পর্ব ৩৫। রুশদের কাছে ভারত ছিল রবীন্দ্রনাথের দেশ, হিমালয়ের দেশ
পর্ব ৩৪। সোভিয়েত শিক্ষায় নতুন মানুষ গড়ে তোলার ব্যাপারে একটা খামতি থেকে গিয়েছিল
পর্ব ৩৩। দিব্যি ছিলাম হাসপাতালে
পর্ব ৩২। মস্কোর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাধারণ ডাক্তাররা অধিকাংশই মহিলা ছিলেন
পর্ব ৩১। আমার স্ত্রী ও দুই কন্যা নিজভূমে পরবাসী হয়ে গিয়েছিল শুধু আমার জন্য
পর্ব ৩০। শান্তিদা কান্ত রায়ের প্রিয় কাজ ছিল মস্কোয় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কমিউনিজম পড়ানো
পর্ব ২৯। পেরেস্ত্রৈকার শুরু থেকেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন গোপেনদা
পর্ব ২৮। দেশে ফেরার সময় সুরার ছবি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পাননি গোপেনদা
পর্ব ২৭। বিপ্লবের ভাঙা হাট ও একজন ভগ্নহৃদয় বিপ্লবী
পর্ব ২৬। ননী ভৌমিকের মস্কোর জীবনযাত্রা যেন দস্তইয়েভস্কির কোনও উপন্যাস
পর্ব ২৫। ননীদা বলেছিলেন, ডাল চচ্চড়ি না খেলে ‘ধুলোমাটি’র মতো উপন্যাস লেখা যায় না
পর্ব ২৪। মস্কোয় শেষের বছর দশেক ননীদা ছিলেন একেবারে নিঃসঙ্গ
পর্ব ২৩। শেষমেশ মস্কো রওনা দিলাম একটি মাত্র সুটকেস সম্বল করে
পর্ব ২২। ‘প্রগতি’-তে বইপুথি নির্বাচনের ব্যাপারে আমার সঙ্গে প্রায়ই খিটিমিটি বেধে যেত
পর্ব ২১। সোভিয়েতে অনুবাদকরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করত, সে দেশের কম মানুষই তা পারত
পর্ব ২০। প্রগতি-র বাংলা বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ননীদাই শেষ কথা ছিলেন
পর্ব ১৯। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় নাকি খুব ভালো রুশভাষা জানতেন, প্রমথনাথ বিশী সাক্ষী
পর্ব ১৮। লেডি রাণু মুখার্জিকে বাড়ি গিয়ে রুশ ভাষা শেখানোর দায়িত্ব পড়েছিল আমার ওপর
পর্ব ১৭। একদিন হঠাৎ সুভাষদা আমাদের বাড়ি এসে উপস্থিত ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে নিয়ে
পর্ব ১৬। মুখের সেই পরিচিত হাসিটা না থাকলে কীসের সুভাষ মুখোপাধ্যায়!
পর্ব ১৫। রুশ ভাষা থেকেই সকলে অনুবাদ করতেন, এটা মিথ
পর্ব ১৪। মস্কোয় ননীদাকে দেখে মনে হয়েছিল কোনও বিদেশি, ভারতীয় নয়
পর্ব ১৩। যিনি কিংবদন্তি লেখক হতে পারতেন, তিনি হয়ে গেলেন কিংবদন্তি অনুবাদক
পর্ব ১২। ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’র অধঃপতনের বীজ কি গঠনপ্রকৃতির মধ্যেই নিহিত ছিল?
পর্ব ১১। সমর সেনকে দিয়ে কি রুশ কাব্যসংকলন অনুবাদ করানো যেত না?
পর্ব ১০। সমর সেনের মহুয়ার দেশ থেকে সোভিয়েত দেশে যাত্রা
পর্ব ৯। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা, ঠিক তখনই ঘটে গেল আকস্মিক অঘটন
পর্ব ৮: একজন কথা রেখেছিলেন, কিন্তু অনেকেই রাখেননি
পর্ব ৭: লেনিনকে তাঁর নিজের দেশের অনেকে ‘জার্মান চর’ বলেও অভিহিত করত
পর্ব ৬: যে-পতাকা বিজয়গর্বে রাইখস্টাগের মাথায় উড়েছিল, তা আজ ক্রেমলিনের মাথা থেকে নামানো হবে
পর্ব ৫: কোনটা বিপ্লব, কোনটা অভ্যুত্থান– দেশের মানুষ আজও তা স্থির করতে পারছে না
পর্ব ৪: আমার সাদা-কালোর স্বপ্নের মধ্যে ছিল সোভিয়েত দেশ
পর্ব ৩: ক্রেমলিনে যে বছর লেনিনের মূর্তি স্থাপিত হয়, সে বছরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সূচনাকাল
পর্ব ২: যে দেশে সূর্য অস্ত যায় না– আজও যায় না
পর্ব ১: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রাশিয়ার খণ্ডচিত্র ও অতীতে উঁকিঝুঁকি